জীবিকা
কে শুনে কার কথা, কে বোঝে অন্যের ব্যথা। সবাই তো ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। নিজেই চলতে হিমশিম খাচ্ছি, সেখানে অন্যকে নিয়ে ভাবতে গেলে বড্ড মাথা ব্যথা বেড়ে যায়।
তবে এসবের মাঝেও যখন এদিক-সেদিক তাকিয়ে মানুষগুলোকে দেখার চেষ্টা করি, তখন কোথায় যেন গুলিয়ে যাই। চারিপাশে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকা-পয়সার হিসেব নিকেশ হচ্ছে , অথচ এই মানুষগুলোর জীবন কিভাবে কেটে যাচ্ছে, সেটা ভাবতেই যেন গা শিউরে উঠছে।
এমন চিন্তা যে শুধু আমার একার হয়, তা আমি বলবো না। হয়তো স্থান ভেদে অন্য কারো ভাবনায় এমন চিন্তার উদয় হতে পারে। স্বল্প আলাপচারিতায় যা বুঝলাম, পৃথিবীটা যে এখন এই মানুষগুলোর জন্য নরকে পরিণত হয়েছে, তা যেন একদম মিথ্যে কথা নয়।
কাগজের রঙিন ফুলগুলো দেখতে আসলেই সুন্দর। তাতে ভদ্রলোক যে কারুকার্য করেছে তা আসলেই প্রশংসনীয়। তবে এই প্রশংসায় আর যাই না হোক কেন, তাতে কোন অবস্থাতেই পেটের ক্ষুধা দূর হয় না।
সর্বোচ্চ সুন্দর যে ফুলটি আছে, সেটার দাম ২৫ টাকা আর বাকিগুলো তো ১০ টাকা করে। সময়টা যে তার পক্ষে নেই, এটা তার চোখের চাহনি বলে দিচ্ছে।
শহরের দিকে খুব একটা যাওয়া হয় না। সেখানে তো হরেক রকমের প্লাস্টিকের খেলনার বাহারি সমাহার, সেখানে এই কাগজের ফুল কেনার ক্রেতা কই। তাই এই গ্রামীণ রাস্তায় কিছুটা ছোটাছুটি।
মাছ-মাংসের স্বাদ তো বহু আগেই ভুলে গিয়েছি। হয়তো বাড়িতে বউ মুরগী পোষে বিধায় মাঝে মাঝে ডিম খাওয়ার সৌভাগ্য হয়।
কি একটা অবস্থা, তাই না। তবে প্রিয় পাঠক যা দেখলেন বা শুনলেন, এটাই কিন্তু বাস্তব। এসবই হচ্ছে আশেপাশে।
দুপুরে যে আমি রুই মাছের বড় পেটি দিয়ে ভাত খেয়েছি,সেই তরকারির গন্ধ যেন এখনো আমার হাত নাকের কাছে নিয়ে গেলেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে ঐ ভদ্রলোকের দিকে যখন তাকাচ্ছি, তখন যেন নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে।
যেখানে রিক্সায় বসে ছিলাম তার ঠিক পিছনেই ছোট্ট একটা খাবারের দোকান ছিল। সেখানেই মূলত একটু আগে চা খেয়েছিলাম আর সেই বিরতিতেই মূলত এই রঙিন কাগজের ফুল বিক্রেতার সঙ্গে দেখা হয়েছিল । আমি এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম তবে বাবুর জন্য এড়িয়ে যেতে পারিনি। অবশেষে বাবুর জন্যই ভদ্রলোক কে ডেকে ছিলাম।
একশো টাকার একটা নোট হাতে দিয়ে ছিলাম আর কাছে ডেকে বলেছিলাম বাকিটা ফেরত দিতে হবে না। পিছনের যে খাবারের দোকানটা আছে, সেখানে গিয়ে ডিম ভাজি দিয়ে পরোটা খেয়ে নিয়েন।
ঊর্ধ্বগতির দ্রব্য মূল্যের বাজারে, এমন চিত্র প্রতিনিয়তই আশেপাশে দেখা যাচ্ছে। এই বাজারে কেউ টিকে থাকছে আর কেউ পরাজয়ের গ্লানি মেনে নিচ্ছে। তবে তারপরেও বেঁচে থাকুক সবাই।
কারণ ওরাও মানুষ, ঠিক আমার আপনার মতো। ওদেরও তো বাঁচার অধিকার আছে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
অনেক ভাল লাগলো আপনার লেখনি আর মন মানসিকতা দেখে।আর খারাপ লাগলো এই কাগজের ফুল বিক্রেতার কথা ভেবে।হে, তাইতো এরা ও তো মানুষ।এদের ও বাঁচার অধিকার আছে।এরা বেঁচে থাকলেই আমাদের বেঁচে থাকাটা সার্থক হবে।সবাইকে এদের পাশে দাঁড়াতে হবে।ধন্যবাদ ভাইয়া।খুব সুন্দর লিখেছেন।
আর হে, শায়ানকে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে। 🥰😍
সত্যি ভাইয়া আপনি খুবই উদার মনের মানুষ। যেমন লোকটিকে দেখে আপনার খারাপ লেগেছে বিধায় আপনি তাকে ১০০ টাকা নোট দিয়ে বললেন আর ফেরত দিতে হবে না। নিশ্চয়ই লোকটির খুশি ভাষা প্রকাশ করার মত না। আপনি ঠিক বলেছেন ওরাও তো মানুষ কত কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করে।কাগজ বিক্রেতার কথাগুলো শুনে খুব খারাপ লাগলো।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কেউ টিকে আছে কেউ না খেয়ে আছে। আসলে এদেরকে দেখার মত কেউ নেই। সাধারণ এই মানুষগুলো হয়তো দুবেলা ভালোভাবে খেতে পারে না। তাদের কাছে মাছ মাংস কেনা অনেকটা বিলাসিতা। সত্যি ভাইয়া আপনি তাকে সাহায্য করেছেন এবং খাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো। এভাবে যদি সবাই এসব মানুষদের পাশে দাঁড়াতো তাহলে তারা দুবেলা ভালোভাবে খেতে পারতো।