দীর্ঘদিন পর গ্রামীণ প্রকৃতির সংস্পর্শে কিছুটা সময়।
কয়েকদিন আগে আমার এক আত্মীয় মারা যাওয়ার কারণে আমি নানি বাড়ি গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা। তবে সেই উদ্দেশ্য আর পূরণ হয়নি। তবে দীর্ঘদিন পর নানিবাড়ি কিছুটা সময় কাটাতে পেরেছিলাম। অনেকদিন হলো কোনো গ্রামীণ পরিবেশে সময় কাটানো হয় না। এইজন্য প্রাথমিক শোক কেটে যাওয়ার পরে নানি বাড়ির পরিবেশ কিছুটা উপভোগ করছিলাম। এর ভেতরে হঠাৎ করে আসরের আজান শুনতে পেলাম আজান। শোনার সাথে সাথেই নানি বাড়ির কাছাকাছি যে মসজিদ ছিল সেই মসজিদে গেলাম নামাজ পড়তে।
মসজিদের অবস্থান নানি বাড়ি থেকে একেবারেই কাছে। সেখানে একটি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। সেই স্কুলের সামনে অনেক বড় একটি মাঠ। মাঠের শেষ মাথায় মসজিদের অবস্থান। এই প্রাইমারি স্কুল এবং তৎসংলগ্ন মাঠ ঘিরে আমার শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সেখানে গিয়ে সে সমস্ত স্মৃতি মনে পড়ে গেল। তাছাড়া সেই মাঠ সংলগ্ন একটি জংলা মত জায়গা আছে। যেখানে প্রচুর গাছপালা ছিলো। যদিও বর্তমানে গাছপালার পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে। তার পরেও এখনো জায়গাটা অনেকটা জংলার মতোই আছে। ছোটবেলায় এই জংলা জায়গাটাকে অনেক ভয় পেতাম। একসাথে সমবয়সী কয়েকজন জড়ো হলে তারপরেই সেই জংলা জায়গাতে যেতাম। যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য থাকতো সেখানকার কিছু দেশি ফলের গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়া। যদিও আমি গাছে উঠতে পারতাম না। তবে সাথে যে সমস্ত ছেলেপেলে থাকতো তারা গাছে উঠে আমাদের জন্য ফল পেড়ে আনতো।
এই জঙ্গলে বেশ কিছু দেশি গাব গাছ ছিলো। গাছ পাকা গাব খাওয়ার যে মজা সেটা আজকের ছেলেপেলেরা বুঝতে পারবে না। কারণ এখন গ্রামেও গাব গাছের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। অবশ্য সেই জায়গাতে এখন আর গাব গাছ আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। কারণ দীর্ঘদিন হলো সেই জংলা জায়গাতে আর যাওয়া হয় না। জায়গাটা ঘিরে আরো বেশ কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। স্কুলের মাঠে আসার আগে যে রাস্তাটি আছে সেই রাস্তার দুই পাশে প্রচুর গাছপালা ছিলো। দিনের বেলাতেও সেখানে আলো আসতো অনেক কম। যার ফলে কখনোই সে রাস্তা দিয়ে দিনের বেলাতেও একা যেতে সাহস পেতাম না। একসাথে কয়েকজন হলে তখন দৌড়ে জায়গাটা পার হতাম। এখন সে কথা মনে পড়লেই হাসি পায়।
তাছাড়া স্কুলের জায়গাটা পার হলেই একটু সামনে এগিয়ে গেলে ফসলের মাঠের শুরু। বিশাল এক ফসলের মাঠ রয়েছে স্কুল থেকে কিছুটা দূরে। সেই মাঠেও আমরা অনেকটা সময় কাটাতাম। আমার মনে আছে একবার মাঠে পানি সেচ দেয়ার জন্য যে মেশিন বসানো ছিল। সেই মেশিনের পানিতে গোসল করেছিলাম। মেশিনের সামনে একটি হাউজ করা ছিল। তার ভিতরে গোসল করে যে মজা পেয়েছিলাম সেটা এখনো মনে পড়লে ভালো লাগে। হারিয়ে যাওয়া দিনের সেই স্মৃতিগুলো মনের ভেতরে এসে এক দারুন ভালোলাগার অনুভূতি তৈরি করছিল। সেই পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে বেশ ভালই লাগছিল। নামাজ পড়া শেষ হলেও আমি কিছুটা সময় সেখানেই কাটালাম। সাথে কয়েকটি ছবিও তুললাম।
একটা সময় ছিল যখন স্কুল ছুটি হলে আমরা বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজন একসাথে নানি বাড়িতে আসতাম। খালাতো মামাতো ভাই-বোনদের সাথে দারুন মজা হতো সে কয়েকটা দিন।কিন্তু এখন আর আগের মত এভাবে আর কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না। আস্তে আস্তে সবাই কেমন যেন একটি বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। আগে কোন আত্মীয়-স্বজন মারা গেলে সেখানে কাছে দূরের সমস্ত আত্মীয়-স্বজন চলে আসত। কিন্তু এখন শুধু কাছের আত্মীয়-স্বজনেরাই আসে। দূরের আত্মীয়-স্বজন দের আর এখন দেখা যায় না। সময় কত দ্রুত পাল্টে যায় সেটাই চিন্তা করছিলাম। বর্তমান সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে আমাদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে এখনকার জেনারেশন এভাবেই বেড়ে উঠছে। এ বিষয়গুলো তাদেরকে আর তেমন ভাবাবে না। কারণ তারা এগুলো দেখেই বড় হচ্ছে।
বর্তমান জেনারেশন অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বেড়ে উঠছে। চারপাশের কোন কিছুতেই তাদের তেমন আগ্রহ নেই। তাদের সমস্ত আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এখন ল্যাপটপ, মোবাইল, ট্যাব এগুলো। তাদের জীবনটা গড়ে উঠছে ভার্চুয়াল দুনিয়া কেন্দ্রিক। যাইহোক এগুলোই আমাদের মেনে নিতে হবে। পুরানো সেই দিন ফিরে পাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। কথায় আছে না যায় দিন ভালো। গ্রামীণ পরিবেশ আমার কাছে এমনিতেই অনেক ভালো লাগে। আর সেটা যদি হয় শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত এলাকা। তখন এই গ্রামীন সৌন্দর্য মনটাকে অন্যরকম করে দেয়। পুরনো স্মৃতিমনে পড়ে মনে এক ধরনের ভালো লাগা তৈরি হয়। আবার সে দিনগুলো হারিয়ে ফেলার জন্য মনের ভেতর এক হাহাকার তৈরি হয়। সব কিছু মিলিয়ে একটি মিশ্র অনুভূতি মনের ভেতরে নিয়ে আমি আস্তে আস্তে নানি বাড়ির দিকে ফিরে চললাম।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | কোমরপুর |

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |


Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.