গল্প-সেই বৃষ্টি ভেজা দিন||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন গল্প লিখিত আমার খুবই ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে সময় পেলে গল্প লিখি। আমার খুবই পছন্দের একটি কাজ হল গল্প লেখা। তাইতো আজকে আমি দারুন একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।
সেই বৃষ্টি ভেজা দিন:
Source
বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। সেই বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ যেন নিলয়ের কাছে অনেক বিষাক্ত লাগছে। কারণ বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ শুনলে নিলয় হারিয়ে যায় সেই নিজের অতীত জীবনে। যেখানে সে ফেলে এসেছিল জীবনের কিছু মূল্যবান মুহূর্ত। আর প্রিয় মানুষটিকে। নিলয়ের আজও মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। যেদিন সে তার প্রিয় মানুষটিকে হারিয়েছিল। নিলয় অধরাকে অনেক ভালোবাসতো। অধরাও নিলয়কে অনেক ভালোবাসতো। দুজনের ভালোবাসা যেন দুজনের জীবন পূর্ণ করেছিল। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। গভীর ভালোবাসার পাশাপাশি দুজনের মাঝে বড্ড মান অভিমান চলছিল। কথায় আছে মান-অভিমান নাকি ভালোবাসাকে বাড়িয়ে তোলে।
নিলয় সবসময় অধরার অভিমান ভাঙ্গাতো। অধরা নিলয়কে অনেক বেশি ভালোবাসতো। কিন্তু সে বড় অভিমানী মেয়ে। নিলয়ের জন্য অভিমান করে বসে থাকতো সে। সেই দিনটি ছিল তাদের জীবনের সেরা একটি দিন। কারণ সেদিন তারা দুজন দুজনকে আপন করে পেতে চলেছিল। দুজন দুজনের সাথে ঘর বাঁধতে চলেছিল। অধরা যেহেতু নিলয়কে অনেক ভালোবাসতো তাই তো তাকে সে সারা জীবনের জন্য পেতে চেয়েছিল। অন্যদিকে অধরার বাবা অন্য একটি ছেলের সাথে অধরার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল। অধরা এই বিয়েতে রাজি ছিল না। তাইতো সে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য নিলয়কে বলেছিল। অন্যদিকে নিলয় কিছুটা সময় চেয়েছিল। এই জন্যই তাদের মাঝে অভিমান তৈরি হয়েছিল।
নিলয় ভাবছিল এখন সে কোন চাকরি করে না। অধরা কে বিয়ে করে রাখবে কোথায়। সে যে অধরাকে কষ্ট দিতে পারবে না। অন্যদিকে অধরার অভিমানের কাছে নিলয় হার মেনেছিল। তাই তো সে রাজি হয়েছিল তাকে বিয়ে করতে। তার এই ভাঙাচোরা জীবনের সাথে অধরাকে জড়াতে চেয়েছিল। অধরা হাসি মুখে নিলয়ের ছন্নছাড়া জীবনে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিধাতা তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে দিল না। নিলয়ের সেই ভালোবাসার মানুষটির বড় ইচ্ছে ছিল লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে নিলয়কে বিয়ে করবে। নিলয় সেদিন অপেক্ষায় ছিল কখন অধর আসবে। অধরাও বেরিয়ে পড়েছিল তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে আসার জন্য। নিলয় অনেকক্ষণ থেকে অধরের জন্য অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ করেই শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। এমন সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়।বৃষ্টির শব্দে নিলয় অধরার কোন কথা বুঝতে পারছিল না। অস্পষ্ট গলায় কি বলছিল অধরা সে শুনতেই পেল না।
