মুক্তিযুদ্ধের কালো সময় গুলি। (পর্ব-০১)|| by @kazi-raihan

in আমার বাংলা ব্লগ9 months ago

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ - ১১ই অগ্রহায়ণ | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | রবিবার | হেমন্তকাল |


আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।



Maybe by@kazi-raihan_20231125_213506_0000.png

Canva দিয়ে তৈরি



অনেকদিন হলো গল্প লেখা হয় না তাই আজকে আবার একটি ছোট গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হওয়া কালীন বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অনেকেই শেয়ার করেছে তার কিছুটা বাস্তব আবার কিছুটা কাল্পনিক। সেরকম আমিও আজকে একটি মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে ছোট গল্প শেয়ার করব যাইহোক সবাইকে পড়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করলাম।

গ্রামের এক কৃষকের ছিল দুই মেয়ে। গ্রামে কৃষকের ছোট্ট একটি টুমটুমে ঘর ছিল তাদের বসবাস করার স্থায়ী ঠিকানা। যেহেতু তিনি কৃষি কাজ করতেন তাই তাদের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই দুর্বল একবারে গরীব পরিবার ছিল। তাদের পরিবারে সবসময় অভাব অনটন লেগেই থাকতো তারপরেও কৃষক তার ছোট্ট পরিবার অর্থাৎ তার দুই মেয়ে আর তার স্ত্রীকে নিয়ে বেশ সুখে শান্তিতেই দিন পার করতেছিল। সেই কৃষকের দুই মেয়ের নাম ছিল হিয়া এবং কেয়া। হিয়া ছিল শান্ত স্বভাবের আর কেয়া ছিল একটু রাগী এবং জেদি। তবে কৃষকের দুই মেয়ে ছিল জমজ বোন তাই দুজনকে দেখতে অনেকটা একই রকম লাগতো। কেউ তাদেরকে দেখে চিনতে পারতো না যে কোনটা হিয়া আর কোনটা কেয়া যেহেতু তাদের চেহারা ছিল একই রকম আর জমজ বোন হওয়ায় তাদেরকে আরো চিনতে একটু কষ্ট হতো। তবে তারা দুজন দেখতে এক রকম হলেও তাদের মা তাদেরকে ঠিকই চিনে ফেলত যে কোনটা হিয়া আর কোনটা কেয়া। সব সময় কিন্তু মা সন্তানদেরকে সবচেয়ে বেশি কাছে থেকে ভালোবাসে আর মা সব থেকে আপন থাকে এজন্যই তাদের মা তাদেরকে যেকোনো পরিস্থিতিতেই চিনে ফেলতো।



twins-1703406_1280.jpg

Source



দুজন মেয়ে অর্থাৎ কেয়া আর হিয়া দেখতে এক রকম হওয়ায় অনেকেই তাদেরকে চিনতে পারত না আর যখন এরকম সমস্যার মধ্যে পড়তো তখন তাদের মায়ের কাছে গিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিত আসলে কোনটা কেয়া আর কোনটা হিয়া। এভাবেই ধীরে ধীরে দিন পার হচ্ছিল বছরের পর বছর পেরোতে চলে আসলো ১৯ ৭১ সাল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল আর সব পেশার মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা শুরু করল। সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা অতটা ভালো ছিল না তাই এই রেডিওতে গ্রামের লোকজন শুনতে পারলো ঢাকায় নাকি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হামলা দিয়েছে অনেক লোকজনকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে তাই গ্রামের লোকজন ভয় পেয়ে গেল, আসলে দেশে কি শুরু হবে এখন। হঠাৎ করে পরের দিন রাতের বেলায় তাদের গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা এসে গ্রামের একটি স্কুলে আস্তানা করে আর পাক হানাদার বাহিনীরা স্কুলে ঘাঁটি গিয়েছিল বলেই গ্রামের লোকজন সবাই গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছিল। নিজেদের জীবন বাঁচাতে গ্রামের লোকজন তাদের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন এলাকায় ছুটতে থাকে। সবাই গ্রাম ছেড়ে পাড়াচ্ছিল কিন্তু গরিব কৃষক তাদের মেয়েদেরকে নিয়ে যাওয়ার মত কোন জায়গা ছিল না। তারা ভাবল কোথায় যাব আর কে আমাদের খেতে দেবে, এতসব চিন্তা না করে তারা ভাবল আজকের মত রাতটা এখানে কাটিয়ে দিই আর কেয়া আর হিয়ার বাবা মুক্তিযুদ্ধে যাবে তাই তারা তাদের বাবাকে বিদায় জানালো। যেহেতু তাদের বাবা মুক্তিযুদ্ধে চলে গিয়েছে তাই তারা আরো ভয় ভয় রাত কাটাতে লাগলো কেননা তাদের বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ ছিল না যে তাদের মনে সাহস যোগাবে। কেয়া আর হিয়া ছোট ঘরের জানালা দরজার সব কিছুই বন্ধ করে দিল আর রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়ল।



