শাহিন ভাইয়ের মুদি দোকান নিয়ে গল্প 🛖পর্ব -১🤥 By mohamad786 [10% Beneficiary @shy-fox]steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমির সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

আমাদের বাড়ির পাশে একটি মুদি দোকান রয়েছে। এই মুদি দোকানদারের নাম ছিল শাহিন। সে খুবই ভালো মনের একজন মানুষ। গরীব হলেও সে সবসময় সততার সাথে ব্যবসা করত। সকল মানুষের সাথে খুবই ভালো ব্যবহার করত। যার কারণে এলাকার মানুষ থাকে খুবই ভালবাসত এবং যেকোনো প্রয়োজনীয় দ্রব্য তার দোকান থেকে কিনতো। আর শাহিন ভাই অনেক ভালো মনের মানুষ হওয়ার কারণে অনেকেই বাকি দিত। যার কারণে তার কাছ থেকে অনেকেই বাকি দ্রব্য কিনতো। আবার টাকাগুলো দিয়ে দিত। আসলে সে সততার সাথে ব্যবসা করছিল, এই ব্যবসার করার মধ্যে তাকে নিয়ে একটি অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আপনাদের মধ্যে এই গল্পটি আজকে আমি শেয়ার করতে এসেছি। আশা করছি আমার গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে। এটি গল্প হলেও একদম বাস্তব ঘটনা। তো বন্ধুরা চলুন শাহিন ভাইয়ের দোকানের সেই গল্পটি পড়া শুরু করা যাক।

architecture-gae08a4a27_1920.jpg

source

সময়টা ছিল ২০১৯ সাল। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে এই ঘটনাটি। তখন আমি সিরাজগঞ্জে বসবাস করি পড়াশোনা জন্য। শাহীন ভাইয়ের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক আমার। আমি যখন গ্রামের বাড়িতে যাই। তখন শাহীন ভাইয়ের দোকানে গিয়ে বসে থাকি। সেই দোকানে টিভি রয়েছে। আমরা সবাই মিলে সেখানে খেলাধূলা দেখতাম।গ্রামের বাড়িতে গেলে আমরা সেই দোকান আড্ডা দিতাম যার কারণে ১১টার আগে বাড়িতে আসতাম না। কারণ সকল বন্ধুরা মিলে দোকানে আড্ডা দিতাম টিভি খেলা দেখতাম, অনেক মজা হত। আর এই দোকানে সকলেই টিভি দেখতে আসতো। এবং অনেক মজা করত। কারণ শাহিন ভাই খুব ভালো মনের মানুষ। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করত। সকলেই দোকান থেকে সততার সাথে জিনিস কিনতে পারতো। কখনো শাহিন ভাই দুই নাম্বারী করতো না। যার কারণে এলাকার মানুষের কাছে প্রিয়। তাই আমাদের বন্ধু বান্ধবীদের মধ্যে কারো সাথে শাহিন ভাই কখনো খারাপ ব্যবহার করেননি, আমরাও খারাপ ব্যবহার করতাম না। কারণে শাহীন ভাইয়ের সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক। শাহিন ভাই গরীব হলেও মানুষটা খুবই ভালো। তার বাবা একজন দিনমজুর ছিল এবং শাহিন ভাই মোটামুটি কিছু পড়াশোনা করেছিল। যার কারণে দোকানের ব্যবসা খুবই ভালভাবে করতো। একসময় শাহিন ভাইয়ের দোকান অনেক ছোট ছিল। সে আস্তে আস্তে সততার সাথে ব্যবসা করতে করতে দোকানটা অনেক বড় করেছে এবং এই দোকানে একটা টিভি, ও একটা ফ্রিজ ছিলো এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামাল ছিলো। সেগুলো নিয়ে ভালোভাবে ব্যবসা করতে ছিল।