এরপর বেশ কিছুক্ষণ সময় পেরিয়ে গেল কিন্তু অধরা এলোনা। এমনকি মোবাইল ফোনেও সাড়া দিচ্ছিল না। কেটে গেল আরো বেশ কিছুটা সময়। নিলয় অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে কেউ একজন ফোনটা তুললো। অপর প্রান্ত থেকে একটি ভারী কন্ঠ ভেসে এলো। নিলয় অধরার কথা জানতে চাইলো ছেলেটি জানালো একটি মেয়ে এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পড়ে আছে। এই কথা শুনে নিলয় চিৎকার করে উঠলো। এরপর সেখানে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ল। কিন্তু নিষ্ঠুর বিধাতা তার সেই পথ যেন আরো দীর্ঘ করে দিয়েছিল। বৃষ্টির ধারা যেন তার হৃদয়ের ভিতরে গিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল। অনেক প্রতীক্ষার পর নিলয় সেখানে গিয়ে পৌঁছায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে নিলয় যা দেখল সেটা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
অধরার রক্তাক্ত দেহ পড়েছিল রাস্তায়। বৃষ্টির পানিতে রক্ত গুলো যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছিল। তার পরনের লাল শাড়িটা রক্তে ভিজে গিয়েছিল। মেহেদি রাঙা হাত দুটো বাঁচার আকুতিতে রাস্তার ইট পাথর আঁকড়ে ধরেছিল। এই দৃশ্য দেখে নিলয় চিৎকার করে কেঁদেছিল। হয়তো তার চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি। বৃষ্টির শব্দ আর তার হৃদয়ের হাহাকার মিলেমিশে যেন পরিবেশটা ভারী হয়ে উঠেছিল। হয়তো সেদিন নিলয় নিজের হৃদয়ের ব্যথা কাউকে বোঝাতে পারেনি। হয়তো অধরা বাঁচতে চেয়েছিল। নিলয়ের কাছে বাঁচার আকুতি করেছিল। কিন্তু বৃষ্টির শব্দ অধরার অস্পষ্ট কথাগুলোকে আরো ভারী করে তুলেছিল। তাইতো নিলয় বুঝতে পারিনি তার প্রিয় মানুষটির মুখের ভাষা। তাইতো জীবনের শেষ মুহূর্তে অধরা নিলয়কে পাশে পায়নি। এভাবেই সেই বৃষ্টি ভেজা দিনে নিলয়ের প্রিয় মানুষটি তার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। কোন এক বৃষ্টি ভেজা দিনের গল্প এভাবেই হয়তো নিলয়ের মনে সারা জীবন স্মৃতির পাতায় রয়ে যাবে।
আপু আপনার গল্পটি পড়ে সত্যিই আমি যেন গল্পের ভেতরে ডুবে গিয়েছিলাম। ভীষণ কষ্ট লাগলো শেষটায় ।এভাবে ভালোবাসার মৃত্যু হল। সত্যি চমৎকার লিখেছেন আপনি ।নিলয়ের জীবনে সব আশা ভরসা শেষ হয়ে গেল। যেহেতু বৃষ্টির দিনে সে অধরা কে হারিয়েছে সেহেতু বৃষ্টি তার কাছে বিষাক্ত লাগবে এটাই স্বাভাবিক ।ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার লেখা গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। গল্পের শেষটা সত্যি অনেক কষ্টে ছিল। ধন্যবাদ আপু মতামতের জন্য।
প্রকৃত ভালোবাসা গুলো যদি পূর্ণতা না পায়,তাহলে খুবই খারাপ লাগে। নিয়তি অনেক সময় আমাদেরকে কঠিন পরিস্থিতিতে নিয়ে দাঁড় করায়। ভারী বৃষ্টির কারণে নিলয় এবং অধরার মিলন হলো না। ভারী বর্ষণ সবকিছু শেষ করে দিল। নিলয়ের কাছে তখন খুবই অসহায় মনে হয়েছিল নিজেকে। এতো স্বপ্ন দেখার পরও তাদের ঘরবাঁধা হলো না। আপনি সবসময়ই দারুণ লিখেন আপু। পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া প্রকৃত ভালোবাসা গুলো যদি পূর্ণতা না পায় তখন সত্যি অনেক খারাপ লাগে। আমার গল্পের সেই মানুষগুলোর ভালোবাসা পূর্ণ হয়নি। ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্যের জন্য।