কিভাবে টক্সিক মানুষদের সাথে ডিল করবেন||আমার চিন্তা ভাবনা।

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী।আশা করি সবাই ভাল আছেন।সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে।বেশ সুন্দর শীতল আবহাওয়া।যথারিতি আমার মাঝে দার্শনিক চিন্তা ভাবনা চলে এসেছে।আজ ভাবছিলাম আমাদের আশেপাশের মানুষদের নিয়ে।

সোর্স
মানুষ সামাজিক জীব। আমরা চাইলেও একা থাকতে পারি না।কারন আমরা একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। সব কাজ আমাদের একা একা প্রতিনিয়ত করা সম্ভব না।তাই আমাদের সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে হয়।প্রাচীন কালে মানুষ যখন সংখ্যার শক্তি বুঝতে পারে অর্থাৎ একা থাকার থেকে দলবদ্ধভাবে বসবাস করলে টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি তখন থেকেই মানুষ দলবদ্ধ ভাবে বাস করা শুরু করে।আর এখনো এটাই আমাদের সাবকনশিয়াস মাইন্ডে গেথে আছে,তাই আমরা কোথাও একা থাকলে ভয় অনুভব করি।

যেহেতু আমাদের সমাজে থাকতে হয় তাই আমাদের অনেক ধরনের মানুষের সাথে মিশতে হয়।এর মাঝে অনেকে ভাল অনেকেই খারাপ,অনেকেই পরোপকারী, আবার অনেকেই স্বার্থপর।এদের মধ্যেই একধরনের হল টক্সিক।

টক্সিক বা বিষাক্ত নাম থেকেই হয়ত বুঝতে পারছেন এদের প্রকৃতি। যারা বোঝেন না তাদের বলি টক্সিক মানুষ হল এমন এক ধরনের মানুষ "যাদের মুখ থেকে ভাল কথা বের হয় না,এরা কারো প্রশংসা করতে পারে না,বা কারো কথার উত্তর সোজা ভাবে দিতে পারে না।

যেমনঃআপনি হয় কোথাও যাচ্ছেন আপনার কাছে ঘড়ি নেই,আপনি একজন কে জিজ্ঞাসা করলেন ভাই সময় কত,এখন এখানে ভাল মানুষ হলে সময় বলে দিত অথবা সুন্দর করে বলত ভাই আমার কাছেও ঘড়ি নেই।কিন্তু একজন টক্সিক মানুষ উত্তর দিবে," এত যখন সময়ের দরকার তখন ঘড়ি নিয়ে বের হতে পারেন না"।

সে কিন্তু পারত সোজা ভাবে শুধু সময় টা বলে দিতে,কিন্তু তা না করে সে উলটা কথা শুনিয়ে দিল।এরা কখনো কারো প্রশংসা করতে পারে না।প্রশংসা তো দূরে থাক কিভাবে আপনাকে অপমান বা ছোট দেখানো যাবে তাতেই এদের উৎসাহ বেশি। আপনি যতই চেষ্টা করুন আপনি এদের মন জয় করতে পারবেন না।এরা নিজেদের অনেক সুপিরিয়র ভাবে।মনে করে তাদের থেকে কেউ ভাল কিছু করতে পারে না।বিয়ে বাড়িতে খেতে বসলে কিছু লোক দেখবেন তরকারির কিছু না কিছু ভুল বের করবেই, সব ঠিক থাকলেও বলবে কি যেন একটা নাই।অথচ সে এটা দেখে না যে খাওয়াচ্ছে তার কতটা কষ্ট ও ত্যাগ রয়েছে।
টক্সিক মানুষদের প্রধান বিনোদন অন্যকে নিরুৎসাহিত করা এবং কষ্ট দেওয়া।আমি যখন স্কুল লাইফে ছিলাম তখন আমার এক কাকা ছিল যে আমার বাড়িতে আসতই আমার ভুল বের করার জন্য,আর বলত আমার দ্বারা জীবনে কিছু সম্ভব না।তখন ছোট মানুষ ছিলাম কিছু বুঝতাম না,এই কথাটাই মাথার মাঝে গেথে গিয়েছিল।নিজেরে অপদার্থ ভাবা শুরু করলাম।তারপর এক মামা বুঝাল যে তুমি লাইফে কি করবা না করবা সেটা তোমার হাতে।কে কি বলল তাতে কিছু যায় আসে না।এখন তুমি যদি উনার কথা ধরে ভাব জীবনে কিছু করতে পারবে না,তাইলে আসলেই কিছু করতে পারবে না।তার থেকে ভাল কিছু করে উনাকে দেখিয়ে দাও যে উনি কতটা বোকা।