আমাদের গ্রামে চারজন ছেলে ছিল। এই চারজনের সারাদিন গ্রামের মধ্যে ঘোরাঘুরি করতো।তারা কোন পড়াশোনা করত না এবং কাজকাম করতে না। গ্রামের মধ্যে ঘোরাফেরা করত আর তারা শাহীন ভাইয়ের দোকানে এসে অনেক টাকা বাকি খেয়েতো। বাকি দিতে রাজি না হলে শাহিন ভাই এর সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। এটা নিয়ে অনেক বার ঝগড়া হয়েছে। যার কারণে তাদের খারাপ ব্যবহার কারণে শাহিন ভাই কিছু বলেনি। তবে তারা মাঝে মধ্যে কিছু টাকা দিত।যে টাকা দিত তার চেয়ে বেশি বাকি খেতো। প্রত্যেকেই সিগারেট খেতে এবং এই দোকানে থেকে সিগারেট খেয়েছে সাথে আরো অনেক কিছু নিয়েছে।তারা চারজন কোন কামাই করত না। বাড়ি থেকেও তাদের টাকা দিতো না। কারণ তারা ঘুরে ফিরে খায়,তাই তাদের টাকা দিত না। তাই তারা শাহীন ভাইয়ের দোকানে এসে বাকি নিতো। তাদের প্রতি জনের কমপক্ষে ৩০০০ থেকে ৪০০০ হাজার টাকা বাকি পড়ে গেল। একসময় শাহিন ভাই দেখতে পেল তাদের কাছ থেকে টাকা চাইলে তারা খারাপ ব্যবহার করে। তাই তাদের বাকি দেওয়া বন্ধ করলো। একদিন দোকানে বাকি খেতে এসেছিল তখন শাহিন ভাই একদমই না করে দেয়। তখন সবার সাথে শাহিন ভাইয়ের ঝগড়া হয় এবং তারা শাহীন ভাইকে মারতে পর্যন্ত গিয়েছিল। কিন্তু শাহিন ভাই চুপ হয়ে যায়। যার কারণে সে নিরবে সহ্য করে। যদি একটু খারাপ ব্যবহার করত। তাহলে মারামারি লেগে যেতো।


man-g88c9103c6_1920.jpg

source

শেষ পর্যন্ত শাহিন ভাই বলল তোমরা যদি আমার টাকা না দাও। তাহলে গ্রামের মুরুব্বিদের কাছে তোমাদের নামে বিচার দেবো। তখন মুরুব্বীরা যা করবে তাই। শাহিন ভাই জানতো মুরুব্বীরা তাকে খুবই ভালোবাসে এবং মুরুব্বীদের বললে যে কোন একটা ব্যবস্থা করবে। এই কথা বলার পরে ওই চারজন দোকান থেকে চলে যায় এবং তারা একটা পরিকল্পনা করে। যে কিভাবে শাহীন ভাইয়ের দোকান থেকে তাদের বাকির খাতাগুলো নেওয়া যায়। তাদের বাকি টাকা যাতে কোন প্রমাণ না থাকে। তাই তারা অনেক বড় একটি খারাপ পরিকল্পনা করে। তারা রাতের আধারে এসে দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়। সত্যি সবাই ছিল তখন ঘুমন্ত। রাত তিনটার দিকে আগুন লাগায় দোকানে। যখন রাতের আগুন লাগায় তখন ওই দোকানের আশেপাশের মানুষ বুঝতে পারে নাই,কিছু সময় পরে বুঝতে পেরেছিল আগুনের ধোঁয়ার কারণে।তখন সবাই আসে,এবং পাশেই ছিল পুকুর। পুকুরের পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করে আগুন। দোকানের আগুন নেভানোর চেষ্টা করে যখন ততোক্ষণে দোকান অর্ধেক পুড়ে যায়।যার কারণে দোকানের ভিতরে ঢুকতে পারে না। মালামাল কিছুই সরাতে পারেনি এবং দোকানটা শেষমেষ পানি দিয়ে আগুন নেভানো হয়। কিন্তু দোকানের অর্ধেকের বেশি মালামাল পুড়ে গেছে এবং টিভিটা ও ফ্রিজ পুরে যায।এই দৃশ্য দেখে শাহিন ভাই কান্না মাঠিতে শুয়ে পরে।

বন্ধুরা আপনাদের কাছে জানতে চাচ্ছি, আপনাদের কি মনে হচ্ছে দোকানে আগুন কারা লাগিয়েছিল???


