আমার ব্যবহার করা প্রথম মোবাইল ফোন||কনটেস্ট-২২
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী।আশা করি সবাই ভাল আছেন।প্রথমেই ধন্যবাদ আমাদের অ্যাডমিন প্যানেল কে এত সুন্দর একটি প্রতিযোগীতার আয়োজন করার জন্য।
ফোন এখনো আমার কাছে একটি আবেগ।যদি প্রতিমাসেই ফোন চেঞ্জ করতে পারতাম তবে মন টা কিছুটা শান্তি পেত।
আমার ফোনের প্রতি মোহ সেই ছোট বেলা থেকে।সাল তখন ২০০৩/২০০৪ গ্রামীন ব্যাংক থেকে নোকিয়া ফোন আর একটি সিম দেওয়া হত।সেই সময় প্রায় ২০হাজার টাকার মত লাগত।তখন আমার বয়স ছিল ৮।বাবা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে একটি মোবাইল কেনেন।তখন গ্রামের ভেতর প্রথম মোবাইল ছিল আমাদের টাই।সমবয়সী বন্ধুদের সাথে এটা নিয়ে কত যে বাহাদুরি দেখিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই।এরপর বাবার দেখতে দেখতে সেই বয়সেই কল দেওয়া,রিসিভ করা শিখে ফেলেছিলাম।যেহেতু দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তাম নাম্বার তুলতে সমস্যা হতনা।একটি মজার বিষয় শেয়ার করি।তখন কিন্তু এসব ফোন দিয়ে ব্যবসা করা যেত।আশে পাশের মানুষ কল করার জন্য আসত যদি তাদের আত্মীয় দের বাড়ির আশেপাশে অন্যকরো ফোন থাকত।তখন আমাদের এখান থেকে ঐ ফোনে ফোন করে জানানো হত অমুক লোককে দরকার।তখন ঐ ফোনের মালিক সেই কাঙ্ক্ষিত লোককে ডেকে এনে মিসকল বা কল দিত।এরপর যত মিনিট কথা হত সেই অনুযায়ী টাকা।প্রতি মিনিট ৭টাকা।সেই থেকে শুরু আমার ফোনের মোহ।
তবে নিজের মালিকানায় একটি ফোন পাওয়ার জন্য আমার দশম শ্রেনী তে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।নিজের প্রথম ফোন কেনার অনুভুতি টা ছিল আমার অনেক আনন্দের।কিন্তু সেদিন এমন কিছু ঘটনার ঘনঘটা ছিল যা আনন্দ কে কষ্টে পরিণত করে।আমার প্রথম ফোনটির নাম ছিল সিম্ফোনি w68।
ফোনের নাম | সিম্ফোনি w68 |
---|---|
অপারেটিং সিস্টেম | অ্যান্ড্রয়েড, জেলিবিন ভার্সন |
ব্যাক ক্যামেরা | ৫মেগাপিক্সেল |
ফ্রন্ট ক্যামেরা | ০.৩মেগাপিক্সেল |
র্যাম | ০.৫জিবি |
রম | ৮জিবি |
ব্যাটারি | ১৫০০এমএএইচ |
আমার জীবনের একটি ফিলোসফি ছিল ছোট থেকেই।আমি আমার বিলাসিতার সব জিনিস কিনব নিজের পয়সায়।তাই বাবা মাকে ফোনের জন্য চাপ দেই নি কখনো।
