লাইফ স্টাইল- উপকার যখন যন্ত্রণা বয়ে আনে||lifestyle by @maksudakawsar ||

in আমার বাংলা ব্লগ9 months ago

আসসালামু আলাইকুম

উপকার যখন যন্ত্রণা বয়ে আনে

দু চোখে ঘুম আসে না (2).png

Banner credit --@maksudakawsar

image.png

কেমন আছেন প্রিয় বন্ধুরা? আশা করি সবাই বেশ ভালোই আছেন। আমিও কিন্তু বেশ ভালো আছি। গত দুদিন যাবৎ চারদিকে বৃষ্টির ঘনগটা চলছে। সেই সাথে বয়ে যাচ্ছে শীতের আমেজ। কিন্তু শীত আর বর্ষা বলে কথা নয়। কাজ তো থেমে থাকে না। থেমে থাকে না জীবন। তাই তো শীতের মধ্যেও বেশ ভোরে উঠেই ছুটতে হয় জীবিকার টানে। নিজেকে মানিয়ে নিয়ে চলতে হয় সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে।

বন্ধুরা না আজ আমি আপনাদের সাথে শীত বা বৃষ্টি নিয়ে কোন পোস্ট করতে আসিনি। আজ আমি আপনাদের সাথে একটি লাইফ স্টাইল পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আমরা প্রতিদিন চলতে গেলে কত শত ঘটনার সাথে যে আমাদের পরিচিত হতে হয় সেটা বলে শেষ করা যাবে না। তেমনই একটি ঘটনা কয়েকদিন আগে আমার সাথেও ঘটে গিয়েছে। যা আপনাদের সাথে শেয়ার না করলে নিজের মনটাও হালাকা হচেছ না। তাই তো আজ চলে আসলাম যন্ত্রণাময় কিছু সময়ের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে। আশা করি আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য গুলো শেয়ার করে কৃতজ্ঞ করবেন।

image.png

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

এই তো কিছুদিন আগে আমার এক বান্ধবীর বড় বোন আমাকে ফোন করে তারই আরেক বোন কে একটু আমাদের মেডিকেল কলেজে ভালো কোন ডাক্তার দেখানোর অনুরোধ করেন। আমি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। কারন যিনি ফোন করেছিলেন তিনি আমার কাছে বেশ প্রিয় একজন মানুষ। তবে যাকে পাঠিয়েছেন তিন একরকমের খুঁতখুঁতে মানুষ। তাই বেশ চিন্তায় ছিলাম ভদ্র মহিলা কে নিয়ে। তো ভদ্র মহিলার মুখে সব কিছু শুনলাম যে তার এই সমস্যার জন্য তিনি ইতিমধ্যে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু কোন ‍উপকারে আসে নাই। তাই তিনি একবার এখানে ডক্তার দেখাতে চান।

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

তো ভদ্র মহিলাকে ডাক্তার দেখানো হলে তার পুরানো সব পরীক্ষার কাগজ পত্র দেখে ডাক্তার সাহেব তাকে বলেন ভদ্র মহিলার টিউমার হয়েছে। তাই ভদ্র মহিলাকে ডাক্তার সাহেব একটি নিদিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিছু পরীক্ষা করতে দেন। ভদ্র মহিলা তো ডাক্তার দেখিয়ে অনেক খুশি যে এই ডাক্তার সাহেব তার সত্যিকারের রোগ ধরতে পেরেছে। তাই তিনি ডাক্তার সাহেবের বলে দেওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সেই পরীক্ষা গুলো করেন। তারপর দ্বিতীয় দিন আবার ডাক্তার সাহেব কে দেখাতে আসেন। এবার ডাক্তার সাহেব ভদ্র মহিলা কে বলেন যে তার যে টিউমার হয়েছে সেটা ক্যান্সার। সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করতে হবে। তা না হলে ক্যান্সারটি শিকড় গজিয়ে ছড়িয়ে যাবে। ডাক্তার সাহেবের এসব কথা আমি শুধু শুনছিলাম।

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

ডাক্তার সাহেবের এমন কথা গুলো আমার কেন জানি বিশ্বাস হতে চায় নাই। কারন ভদ্র মহিলা তো এর আগে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে কিন্তু কেউই তো আর এমন কথা বলেননি। কিন্তু আমার দাড়িঁয়ে দাড়িঁয়ে কথা শোনা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। কারন আমি যেহেতু ঐ খানের একজন স্টাফ। এ সমস্ত কথার মাঝখানে ডাক্তার সাহেব ভদ্র মহিলাকে বলে যেহেতু টিউমারটি বড় হয়ে গেছে এবং ক্যান্সার, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করে ফেলাই ভালো। আর সরকারি হাসপাতালে অপারেশন করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে এবং তাতে করে ক্যান্সারটি আরও ছড়িয়ে যাবে। আর পাগল সেই ভদ্র মহিলা ডাক্তার সাহেবের এসব কথা বিশ্বাস করে নেয়। তাই ডাক্তার সাহেবের প্রাইভেট চেম্বারে অপারেশন করানোর জন্য রাজি হয়ে যায়। ডাক্তার সাহেব মোট ৪৫০০০/- টাকায় অপারেশনটি করে দিবে বলে ভদ্র মহিলার সাথে চুক্তি হয়। তবে অবাক করা বিষয় হলো ডাক্তার সাহেব তুরুপের তাস হিসাবে আমাকেই বেছে নেয়। উনি নাকি শুধু মাত্র আমার জন্য এত কম টাকায় অপারেশন করে দিচেছ। কিন্তু বিশ্বাস করেন মেজাজ টা এতটাই গরম হচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল যে লোহা দিয়ে ডাক্তারের মাথাটা ফাটিয়ে দেই। অবশেষে ভদ্র মহিলা ডাক্তার সাহেবের প্রাইভেট চেম্বারের ঠিকানা নিয়ে চেম্বার হতে বাহিরে বের হয়ে আসেন।

