ফুলকির লাল চুড়ি||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে।আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। আজকে আমি সুন্দর একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। এবার চলুন দেখে নেয়া যাক আমি আজকে কি গল্প আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি।
ফুলকির লাল চুড়ি:
Source
ফুলকির বয়স মাত্র ৯ বছর। ৯ বছরের এই কিশোরী মেয়ের মনে নানান রকম কল্পনা এসে ভিড় করে। ফুলকি নামক মেয়েটি বাবা-মায়ের খুবই আদরের সন্তান। কিন্তু অভাবের কারণে ফুল্কির স্বাদ আহ্লাদ তার বাবা-মা মেটাতে পারেনি। ফুলকি গঞ্জ থেকে লাল চুড়ি কিনতে চেয়েছিল। বছরখানেক আগে তার মামা তাকে একটি লাল জামা দিয়েছিল। সেই জামার সাথে মিল রেখে ফুলকি তার বাবার কাছে লাল চুড়ি কিনে চেয়েছিল। ফুলকির বাবা সাধারণ দিনমজুর। অন্যের খেতে চাষাবাদ করে। যা টাকা রোজগার করে তাই দিয়ে দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটে না। কিন্তু মেয়ের আবদার মেটানোর জন্য তার বাবা একটু একটু করে পয়সা জমাচ্ছিল। হয়তো সেই লাল চুড়ির দাম খুবই অল্প ছিল। কিন্তু সাধারণ দিনমজুরের কাছে যেখানে ভাতের জোগাড় করা অনেক কষ্টের ব্যাপার সেখানে মেয়ের বায়না পূরণ করা তাদের কাছে সত্যি অনেক কঠিন ছিল।
দেখতে দেখতে আরো কিছুদিন কেটে গেল। বাবা মায়ের প্রতি মেয়ের অভিমান যেন দিনে দিনে বাড়তে লাগলো। কারণ ছোট্ট এই কিশোরী বালিকার অভিমান অনেক বেশি। নয় বছরের কিশোরী বালিকার মনে অজানা অভিমান ভিড় করেছিল। অভাবের স্পর্শ হয়তো তার গায়ে পড়েনি তাইতো সে অভাব নামক শব্দটির সাথে পরিচিত না। বাবা মা না খেয়ে তার সন্তানকে খাওয়ায়। তাইতো সন্তানেরা বাবা মায়ের কষ্ট বুঝতে পারে না। যখন ফুলকির বাবা-মা মেয়েটির মান ভাঙানোর জন্য তার পছন্দের নাড়ু নিয়ে আসলো তখন ফুলকি তবুও অভিমান করে বসে থাকলো। কারণ এই বয়সের মেয়েটি খুবই অভিমানী। তার এই অভিমানী মনে একটু চাওয়া দোলা দিয়েছে। হয়তো সে লাল চুড়ি না পাওয়ার অভিমান মনে পুষে রেখেছে। তার পছন্দের নাড়ু পেয়েও মেয়ের মান ভাঙ্গলো না। অভিমান করে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ল।
মেয়ের মান অভিমানের পালা দেখে মায়ের চোখে জল চলে এসেছে। তার একটুখানি আবদার পূরণ করতে তারা ব্যর্থ। ফুলকির বাবা মা যখন ফুলকির অভিমান ভাঙাতে পারল না তখন অনেকটা মন খারাপ করে বসে রইল। ফুলকি মা ফুলকির সাথে রাগারাগি করতে লাগলো। কিন্তু তার বাবা ফুলকির মায়ের হাতটা চেপে ধরে বলল আমাদের মেয়ে খুবই আদরের। হয়তো সামান্য বায়না করেছে। কিন্তু আমরাই ব্যর্থ। ছোট আবদার পূরণ করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ফুলকির বাবা ফুলকির মায়ের হাত ধরে বলল, মেয়েটা যত বড় হয়েছে বুদ্ধি তত বাড়ে নাই। মেয়েটা এখনও অবুঝ। এভাবেই তাদের রাত কেটে গেল। পরের দিন সকাল বেলা যখন তারা ঘুম থেকে উঠল তখন দেখল ফুলকি ঘরে নেই। ফুলকির মা এদিক সেদিক খুঁজতে লাগলো। গিয়ে দেখল ওই নদীর পাড়ে ফুলকি বসে আছে আনমনে। ফুলকির যখন মন খারাপ হয় তখন নদীর পাড়ে যায়। নদীর পাড়ে আনমনে বসে থাকে। তাই তার মা সেখানে গিয়ে ফুলকির দেখা পেল।
