ছাত্র রাজনীতির করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত জীবন (প্রথম পর্ব)।
গ্রাম থেকে শহরে এসেছে সোহেলের আজ প্রায় দশ দিন হয়ে গেলো। সোহেল ঢাকা শহরে এসেছে মূলত একটি ভালো কলেজে চান্স পেয়ে। ছোটবেলা থেকেই সে লেখাপড়ায় বেশ ভালো। এই জন্য তার শিক্ষকগণ তাকে পরামর্শ দিয়েছিল কোন ভাল কলেজে পরীক্ষা দেয়ার জন্য। তাদের পরামর্শ মতো সেখানে পরীক্ষা দিয়ে সোহেল চান্স পেয়েছে। কিন্তু তাদের পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। যার ফলে তার ঢাকা শহরে এসে পড়ালেখা করার মত সঙ্গতি নেই। তবে সে শুনেছে এখানে হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করার খরচ বেশ কম। হোস্টেলে থাকা খাওয়ার খরচ খুবই অল্প।
তাই সে ঢাকায় এসে প্রথমে তার এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছে উঠেছে। সে তাকে বলেছিল কয়েকদিনের ভিতরেই কলেজ হোস্টেলে সিট জোগাড় করে সেখানে উঠে যাবে। কিন্তু সোহেল গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই কলেজ হোস্টেলে সিট জোগাড়ের চেষ্টা করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা হয়নি। এদিকে যার কাছে সে উঠেছে তার মতিগতি খুব একটা ভালো ঠেকছে না তার।সোহেলকে সে একটা উটকো ঝামেলা মনে করছে। প্রতিদিনই সে সোহেলকে জিজ্ঞেস করে কবে হোস্টেলে উঠবা? সোহেল তাকে আশ্বস্ত করে আমি চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হোস্টেলে ওঠার। আজ সোহেল ঠিক করেছে হলের যে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি তার সাথে সে দেখা করবে। যেভাবে হোক তার কাছে অনুনয়-বিনয় করে একটা সিটের ব্যবস্থা করতে হবে।
তাই সোহেল আজকে ক্লাস শেষ করে তাড়াতাড়ি হোস্টেলে চলে গেল। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি তিনি এখন সেখানে নেই। তিনি বাইরে গিয়েছেন বিকালের দিকে আসবেন। সোহেল চিন্তা করে দেখলো এখন যদি সে মেসে ফিরে যায় তাহলে তার আবার এখানে আসতে ভাড়া লাগবে। তার কাছে খুব বেশি টাকা নেই। যার ফলে বাড়তি খরচ করার কোন উপায় তার নেই। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল হল প্রভোস্ট আসার আগ পর্যন্ত সে সেখানেই বসে থাকবে। এদিকে দুপুর হয়ে গিয়েছে। তার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। সে হল থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশের টং দোকান থেকে একটি কলা এবং রুটি কিনে খেলো। সাথে দু গ্লাস পানি খেলো যাতে তার পেট ভরে।
তারপর আবার হলে এসে প্রভোস্টের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। সন্ধ্যার দিকে হল প্রভোস্ট এলেন। সোহেল তার কাছে গিয়ে অনেক অনুনয় বিনয় করল একটি সিটের জন্য। সোহেল তার সবকিছুই প্রভোস্টের কাছে খুলে বলেছে। কিন্তু তিনি সবকিছু শুনে সোহেলকে বললেন দেখো তোমার জন্য একটি সিটের ব্যবস্থা করতে পারলে আমার খুবই ভালো লাগতো। কিন্তু এখানকার কোন কিছুই নিয়ম মত চলে না। এই হলের সিটের বড় একটা অংশ বরাদ্দ দেয় রাজনৈতিক নেতারা। আর আমাদের কাছে যে রুমগুলি ছিল সেগুলিতে ইতিমধ্যে ছাত্ররা উঠে পড়েছে। সেখানে আর কোন সিট খালি নেই।