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

আমি আগেই বলেছি যে ভদ্র মহিলা একটু খুতখুতে তাই তাকে ডাক্তার সাহেবের বিরুদ্ধে কিছু বলা মানে নিজের বিপদ ডেকে আনা। তবে আমি উনাকে খুব ভালো করে বুঝিয়ে বলে দিলাম যে আরও একজন ডাক্তারের মতামত নেওয়ার জন্য। বাট ভদ্র মহিলা কিছুতেই রাজি হলো না। তো সে এই ডাক্তারের হাতেই অপারেশন করাবে। তো আমার আর কি করার? তারপর আমি পুরো বিষয়টা নিয়ে আমার কলিগদের সাথে শেয়ার করি। আমার কলিগরা সম্পন্ন বিষয়টি শুনে একজন ভালো অধ্যাপকের নাম বলেন এবং তাকে দেখাতে বলেন। আমি বিষয়টি নিয়ে আমার বান্ধবির বড় বোনের সাথে আলোচনা করি এবং তাদের কে আরও ডাক্তারের সাথে আলোচনা করতে বলি। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

পরদিন আমাকে আমার বান্ধবীর বোন আবারও ফোন দেয় যে তারা আর কোন ডাক্তারের সাথে আলোচনা করবে না।এই ডাক্তারের কাছেই অপারেশন করাবে। আর আমাকে অনুরোধ করেন আমি যাতে ডাক্তারের সাথে কথা বলে আরও টাকা কমানোর চেষ্টা করি। আমি যদিও তাকে বার বার বুঝানোর চেষ্টা করি যে ডাক্তার সাহেব আমার পরিচিত নয়। তাছাড়া একজন স্টাফ হিসাবে ডাক্তারদের কে এমন অনুরোধ করলে তারা আবার মাইন্ডও করতে পরেন। কিন্তু এই ভদ্র মহিলাও মনে হলো অবুঝ। অবশ্য পরে আমি নিজের বিবেকের তাড়নায় এক কলিগ এর সহায়তায় ডাক্তার সাহেব কে অনুরোধ করেছিলাম যে টাকা টা একটু কমিয়ে নিতে। অবশ্য ডাক্তার সাহেবও ওয়াদা করেছিলেন যে অপারেশন টা প্যাকেজে ৪০০০০/- টাকায় করে দিবেন। যাক অপারেশন হয়ে গেল একদিনের মধ্যে।

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

যেহেতু আমার অফিসের সাথেই প্রাইভেট চেম্বারে অপারেশনটি করা হয় তাই আমি এক ফাঁকে গিয়েছিলাম রোগীট দেখতে। তখন জানতে পারলাম যে ডাক্তার সাহেব নাকি অপারেশন করতে যেয়ে দুটো সমস্যা পেয়েছে। যার একটি হলো টিউমার আর অন্যটি হলো ভদ্র মহিলা এতদিন যাবৎ যে অসুখের জন্য এত ডাক্তার দেখিয়েছে সেটি। তো ডাক্তার সাহেব নাকি এবার টিউমারটি ফেলে দিয়েছে। আর যে অসুখের জন্য এত কিছু সেটার ট্রিটমেন্ট পড়ে করবে। কি বুঝলেন আপনারা বলেন তো। তখন আমি তাদের কে বললাম যে আমি কিন্তু বার বার আপনাদের বলেছি যে আর একজন ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু কি আর বলবো তারা এখনও কিছুই বুঝতে চায় না। এরপর যখন রোগী কে রিলিজ করার সময় হয় তখন তারা আমাকে আবারও ফোন করে যে ডাক্তার সাহেব ৪০০০০/- টাকায় করার কথা থাকলেও হাসপাতাল থেকে ৪৫০০০/- টাকা দাবী করছে। আমি যেন ডাক্তার সাহেব কে একটু ফোন করে ৪০০০০/- নিতে বলি। আমি তখন ডাইরেক্ট বলে দেই যে আমার কাছে ডাক্তার সাহেবের কোন ফোন নম্বর নেই। সত্যিই কিন্তু তাই আমার কাছে কোন নম্বরই ছিল না। তারপর খোজঁ নিয়ে জানতে পারি যে, যে টিউমার অপারেশন করা হয়েছে তাতে কোন ক্যান্সার এর জীবানুই ছিল না।

