পর্ব -১ | আমার রাখীপূর্ণিমা পালন ( 10% @shy-fox এবং 5% @abb-school এর জন্য বরাদ্দ )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

তারপর কেমন আছেন স্টীমিটের সব সব বন্ধুরা? সব ঠিকঠাক তো? আমি দিন কয়েকের জন্য আটকে পড়েছিলাম পাওয়ার শেষ হয়ে যাওয়ায়। প্রথম প্রথম ব্লগিং করছি তো। অত খেয়াল ছিলো না। মনের আহ্লাদে ইচ্ছামতো আপভোট - কমেন্ট করেছি আর নিজের পোস্ট এডিট করেছি যতক্ষন না পার্ফেক্ট লাগে। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই পাওয়ার প্রায় শূন্য।

এখন এই পাওয়ার শূন্য হওয়ায় এটাই হয়েছে যে আমাদের ক্লাবের রাখী পূর্ণিমা পালন নিয়ে স্টীমিটে পোস্ট দেব ভেবে ফটো টতো তুলে রাখলেও শেষপর্যন্ত আর দেওয়া হয়নি।

125c509d-168d-4978-aa38-c0ee664e59ff.jpg

আজ সেটা নিয়ে লিখছি।

রাখী বন্ধন মানে তো আপনারা জানেনই। এর আসল নাম রক্ষা বন্ধন। প্রিয়জনকে সমস্ত রকমের বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি কিংবা আশীর্বাদ থেকেই পালন করা শুরু হয়েছিল রক্ষা বন্ধন। উপমহাদেশে রাখীর ইতিহাস বহু প্রাচীন। রামায়নে আমরা দেখি যে ভগবান রামচন্দ্র যখন সীতাদেবী উদ্ধারের জন্য লঙ্কা আক্রমণ করেছিলেন‚ তখন তিনি তাঁর সহযোগী কিস্কিন্ধ্যা সেনাবাহিনীর সব সৈন্যের হাতে একটা করে লাল সুতোর ফুল বেঁধে পড়িয়ে দিয়েছিলেন।

rakhi 2.jpg
[https://pixabay.com/photos/rakhi-rakshabandhan-india-tradition-2630652/]

আবার অন্য এক আখ্যানে পাওয়া যায় যে ভগবান বিষ্ণু অসুররাজ বলির রাজ্য দখল করে নিয়ে ইন্দ্রকে দিয়ে দেন। বদলে বলির দানশীলতা‚ ধার্মিকতা আর সততার পুরষ্কার হিসাবে একটি বর দিতে চান। ধুরন্ধর বলি তখন বিষ্ণুর কাছেই নিজের নিরাপত্তা চেয়ে বসে। তাই বিষ্ণু তখন দীর্ঘসময় মর্তে থেকে অসুররাজ বলিকে রক্ষা করছিলেন। ফলে সম্পদের দেবী লক্ষ্মী বিষ্ণুর বিরহে কাতর হয়ে পড়েন। তখন তিনি বলিকে ভাই মেনে তাঁর হাতে রাখী পড়িয়েছিলেন। যেন উপহার হিসাবে বলিরাজা বিষ্ণুকে অনুরোধ করে লক্ষ্মীর কাছে ফিরে যেতে। রাজা বলিও বোনের অনুরোধ রাখতে নিজের সর্বোচ্চ ক্ষতি স্বীকার করে বিষ্ণুকে অনুরোধ করে বিরহকাতর লক্ষ্মীদেবীর কাছে ফিরে যেতে।

অন্যদিকে মহাভারতে আমরা পাই যে ভগবান কৃষ্ণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন যে চেদীরাজ শিশুপালের একশতটি অপরাধ তিনি চুপচাপ মুখ বুজে মেনে নেবেন। তাই শিশুপালও নির্ভয় হয়ে সবার সামনে কৃষ্ণকে যত ইচ্ছা অপমান করে বেড়াত। প্রাচীন ভারতে প্রতিজ্ঞার খুব দাম ছিলো। কেউ একবার কোনো প্রতিজ্ঞা করে ফেললে নিজের সবকিছুর বিনিময়ে হলেও সেই প্রতিজ্ঞা রাখতে হত। নাহলে সে অধার্মিক বলে গণ্য হত। তুলসীদাস তার রামায়ণে প্রাচীন ভারতের এই নীতিটিকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন মাত্র দুইটি বাক্যে -
রঘুকূল রীতি সদা চলি আঈ,
প্রাণ যায় পর বচনো না যায়।

অর্থাৎ রঘুকূলের ( ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের বংশ ) রীতি এটাই চলে আসছে যে প্রাণ চলে গেলেও একবার দেওয়া কথা আর ফেরত নেওয়া বা খেলাপ করা যাবে না।

