হঠাৎ ভাগ্য বদল (শেষ পর্ব)।
শামসু তখন বলতে লাগলোঃ নদীর অবস্থা এমন হইলো কেমনে সালাম ভাই? আগে জাল ফালাইলেই মাছ পাইতাম। এখন হাজার চেষ্টা করেও কোন মাছ পাই না।
সালাম মিয়া তখন বলতে লাগলোঃ নদীর আর কি দোষ কও। এই নদীরে তো আমরাই মাইরা ফালাইতাছি। নদীর ভিতর কলকারখানার ময়লা আবর্জনা, মানুষের ময়লা আবর্জনা, প্লাস্টিক, পলিথিন দিয়ে নদীরে আমরা শেষ কইরা ফালাইছি। তার ওপর আছে আবার দখলদারদের যন্ত্রনা। যার যেমন ইচ্ছা সে সেখান থেইকা নদী দখল করতাছে। নিজের ক্ষতি আমরা নিজেরাই করতাছি।
শামসু সালাম এর সাথে সহমত পোষণ করল। বলল ঠিকই কইছো। আগে কত সুন্দর অল্প কিছুক্ষণ জাল ফেলাইলেই কত মাছ পাইতাম। বাজারে বেচতেও পারতাম নিজেরা খাইতেও পারতাম। আর এখন তো মাছের কোন দেহাই পাই না। সামসু বির বির করে বলতে থাকলো নদীর এমন অবস্থা হইলে আমরা কি করবো? মাছ ধরা ছাড়া তো আর কোন কাম ও পারি না। আমাদের কি হইব তাইলে? সালাম মিয়া কথাগুলো শুনে কোন উত্তর দিল না।
সালাম মিয়া শামসু কে বললঃ নৌকা নদীর যেই পাড়ে স্রোত বেশি সেই দিকে লইয়া যা। আইজ ওই দিকে চেষ্টা কইরা দেখি কিছু হয় কিনা।
সামসু তখন বললঃ দুয়ারি গুলান উঠাবা না?
সালাম মিয়া বললোঃ দুয়ারি সকালের দিকে ফেরার সময় ওঠামুনে। অহন জাল দিয়া মাছ ধরার চেষ্টা করি। মাঝরাত পর্যন্ত সালামিয়া বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে জাল ফেলতে লাগলো। কিন্তু দুই একটা ছোট মাছ ছাড়া জালে আর কোন মাছ পেল না। সালাম মিয়া নদীতে জাল ফেলছে আর অদৃশ্য কাউকে উদ্দেশ্য করে গালি দিচ্ছে। কিন্তু সারারাত চেষ্টা করার পরও জালে তেমন কোন মাছ পেল না।
আজকে তারা মাছ পেয়েছে গত দুই দিনের থেকেও কম। রাত ভর নৌকা চালানোর ফলে তাদের ইঞ্জিনের প্রায় ২০০-৩০০ টাকার তেল খরচ হয়। কিন্তু গত তিনদিন ধরে সেই তেলের খরচও উঠছে না। এদিকে প্রায় ভোর হয়ে এসেছে। সারারাত ধরে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর সালাম মিয়ার শরীর ভেঙে আসছে। আর চলতে চাইছে না। সালাম মিয়া মনে মনে চিন্তা করল আর ২-৩ বার জাল ফেলবে। তারপর বাড়ির দিকে চলে যাবে।
বাড়ির কথা মনে হতেই তার মনে পড়ল বাড়ি থেকে গতকালকে বের হওয়ার সময় তার স্ত্রী বলে দিয়েছে বাজার করে নিয়ে যেতে। ঘরের চাল, ডাল কিছুই নেই। আজ অল্প যে কয়েকটা মাছ পেয়েছে সালাম মিয়া ঠিক করেছে এ মাছ তার দুজনে ভাগ করে নিয়ে নেবে। কারণ এই ছোট মাছের বাজারে একেবারেই দাম পাওয়া যায় না। এর থেকে নিজেরা খেয়ে ফেলাই ভালো। এসব চিন্তা করতে করতে সালামিয়া শেষবারের মতো নদীতে জাল ফেললো।
নদীতে জাল ফেলার পর ধীরে ধীরে সে জালটা গুটিয়ে আনছিল। হঠাৎ করে বেশ জোরে একটা টান লাগলো জালের দড়িতে। সালাম মিয়া প্রথমে খুব একটা কিছু বুঝতে পারেনি। হঠাৎ তার মনে হলো জালে মনে হয় বড় কোন মাছ ধরা পড়েছে। সে তাড়াতাড়ি সামসুকে ডাকলো শামসুল তাড়াতাড়ি আয়। মনে হয় বড় মাছ পাইছি। ইতিমধ্যে জালের ভেতরের আটকা পড়া মাছ প্রচন্ড জোরে ছোটাছুটি শুরু করেছে। কিন্তু জালে পেচিয়ে যাওয়ার কারণে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। তারা দুজন মিলে অনেক কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত জালটা উপরে উঠাতে পারল। জাল উপরে উঠিয়ে দুজন খুশিতে চিৎকার করে উঠলো।
জালের ভিতরে বিশাল বড় একটা কাতল মাছ ধরা পড়েছে। সাইজ দেখে মনে হচ্ছে প্রায় এক মনের কাছাকাছি ওজন হবে। মাছটি দেখে তাদের দুজনের চোখ চকচক করে উঠলো। শামসু দেখতে পেলো সালাম মিয়া সৃষ্টিকর্তার কাছে দুহাত তুলে শুকরিয়া আদায় করছে। মাছটি তারা হাটে বিক্রি করে প্রায় ৪০ হাজার টাকা পেল। সেই টাকায় কিছু অংশ সামসু পেল। বাকি অংশ দিয়ে সালাম মিয়া নিজের ঋণ শোধ করলো। আর বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। (সমাপ্ত)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |