ঠাকুরদাদা।
কেমন আছেন " আমার বাংলা ব্লগ " পরিবারের সবাই ? আশাকরি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই খুব ভালো আছেন। আপনাদের আশীর্বাদে আমিও খুব ভালো আছি। আসলে আজ ঠাকুরদাদা সম্পর্কে আমার কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আশাকরি আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
সোর্স
আসলে আমার জীবনে আমার ঠাকুর দাদার গুরুত্ব অপরিসীম। ঠাকুর দাদা বলতে আমরা বাবার বাবাকে বুঝি। কারণেই ঠাকুর দাদাই আমাদের প্রধান হাতিয়ার। আমরা যদি কোন অন্যায় করি তাহলে এই ঠাকুরদাদাই মারের হাত থেকে আমাদের সব সময় বাঁচায়। আর আমি কিন্তু ঠাকুর দাদার কাছ থেকেই পড়াশোনা শিখেছি।
আসলে জন্মগ্রহণের পর আমি আমার ঠাকুরদাদার এবং ঠাকুরমা দুজনকেই পেয়েছিলাম। আসলে আজ আমি আমার ঠাকুরদাদার সম্পর্কে কিছু কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। তো আমার ঠাকুরদাদার সামান্য পরিচয় আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম।
আমার ঠাকুর দাদা কিন্তু একজন চাষী ছিলেন। তিনি কোনদিনও স্কুলের গণ্ডি পার হননি। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে, আমার ঠাকুরদাদার মতো হাতের লেখা আমি এখন পর্যন্ত কোথাও দেখিনি। বাড়ির লোক কখনোই বুঝতে পারতনা যে, আমার ঠাকুরদাদার একজন অশিক্ষিত লোক।
আসলে আমার এখনো মনে আছে এই ঠাকুর দাদা বিভিন্ন জিনিস সুনিপুণভাবে তৈরি করতেন। যেমন ধরুন হাতপাখা, বসার টুল। এছাড়াও তিনি কিন্তু খুব সুন্দর লাটিম এবং ঘুড়ি তৈরি করতে পারতেন। এবং আমার ঠাকুর দাদা অনেক প্রাইজ পেয়েছিলেন এই ঘুড়ি প্রতিযোগিতায়। আসলে তখনকার সময়ে প্রাইজ হিসাবে কাঁসার থালা অথবা কাঁসার গ্লাস উপহার দিতেন।
তাই মাঝে মাঝে আমিও এই ঠাকুর দাদার সাথে ঘুড়ি উড়াতে যেতাম। আমার এখনো মনে আছে যে একবার এই ঘুড়ির সুতো ধরতে গিয়ে আমার হাত কেটে গিয়েছিল। অবশ্য সেই কাঁটা দাগটি এখন আর আমার হাতে নেই। এছাড়াও তিনি কিন্তু আমাকে লাটিম কিভাবে চালাতে হয় সেটি আমাকে শিখিয়েছিলেন।
আসলে এক কথায় বলতে গেলে শৈশবের গুরু কিন্তু আমার ঠাকুর দাদা। এছাড়াও বিভিন্ন মেলা অথবা অনুষ্ঠানে আমি সব সময় ঠাকুর দাদার সঙ্গেই যেতাম। আসলে আমার দিনের প্রায় প্রতিটা সময় ঠাকুর দাদার সাথে অতিবাহিত করতাম। আরেকটা জিনিস আমার ঠাকুরদাদা কিন্তু বেতের কাজ খুব ভালোভাবে পারতেন।
অবশ্য বাড়ি খুঁজলে ঠাকুর দাদার একটা স্মৃতি পাওয়া যাবে। সেটি হলো তিনি আমাকে একটা কাঠের তক্তার উপর স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ খুব সুনিগুণভাবে খোদাই করে লিখে দিয়েছিলেন। অনেকেই বুঝতে পারতেন না যে এই লেখা আমার ঠাকুর দাদা। আমি বর্তমানে টাইপিং ও চ্যালেঞ্জ করতে পারি যে আমার ঠাকুর দাদার হাতের লেখার সাথে টাইপিং এর লেখাও পারবেনা।
আমার ঠাকুরদাদার যেমন আমায় যেমন ভালোবাসতেন তেমনি কোন অন্যায় কাজ করলে আবার শাসনও করতেন এবং আমাকে সবসময় শিক্ষা দিতেন যে কোন ধরনের অন্যায় কাজ কখনোই করা যাবে না। আমার ঠাকুর দাদা আমাকে পড়াশোনার ব্যাপারে খুব উৎসাহী করতেন। কারণ সব সময় উদাহরণ দিতেন যে পড়াশুনা না শিখলে তার মত চাষ করে খেতে হবে।
এছাড়াও আরেকটা জিনিস আমার ঠাকুর দাদার কাছে থেকে শেখা। সেটি হলো তিনি কখনো খাবার সময় প্লেটের বাইরে ভাত পড়ে গেলে সেই ভাত তিনি তুলে ধুয়ে আবার পুনরায় খেয়ে ফেলতেন এবং তিনি আমাদের সব সময় শিখাতেন যে কখনো খাবারের অপচয় করতে নেই। কারণ তিনি একজন চাষা। আর এই সামান্য ভাতের জন্য তাকে প্রচুর কষ্ট করতে হয়।
আসলে ঠাকুর দাদার কথাটি কিন্তু সত্যি। যারা চাষী তারা সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলায়। এই ফসল যদি কেউ নষ্ট করে অথবা কোন কারণে নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তাদের দুঃখে আর শেষ থাকে না। এছাড়াও কেউ যদি এই খাবার নষ্ট করে তাহলে তাদের খুব কষ্ট লাগে।
এছাড়াও জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমার ঠাকুর দাদা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আসলে আমার মনে হয় যারা জন্মের পর এই ঠাকুরদাদার সঙ্গ পাননি তাদের মত দুর্ভাগ্য আর এই পৃথিবীতে নেই। আসলে আমার ঠাকুর দাদা সব সময় আমার সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করতেন। তাই আমি কোন অন্যায় করলেও প্রথমে ঠাকুর দাদাকে গিয়ে বলতাম। কারণ মা বাবা যদি আগে জানতে পারে তাহলে তাদের হাতে আমার ধোলাই নিশ্চিত।
আসলে আমার ঠাকুর দাদার সম্পর্কে যত কথাই বলি না কেন তার অবদান আমার জীবনে অপরিসীম। আসলে বড় হয়ে আমি আমার ঠাকুর দাদার প্রায় প্রতিটি কথা মেনে চলার চেষ্টা করি। কখনো কারো সাথে অন্যায় কাজ বা কোন ধরনের ক্ষতি করি না। এছাড়াও ঠাকুর দাদার প্রতিটি কথাই আমার জীবনে অনেক প্রভাব ফেলে বর্তমান সময়ে।
সত্যিই ঠাকুর দাদাকে আমি অনেক মিস করি এখন। কারণ এই ঠাকুর দাদাই আমার শৈশব জীবনটাকে অনেক রঙিন করে দিয়েছিল। আসলে ছোটবেলায় ঠাকুর দাদার সাথে কাটানো এই মধুর সময় গুলো আমি কখনোই ভুলতে পারি না। অনেক ভালবাসি ঠাকুর দাদা তোমায়। তোমার কথা অনেক মনে পড়ে।
আশাকরি আজকের এই পোস্টটি আপনাদের খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করতে অবশ্যই ভুলবেন না।
সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে।