বুক রিভিও - রুপচানের আশ্চর্য কান্না ।। 10% for shy fox

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

◾️ ২৭ মার্চ
▪️ রবিবার


হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুগণ , কেমন আছেন সবাই ? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আজকে আমি মাসউদ আহমাদ রচিত "রুপচানের আশ্চর্য কান্না" উপন্যাসটির সংক্ষিপ্ত রিভিউ আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করব। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে লেখা শুরু করি।

cover.jpg

কভার পেইজ

উপন্যাস
রূপচানের আশ্চর্য কান্না
লেখক
মাসউদ আহমাদ
প্রথম প্রকাশ
ফেব্রুয়ারি,২০১৭
প্রকাশনী
সময় প্রকাশন

উপন্যাসটি নির্মিত হয়েছে রসুলপুর গ্রামের দিনমজুর রূপুকে কেন্দ্র করে । রূপুর পুরো নাম রুপচান। বয়স পঁয়তাল্লিশ কিংবা পঞ্চাশের মধ্যে। রুপু খেটে খাওয়া মানুষ । বয়সের ভারে সে এখন আগের মতো কাজে যেতে পারে না বটে কিন্তু বাস্তবে সে অলস বা পরাজিত শ্রেণীর মানুষ নয়। জীবনের চরম দুঃসময়েও সে নিজেকে একা সামলে নিয়েছে। তার প্রথম স্ত্রী মমতা মারা যাওয়ার পর তার একাকীত্ব কাটানোর জন্য সে দ্বিতীয়বার কুসুম নামের গরিব পরিবারের এক মেয়েকে বিয়ে করে।

1.jpg

divider.png

বয়স বাড়ার সাথে সাথে জীবনের অনেক কিছু হারানোর মতো খুব গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান একটি জিনিস হারাতে চলেছে সে। আর সেই হারানো বস্তটি হচ্ছে তার যৌনশক্তি। বেশকিছু দিন ধরেই ব্যাপারটি সে লক্ষ্য করছে। কিন্তু দিন দিন তা খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠছে আর তার মনে চিন্তা ও শঙ্কার ছাপ গাঢ় হচ্ছে। দ্বিতীয় বিয়ের পর, প্রথম বউ এর বিয়োগের অবকাশে তার অনুভূতিগুলো তীব্র দীর্ঘ হয়ে উঠেছিল। প্রথম প্রথম কদিন খুব কবুতর প্রেমও জমে উঠেছিল তার নতুন বউয়ের সঙ্গে। কিন্তু ইদানীং বয়স কিংবা শারীরিক সামর্থ্য এর অভাবে রোজ রোজ ব্যাপারটিতে সাড়া দেয় না রূপু। রক্তমাংসের মায়াবী ও যুবতী স্ত্রীর শরীর তাকে কিভাবে এমন নিরুত্তেজ এবং অসাঢ় রাখতে পারে ভেবে সে আহত হয়।

প্রতিদিন সকালবেলায় তার ঘুম ভাঙ্গে কুসুমের চিল্লাচিল্লিতে। সংসারের এত অভাব তার মধ্যে রুপু বেলা করে ঘুম থেকে উঠে কাজে যায় । এ নিয়ে অনেক কথা হয় তাদের মাঝে। কুসুমের মনের যত রাগ সব যেন আগুনের বুলির মতো প্রকাশ পায়। বউয়ের বকবকানি শুনে নিত্যদিনের আহার মেটানোর তাগিদে রুপু কাজ খুজতে বের হয়।

3.jpg

divider.png

এসবের ভেতরেই এমন চিন্তাও সামনে এসে দাঁড়ায় রুপুর , সে তো নপুংসক নয় । আবার স্ত্রীকে পরিতৃপ্ত করতে পারবে না । বাকি জীবন কীভাবে পার করবে সে? এর মধ্যে আরও অনেক সাংসারিক কাহিনি ঘটে যায়। এক পর্যায়ে এসে রুপচান কুসুমকে তালাক দেয়ার জন্য গ্রামের কাচারি ঘরে শালিস এর আয়োজন করে। তাতে গ্রামের সকল মানুষ জড়ো হয়। মেম্বার রুপচানকে তালাক দেয়ার কারন জিজ্ঞেস করলে সে কিচ্ছুক্ষন চুপ থেকে রুপচানের বদমেজাজী স্বভাব ও দেমাগ এর কথা জানায়। মজলিসের অনেকে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলও সে তার কথাতে এক থাকবে জানিয়ে দেয়। এরপরে মেম্বার সাহেব কুসুমকে উদ্যেশ্য করে বলে তার কিছু বলার আছে কিনা। কুসুম ঘোমটা টেনে নিশ্চুপ বসে থাকে। হঠাৎ সে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল ভালো করে মাথায় টেনে অকপটে কেঁদে কেঁদে তার স্বামী কে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে কেন সে তাকে তালাক দিবে ? এই সংসারে এসে সে কত অভাব-অনটনে সংসার চালিয়ে নিয়েছে। মুখ বুজে অনেক যন্ত্রণা সয়ে গেছে । বিনিময় কিছুই পায়নি

