পূর্ণতা||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে।আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। পূর্ণতা শব্দটি খুবই ছোট। তবে পূর্ণতার অর্থ অনেক বিশাল। হয়তো আমরা কেউ পরিপূর্ণ নই। কোনো না কোনোভাবে আমাদের জীবনে অপূর্ণতা থেকেই গেছে। তাইতো আমরা পূর্ণতার খুঁজে সারা জীবন কাটিয়ে দেই। মাঝে মাঝে পূর্ণতা আমাদের কাছে এসে ধরা দেয় না। তেমনি একটি সুন্দর গল্প শেয়ার করতে যাচ্ছি।


পূর্ণতা:

bench-g83c50b3a2_1920.jpg

Source


রাজীবকে ভালোবেসে সব সুখ উজাড় করে দিয়েছিল মৌনতা। রাজীবের ভালোবাসা মৌনতাকে উজাড় করে দিয়েছিল। দীর্ঘদিনের সম্পর্কের পূর্ণতা দিতে মৌনতা রাজীবের হাত ধরে রাজীবের ছোট্ট ঘরে উঠেছিল। মৌনতা বিলাসিতায় বড় হয়েছে। তবুও সে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে ভালোবাসার ছোট্ট নীড়ে। সে যেন জীবনের পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছিল। রাজীব ও মৌনতার ভালোবাসার ঘর সুখে শান্তিতে ভরে উঠেছিল। রাজিব যখন মৌনতাকে বিয়ে করে তখন রাজিবের পড়াশোনা জীবনের শেষ হয়নি। মৌনতা নিজের পড়াশোনার কথা চিন্তা না করে রাজীবের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেছিল। মৌনতা দু চারটে টিউশনি করাতো। এদিয়ে তাদের দুজনের পেট চলে যেত। হয়তো এক বেলা না খেয়েই কাটিয়ে দিত তারা। আবার অনেক সময় একজনের মুখে খাবার তুলে দিতে অন্যজন বলতো আজ তার খিদে নেই। এভাবেই তাদের দিন যাচ্ছিল।


জীবন থেকে যেমন সময় চলে যায় তেমনি সময়ের সাথে সাথে মানুষের ভিতরে পরিবর্তন আসে। রাজীবের জীবনে আজ অর্থের অভাব নেই। রাজীব পড়াশোনা শেষ করে একটি চাকরি পেয়েছে। মৌনতাও আজ আর টিউশনি করে না। নিজের সংসার গোঝাতেই ব্যস্ত থাকে হয়তো।।আজ সবকিছুই তাদের জীবনে আছে। এভাবে যখন বেশ কয়েকটি বছর কেটে গেল তখন তারা অনুভব করল একটি শূন্যতা। যে শূন্যতা তারা ভীষণভাবে অনুভব করল। তারা দুজনেই চাচ্ছিল একটি মানুষের দায়িত্ব নিতে। যে মানুষটি তাদের কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার। এভাবে যখন তাদের সংসার জীবনের 12 টি বছর কেটে গেল তবুও তারা সৃষ্টিকর্তার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার পেল না তখন মৌনতা ভেঙে পড়েছিল। মৌনতা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। কারণ সৃষ্টিকর্তা থাকে সেই সুখ থেকে বঞ্চিত করেছে।


একটি সন্তানের জন্য তারা বিভিন্ন ডক্টর দেখাতে লাগলো। যদিও প্রথম প্রথম রাজীব ডক্টরের কাছে যেতে চাইত না। এরপর মৌনতার মুখের দিকে তাকিয়ে সে ডক্টরের কাছে যেত। মৌনতা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। এরপর মৌনতার এক বন্ধু ছিল যে তাদেরকে একজন ভালো ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলেন। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানতে পারল তার মা হওয়ার ক্ষমতা নেই। সৃষ্টিকর্তা থাকে সেই ক্ষমতা দান করেননি। কথাগুলো শোনা মাত্রই মৌনতা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ল। এরপর মৌনতা সিদ্ধান্ত নিল রাজীবের দ্বিতীয় বিয়ে দিবে। প্রথমে রাজীব দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি ছিল না। এরপর মৌনতার জুরাজুরিতে রাজীব দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি হল। মৌনতা নিজে পছন্দ করে একটি মেয়েকে রাজীবের ঘরে আনলো। মেয়েটি দেখতে ভারী মিষ্টি। মৌনতা যখন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিল তখন মনে মনে ভাবতে লাগলো আমার মতো অভাগী হয়তো এই পৃথিবীতে কেউ নেই। তাইতো আমি নিজের সুখ অন্যের হাতে তুলে দিলাম।


