জীবনের গল্প :- আমার প্রথম রান্না শেখা। || শিখতে শিখতে এগিয়ে চলা।
শিখতে শিখতে এগিয়ে চলা |
---|
শুভ সকাল #amarbanglablog পরিবার। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে শুরু করছি আজকের পোস্ট। সত্যি বলতে আমরা বাঙালিরা খেতে ভীষণ পছন্দ করি, আর পেট পুরে খেতে ভীষণ তৃপ্তি অনুভব করি। তাইতো মা বোনদের সারাক্ষণ রান্না ঘরে নিরন্তন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়, তার ফলস্বরূপ আমরা সুস্বাদু খাবার খেয়ে থাকি।
তবে মাঝে মধ্যে যদি বাড়ির গৃহিণী অসুস্থ হয় কিংবা কোথাও বেড়াতে যায় তখন বিপত্তি দেখা দেয়। বিশেষ করে রান্না না জানার কারণে শুধুমাত্র ভাত , আলু ভর্তা নাহলে সর্বোচ্চ ডিম ভাজি দিয়ে চালিয়ে দিতে হয় তিনবেলা। কিন্তু যদি কিছু রান্নার কৌশল জানা যায় তাহলে বাড়ির গৃহিণী কোথাও চলে গেলেও দিব্যি ভালো খাওয়া দাওয়া চালিয়ে যাওয়া যায়। তবে একটা কথা হচ্ছে পুরুষ মানুষ বিপদে না পরলে রান্না শিখতে চায় না। আমিও জীবনে একবার বিপদে পরেই রান্না শিখেছিলাম।
তাই চিন্তা করলাম আমার প্রথম রান্না শেখার গল্পটা আপনাদের সাথে ভাগ করে নেই।
সময়টা ২০১০ সবে মাত্র ইন্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করলাম, তখনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির জন্য ডাক পেলাম এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে। আমি আগেও আমার একটি পোস্টে বলেছিলাম আমার ভীষণ ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু ছিল এবং তাকে সবসময় সাথে রাখার চেষ্টা করতাম। তাইতো বড় ভাইয়ের মাধ্যমে দুজনের একসাথে চাকরির ব্যাবস্থা করে নিলাম।
দুজনে বিছানাপত্র আর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাথে নিয়ে চলে গেলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকায় পৌঁছাতে রাত হয়ে গেলো, তাই সেদিনের মত কোন রকম হোটেলে খাবার খেয়ে বড় ভাইয়ের মেসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে চাকরিতে যোগদান করলাম তবে আধাবেলা করে চলে আসলাম কারন থাকার জায়গা এবং খাওয়ায় ব্যাবস্থা করতে হবে। দুই বন্ধু কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে একটি ব্যাচেলার বাসা খুঁজে পেলাম। যাক থাকার বন্দোবস্ত হয়ে গেছে এবং খাওয়ায় জন্য কি করা যায় তাই চিন্তা করতে বসলাম দুজনে। আশেপাশে যারা রয়েছে তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম তারা জানালেন সবার বুয়া রয়েছে রান্না করার জন্য। তবে দুএকজন বুয়ার সাথে কথা বলেও ব্যাবস্থা করতে পারলাম না। তবে একজন বুয়া আসতে রাজি হলো কিন্তু সে যা বেতন দাবি করলে তা আমাদের পক্ষে দেয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম দুজনে। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম দুজনে মিলে আজ রান্না করবো কারন হোটেলে খেলে অনেক খরচ তাছাড়া অস্বাস্থ্যকর খাবার। তাই দুজনে সন্ধ্যায় বাজারে চলে গেলাম। বাজারে গিয়ে মাঝারি আকারের একটি রুই মাছ কিনলাম আর সাথে চাল, ডাল, তেল আর কিছু সবজি কিনলাম। আর মশলা বলতে হলুদ গুঁড়া আর মরিচ গুঁড়া কিনলাম। সত্যি বলতে মাছ রান্না করতে কি কি উপকরণ লাগে সেটাই জানতাম না। মাকে ফোন দিয়েছিলাম কিভাবে মাছ রান্না করা যায় সে কৌশল জানার জন্য কিন্তু মায়ের ফোনে চার্জ না থাকায় যোগাযোগ করতে পারলাম না। আবার লজ্জায় আশেপাশে কারোর কাছে জানতে চাইলাম না।
