আরসালানের বিরিয়ানী কি সত্যিই দারুণ? আসুন জেনে নি। (১০% @shy-fox এর জন্য)
তারিখ-১৭.১১.২০২২
নমস্কার বন্ধুরা
খাবারের বর্ণনা তো অবশ্যই দেব, সেটা দিতেই তো এলাম। তবে তার আগে আরসালান রেস্তোরাঁর ব্যাকগ্রাউন্ড একটু বলে দি
❤ফিরে দেখা অতীত❤
🦋রিভিউ🦋
🌼স্টার্টার🌼
এবার নিজের মধ্যে সাহস সঞ্চার করেই শুরু করছি খাবারের রিভিউ।
প্রথমে বড়া কাবাবের কথা বলি,হাফ প্লেট কাবাবের মধ্যে ৩টে লেগ পিসের নীচের অংশ থাকে। এক একটা লেগ পিস মিনিমাম ২০০-২৫০ গ্রাম হবে এবং এর হাফ প্লেটের মূল্য ৩২০ টাকা।এটাকে প্রধাণত টক দই, তন্দুরি মশলা,ফুড কালার, নুন, হলুদ আরো যাবতীয় মশলা দিয়ে ম্যারিনেট করেছে। চিকনের গায়ে ডীপ কাট লাগানো হয় যাতে করে মশলা ভেতর পর্যন্ত পৌঁছোয়।
আর তন্দুরের মধ্যে বাটার সহযোগে এটা রান্না করা হয় তাই এর মধ্যে বেশ হাল্কা অথচ সুন্দর একটা চারকোল ফ্লেভার পাওয়া যায়।
সার্ভ করা হয় লাচ্ছা পদ্ধতিতে কাটা পেঁয়াজ,গাজর,লেটুস পাতা ও বীটের একটা মিক্সড স্যালাড সহযোগে। উপরে চাট মশলা এবং লেবুর রস, ধনেপাতা দিয়ে বিষয়টাকে আরো আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু করে গার্নিশিং করা হয়। আর কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে টকদই, ধনেপাতা ও পুদিনা পাতার মিশ্রণে তৈরী একটা চাটনী থাকে যা এই কাবাবের স্বাদ দ্বিগুণ করে তোলে।
🌼মেইন কোর্স🌼
এবার আসি বিরিয়ানীর ব্যাপারে।কোলকাতায় বিখ্যাত বিরিয়ানী গুলোর মধ্যে একটা বিরিয়ানী হল আরসালানের বিরিয়ানী।এক প্লেট মটন বিরিয়ানীর দাম ৩৪৫ টাকা। এতে একটা বড় মটন আর একটা ইয়াব্বড় আলু থাকে। আমি এক্সট্রা একটা ডিম নিয়েছিলাম যার জন্য আমায় ১০ টাকা বেশী দিতে হয়েছিল।বিরিয়ানীর বেশীরভাগ মাংসের পিস থাকে ২৮০-৩০০ গ্রামের মধ্যে। আর এতটা নরম যে রীতিমতো হাড় থেকে খুলে খুলে যায়।আর সব সময় ফ্রেশ মটন ব্যবহার করা হয় তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল মটনটা যখন ছিঁড়ে খাচ্ছিলাম ভেতরটা একদম জ্যুসি ছিলো সাথে ডীপ গোলাপি রঙ ছিল।মুখে দিলে মটনটা যেনো চিবোতে হচ্ছিলো না। গলে যাচ্ছিলো। এবার আসি বিরিয়ানীর রাইসের বিষয়ে। কলকাতা বিরিয়ানী মানেই হল সুগন্ধী লম্বা সরু রঙিন বাসমতী চাল হবে। এখানে বিরিয়ানীর চালটা আশা করি দেখে বুঝতেই পারছেন যে একদম ঝড়ঝড়ে একটা রাইস হয়েছে। সাথে কোন রকম অতিরিক্ত গোলাপ জল বা কেঁওড়া জলের বা মিঠা আতরের গন্ধ নেই। সব ফ্লেভারই আছে কিন্তু ভীষণ ব্যালেন্সড।সাদা আর হলুদ ভাতের মিশ্রণে সম্পূর্ণ বিষয়টা অসম্ভব মন কেড়ে নেওয়ার মতই।এবার আসি আলুর ব্যাপারে। বিরিয়ানীতে আলু টা কলকাতার মানুষের আবেগ তা আপনারা অনেকেই জানেন।বিরিয়ানীর আলু টাকে বেশ পেঁয়াজ রসে সেদ্ধ করা হয়েছে এবং বিরিয়ানীটাতে খোয়া ক্ষির ব্যাবহার করায় আলুটা বেশ একটা মিষ্টি মিষ্টি ব্যাপার ছিলো যেটা আমার বন্ধুর ভালো না লাগলেও, আমার খুব ভালো লেগেছে।😋
