আমি তিথি (গল্পের প্রথম পর্ব )

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আমি তিথি

image.png

image source

আমি তিথি। সকাল নয়টা বাজে ঘড়ির কাটায়। ভার্সিটি যাওয়ার সময় আরো এক ঘন্টা আগেই পেরিয়েছে। শীতের রাতে কাথা কম্বল জড়িয়ে সিনেমা দেখার যেমন আলাদা আনন্দ ঠিক তেমনি শীতের সকালে দেরি করে উঠার মধ্যেও একটা অন্যরকম আনন্দ আছে। সেটা আমার মা জেনেও মানতে রাজি না। তার মতে তার কোনো কথাই আমি শুনি না, কোনোদিন না। এত বড় মেয়েকে নিজে বকতে পারে না দেখে বড় খালাকে ভাড়া করে এনেছেন আজকে সকালে।আমার তো ঘুম ভেঙেছে অনেক আগেই কিন্তু ইচ্ছে করেই শুয়ে রইলাম।আজকে ভার্সিটি যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না বলেই মরার মত কম্বল মুড়ি দিয়ে পড়ে ছিলাম বিছানায় আর শুয়ে শুয়ে মা আর বড়ো খালার কথাবার্তা শুনছিলাম।

তাদের মতে আমি দিনদিন অলস হয়ে যাচ্ছি, আমাকে মেসেজ দিলে আমি সেটা ইচ্ছে করেই দেখি না, আমাকে কল দিলেও আমি ধরি না, আমি কোনোকিছুই পাত্তা দেই না, নিজের মতো চলি, কারও কথা ভাবি না, নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবি না... আরো অনেক অনেক বদ স্বভাব নিয়ে তারা কথাবার্তা বলছেন সেই সকাল থেকেই। এতক্ষণে বড়ো খালা আমার ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমি বুঝতে পেরে চুপচাপ শুয়ে আছি। উনি আমার মাথার কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন আর অনবরত বকবক করেই যাচ্ছেন। আমি কেনো ভার্সিটি মিস দিলাম, আমি কেনো এতো বেলা পর্যন্ত শুয়ে আছি তাই নিয়ে তার অভিযোগের শেষ নেই। আমি যে সবার চেয়ে অনেকটাই আলাদা আর কিছুটা জেদী, একগুঁয়ে স্বভাবের সেটা সবাই খুব ভালো জানে।

আমি নিজের ব্যাপারগুলো নিয়েও কতটা চিন্তা করি বা ভাবি সেটাও মায়ের খুব ভালোই জানা। মায়ের জোরাজোরি তে পড়ালেখাটা খুব ভালোমতই করেছিলাম। এইজন্য ভার্সিটিতে উঠার পড়েই একটা কোচিং চালাচ্ছি। ছাত্ররা সব খুশিমনেই পড়তে আসে আমার কাছে। ওদের ভাষায় আমার চেয়ে ভালো করে কেউ নাকি পড়াতে পারে না! তাছাড়া একটা ছোটো কিন্ডাগার্টেনও খুলেছি নিজের জমানো টাকায়। সেখানে রাস্তায় থাকা ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলোকে খুব যত্ন করে পড়াই। কোচিংয়ে সপ্তাহে তিনদিন সময় দিলেই হয় তবে সপ্তাহের প্রতিটা দিন ওই বাচ্চাগুলোকে পড়াই আমি। সাথে কয়েকজন টিচার আছে আমাকে সাহায্য করার জন্য। বিনে পয়সায় ওদের পড়াই। ওদের বাবা মা রা রোজ খাবার রেধে নিয়ে আসে আমাদের জন্য। টাকা পয়সা আমরা নেই না বলে খাবার খাওয়ায় হাসিমুখে।

আমাদের ঐখানে কাজ করে কিংবা পড়াতে গিয়ে হাপিয়ে উঠতে হয় না।বাচ্চাগুলো এত ভালো আর ওদের বাবা মা রা প্রায় প্রতিদিন এসে গল্প করে আমাদের সাথে। নিজেদের সুখ দুখ নিয়ে কথা বলে...আমরা কাজের পাশাপাশি খুব মন দিয়ে সেইসব বাস্তব গল্পগুলো শুনি, কথা বলতে বলতে ওদের চোখের কোনে জমা পানির ফোঁটা অনুভব করার চেষ্টা করে যাই রোজ। একটা আর্টের স্কুল খুলেছি সেই কলেজে পড়া অবস্থায়। এখনো সেটা খুব ভালো চলছে। বান্ধুবিদের সাহায্য, আত্মীয়দের টুকটাক সব মিলিয়ে আর্টের স্কুলটা খুব ভালোই চলছে।

(চলবে..........)

1.png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

_

Heroism_3rd.png

Sort:  
 last year 

গল্পের শুরুটা অনেক ভাল হয়েছে। আপনার লেখার স্টাইল অনেক সুন্দর। তিথির মা-খালারা উদ্বেগ এ সমাজের চিত্র।তিথি কোচিং চালানো,বাচ্চাদের পড়ানোর পাশাপাশি নিজের পড়া লেখা ভালই চালিয়ে যাচ্ছেন। তিথির পরিনতি কি হবে ? পরবর্তি কিস্তি ছাড়া জানার উপায় নাই! শুভ কামনা আপনার জন্য।

 last year 

তিথির মতো আমারও শীতের সকালে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে বেশ ভালো লাগে। আমার মনে হয় এর চেয়ে শান্তির কিছু পৃথিবীতে আর নেই। যাইহোক তিথির মা খালা অযথাই তিথিকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করে। তিথি খুব বুদ্ধিমতী এবং পরিশ্রমী একজন মেয়ে সেটা আপনার গল্প পড়েই বুঝতে পেরেছি। পরবর্তী পর্ব পড়ার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই পরের পর্ব শেয়ার করবেন। অনেক ধন্যবাদ আপু। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.29
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 63855.79
ETH 3113.00
USDT 1.00
SBD 4.04