অনুগল্প: অনুভূতিতে শুধুই তুমি ||[10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনুগল্প লিখতে আমার দারুন লাগে। তাই মাঝে মাঝেই বিভিন্ন অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করি। তাই আজকে আমি নতুন একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা এই অনুগল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

অনুভূতিতে শুধুই তুমি:

heart-g84dcca56f_1920.jpg
source


ভালোবাসা হৃদয়ের অনুভূতি থেকে তৈরি হয়। হৃদয়ে জমা উষ্ণ অনুভূতি গুলো ধীরে ধীরে ভালোবাসায় রূপ নেয়। মারুফ ও নাদিয়া ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে। মারুফ ও নাদিয়া একই ক্লাসে পড়তো। দুষ্টু মিষ্টি খুনশুঁটির মাঝে তাদের বেড়ে ওঠা। শৈশব থেকে কৈশোর এরপর বড় হওয়া। সবকিছুই যেন একই সাথে। হয়তো তখন তাদের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল না। তবে দুজনের মাঝে বেশ বন্ধুত্ব ছিল। তারা তাদের জীবনের অনেকটা সময় একসাথে কাটিয়েছে। নাদিয়া যখন ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো তখন পারিবারিক শাসনের বাঁধনে আটকা পড়ে গেল। তাই এখন আর মন চাইলেই মারুফের সাথে ঘুরে বেড়াতে পারে না। কারণ সমাজ তা ভালো চোখে দেখে না।

নাদিয়ার এই দূরে চলে যাওয়া মারুফের মনে শূন্যতা তৈরি করেছে। মারুফ জানে না কিসের এই শূন্যতা। শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারছে তার জীবন থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। নাদিয়ার সাথে আগের মত খুব একটা কথা হয় না মারুফের। শুধু ক্ষণিকের দেখা হয়। কারণ তারা দুজনেই এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। হয়তো সামাজিকতার অদৃশ্য শিকলে তারা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। তাইতো আজ তাদের মাঝে অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়েছে। যেই মানুষদুটো শৈশব থেকে একসাথে বড় হয়েছে সেই মানুষ দুটোর মাঝে আজ অনেক বড় একটি প্রাচীর তৈরি হয়েছে। এভাবে যখন মারুফ আর নাদিয়ার দিন কাটছিল তখন ধীরে ধীরে দুজন দুজনের প্রতি আলাদা রকমের অনুভূতি অনুভব করছিল। যখন তারা কাছাকাছি ছিল তখন হয়তো সেই অনুভূতি তাদের তৈরি হয়নি। কিন্তু যখন তাদের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তখন একে অন্যের প্রতি আলাদা রকমের অনুভূতি তৈরি হয়েছে। হয়তো সেই অনুভূতি হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে ছিল। হয়তো তাদের দুজনের মনের কথা কখনো বলা হয়নি।

মারুফ ও নাদিয়া দুজনের একসাথে বেড়ে ওঠা। কিন্তু তবুও কেন জানি দুজনের মাঝে ধীরে ধীরে জড়তা তৈরি হয়েছে। এখন নাদিয়া মারুফকে দেখলেই অনেকটা লজ্জা পায়। অন্যদিকে নাদিয়ার মায়াবী চেহারা দেখে মারুফের মন উতোলা হয়ে যায়। হয়তো তাদের মাঝে আলাদা রকমের আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। মারুফ ও নাদিয়ার মনে ভালোবাসা দোলা দিয়েছে। একদিন সাহস করে মারুক একটি গোলাপ ফুল ও একটি চিঠি নিয়ে নাদিয়ার সামনে দাঁড়ালো। নাদিয়া লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে গেল। লাল গোলাপ ও একটি চিঠি নাদিয়ার খুবই ভালো লাগলো। পরের দিন নাদিয়া সেই চিঠির উত্তর দিল। এভাবে ধীরে ধীরে চলতে লাগলো তাদের মিষ্টি প্রেম। খেলার সাথী কখন তাদের জীবনসঙ্গীর পর্যায়ে চলে গিয়েছে তারা তা বুঝতেই পারেনি। হয়তো সময়ের ব্যবধানে তাদের মাঝে অনুভূতিগুলো বদলে গেছে। তাই তো আজ ভালোলাগার অনুভূতি গুলো ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে।

