শীতকালে রাতে নৌকা ভ্রমন করতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত এক ঘটনার সম্মুখীন || প্রথম পর্ব||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

hd-wallpaper-3605547_1920.jpg

source

সময়টা ছিল জানুয়ারি মাস ঠিক শনিবার দিন হবে। জরুরি এক কাজের জন্য গ্রামের বাড়ি থেকে ফোন আসে দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পর। পরের দিন সকালে অর্থাৎ রবিবার অফিস খুললেই ওখানকার কৃষি ব্যাংকে দেখা করতে হবে। যেহেতু আজকে শনিবার ছিল তাই বিকালের মধ্যেই রওনা দিতে হবে। কিন্তু যেতে হবে বললেই এত সহজে কিন্তু যাওয়া হয় না। কারণ সুবিশাল ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে যেতে হবে। নদী পার হওয়ার জন্য প্রতিদিন তিন সময় সিরিয়ালি নৌকা পারাপার হয়। সকালে একটি নৌকা ছেড়ে যায় ওদিকে অফিস টাইম ধরানোর জন্য। তারপর ঠিক দুপুর বেলা আরেকটি নৌকা ছেড়ে দেয়। একদম বিকালে ৪.৩০ মিনিটে দিনের শেষ নৌকাটি চলে যায়।

যাইহোক খবরটা পাওয়ার পর বিকেল বেলার নৌকাটি ধরার জন্য তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম আমি আর আমার বাবা। আমার বাবার বয়স ৭০ এর কাছাকাছি অত্যন্ত ধীরগতিতে চলে। তাই ওনাকে নিয়ে অসময়ে নদী পার হতে বুঝতে পেরেছিলাম কিছুটা সমস্যা হবে। যেতে যেহেতু হবেই আল্লাহ ভরসা করে রওনা দিলাম। পরদিন সকালবেলা কাজটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না গেলেই নয়। তো রওনা দেয়ার ৩০ মিনিটের মাথায় নৌকা ঘাটে পৌঁছে গেলাম। পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়েছিল তাই মনে মনে সেই দুশ্চিন্তা ছিল নৌকা পাবো তো। নৌকা ঘাটে পৌঁছেই দেখতে পেলাম মাঝি ভাই কেবলই ইঞ্জিনের হ্যান্ডেল ঘোরানো শুরু করেছে।

আমি চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম। ভাগ্যিস আমার ডাক মাঝি ভাইয়ের কানে পৌঁছে গিয়েছিল। তা না হলে আজকের দিনে আর যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। আমার জেলা শহর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের ওই পারে দুইটি উপজেলা রৌমারী ও রাজিবপুর। জন্মসূত্রে আমি জেলার অধিবাসী হলেও আমার দাদা বাড়ি ও নানা বাড়ি রৌমারী থানাতেই। ওখানেই আমার সব আত্মীয়-স্বজন। শহরে শুধু আমরা একাই পড়ে আছি। যেহেতু সকল আত্মীয়স্বজন গ্রামেই থাকে সেকারণের মাঝেমধ্যেই নদী পার হতে হয়। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে অর্থাৎ শীতকালে নদী পারাপার হওয়া বেশ কষ্টকর।

প্রথমত দুই দিকেই বিশাল চর পায়ে হেঁটে পার হতে হয়। হাঁটতে এমন বিরক্ত লাগে মনে হয় যেন মরুভূমি পার হচ্ছি। কিছুতেই পা এগুতে চায় না। দুপা হাটি তো এক পা পিছিয়ে যাই। দ্বিতীয় সমস্যাটি আরো বেশি প্রকট। শীতকালে নদীর পানি বেশ শুকিয়ে যায়। নদী ড্রেজিং না থাকার কারণে নৌকা ঠিকমতো চলতে পারে না। চলতে চলতে হঠাৎ জেগে ওঠা চড়ে আটকে যায়। একবার চড়ে আটকে গেলে সেখান থেকে বের হতে প্রচুর সময় নষ্ট হয়ে যায়। আবার আঁকাবাঁকা পথে অনেক জায়গা ঘুরে যেতেও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক সময় চলন্ত নৌকা নদীর চরে আটকে গিয়ে ইঞ্জিনের ফ্যান পর্যন্ত ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেকবার।

সবচেয়ে বড় অসুবিধাটা হচ্ছে দিনের শেষের যে সিরিয়ালটি ছেড়ে দেয় সেটা কিছুক্ষণ যাওয়ার পরেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। এমনিতেই শীতের সন্ধ্যা খুব তাড়াতাড়ি আসে সাড়ে পাঁচটা বাজতে না বাজতেই অন্ধকার হয়ে যায়। রাতের বেলা নদীর যে দিকেই তাকাবেন একই রকম দৃশ্য চোখে ভাসে। যদি কখনো নৌকা চরে আটকে যায় তাহলে নৌকা চারদিকে ঘুরিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হয়। এরকমভাবে এলোমেলো ঘোরাঘুরি করার কারণে অনেক সময় মাঝিরা দিক হারিয়ে ফেলে। আর দিক হারিয়ে ফেললে নদীতে খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।

