যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। (স্মৃতির পাতা থেকে প্রথম পর্ব)
একটা সময়ে জীবনের আনন্দ ছিল, মানে বোঝাতে চাইলাম অনেকটা হেসে খেলে আনন্দে দিন পার করা যেতো। সকালে খুব ভোরে উঠেই মসজিদে হুজুরের কাছে আরবি পড়তে যেতাম। সকালের হিমেল হাওয়ায় শরীরটা জুড়িয়ে যেতো। আরবি পড়তে পড়তে পেটে রাজ্যের খিদের সৃষ্টি হতো। এরপর এসে তড়িঘড়ি করে নাস্তা করতাম আর স্কুলের জন্য তৈরি হতাম। স্কুলের টিফিনে অধিকাংশ সময় থাকতো মায়ের হাতের বিখ্যাত রুটি আর আলু ভাজি। আর মাঝে মাঝে মা কিছু টাকা দিতো আইসক্রিম খাওয়ার জন্য। আমি কখনোই টাকার জন্য জেদ করতাম না, তিনি আমার চোখের দিকে তাকিয়েই বলে দিতেন আমি কি চাইছি।
ক্লাস মানেই গভীর মনোযোগের জায়গা। শিক্ষকগণ ভীষণ নজর রাখতেন কে কি করছে আর কার মনোযোগ কোনদিকে। অধিকাংশ পড়া ক্লাসের মধ্যেই বুঝে যেতাম। টিফিন পিরিয়ডে আমার টিফিন বক্স খোলা মাত্রই মায়ের হাতের সেই বিখ্যাত নাস্তার একটা সুঘ্রাণ নাকে আসতো। তাড়াতাড়ি খিদের জ্বালা মিটাতে গিয়ে গোগ্রাসে গিলতে শুরু করতাম। তবে মাঝে মাঝে আমার বন্ধুরা যখন চকলেট কিংবা কেক আনতো তখন আমি আমার নাস্তার কিছুটা ভাগ দিয়ে ওদের খাবারে ভাগ বসাতাম 😄 তবে একটা ব্যাপার হলো আমি আমার নাস্তার মতো এতো তৃপ্তি অন্য কোন খাবারে পেতাম না।
মায়ের দেয়া সামান্য টাকা দিয়ে আমার প্রিয় একটা খাবার খেতাম। এটা বরফ কুচির সাথে আরো কি যেন মিশিয়ে দিতো, জাষ্ট অসাধারণ লাগতো সেটা। এখন আর নামটা মনে পরেছে না খাবারটির, তবে এখন যদি একটু খেতে পারতাম তাহলে আত্মায় তৃপ্তি পেতাম। স্কুল ছুটি হলে সাথে সাথে বাসায় ফিরে নাকে মুখে কিছু খাবার গুঁজে দিয়ে বেরিয়ে পরতাম আমার প্রিয় ব্যাটবল নিয়ে। ব্যাট বাবা কাঠ দিয়ে তৈরি করে দিয়েছিলেন, আর বলটা দশ জনের 😄 মানে চাঁদা তুলে সবাই মিলে বল আর ট্যাপ কিনে বলের ব্যাবস্থা করেছিলাম। বিকেলে ভীষণ ব্যাস্ত সময় পার করতাম, বিশেষ করে ব্যাটিং আর বোলিংয়ে ঘাম ঝড়াতাম প্রচুর। কারন একটা ম্যাচ হেরে গেলে সেদিন রাতে আর ঘুম হতো না। আর সারাক্ষণ হৈ হুল্লোড় আর খেলা নিয়ে পরিকল্পনা তো আছেই।
এরপর বিভিন্ন রকম গবেষণার কাজ ছিল যেমন ধরুন এটা ভেঙ্গে ওটার সাথে লাগিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা যায় কিনা। তবে অধিকাংশ সময় মিশন ফেইল আর মায়ের হাতের উত্তম মাধ্যম তো আছেই। এখনো মনে আছে একবার কলমের পেছনে আগুন লাগিয়ে ফু দিয়ে বেলুন তৈরি করার কাজ শুরু করেছিলাম দুই ভাই মিলে। কিন্তু একটু পর যখন কলম থেকে আগুনের ফুলকি ফুটতে শুরু করলো আর হাতে এসে পরলো তখন মাগো বলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলাম। মা দৌড়ে এসে তাড়াতাড়ি পানিতে হাত চুবিয়ে রাখলেন কিছু সময় কিন্তু ততক্ষণে হাতে গলন্ত প্লাস্টিকের টুকরো পরে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। মা তৎক্ষণাৎ কিছু বললেন না, শুধু বললেন এই বাঁদরামির ফল একটু পরেই টের পাবে। তিনি সেভলন লাগিয়ে দিলেন কিন্তু সত্যিই কিছু সময় পর একটা ভালো মাপের উত্তম মধ্যম পেদানির ব্যাবস্থা করা হলো। আরে তাতে কি নবীন বিজ্ঞানীদের কি এভাবে দমিয়ে রাখা যায় 🤪
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
https://x.com/emranhasan1989/status/1813289000020635943?t=HjkvYhV-2Q8RMx5V7_CbbA&s=19
স্মৃতির পাতা থেকে প্রথম পর্ব লিখেছেন পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। ছোট বেলায় সেই স্মৃতিময় মুহূর্ত গুলো মনে পড়লে ভীষণ ভালো লাগে। খেলাধুলা আমাদের শখের ছিলো। ছোট বেলায় থেকে বেশ জ্ঞানী ছিলেন। আপনার লেখা গুলো পড়ে ছোট বেলায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। মায়ের হাতের রুটি আর ভাজি তো জমিয়ে খেতাম। আপনারা দুই ভাই মিলে কলম থেকে আগুনের ফুলকি ফুটাতে চেয়েছেন এর পরে হাতে পরে ছিলো যেনে খারাপ লাগলো। ছোট বেলায় তো মায়ের হাতের পেদানি খেতে ভালোই লাগতো। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল ভালো থাকবেন। নতুন পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ঠিক বলছেন ভাই যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। আপনি শৈশবের সোনালী দিনগুলো তুলে ধরেছেন, আপনার পোস্ট পরে খুবই ভালো লাগলো। আপনি ছোট বেলা মসজিদে হুজুরের কাছে আরবি পড়তে গিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। আমিও আপনার মতো সারাদিন ব্যাট বল দিয়ে খেলা করতাম। অবশেষে আপনি কলমের পেছনে আগুন লাগিয়ে ফু দিয়ে বেলুন তৈরি করার সময় হাতে পড়েছিল জেনে খারাপ লাগলো। আপনি স্মৃতির পাতা থেকে প্রথম পর্ব আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই ভালো থাকবেন।
মজার একটি গল্প শেয়ার করলেন আপনি সেই ছোটবেলার। আসলে আপনার লেখাগুলি যতক্ষণ পড়ছিলাম ততক্ষণ যেন হাসি লেগে থাকছিল আমার। তাহলে তো খাবারের পাশাপাশি দুষ্টামিটা বেশ ভালোই করতেন বোঝা যাচ্ছে। কলমের পিছনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া মানে এটা তো ভয়ঙ্কর একটি কাজ করে দিলেন। বাহ উত্তম মধ্যম বেশ মজার ছিল সবার ক্ষেত্রে সেই ছোটবেলার হা হা হা। স্মৃতিময় গল্প শেয়ার করলেন ভালো লাগলো পড়ে।