এই দোকান পড়ার ঘটনার দিন আমি তখন গ্রামে ছিলাম না। আমার বন্ধুরা তখন গ্রামে ছিল। তারা শাহীন ভাইয়ের দোকানে এসেছিল এবং শাহিন ভাইকে অনেক সান্তনা দেওয়া হয়। তবে এই দোকান পুরার দৃশ্যটা শোনার পর আমার খুবই খারাপ লেগেছে। বাকি অংশটুকু দ্বিতীয় পর্বের মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আজ এখানেই শেষ করছি। আবারো অন্য কোনদিন ভিন্ন কোনো কন্টেট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন, এই দোয়া রইল। আল্লাহ হাফেজ।🙏🤲🙏

banner-abbVD.png

আমার পরিচয়

IMG_20220525_014109.jpg

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ ।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবসি ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে।

Amar_Bangla_Blog_logo_png.png

👉বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺

Sort:  
 2 years ago 

গ্রামে গেলে আপনারা গ্রামের বন্ধুবান্ধব মিলে একটা দোকানে আড্ডা দিতেন এরকম মনে হয় গ্রামের ছেলেরা সবসময় করে থাকে। বন্ধু-বান্ধব মিলে একটা দোকানে চা নাস্তা খাইয়া আড্ডা দেওয়া। আপনার শাহিন ভাই ভালো হওয়ার কারণে অনেক বেশি সময় আপনারা সেখানে থাকতে পারতেন। ভালো মানুষের সাথে এরকম খারাপ কাজ করে থাকে বাকি খাবে অথচ টাকা দিবে না, যার কারণে তারা লোকটির দোকানে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিল। যেটা তারা খুবই খারাপ একটি কাজ করেছে। আমার তো মনে হচ্ছে ছেলেগুলোই এই কাজ করেছে।

 2 years ago (edited)

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

 2 years ago 

আসলে আমাদের গ্রামে একটি এরকম দোকান রয়েছে। আমরা বন্ধুরা মিলে গ্রামে গেলে সেখানে বসে আড্ডা দেই। খেলাধুলা দেখি। সত্যিই আপনাদের বন্ধুদের এই আড্ডাখানায় শাহিন ভাইয়ের দোকানে কারা আগুন ধরিয়ে দিলো সেটা জানার জন্য পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ

 2 years ago 

প্রাথমিক দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ঐ চার বখাটে দোকানে আগুন লাগিয়েছিল হয়তো বাকি না দেওয়ার কারণে। কিন্তু ঘটনা অন্য কিছু হতে পারে তাই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। ঘটনাটা সত্যি বেশ হৃদয় বিদারক। নিজের হকের টাকা চাইলেও দোষ হাইরে দুনিয়া।। ভালো লিখেছেন ভাই।।

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে ভাই

 2 years ago 

আপনারা বন্ধুরা শাহিন ভাইয়ের দোকানে অনেক আড্ডা দিতেন এবং ভালো সময় কাটাতেন আপনার পোস্ট পড়েই বোঝা যাচ্ছে তা। সত্যি ই গ্রামের কিছু খারাপ মানুষের জন্য অনেক খারাপ পরিস্থিতি হয়ে থাকে যেরকম শাহীন ভাইয়ের হয়েছে। সত্যি নিজের পড়ে গিয়েছে ওনার অবস্থা কিরকম হয়েছে আমি শুধু তাই ভাবছি। এরকম লোকদের গ্রামে রাখা ও ভালো হবে না।

 2 years ago 

আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65762.46
ETH 2656.88
USDT 1.00
SBD 2.81