মতি মিয়া ও বাংলাদেশের দুর্নীতি - দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব [১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য]
এবার চর্তুথবার মতি মিয়া ঢাকায় গেছেন ফাইলের খোজখবর নিতে, সেই অজপাড়া গ্রাম হাশিমপুর থেকে ঢাকা আসতে প্রায় দুপুর পেরিয়ে বিকাল হয়ে যায়। সচিবালয়ের অনেক তালা উপরে উঠতে হয়, মতি মিয়া লিফটে যায় না, প্রথমবার যখন এসেছিল তখন লিফটে উঠেছিল। শহরের সুট-টাই পড়া বড় লোকেরা লিফটে মতি মিয়ার দিকে ঘৃনার নজরে তাকায়,কেউ তার পাশে দাড়ায় না,সবাই কেমন যেন বিরক্তিকর ভাব দেখায়, গ্রামের গরীব মানুষ ময়লা যুক্ত পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পড়া আবার সারা শরীর ঘামে ভেজা থাকে। তাই সে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠাকে শ্রেয় মনে করে।
অনেক কষ্টে উপরে উঠে চতুর্থবার এসেও তার ফাইলের গতি চালু রাখতে পারলো না, প্রতি টেবিলে ফাইলের ভিতরে সম্মানি দিতে দিতে বড় স্যার অবদি পৌছলো, কিন্তু মতি মিয়া কি বড় স্যার থেকে আজকে ফাইলটা ছাড়াতে পারবে? যেরকম বড় স্যার সম্মানিটাও তার বড় হওয়া দরকার। বড় স্যারের অফিসে আসার আগে এক ছোট স্যার বলেছিল চাচা মিয়া এবার বড় স্যারকে খুশি করতে পারলেই আপনার টাকা পেয়ে যাবেন। একথা বলে ভুড়িটা দেখিয়ে দাতঁ গুলো বের করে ধেত্যৈ দানবের মত হা..হা..হা.. করে হাসলো..
মতি মিয়া তখনই ঠাহর করেছিল বড় স্যারকে খুশি করতে হলে তাকে আবার ঢাকা আসতে হবে, বড় স্যারের অফিসের সামনে ঘন্টা খানেক দাড়িয়ে থাকার পর ভিতরে যাওয়ার ডাক পরলো,যেমন চিন্তা তেমনই হলো,বড় স্যার ফাইল দেখে বলল সব তো দেখতেছি ঠিকিই আছে...একথা শুনে মতি মিয়া কিছুটা সস্তি পেল, কিছুক্ষন পর ফাইলটার এপাশ ওপাশ দেখে বলল একটু সমস্যা আছে আপনি অন্য একদিন আসেন, কি সমস্যা মতি মিয়া সেটা বুঝতে পারলো, কিন্তু মতি মিয়ার পকেটে সেই সমস্যার সমাধান নেই। বড় স্যার কে অনেক আকুতি মিনতি করে বলল স্যার আমি বৃদ্ধ মানুষ আবার আসতে অনেক কষ্ট হবে, যদি আজকেই ফাইলটা দিয়ে দিতেন তাহলে অনেক ভাল হতো,বড় স্যার একটু বিরক্ত হয়েই বলল, এখন যান তো আমি অনেক ব্যস্ত আছি, আজ আমার ছোট মেয়ের জন্মদিন এখনি বাসায় যেতে হবে। মতি মিয়া ভারআক্রান্ত হৃদয় নিয়ে পাঁচ তলার সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে বাড়ির দিকে চললেন।
কয়েক মাস পার হয়ে গেল, দুই বৃদ্ধ খেয়ে না খেয়েও বড় স্যারের সম্মানি জোগার করতে পারলো না। অবশেষে মতি মিয়া নিজের গাভীটা বিক্রয় করে ও বাড়িটা বন্ধক দিয়ে যেই টাকা পেলেন, সেই টাকা নিয়ে আবার ঢাকায় গেলেন,বড় স্যার কে খুশি করিয়ে ফাইলটা সই করিয়ে জমা দিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। দিন যায় মাস যায় রিটায়ার্ডের টাকার কোন খবর আসে না। বন্ধকের টাকার টেনশনে মতি মিয়া হঠাৎ করে একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। বৃদ্ধ মহিলা তার এই অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে কিছুই বুঝতে পারতেছে না। অসুস্থ লোকের সেবা করতে করতে তারও জীবন প্রায় যায় যায় অবস্থা।
এদিকে মতি মিয়ার রিটায়ার্ডের টাকার চেক রেডি হয়ে পড়ে আছে, মতি মিয়া অসুস্থ হওয়ার কারনে আর ঢাকা যেতে পারেন না। কয়েক মাস যাওয়ার পর দপ্তরের দুইজন কর্মর্কতা ফাইল থেকে ঠিকানা জোগার করে মতি মিয়ার টাকার চেকটা তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। কর্মকর্তারা তার বাড়িতে এসে দেখেন মতি মিয়াকে জানাযা দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অর্থাৎ তিনি আর বেচে নেই ।
মন্তব্যঃ- যে লোকটা দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে নিজের ছেলে মেয়েকে হারালো, জীবন বাজি রেখে লড়াই করে দেশটা স্বাধীন করলো,সে মানুষটাকে দেশের মানুষ কি মূল্য দিলো। একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত চেষ্টা করেছে। দেশের কিছু লোভী মানুষের জন্য মতি মিয়ার স্বপ্নটা পুরন হলো না। কি দুষ ছিল মানুষটার..? মানুষটার দুষ ছিল সে গরীব মানুষের ছেলেমেয়েদর জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। মানুষটার দুষ ছিল সে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এত দুরে স্কুলে যাওয়ার কষ্টা অনুভব করেছিল। মানুষটার দুষ ছিল সে দেশের জন্য খেয়ে না খেয়ে যুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছিল।
আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে, দেশ,দেশের মানুষ কি আজও স্বাধীন হতে পেরেছে। সবাই কি স্বাধীন ভাবে বাচতে পারতেছে, দেশের মানুষ কি সব কিছু স্বাধীন ভাবে করতে পারতেছে..? দেশে কি বাক স্বাধীনতা আছে..? কেউ কি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে..? দেশের প্রতিটি সেক্টরে দূর্নীতি ভরে গেছে,যে যেভাবে পারতেছে দুর্নীতি করতেছে, কিছু মানুষ দেখেও না দেখার বান করে চলে যাচ্ছে, আর কিছু মানুষ দেখেও কিছু বলছে না। সবার সামনেই বকশিশের নামে ঘুষ নিচ্ছে। অথচ কেউ কিছু বলছে না।
সরকারি এমন কোন কাজ নেই যেটা ঘুষ ছাড়া সমাধান করা যাচ্ছে। একটি বাচ্ছার জন্মনিবন্ধন করতেও একহাজার দুই হাজার টাকা করে ঘুষ নিচ্ছে। এনআইডি কার্ড বানাতেও ঘুষ নিচ্ছে। এমন কোন ছোট থেকে বড় এমন কোন কাজ নেই যেটা ঘুষ ছাড়া সমাধান হয়। বাংলাদেশে জন্মনিয়ে মনে অনেক কষ্ট। দেশের কোন দুষ নেই, দুষ মানুষের,দুষ কপালের।
বন্ধুরা আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি, দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব কেমন হলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। দেখা হবে আবার নতুন কোন বিষয় নিয়ে, ততদিন পর্যন্ত ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন, নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন। অপচয় রোধ করবেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান অনুযায়ী প্রতিবাদ করবেন। নিজের শহর নিজে পরিষ্কার রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।