আমাদের ব্রহ্মপুত্র নদ পার হওয়ার দুইটা পয়েন্ট আছে। একটি হল চিলমারী বন্দর হয়ে রুমে যাওয়ার নদী পথ। অপরটি আমাদের জেলা শহরের পার্শ্ববর্তী। অপরটি শহর থেকে ৮-১০ কিলোমিটারের মধ্যে। তবে এই দিক দিয়ে যাওয়ার সময় ইন্ডিয়ার বর্ডারের খুব কাছাকাছি দিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় রাতের বেলা নৌকা যখন চরে আটকে যায়। ঘুরতে ঘুরতে মাঝিরা তখন দিক ভুলে যায় আর ভুল করে ইন্ডিয়ার অংশে ঢুকে যেতে পারে। এরকমই এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম সেদিন। কনকনে শীতের রাত নৌকা চলতে চলতে কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যায় নেমে গেল।

ওই সময় প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল বাসায় যেরকম তাপমাত্রা অনুভব করতাম তার চেয়েও ঠান্ডা কিছুটা বেশি। সাধারণত নদীতে ঠান্ডা একটু বেশি হয় কারণ নদী অঞ্চলে সবসময় হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। আমরা ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত গরম কাপড় পড়ে এসেছিলাম। তারপরেও পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত গায়ের চাদর নিয়ে ছিলাম। আবহাওয়া যখন বেশি খারাপ হবে তখন ওই চাদর দিয়ে গা মাথা ঢেকে কিছুটা রক্ষা পেতে পারবো। যাইহোক নদী পথ পাড়ি দিতে আমাদের তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা লাগার কথা। যাত্রাপথে কোন সমস্যা না হলে এই সময়ের মধ্যেই ঘাটে পৌঁছানো যায়।

দুই ঘণ্টার মতো নৌকা চলার পর আমরা অর্ধেকের বেশি পথ চলে গিয়েছিলাম। ঠিক সেই সময় যে আশঙ্কা করেছিলাম সেই বিপদের সম্মুখীন হয়ে গেলাম। চলতে হঠাৎ করে নৌকা চরের মধ্যে আটকে গেল। ওই যে বলেছিলাম শীতকালে নদীর পানি একদম শুকিয়ে যায়। ড্রেজিং না করার কারণে নদীর মাঝখানে চর জেগে ওঠে। অনেক চেষ্টা করার পরেও সহজে চর থেকে নৌকা নামাতে পারল না। এই রাতের বেলা বেশ কিছু লোককে নৌকা থেকে নামতে হলো। কারণ নৌকা কিছুটা ভেসে না উঠলে সহজে চর থেকে বের হওয়া যাবে না। চলন্ত নৌকা চরের মধ্যে খুব ভালোভাবেই আটকে যায়।

আমাকেও নামতে হতো কোনরকমে বৃদ্ধ বাবার কথা বলে এ যাত্রা পার পেয়েছি। তাছাড়া কোনখানে ঠান্ডার মধ্যে নদীতে নামতে কার ভালো লাগে বলেন। তারপরও নামতে হয় এই বিপদজনক পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য। অনেকক্ষণ চেষ্টা করতে করতে এতগুলো লোক মিলে নৌকা চড় থেকে নামাতে পারলো না। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে অনেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে রাত্রি তখন ১২ঃ৩০ মিনিট। এমন সময় কিছুটা আশার আলো খুঁজে পাওয়া গেল। নৌকা আস্তে আস্তে চলতে শুরু করলো। পুরোপুরি চড় থেকে নামতে পারেনি কিছুদূর গিয়ে আবার আটকে যাচ্ছে। এখন আমরা কি আদৌ নৌকা নিয়ে ঘাটে পৌঁছাতে পেরেছিলাম ? নাকি সেখানেই রাত্রিযাপন করতে হয়েছিল ? আবার ঘুরতে ঘুরতে কি ইন্ডিয়ার বর্ডার ক্রস করেছিলাম ?

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

চলমান.....।

Logo-1.png

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

Sort:  
 2 years ago 

আসলে নদীর পাড়ের চড়ে কখনো পার হয়নি তাই আসলে কখনোই অভিজ্ঞতা হয়নি যেখানে কি অসুবিধা হতে পারে। তবে আপনার পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম এটা আসলেই খুবই অসস্থিকর একটি দিক। ভাল ছিল আপনার পোস্টটি অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আমার গ্রামের বাড়ি যেতে হলে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে যেতে হয়। এই নদের কারণে আমার জেলার দুইটি উপজেলা বিচ্ছিন্ন। আর যদি সড়কপথে যেতে চাই তাহলে যমুনা সেতু হয়ে ঘুরে যেতে হবে। কম করে হলেও ৪০০ কিলোমিটার।

 2 years ago 

আপনার শীতকালে নৌকা ভ্রমন গল্পটি পড়ে অনেক খারাপ লাগলো ভাই। তবে মাঝে মাঝে এইরকম ঘটনা হয়ে থাকে যেগুলো আমরা সবাই পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকি। ঠিক তেমনি ভাবে আপনারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছেন ভাই।

 2 years ago 

শীতকালে আমাদের এদিকে নৌকা ভ্রমন আসলেই অনেক কষ্টের।

 2 years ago 

নদীর পাশের চর পাড়ি দিতে গেলে সত্যি মনে যেন মরুভুমি পাড়ি দিচ্ছি। এবং শীতেরবেলা দিনেই পানি ছুতে ইচ্ছা করে না আর এতো রাতে। বেশ ভালো একটি বিপদে পড়েছেন মনে হচ্ছে। যাইহোক পরের পর্বের জন্য
অপেক্ষায় রইলাম।।

 2 years ago 

আবার সেই রাতে ঠান্ডাও ছিল প্রচুর।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 65970.26
ETH 2696.32
USDT 1.00
SBD 2.88