এখন আসি এধরনের মানুষের সাথে কিভাবে ডিল করবেন।

১.টক্সিক মানুষদের মুল উদ্দেশ্যই থাকে আপনাকে কষ্ট দেওয়া।তাই আপনি সিম্পল একটা কাজ করতে পারেন।তাদের সম্পূর্ণ ইগনোর করতে পারেন।বিশ্বাস করেন এর থেকে বড় প্রতিশোধ আর হয় না।টক্সিক মানুষরা এটা সহ্যই করতে পারে না।

২.টক্সিক মানুষটি যদি আপনার কর্মক্ষেত্রের হয়ে থাকে তবেও সেম,আপনি নিজের কাজে ফোকাস করুন।তাদের সাথে কখনোই তর্কে যাবেন না। আপনার সফলতা দিয়ে আপনি তাদের মুখ বন্ধ করুন।আর যদি অকারনেই আপনার সাথে বেশি লাগে তাইলে উচ্চতর কর্মকর্তা দের জানান।তারাই ব্যবস্থা নেবে।

৩.টক্সিক মানুষরা সব সময় চাইবে আপনাকে ডিমোটিভেট করতে।আপনি যদি ডিমোটিভেট হয়ে পরেন বা ব্যর্থ হন তবে কিন্তু তারাই জিতে গেল। তাই তারা আপনাকে যত যাই বলুক এক কান দিয়ে শুনে অপর কান দিয়ে বের করে দিন।

৪.আপনার লাইফে যদি কোন টক্সিক বন্ধু থাকে তবে তাকে লাইফ থেকে বিদায় করুন।এরকম বন্ধু থাকার থেকে না থাকাই ভাল।এরা আপনার কোন উপকারেই লাগবে না উলটো আপনাকে সবসময় মানসিক অশান্তি তে রাখবে।

৫.টক্সিক মানুষ টি যদি আপনার আত্মীয় হয় তবে তাকে লাইফ থেকে বাদ দিতে পারবেন না।এমন হলে তার সাথে সরাসরি কথা বলুন।তাকে বুঝান আপনার লাইফে নাক গলানোর অথবা আপনার লাইফ নিয়ন্ত্রণ করার দরকার তার নেই।

৬.টক্সিক মানুষ টি যদি আপনার প্রেমিক প্রেমিকা, স্বামী বা স্ত্রী হয় তবে তাকে আগে কাউন্সিলিং করান।তারপরেও ঠিক না হলে সে সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসুন।কারন টক্সিক রিলেশন শিপ সবসময়ই খারাপ ভাবে শেষ হয় যেমনঃডমেস্টিক ভায়োলেন্স,আত্মহত্যা,খুন ইত্যাদি।তাই দেরি হওয়ার আগেই বেরিয়ে আসুন এমন সম্পর্ক থেকে।

৭.নিজের চারপাশে একটি বৃত্ত বানিয়ে নিন।এর মাঝে কোন টক্সিক মানুষকে জায়গা দেবেন না৷ সব সময় নিজের উপর বিশ্বাস রাখবেন।নিজের যেটাতে ভাল লাগে সেটাই করবেন।

নিজের জীবনটাকে উপভোগ করুন।মানুষ কথা শোনাবেই কারন আপনি যে কাজ টা করতে পারছেন তারা হয়ত সেটা তে ব্যর্থ, তাই তারা চায় আপনিও যাতে সেই দলে নাম লেখান।তাই কে কি বলল তাতে কান না দিয়ে আপনি এগিয়ে যান।

এঞ্জয় ইয়োর লাইফ