woman-g0b882ec95_1920.jpg

Source


সেদিন ঘরের দরজা বন্ধ করে অনেক কেঁদে ছিল মৌনতা। যে কান্না শুধু চার দেয়ালের মাঝে বন্ধ ছিল। হয়তো চার দেয়ালের মাঝের সেই কান্নার আওয়াজ কেউ শুনতে পায়নি। কিন্তু সেই কান্না মৌনতাকে বারবার ধিক্কার দিচ্ছিল তুমি একজন অপূর্ণ মানুষ। তোমার জীবনে কোন পূর্ণতা নেই। তাইতো তুমি প্রিয় মানুষটিকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছো। প্রিয় মানুষটিকে ধরে রাখার ক্ষমতা তোমার নেই। এই কথাগুলো যখন তার কানে ভাসছিল তখন মৌনতা নিজেকে খুবই তুচ্ছ মনে করছিল। মৌলতা সেদিন রাতে ঘুমাতে পারিনি। কারণ রাজীবের বুকে মাথা না রাখলে মৌনতার যে ঘুম আসে না। কিন্তু সেই রাজীরের ঘরে আজ অন্য কেউ। হয়তো মৌনতা রাজীবকে পূর্ণতা এনে দিতে পারিনি। চার দেয়ালের মাঝে যখন মৌনতা নিজেকে বন্দী করে নিয়েছে তখন তার কাছে বারবার মনে হচ্ছিল যেন চার দেয়ালের ইট গুলো তার বুকের মাঝে আঘাত করছে। তাই তো সে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।


পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মৌনতা বলল আমি কয়েকটি দিনের জন্য বাবার বাড়িতে যেতে চাই। রাজীব বলল বেশ তো ঘুরে এসো। রাজীব খুব ভালো করে জানতো বিয়ের পরে এই 12 বছরে কখনো বাবার বাড়িতে যায়নি মৌনতা। তাই সেখানে যাওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। তবুও রাজীব তাকে একটিবারের জন্য আটকালোনা। মৌনতা যেন রাজিবের কথাগুলো শুনে বিশ্বাস করতে পারছিল না। সে বুঝে গিয়েছিল রাজীবের জীবনে মৌনতার কোন মূল্য নেই। হয়তো তার জায়গায় অন্য কেউ চলে এসেছে। এবার মৌনতা নিজের কয়েকটি প্রয়োজনীয় জামাকাপড় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল অজানা কোন উদ্দেশ্যে। আজ মৌনতা রেল লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছে এই ট্রেন যদি সারা জীবন চলতো তাহলে হয়তো আমার কোন গন্তব্যে যেতে হতো না। হয়তো আমি সারা জীবন এখানেই কাটিয়ে দিতে পারতাম। মৌনতা মনে মনে ভাবছে আজ আমি নিরুপায়। আজ আমার কোন গন্তব্য নেই। আমার কোন জায়গা নেই যাওয়ার জন্য। কারণ আমি পূর্ণতা পায়নি। আমি আমার জীবনের পূর্ণতা পাইনি। এই কথাগুলো বলতে বলতে মৌনতা কখন যে রেল লাইনের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারেনি। হয়তো নিজের অপূর্ণ জীবনটাকে পূর্ণতা দিতে নিজেকে পৃথিবী থেকে বিদায় করেছে সে। সে একজন অপূর্ণ মানুষ। কারণ সে জীবনে কোন পূর্ণতা পায়নি। তার শুধু একটিই অপরাধ সে কাউকে ভালোবেসে আঁকড়ে ধরে বেঁচে ছিল। হয়তো তার একটি অপরাধ সে জীবনে মা হতে পারেনি। হয়তো তার একটি অপরাধ সে একজন ভালো বউ হয়ে উঠতে পারিনি। হয়তো তার জীবনের পূর্ণতার ছোঁয়া লাগেনি। এভাবেই হয়তো হাজারো মৌনতা অপূর্ণতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যায়। যার খবর কেউ রাখে না।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 2 years ago 

জীবন থেকে যেমন সময় চলে যায় তেমনি সময়ের সাথে সাথে মানুষের ভিতরে পরিবর্তন ও আসে। রাজীবের জীবনে আজ অর্থের অভাব নেই ঠিকই । রাজীব পড়াশোনা শেষ করে একটি চাকরি পেয়েছে। মৌনতাও আজ আর টিউশনি করে না। নিজের সংসার গোঝাতেই ব্যস্ত থাকে হয়তো।।আজ সবকিছুই তাদের জীবনে আছে। এভাবে যখন বেশ কয়েকটি বছর কেটে গেল তখন তারা অনুভব করল একটি শূন্যতা। যে শূন্যতা,শুধুই শূন্যতা কে উপলব্ধি করতে পারে।
♥♥

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন আপু জীবন সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়। তাইতো তাদের জীবনেও পরিবর্তন এসেছে। মন্তব্য করে যে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 2 years ago 

আপনার লেখা গল্পটি পড়ে খুব ভাল লাগলো আপু ,এই রকম অনেক মেয়ে জীবনে ঘটে কেউ হত প্রকাশ করে না ।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন আপু অনেকের ভিতরে জমা গল্পগুলো আমি আমার নিজের ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। হয়তো না বলা কথাগুলো সবার কাছে না বলাই থাকে। তাই তো গল্পের মাঝে প্রকাশ করেছি। ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 66028.29
ETH 2694.36
USDT 1.00
SBD 2.89