খান বাড়ির তাল

21-08-2022

৬ ভাদ্র ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।

once-upon-a-time-719174_1280.jpg

copyright free image from pixabay

আমাদের এলাকার প্রভাবশালী লোক খান বাড়ি। সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি। এলাকায় আবার এই বাড়ির অবশ্য সুনাম রয়েছে। শুনেছি ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন খান বাড়ির একজন। নাম তার ভাষা সৈনিক খালেক নওয়াজ খান। যতদূর জানি ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বাড়ির মেইন ফটকের সামনে বিশাল আকারের ছবি টাঙানো সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অবশ্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। প্রতিবছর তারঁ সম্মান রক্ষার্থে এমপি মহোদয় কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন করতে আসে ২১শে ফেব্রুয়ারিতে। যায়হোক, ঘটনার দিকে আলোকপাত করা যাক।

আমাদের বাড়ির কাছে ছিল ভূইঞা পাড়া জামে মসজিদ। মাঝে মাঝে মাগরিব নামাজ সেই মসজিদে গিয়ে পড়তাম। আর মসজিদের আরেকটু সামনে আগালেই খান বাড়ি। বাড়ির সামনে বিশাল এক পুকুর। পুকুরের ঠিক পাশেই ছিল বড় বড় দুটি তালগাছ। তাল তখন প্রায় পেকে গেছে। অনেকেই সন্ধ্যা হলেই বসে থাকে এখানে তাল সংগ্রহ করার জন্য। আমার তালের রসের পিঠা খুবই ভালো লাগতো। বাজার থেকে কিনে পিঠা বানিয়ে খাওয়া হতো। আমরা পাড়ার কিছু ছেলেরা প্লেন করলাম তাল সংগ্রহ করে ক্ষীর রান্না করে খাবো। পাড়ার ছেলেরা নরমালি গাছে উঠতে পারদর্শী। সমবয়সী অনেক ছেলের সাথে চলাফেরা করা হতো। তাদের মধ্যে রিয়াদ নামের ছেলে গাছে উঠায় পটু। আমরা প্লেন করলাম আজ তাল না পড়লে গাছ থেকে চুরি করা হবে। মাগরিবের আযান দিতেই আমরা নামাজ পড়তে চলে যায় মসজিদে। নামাজ শেষে দেখি বিদ্যুৎ চলে যায়। আর গ্রামে বিদ্যুৎ গেলে জানেনই তো আশেপাশের অবস্থা কেমন। একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমরা খান বাড়ির সামনে পুকুর পাড়ে বসে আছি। অপেক্ষায় আছি কখন তাল পড়বে। আশেপাশে তেমন বাতাসও নেই। তাল পড়বে কিনা এ দ্বিধায় ছিলাম আমরা সবাই। এরই মাঝে দেখি খান বাড়ির ফয়সাল দাদা বের হয়েছে। গ্রামের সম্মানিত একজন লোক ফয়সাল দাদা। অবশ্য আমাদের অনেক আদর করতো। আমাদের এসে জিজ্ঞেস করতেছিল এখানে কি করি? আমরা অবশ্য বলেছিলাম হাওয়া খেতে এখানে বসে আছি। আমার এখনও মনে আছে দাদা এসে আমাদের আড্ডাও জয়েন দিয়ে দিলো। আমাদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ বসে গল্প করেছিল। মজার মজার জোকস শুনেছিলাম আমরা। এদিকে তাল এর কথায় মনেই নাই। দাদা আমাদের বলেছিল উনি কিভাবে ছোটবেলায় মাছ ধরেছে? কিভাবে ঘুরাফেরা করেছে? দাদার কথা শুনে আমাদেরও ভালো লাগছিল। এরই মাঝে আমাদের একজনকে বললাম যে তাল পড়েছে কিনা দেখে আসতে। কিন্তু না! তাল তো পড়েনি। তাহলে কি আজকে হতাশ হয়ে বাড়িতে যেতে হবে।

book-7018452_1280.jpg

copyright free image from Pixabay

এরই মধ্যে দাদাও বাড়িতে চলে গেল। রিয়াদকে বললাম যে গাছে উঠে পড়তে। আমরা নিচে দাড়িঁয়ে পাহারা দিতে থাকলাম। ধরা পড়লে একদম মাইর খেতে হবে। রিয়াদ অনেক কষ্টে দুটি তাল গাছ থেকে পারলো। আমরা তাল সংগ্রহ করে সেখানে আর বেশিক্ষণ দাঁড়ালাম না। কারণ মানুষ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। পাকাঁ তালের গন্ধ অনেক মজার হয়। নাকের কাছে নিয়ে তালের গন্ধ নেয়ার মজাই অন্যরকম ছিল হাহাহা। এসব কথা মনে পড়লে অনেক হাসি পায় আসলে। এই ঘটনাটি যখন লিখছি তখন আমারি অনেক হাসি পাচ্ছিল। তাল খাওয়ার জন্য কতো কি করলাম। আমরা মনের সুখে তাল নিয়ে বাড়িতে চলে এলাম। আগামীকাল শুক্রবার। প্লেন মাফিক আমরা ছোট পরিসরে তাল দিয়ে ক্ষীর রান্না করার প্লেন করে নিলাম। সবার বাড়ি থেকে এক কৌটা করে চাল সংগ্রহ করে ক্ষীরের আয়োজন করা হবে। অবশ্য এর আগে তালের রস ছাড়িয়ে নিতে হয়। কারণ তালের রস ভালো করে ছাড়িয়ে না নিলে খেতে তিতা লাগে আর পরে তেমন খাওয়াও যায় না। বাড়িতে তাল নিলে বাড়িতে আর জায়গা হবে না। তাই রিয়াদের বাড়িতে তাল নিয়ে গিয়েছিল। রিয়াদের আপু তালের রস ছাড়তে সাহায্য করেছিল। সারারাত তালের রস ছাড়িয়ে নেয়ার কাজ চলেছিল। সকালে দুটি তালের অনেকটা রস সংগ্রহ হয়েছিল। রিয়াদের বোন রান্নার কাজে আমাদের সাহায্য করেছিল। তাল দিয়ে ছোটখাটো একটি পিকনিক হয়ে গেল। আমরা সবাই বেশ উপভোগ করেছিলাম আসলে।

আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আসলে ছোটবেলার এই ঘটনাগুলো কখনো ভুলার নয়। শৈশবের সময়টা কিভাবে চলে গেল টেরও পেলাম না। এখন শৈশবের সময়টা অনেক মিস করি। যায়হোক, আবারো হাজির হবো শৈশবের ঘটে যাওয়া মজার কোনো ঘটনা নিয়ে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 2 years ago 

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 66070.34
ETH 2691.62
USDT 1.00
SBD 2.88