বিষয় -- ৫ | | স্মৃতিময় সেই গানটি | | @shimulakter
আজ ১৭ ই শ্রাবন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ,বর্ষাকাল
১ লা আগস্ট ২০২২ইং
হ্যালো,
“ আমার বাংলা ব্লগ “ এর সকল ভারতীয় ও বাংলাদেশী সদস্যগণ আসসালামু আলাইকুম , আদাব । কেমন আছেন সবাই ? আশাকরি ভাল আছেন । আমিও আপনাদের শুভকামনায় ভাল আছি । বন্ধুরা , আমি আজ আমার জীবনের ফেলে আসা একটি ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি ।
যখন আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়তাম , তখন থেকেই ঘটনাটা শুরু করছি । ক্লাসে রোল দেখে ক্যাপ্টেন করলেও , আমি কখনো ক্যাপ্টেন হইনি । যদিও আমার রোল ২ ছিল । কারণটা হল, আমি খুব চুপচাপ , শান্ত প্রকৃ্তির ছিলাম । এত সব ঝুট ঝামেলা আমার দ্বারা সম্ভব ছিল না । তাই ক্যাপ্টেন আমি কখনও হইনি । রোল ১ , আর ৮ এই দুজনকে ক্যাপ্টেন করল ক্লাস টিচার ।আমি খুব খুশি হলাম , ক্যাপ্টেন না হতে পেরে ।
এভাবেই দিন কাটছিল ভালোই । ৮ রোল ছিল যে মেয়েটি নাম তার ‘মুক্তা’ । আমার আজকের এই ঘটনাটা এই ‘মুক্তা ‘নামের মেয়েটিকে ঘিরেই ।আমি আমার ঘটনা এখান থেকেই শুরু করছি --
মুক্তার গায়ের রঙ উজ্জ্বল ফর্সা ছিল। ওর মুখটা গোল আকৃতির ছিল ।আজও মুখটা আমার মনে গেঁথে আছে । মুক্তার চুল মাঝারি ধরনের ছিল আর সিল্কি ছিল । সব সময় দুইটা বেণী করে আসতো । ‘মুক্তা’, ক্লাসের ডানদিকটায় বসতো । আর আমি আমার ফ্রেন্ডদের নিয়ে বামদিকটায় বসতাম ।
মুক্তা যদিও আমার ফ্রেন্ড না , তারপরেও টিফিনের সময় আমরা একসাথে খেলতাম । যে দিন কোন একটা ক্লাসে ম্যাডাম না আসতো , তখন আমরা এক সাথে গানের প্রতিযোগিতা করতাম ।খুব ভাল দিন এভাবেই কেটে যাচ্ছিল । আমাদের এক্সাম হল , আমরা বেশ ভাল রেজাল্ট ও করলাম । এভাবে আমরা এক এক করে ফাইনাল এক্সাম ও দিলাম । আমার রোল আবার অষ্টম শ্রেণীতে ২ হল । আর মুক্তার হল ৫ । অষ্টম শ্রেণীতে উঠে মুক্তা আবার ও ক্যাপ্টেন হল ।
একদিন বাংলা ম্যাডাম অসুস্থ থাকার কারনে স্কুলে আসেনি ।তাই সেদিন তার পরিবর্তে অন্য একজন ম্যাডাম আমাদের ক্লাস নিতে এলো । ম্যাডাম এসে সেদিন আমাদের সাথে গল্প করছিল । আর বলছিল, আজ আমরা পড়ব না । আজ আমি দেখব , তোমরা কে , কি পারো । কেউ গান কর, কেউ কবিতা আবৃত্তি কর ,কেউ বা কৌতুক বলো । এক এক করে যে যা পারছিল , তা বলে যাচ্ছিল । যখন সবার বলা শেষ , তখন মুক্তা গান গাইবে বলল । তখন মুক্তা গান শুরু করল - ভারতীয় শিল্পী “ মান্না দে” র কফি হাউজ গানটি । গানটি সেদিন ভালোই গেয়েছিল ।
এই গানটি যে মুক্তার শেষ গান হবে , সেটা না আমি বুঝেছি , না মুক্তা বুঝেছিল ।খুব সুস্থ মানুষ , হঠাৎ কিছুদিন পরে একদিন মুক্তা স্কুলে এলো না । মনে করলাম অসুস্থ । ২ দিন পর স্কুলে এল মুক্তা । ম্যাডাম জানতে চাইল , মুক্তা বলল ম্যাডাম জ্বর হয়েছিল তাই আসিনি । ম্যাডাম দুষ্টুমি করে আবার বলল , ক্যাপ্টেন না এলে কি আর হয় ।এভাবেই চলে যাচ্ছিল সময় ।
বেশ কয়েক মাস পর , এক দিন সকালে হঠাৎ স্কুলে খবর এলো -অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী, মুক্তা আক্তার - রোল -৫ আজ ভোরে মারা গেছে । খবরটা শুনে আমরা স্তব্ধ হয়ে গেলাম । আমাদের চোখের কোনে পানি জমে গেলো ।বিশ্বাস হচ্ছিল না কারোই । সুস্থ মানুষ , কিভাবে কি হল। ম্যাডাম নীচে চলে গেল । পরে স্কুল ছুটি হয়ে গেল । নীচে গিয়ে জানতে পারি , মুক্তার ‘ব্লাড ক্যান্সার ‘ হয়েছিল । মুক্তার বাবা-মা জানতো । শুধু মুক্তা ই জেনে যায়নি ,যে ওর শরীরে মরনঘাতি ক্যান্সার হয়েছে । এত খারাপ লাগা মনের ভেতর কাজ করছিল , তা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই ।এই খারাপ লাগা আজ ও আমার মধ্যে এক ই রকম রয়ে গেছে ,কিছুই পরিবর্তন হয়নি ।এত অল্প বয়সে , এত সুন্দর একটা প্রান ঝরে গেলো ,এটা কিছুতেই মন মানে নি আমার ।আজও মানতে পারছি না ।আল্লাহ্ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন ,এটা বলা ছাড়া আর কি বা করার আছে ।তবে দোয়া করি ,যেখানে আছে আল্লাহ্ ওকে জান্নাত দান করুন।