সোহেল একথা শুনে খুবই হতাশ হয়ে পড়ল। সে ধীর পায়ে সে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে সামনের একটা দোকানের বেঞ্চে গিয়ে বসে রইল। দীর্ঘক্ষণ সোহেল সেখানে মনমরা হয়ে বসে রইল। সোহেলের এই অবস্থা দেখে একটি ছেলে এসে তাকে জিজ্ঞেস করল তোমার কি হয়েছে? এভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে দেখছি এখানে বসে আছো। তখন সোহেল তাকে জানালো ভাই আমার একটা সিটের খুব প্রয়োজন। ঢাকা শহরে আমার থাকার জায়গা নেই। এক বড় ভাইয়ের কাছে আছি। তার কাছ থেকে দু-একদিনের ভেতর আমার চলে যেতে হবে। এখন হোস্টেলে সিট জোগাড় না করতে পারলে আমার পক্ষে আর এখানে থাকা সম্ভব হবে না।
ছেলেটি সোহেলের কথা শুনে তাকে বলল তুমি আমার সাথে আসো। দেখি কোন ব্যবস্থা করা যায় কিনা। ছেলেটি সোহেলকে নিয়ে গেল শরীফ নামে এক নেতার কাছে। সেই নেতার রুমে গিয়ে সোহেল অবাক হয়ে গেলো। এ রুমটি দেখে কোন ভাবেই বোঝার উপায় নেই এটি কোন কলেজের হোস্টেল রুম। কারণ সেখানে রুমের ভেতরে বড় একটি সুন্দর খাট পাতা রয়েছে। একটি সোফা সেট রয়েছে। আরও বেশ কিছু আসবাবপত্র রয়েছে। একদম বাসা বাড়ির মত রুমটা দেখে সোহেল খুবই অবাক হল। যে ছেলেটা সোহেলকে নিয়ে গিয়েছিল সে বলল ভাই এই ছেলেটা খুবই অসহায়। এর একটা সিট দরকার। দেখেন তো একটু ব্যবস্থা করে দেয়া যায় কিনা?
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
বর্তমানে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হোস্টেলে ঠিক এই গল্পের মতই অবস্থা ছাত্রদের নোংরা রাজনীতিতে ভরে উঠেছে। হয়তো এবার সোহেলের আর এলাকার বড় ভাইয়ের মেসে থাকতে হবে না, আশা করি হোস্টেলের সিট হয়ে যাবে। আর চায়ের দোকানে বসে কলা রুটিও খেতে হবে না। সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন ভাই একদম বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছেন।
ছাত্র রাজনীতির নামে কিছু ছাত্র সংগঠন এখন অপরাজনীতি করছে , তার সর্ব উত্তম জায়গা হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , যেখানে অপরাজনীতির দাম্ভিকতাই চলে সেটা হোক প্রাতিষ্ঠানিক কাজে বা হোস্টেল এর ব্যাপারে সব জায়গায় ই এখন অপরাজনিতির প্রভাব লক্ষনীয়, সেই অনুযায়ী সোহেল এখন দাম্ভিকতা ভাবেই সীট পাবে এবং প্রতিষ্ঠাণে পাওয়ার সেট করতে পারবে , অপরাজনীতির সংগ তে সে এখন । সবার চোখ খুলে দেয়ার মত একটা পোষ্ট করেছেন ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
বাংলাদেশের অধিকাংশ কলেজ ইউনিভার্সিটির হোস্টেলের এই অবস্থা ভাই। সব ছাএরাজনীতির নেতাদের নিয়ন্ত্রণে চলে। দেখা যাক ঘটনা কোনদিকে যায় অপেক্ষায় থাকলাম ভাই।।
অবস্থা সব খানেই এমন প্রায় ভার্সিটির হল গুলোতে একই অবস্থা।হলে উঠলেও নানা সমস্যা।বড় ভাইয়ের ফাই ফরমাশ খাটতে খাটতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।বাস্তবধর্মী একটি লেখা তুলে ধরেছেন।
ভাইয়া বর্তমানে আমাদের দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে ভার্সিটি পর্যন্ত সবখানেই এই একই সমস্যায় জর্জরিত। আমাদের অনেক ছাত্র আবেগের বশে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে এবং পরবর্তীতে এই রাজনীতির ক্যান্সারে নিজেদের ভবিষ্যৎ কে বিনষ্ট করে ফেলছে। সোহেলের অবাক হওয়ার বিষয়টা বর্তমান সময়ের জন্য খুবই স্বাভাবিক।
বর্তমান রাজনীতির ঘূর্ণ অবস্থার প্রভাব পড়েছে ছাত্রদের উপর। কলেজ বলুন হোস্টেল বলুন আর ভার্সিটি বলুন সব স্থানের রাজনীতির লোকেরা এমনভাবে হস্তক্ষেপ করে থাকে, যার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয় এমন সোহেলের মতো আরো অনেকের। দেশের সর্ব স্থানে একটি সমস্যা।