অর্থ আর স্বার্থ: চরিত্র বদলের অদৃশ্য রূপান্তর||~~
সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও বেশ ভালো আছি আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন এটাই প্রত্যাশা করি।
অর্থ আর স্বার্থ: চরিত্র বদলের অদৃশ্য রূপান্তর
🥀 জেনারেল রাইটিং 🥀
মানুষের জীবনচক্রে অর্থ এবং স্বার্থ এমন দুটি শক্তি যা তার চিন্তা, মনোভাব, এবং চরিত্রকে প্রভাবিত করে। আমাদের সামাজিক কাঠামো এবং জীবনধারা এতটাই অর্থকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে যে, অর্থ বা স্বার্থের প্রতি প্রবল আকর্ষণ আমাদের অনেক সময় বাস্তব চেতনাকে আচ্ছন্ন করে দেয়। এই দুই শক্তির প্রভাব এতটাই সুক্ষ্ম এবং গভীর যে, একজন ব্যক্তির আচরণ ও চারিত্রিক পরিবর্তন খুব সহজেই উপলব্ধি করা যায় না, তবে ধীরে ধীরে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অর্থের প্রভাব
অর্থ আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি জীবনযাত্রার মান বাড়ায়, জীবনকে আরামদায়ক করে তোলে এবং ভবিষ্যৎকে নিরাপদ করার জন্য আমাদের একটি ভিত গড়ে দেয়। তবে অর্থের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি বা লালসা অনেক সময় মানুষের চরিত্রকে কলুষিত করতে পারে। অর্থ তখন কেবল একটি প্রয়োজনীয়তা নয়, বরং জীবনযাত্রার মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ তার নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে অর্থ উপার্জনের জন্য যে কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত হয়ে যায়। অর্থের প্রতি অতিমাত্রায় আকর্ষণ মানুষকে স্বার্থপর, নিষ্ঠুর এবং নির্দয় করে তোলে।
আধুনিক সমাজে আমরা প্রায়ই দেখি, অর্থের কারণে মানুষের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। প্রাচুর্য এবং বিত্তের প্রতি মানুষের আকর্ষণ তাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং লোভী করে তোলে। ধন-সম্পত্তির মালিক হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় অনেকে অসাধু উপায়ে অর্থ উপার্জন করতে পিছপা হয় না। এমনকি পারিবারিক বন্ধন ও সম্পর্কগুলোও অর্থের কারণে ভেঙে যায়। আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়, বিশ্বাসের অবনতি ঘটে, এবং বন্ধুত্বের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
স্বার্থের ভূমিকা
অন্যদিকে, স্বার্থ একটি মানুষের ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক চাওয়া-পাওয়ার নির্দিষ্ট অভিলাষ। এটি কখনো প্রকৃত, কখনো অপ্রকৃত। স্বার্থপ্রবণতা মানুষের মধ্যে স্বকেন্দ্রিকতা তৈরি করে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা বা নৈতিকতার প্রতি অবজ্ঞা জাগিয়ে তোলে। কেউ নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যখন প্রতারণা, ধোঁকা বা অন্যায়ভাবে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, তখন তার চরিত্রে ধ্বংসাত্মক পরিবর্তন আসে।
স্বার্থের টানে একজন ব্যক্তি অনেক সময় তার নিকটতম প্রিয়জনদের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে যে আন্তরিকতা এবং বিশ্বাস থাকে, তা ভেঙে পড়ে যখন ব্যক্তি নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে অন্যকে অবজ্ঞা করে। চাকরি, ব্যবসা, শিক্ষা, এমনকি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত স্বার্থ বড় হয়ে দেখা দেয়। এই ব্যক্তিগত স্বার্থকেন্দ্রিক মানসিকতা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে, সহানুভূতি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশকে ধ্বংস করে।
চরিত্রের বদল: এক অদৃশ্য রূপান্তর
অর্থ এবং স্বার্থের প্রভাবে মানুষের চরিত্রের পরিবর্তন ঘটে ধীরে ধীরে। প্রথমে এটি খুব সহজে চোখে পড়ে না। একজন ব্যক্তির নৈতিকতার স্তম্ভ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়, এবং এক সময় সে নিজের মূল্যবোধকে পেছনে ফেলে শুধুমাত্র নিজের লাভের দিকেই মনোনিবেশ করে। এই পরিবর্তন প্রাথমিকভাবে খুব সূক্ষ্ম হতে পারে, তবে দীর্ঘ সময়ে তা গভীর হয়ে যায়। সৎ মানুষ মিথ্যা বলে, পরিশ্রমী মানুষ সহজ পথ খুঁজতে শুরু করে, এবং বিশ্বাসী মানুষ বিশ্বাসঘাতক হয়ে ওঠে।
সমাজে আমরা প্রায়শই এমন উদাহরণ দেখি, যেখানে মানুষ অর্থ বা স্বার্থের লোভে তাদের প্রকৃত চরিত্র থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। তারা হয়তো সমাজে তাদের অবস্থান, সম্পদ, বা ক্ষমতা অর্জন করেছে, কিন্তু নৈতিক দিক থেকে তারা হয়ে উঠেছে শূন্য। অর্থের কারণে নৈতিকতার পথে থাকা মানুষ ভুল পথে পা বাড়ায়, এবং স্বার্থের কারণে সম্পর্কগুলো ছিন্ন হয়ে যায়।
সামগ্রিক প্রভাব
অর্থ এবং স্বার্থের কারণে মানুষের চরিত্রের যে পরিবর্তন ঘটে, তা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এর প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে পড়ে। পরিবার, বন্ধুত্ব, পেশা, এবং রাজনীতি—সব ক্ষেত্রেই অর্থ এবং স্বার্থ চরিত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে সমাজে অসাম্য, অবিচার, এবং দুর্নীতির বিস্তার ঘটে। সমাজে স্বার্থপরতার বিষবৃক্ষ ছড়িয়ে পড়ে, এবং আন্তরিকতা ও নৈতিকতার ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়।
উপসংহার
অর্থ এবং স্বার্থ নিঃসন্দেহে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে এগুলোকে জীবনের মূল লক্ষ্য বানালে তা ব্যক্তির চরিত্রকে ধ্বংস করে। নৈতিক মূল্যবোধ এবং সততা, মানবিকতা এবং সহমর্মিতা—এগুলোই একটি মানুষের প্রকৃত পরিচয় গড়ে তোলে। অর্থ এবং স্বার্থের প্রতি অতিমাত্রায় আকর্ষণ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারলেই কেবল আমরা সঠিকভাবে চরিত্রের উন্নয়ন করতে পারি এবং সমাজে সত্যিকারের মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।
বন্ধুরা আমার আজকের এই জেনারেল রাইটিং টি , নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর ব্লগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। আমি সেলিনা সাথী
💞
🥀 ধন্যবাদ 🥀
আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।
বিষয়: জেনারেল রাইটিং
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
কথায় বলে অর্থই অনর্থের মূল। অর্থ আমাদের চরিএকে খুব সহজেই প্রভাবিত করতে পারে। ঠিক একইভাবে স্বার্থ ব্যাপার টাও তাই। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য মানুষ আর মানুষ থাকে না।তবে অর্থ এবং স্বার্থের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের ব্যক্তিগত চরিএ বা মনুষ্যত্ব। এগুলো ধরা রাখাই আসল। কিন্তু এগুলো সহজে কারো বোধগম্য হয় না।