কৃষ্ণও এইভাবে প্রতিজ্ঞার ফাঁটা বাঁশে আঁটকে গিয়েছিল। শিশুপাল সুযোগ পেলেই সবার সামনে অপমান করে কৃষ্ণের মজা নিত কিন্ত কৃষ্ণকে সবকিছু মুখ বুজে মেনে নিতে হত। এইভাবে চলতে চলতে কখন যে ১০০ তম অপরাধের কোটা পূর্ণ হয়ে গেছে তা আর শিশুপালের খেয়াল ছিলো না। বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান‚ চোরের সাতদিন গৃহস্থের একদিন ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি………! কিন্তু সম্রাট যুধিষ্ঠিরের যজ্ঞের আসরে যখন শিশুপাল শ্রী কৃষ্ণকে একশত এক তম অপমানটি করে ফেলে‚ তখন কৃষ্ণও মূহুর্তের মধ্যে নিজের সুদর্শন চক্রের দ্বারা শিশুপালকে স্বেচ্ছায় মুন্ডুদান শিবিরে বসিয়ে দেয়। আর এই চক্র ছোড়ার সময়েই কৃষ্ণের হাত কেটে গেলে আর রক্তপাত বন্ধ করার জন্য কোনো বন্ধনী না পাওয়া গেলে সেখানে উপস্থিত দ্রৌপদী ন্যূনতম সময় নষ্ট না করে নিজের মহামূল্যবান রেশমি শাড়ি ( যা সম্ভবত আমাদের বাংলা থেকেই যেত) ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। যা আদতে রাখীরই নামান্তর। কৃষ্ণও এই রক্ষা বন্ধনের মূল্য দিয়েছেন নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের গতিপথই হয়তো পালটে যেত যদি না কৃষ্ণ পান্ডবপক্ষের সাহায্যে থাকত। দুই বন্ধু কৃষ্ণ ( বাসুদেব যাদব) আর কৃষ্ণা ( দ্রৌপদী ) নিজের মধ্যে এই বন্ধুত্ব রক্ষা করে গিয়েছেন সারাজীবন ধরে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই চক্র নামক অস্ত্রটিকে হিন্দি সিরিয়ালে যেভাবে দেখায় তেমন স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রবিশেষ কখনোই ছিলো না। স্বাভাবিক বুদ্ধিতেই তা বোঝা যায়। বরং চক্র ছিলো এক ধরনের গোল ধারালো অস্ত্র যা ছুঁড়ে মারতে হত। এই কিছু বছর আগে পর্যন্তও পাঞ্জাবে শিখদের মধ্যে চক্র ছিলো একটা অত্যন্ত প্রচলিত অস্ত্র। আপনারা অক্ষয় কুমার অভিনীত কেশরী সিনেমাতেও দেখবেন শিখরা পাগড়ির উপরে একটা গোল অস্ত্র রেখে দিচ্ছে। আর হাতের কাছে অন্য অস্ত্রের অভাব পড়লে সেই গোল অস্ত্র ছুঁড়ে মারছে। আমার ধারণামতে সেটাই হল আমাদের পুরান মহাকাব্যে উল্লিখিত চক্র।

8dd5f77b-16f1-4a26-a431-b4904298898c.jpg

আবার অন্য এক আখ্যানে আমরা পাই যে মৃত্যুর অধিপতি যম কালের প্রভাবে নিজেই মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার উপক্রম হলে তাঁর বোন যমী দাদা যমের হাতে রাখী বেঁধে দেয়। যেন মৃত্যু কখনো যমকে ছুঁতেও না পারে।

rakhi 1.jpg
[https://pixabay.com/photos/rakshabandhan-rakhi-hindu-boy-7381548/]

অন্যদিকে আধুনিক ইতিহাসের দেখা যায় যে
গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহ অরক্ষিত মেবার দখল করার জন্য আক্রমন করে তখন মেবারের রাণী কর্ণাবতী মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের কাছে দূত পাঠান সাহায্য চেয়ে। আর সেই দূতের হাতেই তিনি একটি লাল সুতো পাঠান রাখী হিসাবে। অর্থাৎ তিনি হুমায়ুনকে ভাই হিসাবে বরণ করে নেন। সম্রাট হুমায়ূন তখন পূর্ব ভারতে বিদ্রোহী ঠেঙ্গাতে ব্যস্ত ছিলেন। বোন কর্ণাবতীর চিঠি পেয়ে হুমায়ূন মূহুর্তের দেরী না করে পশ্চিম দিকে ছুটে যায়। যদিও ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। মেবারের পতন ঘটেছে। বাহাদুর শাহের হাতে অপমানিত হওয়ার ভয়ে রাণী কর্নাবতী সহ মেবারের সব মেয়েরা জওহরব্রত নিয়েছে ( আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি ) কিন্তু তাও বোনের অনুরোধ ও রাখীর সম্মান রক্ষার্থে হুমায়ুনের এই প্রচেষ্টা চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে।

kumbhalgarh-2964712__340.jpg
[https://pixabay.com/photos/kumbhalgarh-fort-architecture-india-2964712/]
মেবারের সেই দুর্গ

আজ তবে এইটুকুই থাক। বেশী বড় পোস্ট করা উচিৎ না। বাকি অংশটুকু আর আমাদের রাখীবন্ধন পালনের ছবিগুলো পরের পর্বে দিচ্ছি। (ক্রমশ)

Sort:  
 2 years ago 

অনেক কিছুই জানলাম। রাখী নিয়ে শ্রী গণেশ আর মনসার দেবীর একটা ইতিহাস আছে সম্ভবত। আমি সঠিক নাও হতে পারি। যাই হোক, অনেক তথ্য পেলাম।

 2 years ago 

হ্যাঁ আছে বোধহয় একটা। দেখতে হবে

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 66181.33
ETH 2700.56
USDT 1.00
SBD 2.88