🌼সাইড ডিশ🌼
অবশেষে সাইড ডিশটা নিয়ে কিছু কথা বলে যাই। সাইড ডিশে ছিলো চিকেন টাঙরি(লেগ পিস্) বাটার মশলা। এটাও আমরা হাফ প্লেট নিয়েছিলাম। এতে দুটো লেগ পিস আমাদের সার্ভ করা হয়েছিলো। এর দাম ছিলো ২৭০ টাকা।চিকেনের লেগ কে তন্দুরে ফ্রাই করে সেটাকে টমেটো পিউরি, বাটার, পেঁয়াজ রসুন ইত্যাদি মশলার সাথে একটা ঘন, ক্রিম টেক্সচারের গ্রেভি তে ফোটানো হয় এবং শেষে উপর থেকে কসুরী মেথি ক্রাশ করে দিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু আইটেমটা বাটার মশলার তাই হাল্কা ঝাল এবং হাল্কা মিষ্টির একটা দারুণ কম্বিনেশন আছে যেটা বিরিয়ানীর সাথে দুর্দান্ত লাগছিলো খেতে।রান্নাটা দেখতে লাল হলেও এটা কিন্তু একদমই ঝাল নয়। বাচ্চারাও খেতে পারবে। আর চিকেনটা যখন ছিঁড়লাম তখন তিন আঙুলে ছিঁড়ে গেলো। আশা করি এতে আপনারা বুঝতেই পারছেন যে বিষয়টা কতটা সফ্ট ছিলো!
💰মূল্য💰
এবার আসি দামের ব্যাপারে। সত্যি বলতে দুজন মানুষ এই কটা আইটেম খেয়েছি তাতেই বিল হয়েছে ১৫২৫ টাকা যা একটু গায়ে লাগার মতই। তবে সত্যি বলতে ওদের রেস্তোরাঁর যে অ্যাম্বিয়েন্স,স্টাফদের ব্যাবহার, খাবারের কোয়ালিটি সবটাই এত ভালো যে দামটা বেশী হলেও অতটা খারাপ লাগে না। রেস্তোরাঁতে আমরা খেতেই তো যাই, সেই খাবারের কোয়ালিটি এবং কোয়ান্টিটি কোনটার সাথেই ওরা কম্প্রোমাইজ করে না। এই কারণে আমার বিষয়টা খারাপ লাগে নি। তবে সব রকম মানুষের কথা ভেবে ওরা যদি দামের দিকটাও একটু দেখে তবে সকলেই এই স্বাদ ভাগ করে নিতে পারবে।
রেস্তোরাঁ | আরসালান ব্যারাকপুর |
---|---|
অ্যাম্বিয়েন্স | ৯/১০ |
ব্যাবহার | ৯/১০ |
সার্ভিস | ৮/১০ |
কাবাব | ৮/১০ |
মটন বিরিয়ানী | ৯.৫/১০ |
চিকেন বাটার মশলা | ৮/১০ |
মূল্য | ৬/১০ |
সব মিলিয়ে | ৮.৫/১০ |
তাহলে এবার বলি আমার সব মিলিয়ে কেমন লাগলো বলি-
ভালো লেগেছে। খুব ভালো লেগেছে। দামটা কে আমি এখানে কম্প্রোমাইজ করলাম একমাত্র খাবার এত ভালো, সার্ভিস এত ভালো হওয়ার জন্য। আর আমি অবশ্যই রেকমেন্ড করব সকলকে। আসুন, খেয়ে দেখুন। ভালো লাগলে আবার আসবেন।
স্থান | ব্যারাকপুর |
---|---|
লোকেশন লিঙ্ক | https://what3words.com/unsecured.decently.wicket |
তারিখ | ০৮.১১.২০২২ |
ডিভাইস | রেডমি নোট ১০ প্রো ম্যাক্স |