ফুলকির মা যখন ফুলকির সাথে রাগারাগি করতে লাগলো তখন হঠাৎ করে ফুলকির হাত ধরে টানাটানি করছিল। তখন দেখল ফুলকির গা খুবই গরম। গা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। ফুলকির মা ফুলকিকে ধীরে ধীরে বাড়িতে নিয়ে আসলো। ফুলকির গায়ের জ্বর বাড়তেই থাকলো। সারাদিন কেটে যাওয়ার পর সন্ধ্যা বেলায় তার বাবা বাড়িতে ফিরলো। চাল ডাল নিয়ে ফুলকির বাবা যখন বাড়ি ফিরল তখন দেখল তার আদরের ফুলকি জ্বরে কাতরাচ্ছে। সময় যত যেতে লাগলো ফুলকি আরো অসুস্থ হতে লাগলো। ফুলকি বাবা-মা ফুলকির পাশে বসে থাকলো। রাতে হঠাৎ করেই ফুলকির গায়ে আরো বেশি জ্বর উঠে গেল। জ্বরের ঘোরে বারবার বলতে লাগলো ওই যে আমার লাল চুড়ি।
পরের দিন সকাল বেলায় ফুরকির বাবা ছুটে গেল তার মহাজনের কাছে কয়টা পয়সা ধার চাইল। তার মহাজনের কাছে বলল কাজ করে শোধ করে দেবে। অবশেষে তার মহাজন তাকে পয়সা দিলো। সেই পয়সা নিয়ে ফুলকির বাবা গঞ্জে গিয়ে লাল চুড়ি কিনে আনলো। ফুলকির বাবা গঞ্জে থেকে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেল। কিন্তু যখন সে বাড়ির দরজায় পা রাখল তখন দেখতে পেল অনেক মানুষের সমাগম সেখানে। দৌড়ে গিয়ে বাড়ির ভেতরে দাঁড়ালো। দেখল ফুলকির মা চুপ করে বসে আছে। আর পাশে ঘুমিয়ে আছে তাদের আদরের ফুলকি। ফুলকির বাবা চিৎকার করে বলতে লাগলো ওঠ ফুলকি আমি তোর লাল চুড়ি এনেছি। ফুলকির মৃতদেহ দেখে একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেল সে। তার হাতে থাকা চুড়ি গুলো হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেল। মেয়ের হাতে তার পছন্দের লাল চুড়ি তুলে দিতে পারল না ফুলকির বাবা। ফুলকির লাল চুড়ি ফুলকি আর দেখে যেতে পারলনা।
আপনার শেয়ার করা এই গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো আপু। ছোট বাচ্চাদের অনেক আল্লাহর থাকে কিন্তু গরিব পরিবারের সেই আহ্লাদ গুলো পূরণ করা সত্যিই অনেক কষ্ট হয়ে যায়। তারপরও বাবা-মা সবসময় চেষ্টা করতে থাকে যত অভাবই হোক না কেন দরকার হলে খেয়ে না খেয়ে সন্তানের শখ পূরণ করার জন্য।
আপনার গল্পের ফুলকির মৃত্যু হয়ে যাবার সংবাদটি পড়ার পরে আমার চোখে পানি চলে এসেছিল।
সত্যি ভাইয়া আমি গল্পের মাধ্যমে কয়েকটি চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এই গল্পটি পড়ে আপনার চোখে পানি এসে গিয়েছে জেনে মনে হচ্ছে আমার লেখা সার্থক হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
খুবই হৃদয় বিদায়ক ঘটনা সেয়ার করলেন। গরীব বাবার অভিমানি মেয়ে ফুলকি। তার বাবার দেওয়া লাল চুড়ি ফুলকি আর দেখতে পারলো না। মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। ধন্যবাদ আপু। বাস্তবে যেন এমন ঘটনা কোথাও না ঘটে। সেই কামনা করি।
ভাইয়া আমি চেষ্টা করেছি সুন্দরভাবে এই গল্পটি লিখে শেয়ার করার জন্য। সত্যি কথা বলতে এরকম অনেক ঘটনা আছে যেগুলো আমাদের হৃদয়ে কষ্টের অনুভূতি তৈরি করে। তেমনি একটি গল্প নিজের মতো করে শেয়ার করেছি।
আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনি খুব চমৎকারভাবে গল্পটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আসলে গরিব বা মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। এত চমৎকার গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
জীবনের বাস্তবতা থেকেই গল্প তৈরি হয়। তাইতো আমি নিজের মতো করে গল্প লিখেছি। ভাইয়া আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।