এভাবে তাদের দিন কেটে যাচ্ছিল। তাদের দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের সম্পর্ক যেন আরও বেশি মধুর হয়ে উঠছিল। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা, একে অন্যকে চিঠি দেওয়া, সবকিছুই যেন তাদের জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছিল। এরপর এভাবেই যখন তারা দিন কাটাতে লাগলো তখন হঠাৎ করেই একদিন নাদিয়ার বিয়ের জন্য পাত্রপক্ষ দেখতে আসলো। নাদিয়া এই বিয়েতে রাজি ছিল না। নাদিয়ার অমতেই পাত্রপক্ষের সামনে নাদিয়াকে নিয়ে আসা হলো। পাত্র নাকি বড় ব্যবসায়ী। অনেক টাকার মালিক। তাইতো নাদিয়ার বাবা-মা এই বিয়েতে রাজি হয়েছিল। নাদিয়া সম্পূর্ণ পরিস্থিতি যখন সামলে নিতে পারছিল না তখন এক ছোট বোনের মাধ্যমে মারুফকে খবর দিল যে সে পালিয়ে যেতে চায়। সেদিন মারুফ অনেক কেঁদেছিল। কারণ তার ভালোবাসার নাদিয়া অন্য কারো ঘরের ঘরণী হতে চলেছে। মারুফ সেদিন নাদিয়ার হাত ধরে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। মারুফ যখন পালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল ঠিক তখনই মারুফের মা এসে তার দুটি হাত ধরে বলে তুই এই কাজটি করিস না বাবা। নাদিয়ার বাবার কাছে আমরা অনেক ঋণী। তোর বাবার অসুস্থতার সময় তিনি আমাদেরকে অনেক সাহায্য করেছেন।তুই যদি আজ এই কাজটি করিস তাহলে তাদের কাছে আমরা অনেক ছোট হয়ে যাব। এছাড়া তুই আজকে বেকার বলে আমরা নাদিয়ার বিয়েটা আটকাতে পারছি না। কারণ অনেক বড় ঘরে নাদিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি জানি তোর অনেক কষ্ট হবে আমিও যে বড় নিরুপায় বাবা। মায়ের অনুরোধে সেদিন মারুফ কিছুই করতে পারেনি। হয়তো নাদিয়া তার অপেক্ষায় ছিল। নিজের চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলেছিল মারুফ।

আজ অনেক বছর পর নাদিয়ার সাথে দেখা হয়েছে মারুফের। তার কোলে ছোট্ট ফুটফুটে একটি বাচ্চা। মেয়েটি দেখতে ঠিক যেন নাদিয়ার মতই হয়েছে। নাদিয়া ছোটবেলায় যেমন দুষ্টু ছিল তার মেয়েটিও ঠিক তেমনি হয়েছে। অনেকদিন পর যখন নাদিয়াকে দেখছিলাম তখন নাদিয়ার চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারছিল না। হয়তো তাকাতে চাইছিলাম না। আমি তার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছিলাম না। কারণ ভেতর থেকে এক অদৃশ্য অপরাধবোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। হয়তো দুজনের ভাগ্যে এই লেখা ছিল। তাইতো আমরা দুজনে আলাদা হয়ে গিয়েছি। কিন্তু অনুভূতিতে সেই নাদিয়া আজও আছে মারুফের জীবনে। হয়তো নাদিয়াকে দেখলে আজো সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। কারণ প্রথম প্রেমের অনুভূতি ও প্রথম প্রেমের স্মৃতিগুলো কখনো মুছে ফেলা যায় না। তাই তো সে আজও আছে তার অনুভূতিতে।

আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে জানিনা। তবে আমি চেষ্টা করেছি সুন্দর একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। আশা করছি আমার লেখা অনুগল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।


f82b22f9-8ba1-4faa-94e8-4250452f3e5b.jpeg


Logo.png


🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹

Sort:  
 2 years ago 

আপনি একদম ঠিক বলেছেন। ভালোবাসা হৃদয়ের অনুভূতি থেকে তৈরি হয়। আসলেই হৃদয়ে জমা উষ্ণ অনুভূতি গুলো ধীরে ধীরে ভালোবাসায় রূপ নেয়। এভাবে মূলত ভালবাসার পূর্ণতা আসে।♥♥

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 66028.29
ETH 2694.36
USDT 1.00
SBD 2.89