মীরের একটি অনুষ্ঠানে এই রেস্টুরেন্ট টি দেখেছিলাম সম্ভবত।তোমার ব্লগ লেখার পদ্ধতিটি খুবই ইউনিক হয়েছে।দারুন ভাবে কুইজিন আর রেস্টুরেন্ট এর ব্যাকগ্রাউন্ড বলেছ।খাবার এর ফটোগ্রাফ গুলোও খুবই সুন্দর হয়েছে।আর দাম কিন্তু যথেষ্ট কম মনে হয়েছে। আমাদের দেশে এমন পশ রেস্টুরেন্টে, এত সুস্বাদু খাবার খেতে গেলে এর দ্বিগুণ খরচ করতে হত।সব মিলিয়ে অসাধারণ হয়েছে ব্লগটি।ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাই। আসলে এখানে মানুষ যত কমে পায় আরো কমে চায়। আর সত্যি বলতে আরসালান একটা ব্র্যান্ড। এ্আমারও মনে হয় একটা ব্র্যান্ড ট্যাগ পড়লে দাম একটু বেশী দিতেই হবে।আমি দামটা নিয়ে বলেছি আমাদের পশ্চিম বঙ্গের মানুষের নিরিখে। আমার ব্যক্তিগত ভাবে ঠিকই লেগেছে।
দিদি আপনার পোস্ট টাইটের নাম দেখেই লোভ লেগে গেল। আপনি আপনার বন্ধবীর সাথে অনেক আনন্দ করে খেয়েছেন দেখছি।আসলে দুজন মানুষ খেলেন তাতেই বিল হলো১৫২৫ টাকা, আসলে গায়ে লাগার মতো। যাইহোক টাকা লাগলেও রেস্টুরেন্টের সকলের ব্যবহার ভালো ছিল জেনে অনেক ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আমারও একটু বেশিই মনে হল। কিন্তু ওই যে ব্র্যান্ডেড হলে যা হয় আর কি! ধন্যবাদ আপনাকে। ☺
বিরিয়ানি লাভার।🤤 প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যা হলেই বেরিয়ে পরি বিরিয়ানি খেতে।খুব লোভ হচ্ছে যদি এখন বিরিয়ানি খেতে পারতাম।😅
বিরিয়ানি হল আমার কমফোর্ট ফুড। আমি মনে হয় পর পর বিরিয়ানি খেতে থাকলেও হাঁপিয়ে যাব না। ভগবান কি যে অলৌকিক ক্ষমতা দিয়েছেন আমায় বিরিয়ানি খাওয়ার জানি না।
সত্যি বলতে রেস্তরাঁতে খাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার সত্যিই খুব কম। আর আমি বাইরে খুব কমই খাবার খাই। যাই হোক তুই খুব সুন্দর ভাবে সব ডিটেইলে বর্ণনা করেছিস। খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা রিভিউ দেওয়ার জন্য।
মাঝে মাঝে ভালোই লাগে। ধন্যবাদ। ☺
দিদি, বাইরের খাবার আমি খুবই কম খাই,বলতে গেলে এভোয়েড ই করি।কিন্তু আপনার খাবারের রিভিউ দেখে তো খেতে ইচ্ছে করছে আপনি খুব সুন্দরভাবে রেস্টুরেন্ট এর সব কিছু তুলে ধরেছেন, দেখে খুব ভাল লাগলো। অনেক ধন্যবাদ দিদি।
আমার তো মাঝে মাঝে ভালোই লাগে। 😛 ধন্যবাদ দিদি। ☺
পশ্চিমবঙ্গে কখনো ঘুরতে গেলে আরসালানে অবশ্যই একবার ঢুঁ মারবো। আরসালানের নাম অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি। আপনার রিভিউটা একদম প্রফেশনাল মানের হয়েছে। রান্নার সম্বন্ধেও যে আপনার ব্যাপক ধারণা রয়েছে সেটা আপনার রান্নায় কি কি উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে সেটার বিবরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে। এক কথায় দুর্দান্ত রিভিউ হয়েছে। বেশ জম্পেশ একটা খাওয়া-দাওয়া হয়েছে। জুসি টেন্ডার মাটন পিসের সাথে বাসমতি চালের বিরিয়ানি। সাথে চিকেন কাবাব আর কি চাই ?
অনেক ধন্যবাদ দাদা। আমার মনে আছে আমার এর আগেও করা একটা ফুড রিভিউ আপনার ভালো লেগেছিলো। অনেক ধন্যবাদ দাদা উৎসাহিত করার জন্য। ভালো লাগলো।