শাট ডাউন ডায়রি পর্ব: ০১
পর্ব: ০১ |
---|
সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে শুরু করছি। শুধুমাত্র সুস্বাস্থ্য বললাম কারন কারোর মানসিক দিকটা ভালো নেই সেটা আমি নিজেকে দিয়ে উপলব্ধি করতে পারছি। সপ্তাহ খানেক পর নেটওয়ার্ক পেয়ে বেশ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম কিন্তু সেটা যে এতোটাই ক্ষণস্থায়ী হবে ভাবতে পারিনি। নেটওয়ার্কের অবস্থা যদি বলি পুঁটি মাছের প্রাণ তবুও নেহাত কম বলা হবে। আমি কতটা গেরিলা যুদ্ধ করতে করতে এই পোস্ট লিখার ফরম্যাট অবধি পৌঁছেছি, সেটা লিখতে লিখতে হয়তো বিস্তর আলোচনা করতে হবে। যাইহোক উপর ওয়ালার নাম নিয়ে লিখা শুরু করলাম জানিনা এই পোস্ট শেষ পর্যন্ত সাবমিট হবে কিনা, তবুও পোস্ট লিখার জন্য মনটা ভীষণ ছটফট করছিল। যাইহোক শাট ডাউন পর্ব শুরু করলাম আজ থেকে, জানিনা অন্য কোন পোস্ট কবে নাগাদ করতে পারবো কারন ছবি আপলোড করতে জীবন বেরিয়ে যাচ্ছে এই নেটওয়ার্কে।
ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে শুরু হয় শাট ডাউন কর্মসূচি। সত্যি বলতে আমি নিজেও ছাত্রদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করি এবং মন থেকে এটার সঠিক বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করি।
যখন আন্দোলনটা জোরদার হতে থাকে সরকার হঠাৎ করেই মোবাইলের ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়, যাতে খবরগুলো বেশি ছড়াতে না পারে। তখনো বেশ কিছু তরতাজা খবর পাচ্ছিলাম আর মনে মনে দোয়া করছিলাম যাতে দ্রুত সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। এরপর হঠাৎ করেই ছাত্রদের উপর চারিদিক থেকে নিপীড়ন চালানো হয় এবং ধুম করে ওয়াইফাই বন্ধ করে দেয়। পরে জানা যায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যাইহোক সবকিছু মেনে নিয়ে আমরা ঘরবন্দি।
হঠাৎ করেই কারা যেন শুরু করে দেয় অগ্নিসংযোগ, যা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
পরবর্তীতে জারি করা হয় কারফিউ, এরমধ্যে মারা যায় বেশ কিছু ছাত্র। পুরো রাজপথ যেন মৃত্যুর মিছিলে পরিণত হতে থাকে।
তখনকার সময়গুলোতে টিভির সামনেই বেশিরভাগ সময় কাটাতাম শুধুমাত্র একটু ভালো খবর পাওয়ার আশায় কিন্তু প্রতিনিয়ত আরো যেন বিমর্ষ হয়ে পরতাম। ইতিমধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং অনেক সেবা বন্ধ হতে থাকে একটার পর একটা। এগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রয়োজনীয় হলো বিল পে মানে বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের বিল পরিশোধ করা।
বাংলাদেশের অনেক জায়গায় প্রিপেইড মিটার যা আরেক বিপদ আর বিড়ম্বনার নাম। হঠাৎ করেই যাদের মিটারের টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিল তাদের যে কি পরিমান বিপদে পরতে হয়েছে তা বলা বাহুল্য। আমার মিটারের টাকা যখন কিছুটা রয়েছে তখন থেকেই চেষ্টা করছিলাম টাকা লোড করার কিন্তু কোনভাবেই পারছিলাম না। প্রথমে বিকাশে ডায়াল প্যাড চেপে চেষ্টা করলাম তিনশ টাকা লোড করার, টাকা কেটে নিল কিন্তু গোপন নাম্বার আর আসেনা 😕 দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরও যখন এলো না তখন দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে। কারন একেতো গরম, নেটওয়ার্ক নেই এরপর যদি বিদ্যুৎ না থাকে তাহলে সত্যিই মারাত্মক বিপদে পড়ে যাবো। চিন্তা করতে করতেই মিটারে এলার্ম দেয়া শুরু করে। তখন হঠাৎ মাথায় চিন্তা এলো নগদ থেকে চেষ্টা করে দেখি, তখন পরিচিত একজন দোকানদারকে ফোন দিয়ে কিছু টাকা সংগ্রহ করতে পারলাম। উপর ওয়ালার ইচ্ছায় দশ মিনিট পর কোড নাম্বার গুলো পেয়ে মিটার রিচার্জ করলাম, মনে কিছুটা স্বস্তি পেলাম অন্তত গরমে আমার বাচ্চাদের কষ্ট করতে হবে না 😞
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
সব মিলিয়ে দেশের পরিস্থিতি অনেক খারাপ ছিলো। দোয়া করি সব কিছু যেনো আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়। পোস্ট করা খুব কষ্টকর হচ্ছে। ইন্টারনেট এখনো পুরোপুরি ভাবে কাজ করছে না। শাট ডাউন ডায়রি পর্ব পরে খারাপ লাগলো। আমাদের সবার অবস্থা অনেক বেশি খারাপ ছিলো। অবশেষে মিটারে টাকা ঢুকাতে পেরেছেন জেনে ভালো লাগলো। আপনার পরিবারের জন্য শুভ কামনা রইল ভালো থাকবেন।
বেশ কিছুদিন ধরে দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। তার মাঝে ছিলো না ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাই।সব মিলে একদম ঘরে বন্দি হয়ে পড়েছিলাম। এ অবস্থায় আমার ওয়াইফ কে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। সে সময় অনেক ছাত্র গুলি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং অবশেষে মারা গিয়েছিল। আমি কোন ভাবেই হাসপাতাল থেকে বের হতে পারেনি। আমিও নিজে ছাত্রদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করি। তবে আমার দেখা ঘটনা গুলো আমি এখনো ভুলতে পারছি না। আপনিও অবশেষে আপনার প্রিপেইড মিটারে টাকা লোড করতে সক্ষম হয়েছেন যেনে খুবই ভালো লাগলো ভাই।