মাছ আনার পর আমার বন্ধু আমাকে কোনরকম কেটে কুটে দিল। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে ভাত এবং মাছ ভুনা দিয়ে রাতের খাবার খাওয়া। আমার কাঁধেই রান্নার দায়িত্ব পরলো কারন আমার বন্ধুও রান্না করতে জানতো না। প্রথমেই ভাত রান্না করলাম, এটা মোটামুটি সহজ কাজ কিন্তু ভাত অধিক সিদ্ধ হয়ে মোটামুটি গলে যাবার উপক্রম হয়েছে। ভাতগুলোর মার গেলে মাছ রান্নার দিকে মনোযোগ দিলাম। শুরু হলো আমার মাছ রান্না, প্রথমেই বলি মশলার ব্যাবহার এবং লবনের পরিমাপ সম্পর্কে কোন ধারণা নেই আমার।
প্রথমেই চুলায় কড়াই চাপিয়ে দিলাম এরপর সোয়াবিন তেল ঢেলে দিলাম কিন্তু পরিমাণ না বোঝার কারনে মনে হয় বেশি পরে গেলো। যাক তেল ফুটছে এবার তেল গরম হবার পর যেইনা পেঁয়াজ দিতে যাবো হাতের থেকে দু ফোঁটা পানি তেলের মধ্যে পড়ে গেল। এবার পানি পরার সাথে সাথে তেল ছিটকে এসে হাতে পরলো আর গরম তেলে হাতে ফোসকা পড়ে গেল। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই খেতে তো হবেই। পেঁয়াজ ভাজা চলছে এবার ভাবলাম মাছগুলো তেলে ভেজে নিলে স্বাদ বেশি হবে, তাই হলুদ মরিচ না মাখিয়ে দিলাম তেলের মধ্যে ছেড়ে। এবার বেশ লাল লাল করে ভেজে নিলাম মাছগুলো। এবার পেঁয়াজ মোটামুটি ভাজতে ভাজতে অবস্থা খারাপ, এরমধ্যে হলুদ গুঁড়া আর মরিচ গুঁড়া দিয়ে লবন দিয়ে দিলাম। আর লবনটা মনে হলো একটু কম হয়েছে,তাই একটু বাড়িয়ে দিলাম। এবার ঝোল দিলাম মোটামুটি বাড়িয়ে এরপর মাছ দিয়ে দিলাম। এখন আধা ঘন্টা বসে রইলাম ঝোল তবুও শুকাতে চায় না 😕 এদিকে প্রায় পেটের ভেতর খিদে ইঁদুর বিড়াল খেলছে 😞 যাক অবশেষে প্রায় চল্লিশ মিনিট পর আমার রান্না শেষ হলো।
এবার দুই বন্ধু খেতে বসলাম। কিন্তু খেতে গিয়ে ভাত দেখলাম মোটামুটি নরম আর আঠালো হয়ে গেছে, বন্ধুকে বললাম আরে নরম ভাত খেলে হজম হবে তাড়াতাড়ি। এবার তরকারি নিলাম দুজনে বন্ধু জোর করে মাছের মাথাটা আমার পাতে উঠিয়ে দিল আর বললো কষ্ট করে রান্না করলি এটা তোর প্রাপ্য। সে একটি টুকরো নিল মাছের। এবার খেতে গিয়ে প্রথমে লবনের পরিমাণ বুঝতে পারলাম অনেক বেশি আর তরকারিটা একদমই অখাদ্য। আমার নিজের কাছেই এমন খারাপ লাগছিল যা বলে বোঝাতে পারবো না। তবে আমার বন্ধু কিভাবে যে খাচ্ছিল বুঝলাম না। এবার চিন্তা করলাম মাছটা হয়তো ভালো লাগবে মুখে দেয়া মাত্র বিশ্বাস করুন আমার মনে হলো বমি ভাব চলে আসলো। আমি আর খেতে পারলাম না 🥺 কিন্তু একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম, আমার বন্ধু দিব্যি খেয়ে যাচ্ছে। আমি না খেয়ে সব ফেলে দিলাম। এবার খাওয়া শেষে আমার বন্ধুকে প্রশ্ন করলাম তরকারিটা মোটামুটি অখাদ্য, তুই কিভাবে খেলি?