war-469503_1280.jpg

Source



তখন মাঝরাত হয়তো বারোটা নাগাদ বাজে। গ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলের মিলিটারিরা রাতের বেলায় হামলা শুরু করে। আর প্রথমদিকেই সেই কৃষকের ছোট্ট ঘরের পাশে এসে দরজায় ধাক্কা দেয়। কেয়া আর হিয়া বুঝতে পারে, আর কোন কিছু করার আগেই এক মিনিটের মধ্যে মিলিটারি বাহিনী তাদের ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে গুলি করা শুরু করে। মিলিটারি বাহিনীর গুলিতে নৃশংসভাবে জীবন হারায় কেয়া আর তাদের মা কিন্তু হিয়া কোনমতে নিজের জীবনকে বাঁচাতে পারে। হিয়া একটু চালাক টাইপের ছিল তার জন্য মিলিটারিরা ভিতরে প্রবেশ করার আগেই সে বিছানার নিচে লুকিয়ে পড়ে যার কারণে তার জীবন বেঁচে যায়। কেয়া আর কেয়ার মা কে নিশংসভাবে গুলি করে হত্যা করার পর মিলিটারিরা চলে যায়। চোখের সামনে এমন নিশংস হত্যার দৃশ্য দেখে হিয়া দিশেহারা হয়ে পড়ে সে কিছু বলতে পারছিল না যেন সে পাথর হয়ে গিয়েছে। রাত গভীর হয় কিন্তু হিয়া আর কথা বলতে পারে না চুপচাপ বসে আছে এভাবে রাত তিনটা নাগাদ বাইরের শব্দ শুনতে পায় কয়েকজন লোক হিয়ার বাবার লাশ নিয়ে তাদের বাড়িতে আসে।

আজকের মত গল্পটা এখানেই শেষ করছি। আবার পরবর্তী পর্বে বাকি গল্পটা আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করব। যেহেতু এক রাতের মাঝেই হিয়া তার পরিবারের সমস্ত সদস্যদের কে হারিয়ে ফেলেছে তাই পরবর্তীতে তার জীবনের সাথে কি হয়েছিল সেই বিষয়টি জানতে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকুন তবে সব সময় সবাই সাবধানে থাকবেন ভালো থাকবেন।





🔚সমাপ্তি🔚




এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan



আমার পরিচয়


IMG-20211015-WA0027.jpg

আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ছবি আঁকতে, ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও মাঝে মাঝে গুন গুন করে গান গাইতে খুবই ভালোবাসি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।



break .png

Banner.png

Sort:  
 9 months ago 

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা মনে হলে যেন মনের মধ্যে একটি আচমকা অনুভূতি সৃষ্টি হয়। যেহেতু এই বিষয়ে অনেক কিছু শুনেছি তো পড়বে সেই জন্য মনটা খুবই খারাপ হয়ে ওঠে সেই না দেখা দিনের কথা মনে পড়লে। আমি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অনেক কথা শুনেছি অনেক মানুষের মুখে। আজকে আপনার গল্পে যখন মিলিটারি রা ঘর ভেঙে প্রবেশ করে গুলি করে দিল! কতটা বেদনাদায়ক একটি ঘটনা। আর ঠিক এভাবে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ ঝরে গেছে।

 9 months ago 

হিয়ার বাবার লাশ নিয়ে বাড়িতে এসেছে এই লাইনটা পড়ে আমি নিজেই যেন স্তধ্ব হয়ে গেলাম ভাই। আসলেই মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীরা শহর গ্রাম কিছুই বাদ দেয়নি। অত‍্যাচার হত‍্যা চালিয়েছে একভাবে। প্রথম পর্বটা বেশ ভালো লাগল। আপনার পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

Posted using SteemPro Mobile

 9 months ago 

ভাইয়া আপনার মুক্তিযুদ্ধের গল্প পড়ে খুবই ভালো লাগলো। তবে কেয়া এবং তার মা মারা যাবে এবং তার বাবাও মারা যাবে এটা একটু কষ্টকর।তবে ১৯৭১ সালে অনেক মানুষ জীবন হারিয়েছে।এইরকম মুক্তিযুদ্ধের গল্প পরলে মনের মধ্যে একটু কেঁপে উঠে।যাইহোক পরের পাঠ দেখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 9 months ago 

মুক্তিযুদ্ধের অনেক নাটক এবং বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখেছি ইউটিউবে ও টিভিতে। সেই সময়টা আসলেই ভিন্ন রকম ছিল। কতটা আতঙ্কের মধ্যে তারা দিন পার করেছে, সেটা ভাবলেই শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। পাক হানাদার বাহিনীরা হিয়ার বাবা মা এবং বোনকে খুন করার পর, এখন হিয়া একা একা কি করবে, সেটা আশা করি পরবর্তী পর্বে জানতে পারবো। যাইহোক গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 59249.61
ETH 2526.11
USDT 1.00
SBD 2.46