ক্লাস নাইনে উঠলাম।ততদিনে স্মার্ট ফোন বের হয়ে গেছে।স্যাম্ফোনী নামের একটি চায়না কোম্পানী বাজার মাতাচ্ছে।বন্ধুরা অনেকেই স্মার্টফোন কিনে ফেলেছে।স্মার্ট ফোনের নতুন নতুন ফিচার নিয়ে সবাই ব্যস্ত।কিন্তু ততদিনেও আমার হাত শূন্য।ফ্রেন্ড্রের ফোন নেড়েচেড়ে দেখতাম।অনেকেই খোচা দিয়ে কথা বলত।কৈশোর বয়স,কৌতুহলের বয়স,তাই সে কথা গুলো গায়ে লাগাতাম না।শিখে নিতাম নতুন নতুন ফিচার গুলো।এরপর আমার প্রিয় বন্ধু তানভীরও একসময় একটি স্মার্ট ফোন কিনে ফেলে।ওর ফোনটিই আমাদের গ্রুপের সবেধন নীলমণি।ওর ফোনেই আমাদের মুভি দেখা,গান শোনা,ছবি তোলা।সেই সময়ের ফোন গুলোর মধ্যে সিম্ফোনি w68. এর ক্যামেরা ছিল বেশ ভাল।তাই তার ফোনের কদর ছিল সবার মাঝে।
হাইস্কুলে ওঠার পর থেকে প্রচুর ক্রিকেট খেলতাম।বিভিন্ন দল তাদের হয়ে খেলার জন্য ডেকে নিয়ে যেত,যাকে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় খ্যাপ খেলাবলে। খ্যাপ খেলে বেশ ভাল টাকা পেতাম।এভাবে বেশ কিছু টাকা জমিয়ে ফেলি।ততদিনে ক্লাস টেনে উঠে গেছি।তানভীর নতুন ফোন কিনবে,তাই পুরানো ফোন টা বিক্রি করবে।ওকে বললাম ফোন যখন বিক্রি করবিই আমার কাছে কর।অবশেষে দাম ঠিক হল ৩হাজার।কিন্তু আমার কাছে টাকা আছে ২৫০০ টাকা।তারপরেও সাহস করে কিনে ফেললাম।ওর ফোন টা নেওয়ার প্রথম কারন আমার নতুন ওরকম ফোন কেনার সামর্থ্য নেই,দ্বিতীয় আমি বেশ ভাল ছবি তুলতাম আর ওই ফোনের ক্যামেরা টি একদম পারফেক্ট ছিল। বাকি টাকা মায়ের থেকে ধার নেব এবং হাতে টাকা আসলে শোধ করে দেব এটিই ছিল আমার প্ল্যান।
তারপর ফোনটি নিয়ে বাড়ি এসে মা কে দেখালাম।মা দেখে বেশ খুশি হল।মাকে টাকার কথা বললাম,মা বলল,আমার কাছে তো এখন টাকা নেই।তোর বাবাকে জানাই।আমি ভেবেছিলাম,যেহেতু নিজের টাকায় কিনেছি তাই বাবা খুশি হবেন এবং বাকি টাকা টা দিয়ে দেবেন।
এরপর রাতে বাবা বাড়ি আসলেন, একটু পর মা তাকে ফোনের বিষয়টি বলল।জানিনা কেন হঠাৎ উনি রেগে গেলেন।আমাকে প্রচুর বকা দিতে শুরু করলেন।আমি বুঝলাম না যে আমার দোষ টা কোথায়।এরপর একসময় উনি বললেন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে।তখন কৈশোর বয়স উনার কথায় এতক্ষণ কিছু মনে না হলেও এই কথা টি গায়ে প্রচন্ড লেগেছিল।এবং আমি বের হয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাগ ও গুছিয়ে ফেলেছিলাম।কিন্তু হঠাৎ মনে হল এত রাতে যার বাড়িতে যাব সেখানে খাবার নাও পেতে পারি,বাসা থেকে খেয়েই যাই।যাইহোক অপেক্ষা করতে থাকলাম খাবারের জন্য।কিন্তু এরমাঝেই বাবার রাগ কমে যায়। এবং উনি আমাকে বুঝিয়ে বলতে শুরু করেন।সামনে পরীক্ষা, এই সময়ে ফোন কিনলি। তুই যে মানুষ এখন ফোনে কি কি আছে সব খুজে বের করতেই তোর দিন যাবে।যাই হোক যা করার করেছিস কাল আমার থেকে টাকা নিয়ে বাকি টাকা দিয়ে দিস আর ফোনের পেছনে বেশি সময় দিস না।
