পর্ব -২| সারল্যের ছোটোবেলা (10% @shy-fox এবং 5% @abb-school এর জন্য বরাদ্দ )
সবাই ভালো আছেন তো?
তো আগের দিন যেখানে ছিলাম। ছোটোবেলার সারল্যের থেকে জন্মানো ভুল ধারনা। আমাদের সবারই এমন কিছু হাস্যকর ভুল ধারণা থাকে‚ যা নিয়ে বড় হয়ে নিজেরাই একইসঙ্গে হাসি আর নস্টালজিয়ায় ভুগি।
আগেরদিন যেমন কিছু ঘটনা বলেছিলাম ছোটোবেলার নস্টালজিয়া নিয়ে। আজ তেমনই আরো কয়েকটা ঘটনা বলছি।
আগের পর্বের লিঙ্ক
আমি যেমন ছোটোবেলায় একটা জিনিস নিয়ে খুব অবাক হতাম যে আমরা যখন হাঁটি‚ সেই সময় আমাদের সাথে সাথে সূর্য বা চাঁদ একই সাথে সামনে এগিয়ে যায় কিভাবে? এইটা আমার কাছে একটা বিশাল বড় রহস্য ছিল। যখনই আমি হাঁটতাম‚ উপরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটতাম আর দেখতাম যে চাঁদ কিংবা সূর্য আমার সাথে সাথে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এমনকি একবার এমন করতে গিয়ে আমি উনুনের মধ্যে পড়েও গিয়েছিলাম। আসলে আমাদের বাড়িতে প্রচুর খেজুর গাছ ছিল আর সেই খেজুর গাছের রস জ্বাল দিয়ে গুড় বাড়ানো হতো। এখন আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছি চাঁদের এগিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে কিন্তু সামনে যে বিশাল বড় একটা উনুন আছে তা আর খেয়াল করিনি। ফলে গিয়ে পড়েছি একেবারে ওই উনুনের মধ্যে। যদিও উনুনটা জ্বলন্ত ছিল না বলে আমার তেমন কোন ক্ষতি হয়নি সামান্য কেটেছরে যাওয়া ছাড়া‚ কিন্ত ওই উনুনে যদি আগুন ভালোভাবে না নিভত তাহলে আমার সেদিনই রাম নাম সত্য হয়ে যেত।
আমার এমনই আরেকটা হাস্যকর ধারণা ছিল যে মানুষের বয়স বাড়লে তবে তাকে মানুষ বলা হয়‚ নয়তো তাকে ছোট বা ছোট মানুষ বা খোকা বা এই ধরনের কিছু বলা হয়। আসলে ধারণাটা এসেছিল সবার বলা একটা কমন আশীর্বাদ বাক্য থেকে যে আশীর্বাদ করি বড় হয়ে মানুষ হয় বা ঠিক করে পড়াশোনা কর‚ বড় হয়ে মানুষ হতে হবে। এখন আমি কিছুতেই বুঝতে পারতাম না যে স্কুলের বইতে পড়ছি আমরা মানুষ। অন্যদিকে বড়রা এসে বলছে যে পড়াশোনা করে বড় হয়ে তবে মানুষ হতে হবে। দুটো একইসাথে কিভাবে সম্ভব? ফলে আমি পড়েছি ভয়ানক কনফিউশনে। শেষে অনেক ভেবে বের করেছিলাম যে পড়াশোনা করলে একটা বয়সের পর সবাই মানুষ হয়। তার আগে পর্যন্ত কাউকে পুরোপুরি মানুষ বলা যায় না। এখন এটা ভাবলে কি হাসি পায়।