ও আমাকে উত্তরে বললো তুই এ রান্নাটা করতে গিয়ে হাত পুড়িয়েছিস আর অনেক কষ্ট করেছিস আর খুব বেশি খারাপ লাগেনি আমার। আমি মোটামুটি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। বুঝলাম সে আমাকে কতটুকু ভালোবাসে। সে রাতে আমি কোন রকম পানি খেয়ে রইলাম।
পরদিন অফিস করলাম আর দুপুরে খাবার বিরতিতে হোটেলে খাবার খেলাম। অফিস শেষে বাসায় এসে প্রথমেই মাকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানালাম। মা প্রথমেই আসলেন এরপর সবকিছু বুঝিয়ে দিলেন, কি ধরনের মশলা লাগবে আর কিভাবে রান্না করতে হয়। আমি খাতা কলম নিয়ে সব নোট করলাম। ঐদিন রাতে আবার চেষ্টা করলাম, দেখলাম আজ মোটামুটি খাওয়া যাচ্ছে তবে লবণ পরিমাণমতো হয়নি কম দিয়েছি। যাক তবুও অতিরিক্ত লবণ পাতে নিয়ে খাওয়া চেষ্টা করলাম আর ভাত একটু শক্ত থাকতে নামিয়েছি তাই বেশ শক্ত লাগছিল খেতে। বন্ধুকে বললাম আরে ভাত একটু শক্ত থাকলে পেটে বেশিক্ষণ থাকবে আর খিদেও কম পাবে। ও একটা হাসি দিয়ে খাওয়া শুরু করলো, তবুও আমি খুব বেশি খেতে পারিনি ভাত শক্ত থাকার কারণে 😕
পরবর্তীতে এক সপ্তাহের মধ্যে আলহামদুলিল্লাহ খাওয়ার উপযুক্ত হয়েছিল রান্না, এরপর আমার বন্ধুকে শেখালাম। এরপর আমার বন্ধু একদিন রান্না করতো আর একদিন আমি এভাবেই চলেছে দীর্ঘদিন।
এখন আমি আলহামদুলিল্লাহ রান্না মোটামুটি ভালোই করতে পারি, তবে সে দিনগুলো ভোলার নয়।
একটা বিষয় হচ্ছে আমি কখনো হাল ছেড়ে দেইনি জীবনে তাই আমি কষ্ট করে আর ধাপে ধাপে সব শিখতে পেরেছি। আসলে কোন বিষয়ের সাথে লেগে থেকে পরিশ্রম করলে সফলতা সুনিশ্চিত।
https://twitter.com/emranhasan1989/status/1559443039177031680?t=DwWjaBFAM4beF7uUIrgazQ&s=19
আসলেই কোন কাজেই প্রথমে হাল ছাড়তে নেই। আসলে মানুষ ঠেকায় পরলে,আস্তে আস্তে সব জিনিস শিখে যায়।প্রথম প্রথম রান্না খারাপ হয়ছিলো ঠিক কিন্তু আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। যাই হোক আমার মতে প্রত্যেক মানুষের শিখার আগ্রহ থাকলে মানুষ সবই পারে।ধন্যবাদ
ধন্যবাদ আপু।।
সত্যিই তাই, মানুষ বিপদে পরলে আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে সব সম্ভব।
আসলে জীবনে সবকিছুই জানা থাকতে হয়।আমিও আগে রান্না পারতাম না।তবে এখন বাইরে এসে সব পারি।😁
সব পারাটা খুব দরকার।
নাহলে পদে পদে বিপদে পড়তে হয়।
চমৎকার লিখেছেন। আমিও একবার বিপদে পরে রান্না করতে গিয়ে হাত পুরে ফেলেছিলাম। তবে রান্না শিখেছি। আপনার প্রথম রান্না শেখার গল্প পড়ে ভালো লাগলো। চেষ্টা করলে সবেই সম্ভব। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময় এই কামনাই করি।
ধন্যবাদ লিমন।।
কষ্ট হলেও কোন কিছুর সাথে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।
চেষ্টা করে ধাপে ধাপে সবকিছু শিখতে হবে।
প্রত্যেকের উচিত কোন কিছু শিখতে হলে তার জন্য যথেষ্ট শেখার আগ্রহ থাকা। আর আপনার বিষয়টি জেনে আমার খুবই ভালো লাগলো যে আপনি কোন কিছুতে সহজে হাল ছেড়ে দেন না। আপনার প্রথম রান্না শেখার অনুভূতির কথাগুলো জানতে পেরে সত্যিই আমি মুগ্ধ হয়েছি। প্রথম রান্না শেখার কথাগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
সবকিছু শিখতে হয় আর কষ্ট করেই তা অর্জন করতে হয়। আমি চেষ্টা করেছি বিষয়টি বোঝানোর।
জীবনে কোন কাজ করতে গিয়ে হাল ছেড়ে দিতে নেই। যেমনটা আপনি প্রথম দিন রান্নায় ব্যর্থ হওয়ার পর যদি হাল ছেড়ে দিতেন তাহলে এত ভালো রান্না কখনোই শিখতে পেতেন না। যেকোনো কাজে লেগে থাকলে সফলতা অর্জন করা যায়। প্রথম রান্না শেখার অভিজ্ঞতাটা জানার পর মজা লাগলো। আসলে আপনার বন্ধুটি আপনাকে অনেক ভালোবাসে আপনি কষ্ট পাবেন ভেবে সব খেয়ে ফেলেছে।
আমি জীবনে যা শিখেছি ভীষণ কষ্ট করে আর লেগে থেকে। পারবো না এই কথাটা আমি মানতে নারাজ। তাই ধাপে ধাপে চেষ্টা করছি সবকিছু শেখার যা আমার আওতায় আছে।
হ্যা আমার বন্ধুটি সত্যিই আমাকে খুব ভালোবাসে।