এরপর আর কি।শুরু হল আমার ফোন নিয়ে যাত্রা।এরপর অনেক ফোন ব্যবহার করেছি এবং অনেক ভাল ভাল ফোন ব্যবহার করেছি।এখনো বন্ধু বান্ধব ফোন কিনতে গেলে আমার থেকে শুনে নেয় কোন ফোনটি কিনলে ভাল হবে।কিন্তু প্রথম ফোনের সেই অনুভূতি ভোলার নয়।বিশেষ করে সাথের ঘটনা গুলোর জন্য সারাজীবন মনে থাকবে
পুরনো মোবাইলের বর্ণনাটি খুবই সুন্দর করেছেন ভাই সত্যি ভালো লাগলো। আর হ্যাঁ যে কোনই নতুন জিনিস সে ফোন হোক বা আর কিছু স্মৃতি পটে থেকে যায়।
একদম ঠিক বলেছেন ভাই।অনেক ধন্যবাদ।
আপনি তো প্রথমে জীবনে টাচ ফোন ব্যবহার করেছেন তা দেখে অনেক ভালো লাগলো। আপনি আপনার জীবনের প্রথম মোবাইল ফোন সিম্ফোনি এর ডিটেলস অনেক সুন্দর ভাবে টেবিল তৈরি করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। কনটেস্টে অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ
আমি যখন ফোন হাতে পাই তখন টাচ ফোন সম্ভবত বাংলাদেশে পা রাখেনি অথবা টাচ ফোন থাকলেও সেটা জাভা ভার্সানে চলতো এন্ড্রয়েড নয়। যাই হোক। আপনার অভিজ্ঞতা গুলো পড়ে ভাল লাগলো। তবে হ্যা খ্যাপ খেলে টাকা জমিয়ে ফোন কিনেছেন তবে আমার বাবাও ঠিক এমনটাই করে এখনও কোন কিছু কিনলেই হল বিভিন্ন প্রশ্ন জুড়ে দেয়। হা হা হা। কিন্তু এখন বুঝি পিতা মাতা সব সময় সঠিক কথাই বলে। ধন্যবাদ ভাই অতীত অনুভূতি গুলো লিখে শেয়ার করার জন্য।
ভাইয়ের ফোনটির নাম কি ছিল?
আমি কিন্তু হ্যাং আউটে বলেছিলাম।হা হা হা । পোষ্ট এর মাধ্যমে জানাই কেমন ।
অবশ্যই ভাই অবশ্যই।
ভাই প্রতিটা বাবাই মনে হয় এরকম, মোবাইল কেনার কথা শুনলে ভীষণ ক্ষেপে যায়। তবে আপনার বাবা পরবর্তীতে মোবাইল কেনার জন্য বাকি টাকা দিতে চেয়েছে এবং আপনাকে বুঝিয়েছে এটাই হচ্ছে প্রকৃত বাবা-মায়ের কোমল হৃদয়ের পরিচয়। যাইহোক ভাই, আপনার প্রথম মোবাইল ফোন কেনা নিয়ে গল্পটি বেশ ভালো ছিল। কনটেস্টে অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অনেক সুন্দর ভাবে আপনি পরিস্থিতি টা ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভাই।ধন্যবাদ।
আপনার প্রথম মোবাইল কিনার অভিজ্ঞতা সত্যি দারুন ছিল। বেশ ইন্টারেস্টিং। আসলে সব বাবা রাই এমন। আমাদের শাসন করলেও পরে আমাদের আবদার ঠিকই পূরন করেন। আপনার পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলো। কনটেস্টে অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।হ্যা বাবারা একটু এরকমই হয়।