এইরকমই আরেকটা হাস্যকর ভুল ধারণা ছিলো টিভি সিরিয়ালের সুপার হিরোদের নিয়ে। আমি ভাবতাম যে টিভির সুপার হিরোরা বোধহয় সত্যিই আছে। তবে এটা বোধহয় ঠিক আমার একার ভুল না। সব বাচ্চারাই হয়তো কম বেশি এমনটাই ভাবে একটা বয়সে। যে টিভিতে দেখানো সুপার হিরোরা সবাই সত্যি। আমাদের ছোটোবেলায় অবশ্য সুপার হিরোদের তেমন সংখ্যাধিক্য ছিলো না। বিদেশী চ্যানেলও আসত না বাড়িতে। তাই ওই হাতে গোনা কয়েকজন মানে শক্তিমান‚ জুনিয়র জী আর আরিয়াম্যানই ছিলো আমার সব শৈশবকালীন ফ্যান্টাসির উৎস। আরিয়াম্যান উচ্চারণটা অবশ্য বাংলায় চলা উচিত না। বাংলায় ওটা হবে আর্যম্যান। হিন্দি আর সংস্কৃততে "য" টা "Y" উচ্চারণ হয়। কথা উঠলোই যখন তাহলে এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বলি। তখন ক্লাস ৭ এ পড়ি। সদ্য সংস্কৃত শিখছি। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি স্কুলে ক্লাস ৭ আর ৮ এ সংস্কৃত শিখতে হয়।
তা দুর্গাপুজোর সময় দেখি মন্ডপে পুরোহিত মন্ত্র পড়ছে
যা দেবী সর্বভূতেষু‚ শক্তিরূপেণ সংস্থিতা………।
শোনা মাত্রই আমি চিল্লিয়ে উঠেছি ঠাকুরমশাই ভুল মন্ত্র পড়ছে বলে। ওটা যা দেবী না‚ ইয়া দেবী হবে। পুরোহিতও সেই গোয়ারগোবিন্দ লোক। ওর প্রেস্টিজে লেগেছে একটা বাচ্চা ওর ভুল ধরেছে বলে। কিছুতেই মানবে না যে ওর ভুল হয়েছে। শেষে আমি ক্লাসের বই এনে "য" এর সংস্কৃত উচ্চারণ দেখালে তবে ভদ্রলোক শান্ত হয়। আর অন্যদিকে একেবারে দুর্গাপুজোর পুরোহিতের ভুল ধরিয়ে দিয়ে আমি রীতিমতো পাড়ায় হিরো হয়ে যাই। যারা একটু শিক্ষিত মানুষ‚ পড়াশোনা নিয়ে কালচার করে তারা সবাইই দেখি আমার নাম জেনে গেছে কদিনের ভেতর! তাদের কাছে আমি তখন বিদ্যাসাগরের সমপর্যায়ের ব্যক্তি।
যাইহোক‚ যেখানে ছিলাম। সুপারহিরোদের অস্তিত্বে! তখন এদের এতটাই বিশ্বাস করতাম যে ওরা যে বাস্তবে থাকতে পারেনা সেটা ধারণাতেই আনতে পারতাম না। বড়রা কেউ এসব বললেও তাদের তাচ্ছিল্য করতাম এটা ভেবে যে "লোকটা আমাদের মত শক্তিমান বা জুনিয়রজী দেখেনা বলে লোকটা কিছুই জানে না। বেচারা! বড় হওয়ার জন্যে কত অমূল্য জিনিস জানা থেকে বঞ্চিত থেকে গেল। হায় রে!"
কিন্তু আমিও একদিন বড় হলাম। আমিও একদিন সব বুঝে গেলাম হঠাৎ করে। আমিও বঞ্চিত হলাম সেইসব অমূল্য জিনিসের রসাস্বাদন করা থেকে! আমার শৈশবের সারল্য আমার থেকে হারিয়ে গেল। হায়‚ এই দুঃখ আমি রাখি কোথায়?
(চলবে)
ছোটবেলায় চাঁদ সূর্যের কনফিউশন আমারও ছিলো।আমি অনেক বার হোঁচট খেয়ে পড়েছি চাঁদের সাথে থাল মিলিয়ে রাস্তায় দৌড়তে গিয়ে। আর টিভির বিষয়ে আমার ধারণা ছিল আমি যেমন টিভির লোকগুলো কে দেখতে পাই ওরাও আমায় দেখতে পায়। 😁
না ওটা আমার ছিলো না কোনোদিনও।