আমার স্মৃতির পাতা থেকে দুঃসাহসী এক অভিযান

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

customs-douane-5230450_1920 (1).jpg

source

অনেক অনেক আগের কথা সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। এখন রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করার পালা। তাই পরীক্ষা শেষ করে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার সমবয়সী বেশ কয়েকজন মামাতো ভাই ছিল। ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলে সেখানেই আমার বেশি সময় কাটতো। সবাই মিলে হইহুল্লোড় করে সময় কাটাতাম। সমবয়সী কয়েকজন থাকলে তাদের কীর্তিকর্ম লাগামহীন হয়ে যায়। সেরকমই এক লমহর্ষক মজার কাহিনী আজকে শেয়ার করছি।

মামাতো ভাইদের মধ্যে একজনের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। ছিল বললে ভুল হবে এখনো আছে। বয়সে আমার কয়েক মাসের বড় হলেও সব বিষয়ে আমার সঙ্গে বোঝাপড়া একটু বেশি ভালো ছিল। আমরা দুজন মিলে একসঙ্গে অনেক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা পূর্ণ ও বিপদজনক অভিযান ছিল এটি। বাসার কাউকে না বলে চোরাকারবারীদের সঙ্গে ইন্ডিয়ার বর্ডার পার হয়ে বেড়াতে যাওয়া।

একদিন দুপুরে খাবার পর দুজনে মিলে বুদ্ধি করলাম কোথাও বেড়াতে যাব। কোথায় যাওয়া যায় সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করতে থাক। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম কামরুলের নানা বাড়ি বেড়াতে যাব। একদম ইন্ডিয়ার বর্ডার এর কাছে সেখানে আশেপাশে অনেক পাহাড়ি জায়গা আছে দেখার মত। ও হ্যাঁ আমার সেই মামাতো ভাইয়ের নাম কামরুল। যাইহোক যেই পরিকল্পনা করা শেষ ওমনি দুজনের রওনা দিলাম নানা বাড়ির উদ্দেশ্যে।

সন্ধ্যার বেশ কিছুক্ষণ আগে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম। আশেপাশের চমৎকার কিছু লোকেশন ঘুরে আমি বেশ মজা পেয়েছিলাম। তারপর সন্ধ্যার পর রাত্রে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় সেখানে খুব তাড়াতাড়ি খেয়ে-দেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। কারণ রাত্রে ঘুমিয়ে পড়ার পর ওই দিক দিয়ে চোরাকারবারিরা পন্য খালাস করা শুরু করে। আমার সন্ধ্যা রাতে কখনো ঘুমানোর অভ্যাস ছিল না

এমনিতেই শহরে আমরা সাধারণত রাত্রে খাবার খাই দশটার দিকে। তারপর খেয়ে দেয়ে আবার কিছুক্ষণ লেখাপড়া করতে হতো। সে কারণেই ঘুমানোর অভ্যাস ছিল অনেক দেরিতে গভীর রাত্রে। যাইহোক সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পরেও আমার কেন জানি ঘুম আসছিল না। তাই কামরুল কে বললাম চল বাইরে গিয়ে একটু ঘুরে আসি। যদিও প্রথমদিকে ও রাজি হচ্ছিল না বাইরে যাওয়ার জন্য। কারণ এই এলাকা সম্বন্ধে আগে থেকেই বেশ ধারণা ছিল। সন্ধ্যার পরে এখানে নানান রকমের দুই নম্বরি কর্মকাণ্ড চলত।

ওর নানা বাড়ি হওয়ার সুবাদে মাঝেমধ্যেই এখানে আসতো সে। আশেপাশে অনেক জনের সঙ্গেই বেশ পরিচিতি ছিল আগে থেকেই। তো আমরা বাইরে বের হয়ে এসে অনেক কিছুই দেখলাম। সেই বিষয়ে আর এখন বিস্তারিত এখানে বলতে চাচ্ছি না। কামরুলের পরিচিত বেশ কয়েকজন চোরাকারবারীর সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল। আমি দেখলাম দু একজনকে সে মামা বলে সম্বোধন করল। তাদের তাদের কথোপকথন দেখে আমার মনে একটা আইডিয়া তৈরি হল।

এরা প্রতিদিন ভোরবেলা পূর্ব আকাশে আলো ফোটার আগেই চোরাই পথে বর্ডার ক্রস করে। পরবর্তীতে সারাদিন সেখানে মালপত্র ক্রয়-বিক্রয় করে। রাতের অন্ধকারে আবার বর্ডার ক্রস করে বাংলাদেশে ফেরত আসে। তাদের এই ধরনের কথাবার্তা শুনে আমিও কামরুলকে ডেকে বললাম আগামীকাল ভোরবেলা আমরাও এদের সঙ্গে ইন্ডিয়া চলে যাই। আমার এই কথা শুনে সে ভয়ে অস্থির। কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। অনেক বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছিলাম। কারণ ও না গেলে আমার পক্ষে একা যাওয়া সম্ভব ছিল না।

আমি যাওয়ার জন্য এত বড় রিস্ক নেয়ার আরো একটি কারণ ছিল। আর সে কারণেই বারবার যাওয়ার জন্য কামরুল কে তোষামোদ করছিলাম। বর্ডার পার হয়ে ১০ কিলোমিটার দূরে ওর ছোট খালার বাড়ি। কামরুলের মায়েরা তিন বোন তার মধ্যে একজনের বিয়ে হয়েছিল ইন্ডিয়ায়। তো আমি পরিকল্পনা করেছিলাম আমরা বর্ডার পার হয়ে সোজা ওর খালার বাসায় গিয়ে উঠবো। তারপর সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাব।

সবকিছু ঠিকঠাক করে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম যেহেতু উঠতে হবে ভোরবেলা। পূর্ব পরিকল্পনা মত সকালবেলা খুব তাড়াতাড়ি উঠেছিলাম। তারপর তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে গুছিয়ে রাখা ব্যাগটি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম। অজানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। এখন দেখা যাক উদ্দেশ্য সফল হয় কিনা ? বর্ডার ক্রস করে ইন্ডিয়ায় প্রবেশ করতে পারবো তো? নাকি যাওয়ার সময় বিএসএফের হাতে পাকড়াও হব ? এরকম সম্ভাব্য অনেক কিছুই মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। দেখা যাক কি হয় যেতে পারি কিনা।

চলমান.....।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

Logo-1.png

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

Sort:  
 2 years ago 

চোরা বর্ডার হোক নাহ কেন এই অভিজ্ঞতা স্মৃতি বহুল যে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। পরের পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম। ভীষণ ইন্টাটেস্টিং ঘটনা।

 2 years ago 

হ্যাঁ মনের মধ্যে একটা চরম উত্তেজনা কাজ করছিল। একে তো বিদেশের মাটিতে প্রথম পা দিব অন্যদিকে আবার ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়।

 2 years ago 

ভাই আসলে খুবই ইন্টারেস্টিং একটি ঘটনা তবে আমি মনে করি এটা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এটা আসলে কারোই করা উচিত নয়। তারপরও বয়সটা এমনই মনে না কোন বাধা। বিপদ দেখলে আরো এগিয়ে যেতে মন চায়।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন বয়সটাই এরকম ছিল। সেই বয়সে কোনো বিপদকে বিপদ মনে করতাম না।
এখন মনে পড়লে কিন্তু ভয় পাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 65910.66
ETH 2696.65
USDT 1.00
SBD 2.88