মুক্তার ছোট এক বোন , আর ছোটএক ভাই আছে । মুক্তা ই বড় ছিল পরিবারে । দিনটি আজও আমি ভুলিনি । সেই দিন থেকে ই আমি ‘ব্লাড ক্যান্সার ‘ রোগটির সাথে পরিচিত হলাম।
মুক্তার “কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই “এই গানের সাথে ওর জীবনের দিনগুলো যে শেষ হয়ে যাবে , বুঝিনি । আজ ও গানটা কোথাও যদি শুনি , তবে ওই দিনটির স্মৃ্তিতে আমি হারিয়ে যাই ।আমার দুচোখ পানিতে ছলছল হয়ে যায় ।এই গানটি আমার জীবনে মুক্তা নামের মেয়েটির জন্য স্মৃতিময় ই হয়ে গেল । আমি পথে অনেক মানুষ দেখি , ওর মুখের আদল আমি খুঁজতে থাকি সবার মুখে ।কিন্তু তেমন মুখ আমি কোথাও দেখতে পাই না ।অষ্টম শ্রেণীতে পড়া একটি মেয়ে ,এই আমি প্রচণ্ড রকমের একটা কষ্ট পেলাম ।যা কিনা আমি আজও ভুলিনি ।
বন্ধুরা, গল্পের মত মনে হলেও , ঘটনাটি সত্যি । আমার মনের ভেতর একটা কষ্ট হয়ে মুক্তা নামের মেয়েটি আজও আছে । আমার ঘটনাটি আপনাদের কতটা খারাপ লেগেছে আমি জানি না । তবে আমি যখন লিখছিলাম , তখন ওই দিনেরগুলোতে চলে গিয়েছিলাম । লিখতে লিখতে আমি আমার চোখের দুই কোনে জল অনুভব করছিলাম ।
আজ এ পর্যন্তই । আর কিছু লিখব না ।সবাই সুস্থ থাকবেন, ভাল থাকবেন ।আবার নতুন কোন ব্লগ নিয়ে হাজির হব ।
আল্লাহ্ হাফেজ
আমি শিমুল আক্তার
বাংলাদেশ,ঢাকা থেকে
আপনার পোস্টটি পড়ার পরে সত্যি আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি!! কি লিখবো বুঝতে পারছি না!! সত্যিই অনেক খারাপ লাগছে মুক্তা নামের সেই আপুটির জন্য এবং সেইসাথে সেই গানের স্মৃতি......
সত্যিই অনেক খারাপ লাগছে আপু। আপনার পোস্টে কথা বলতে গেলে আপনার পোস্ট অনেক চমৎকার হয়েছে। সাথে মার্কডাউন এর ব্যবহার অনেক ভালো ছিল। এভাবেই ভালো ভালো পোস্ট করে যাবেন, এটাই কামনা করছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে। আমি চেষ্টা করে যাব, ভাল কিছু করার। সাপোর্ট করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার গল্পটি পড়ে আপু খারাপ লাগলো 😥। মুক্তা মেয়েটি অবশেষে ব্লাড ক্যান্সারে মারা গেল। কিন্তু আপনার স্মৃতিতে থেকে যাবে মুক্তার গলায় গাওয়া সেই কফি হাউজের গানটি।
হে ভাইয়া, সেই মুখ, সেই গান, সেই অনুভূতি কখনও ভুলতে পারব না আমি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
কিছু স্মৃতি আমাদের এমন ভাবে মনে রাখে যা কখনো ভোলার মত নয়। গানটার মানে এতটা স্মৃতিতে সব বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারার গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। প্রিয় মানুষ হারালে খুব কষ্ট হয় ।আমি প্রার্থনা করি আপনার বন্ধু পরপারে যেন ভালো থাকে।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপু মুক্তা যেখানেই থাক মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক আমিও এই কামনা করছি। এত অল্প বয়সে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে মুক্তা। এটা আসলেই মেনে নেয়া যায় না। আপনার স্মৃতিময় সেই গানটি এবং মুক্তা মারা যাওয়ার ঘটনাটি সত্যিই বেদনাদায়ক।
সত্যি ই খুব কষ্টের। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।