image.png

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

শেষ কথা

সত্যি বলতে আমাদের সমাজে কিছু এরকম মানুষ আছে যারা অন্যের সরলতার সুযোগ নেয়। আমি কিন্তু এখানে রোগী আর ডাক্তার দুজনেরই দোষ দিবো। ডাক্তার তো এখানে ব্যবসা করলো। আর আমার সেই রোগীটি কিন্তু ভেবেছিল আমার ঘারে পারা দিয়ে মই বেয়ে উঠবে। ঐ যে বলে না অতি চালাকের গলায় দড়ি। তাই তো ভাবী যে মাঝে মাঝে কিন্তু অন্যের উপকারও আমাদের জীবনে যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে আসে। এই যেমন আমি তো প্রায় একটি সপ্তাহ রাত দিন এই যন্ত্রণায় ছিলাম। মোবাইলটা মনে হয় বাজনার ঢোল হয়েগিয়েছিল। আজ এটা তো কাল ওটার আবদার এই আর কি।

image.png

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।

আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

image.png

Screenshot_1.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 9 months ago 
 9 months ago 

বর্তমান বাংলাদেশের যে সকল ডাক্তার রয়েছে তারা শুধু ডাক্তার নয় কসাইও বটে‌। তাদের প্রধান লক্ষ্য অর্থ উপার্জন। একজন মানুষের সুস্থভাবে চিকিৎসা দেওয়ার চিন্তা ভাবনায তাদের মধ্যে নেই। কিভাবে টাকা ইনকাম করা যাবে এটাই তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য । যেমনটা আপনি উপকার করতে গিয়ে অনেক রেগে গিয়েছিলেন। কিছুই করার নেই আপু তাদের দালালি করার বিষয়টি মানুষকে গ্রাস করেছে।

Posted using SteemPro Mobile

 9 months ago 

সত্য কিন্তু আমাদের কিছুই করার থাকে না। ধন্যবাদ সুন্দর গুছিয়ে মন্তব্য করার জন্য।

 9 months ago 

এরকম অনেক রোগী আছে যারা ডাক্তারের কথা শুনে একদম বিশ্বাস করে ফেলে। আপনার এক বান্ধবীর বড় বোন ফোন করে তার এক আত্মীয় কে পাঠিয়েছে। যদিও লোকটি খিটখিট মেজাজের তবে মনে হয় রোগকে অনেক ভয় করে। এবং মহিলাটি ৪৫ হাজার টাকায় অপারেশন করাতে রাজি হয়ে গেল যদিও তাকে ক্যান্সার বলাতে মনে হয় ভয় পেয়েছে। তবে কিছু কিছু লোকের উপকার করলে অনেক সময় নিজের কাছেও খারাপ লাগে তাদের ব্যবহারের কারণে। যাইহোক মহিলাটি অপারেশন করে যদি ভালো থাকো ওটাই বড় কথা। তবে অনেকে ডাক্তারকে কসাইয়ের সাথে তুলনা করে। বাস্তব একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করেছেন তাই ধন্যবাদ আপনাকে।

 9 months ago 

এটা সত্য যে পোস্টটি বাস্তবতা নিয়েই লেখা। সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

 9 months ago 

আসলে আপু রোগীটির মনে ভয় ধরিয়ে ডাক্তার সাহেব তার প্রাইভেট চেম্বার থেকে অপারেশন করে করিয়ে বড় অংকের টাকা পকেটে ভরে নিয়েছে। যেহেতু রোগীর মনে ক্যান্সারের ভয় ধরিয়ে দিয়েছে তাই রোগীটিও একদম দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলো। কোন মানুষ যখন কোন রোগ নিয়ে বারবার হাসপাতালে আর ডাক্তার দেখায় তখন সে এক ধরনের মানসিক রোগী হয়ে যায়। একজন রোগীকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়া আপনার কর্তব্য সেটা আপনি পালন করেছেন কিন্তু রোগী না শুনলে সেটা তো আর কিছু করার থাকে না। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে বিস্তারিতভাবে শেয়ার করার জন্য।

 9 months ago 

বিশ্বাস করেন দাদা আমি চেয়েছিলাম ভদ্র মহিলার ভালো হোক। কিন্তু দুই লাইন বেশী বুঝার কারনে সেটা আর হলো কোথায়? ধন্যবাদ ‍আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।

 9 months ago 

খুবই দুঃখজনক ঘটনা আপু।আপনার পরিচিতা যদি শেষবারের মতো একটু আপনাকে বিশ্বাস করতো। তবে হয়তো ৪০ হাজার টাকা ও যেতো না।আর তার যে সমস্যার জন্য ডাক্তার দেখাতে এসেছিল তার ও সুরাহা হতো।অবাক লাগে এমন ডাক্তারগুলোর কথা ভাবলে।আসলে ডাক্তার সেই পরিচিতার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে কিছু পয়সা হাতিয়ে নিল আর কি।

 9 months ago 

আমারও কিন্তু আপনার মতই মনে হয়। শেষ বারের মত করে আমার কথাটি একটু শুনলে পারতো। ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 59249.61
ETH 2526.11
USDT 1.00
SBD 2.46