এক ফাঁকে রুপু আড়চোখে বউয়ের মুখের দিকে তাকায়, দেখতে পায় তার বউয়ের দুগাল বেয়ে অশ্রু বিন্দু গড়িয়ে পড়ছে। তখন হঠাৎ বউয়ের জন্য কিছুটা মায়া তৈরি হয় তার মনে কিন্তু সে তা প্রকাশ করে না। কুসুম বলতে থাকে সে গরীব ঘরের মেয়ে তার স্বামী যদি তাকে তালাক দেয় সে কোথায় যাবে। সে সালিশের মেম্বার এর মাধ্যমে তার স্বামীকে বলতে বলেন বিয়ের সময় তার চেহারা, শরীর যেমন ছিল তেমন যদি সে ফিরিয়ে দিতে পারে তবে সে তালাক দিক; এতে তার কোনো দাবি থাকবেনা।

4.jpg

divider.png

কুসুমের সব কথা শুনে মেম্বার সাহেব গ্রামের মৌলভী কে কিছু নসিহত করতে বললেন যাতে তালাকের চিন্তাটা মাথা থেকে পালায় এবং সমস্যাটার সমাধান হয়। সালিশের মধ্যে মৌলভী রুপচান ও কুসুমকে দাড়াতে বললেন এবং তাদের উদ্দেশ্য করে একটি হাদিস শোনালেন । হাদীসের সারাংশটি এমন- আমাদের স্ত্রীরা আমাদের কত খেদমত করে, আমাদের জন্য রান্নাবান্না করে, আমাদের গৃহ পরিচালনা করে। এতএব মাঝে মাঝে স্ত্রীর সামান্য কিছু জ্বালাতন সহ্য করলে তেমন বেশি কী-ই বা করা হলো!

মুন্সি কথা শেষ করার পর, মেম্বার ফয়েজকে ডেকে সবার মাঝে মিঠাই বিতরণ করতে বললেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন তাদের তালাক হবে না পারিবারিক ঝামেলা তাদের নিজেদের মধ্যে মিটিয়েই তাদের সংসার করতে হবে। মিঠাই হাতে পেয়ে খেতে খেতে উপস্থিত লোকজন উঠতে শুরু করল এবং সেই সময় ঘুরঘুর করে কিছু মেঘ ডেকে উঠল আকাশে। কুসুম ঘোমটা দিয়ে বাড়ির দিকে চলে যেতে লাগলো। রুপচানের মনে তখন ভেসে উঠে আবারও সেই ঘর, সেই ফোস করে উঠা মুখ, অল্পবয়সী দেমাগী বউ, বউয়ের ঠেঙ্গানি...। তার আর কিছুই করার থাকলো না।

ব্যক্তিগত মতামত


মানুষের যৌবন চিরজীবন থাকে না। একসময় তা ফুরিয়ে যায়। তবুও আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যাদের শরীর বুড়ো হয় কিন্তু মন বুড়ো হয় না। উপন্যাসের রুপচানের ক্ষেত্রে আমি সেই বিষয়টি দেখতে পেয়েছি। তার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পরে সে অল্পবয়সী মেয়েকে বিয়ে করে অভাব অনটনের সংসারে। কিছুদিন যেতে না যেতেই সুখের দিন ফুরিয়ে যায়। শুরু হয় অশান্তি। আপনাদের কি মনে হয় কমেন্ট করে জানাবেন। উপন্যাসটি ভালোই লেগেছে আমার কাছে। পড়তে পারেন। আশা করি ভালো লাগবে।

আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামিকাল। ধন্যবাদ সবাইকে। ভালো থাকবেন।

বিভাগ তথ্য
ডিভাইস রেডমি নোট ৪
লোকেশন ধানমন্ডি-১৯

tnq.png

শুভেচ্ছান্তে
@rokibulsanto
Mybanner.png


blogPng.gif

Sort:  
 3 years ago 

রুপচানের আশ্চর্য কান্না‌‌বইটি আমি আগে কখনো পড়িনি তবে আপনি আমাদের মাঝে অনেক সুন্দর হবে এটি রিভিউ করেছেন । এটি থেকে বুঝতে পারলাম মানুষের যৌবন সারা জীবন থাকে না কিন্তু মন সারা জীবন তরুণ থাকে। দারুন একটি কনসেপ্টের উপরে বইটি তৈরি হয়েছে । ধন্যবাদ আপনাকে এমন সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

রিভিউ পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। বইটি পড়তে পারেন। আশা করি ভালোই লাগবে। শুভকামনা থাকলো আপনার জন্য।

 3 years ago 

রিভিউ পড়ে ভালোই লাগলো। দেখি বইটি পাই কিনা। পাইলে খুজে পড়তে হবে। খুবই সুন্দর করে রিভিউ দিয়েছেন আপনি। ভালো লেগেছে অনেক। শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য ভাই।

 3 years ago 

অনলাইনে বইটি পাবেন। পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি খারাপ লাগবে । পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ । আশা রাখছি পাশে থাকবেন

 3 years ago 

এই উপন্যাসটিত একটি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। রুপচানের কর্মকাণ্ড টি আসলেই অগ্রহণযোগ্য। কী আর করার রুপচান কে তার বউয়ের এই কষ্ট সারা জিবন সহ্য করতে হবে।
যাইহোক অনেক ভাল ছিল আপনার উপন্যাসের বুক রিভিউটি।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর এই ভুবনে বিউটি শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

জি আপু। বউয়ের ঠ্যাঙ্গানি তার সারা জীবন খেয়ে যেতে হবে। এটাই তার প্রাপ্য ।পোস্টটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65355.38
ETH 2656.67
USDT 1.00
SBD 2.87