গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পুঁথি পাঠ // পাঠক বাই @alauddinpabel(১০% পে-আউট লাজুক খ্যাকের)
স্টিমিটের সহযোদ্ধারা,
"আসসালামু আলাইকুম"
আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন, আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি।
আজকে আমি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ধর্মী একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমি প্রতিনিয়ত ও চেষ্টা করি কিছু নতুনত্ব আনার জন্য এবং অনেক চিন্তাভাবনা করে আজকে আমি আপনাদের সামনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পুঁথি পাঠ নিয়ে হাজির হলাম।
পুঁথি পাঠ একসময়কার অনেক জনপ্রিয় একটি আসর ছিল। তখন মানুষ সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে রাতে একটু বিনোদনের জন্য এই পুঁথি পাঠের আয়োজন করা হতো এবং অনেক রাত পর্যন্ত এটি চলত। কিন্তু কালের বিবর্তনে এটি দিন দিন হারিয়ে যাওয়ার পথে। বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের যুগে এখন মানুষ তার চেয়ে অনেক ভালো ভালো বিনোদন হাতের মুঠোয় পেয়ে যাওয়ায় এর তেমন একটি কদর নেই।
আমি ছোটবেলায় আমার নানুর কাছে এই পুঁথি পাঠ শুনতাম খুব ভালো লাগতো প্রতি বছর ডিসেম্বরে যখন স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে নানার বাড়ি বেড়াতে যেতাম প্রতিবারই নানুর কাছে এই পুঁথি পাঠ গুলো শুনতাম অসাধারণ লাগত শুনতে। বর্তমানে আমার নানু এখন খুবই অসুস্থ সবার কাছে আমার নানুর জন্য দোয়া চাচ্ছি। আপনারা সবাই আমার নানুর জন্য দোয়া করবেন যাতে আল্লাহ তাআলা তাকে আরো হায়াতে তাইয়েবা দান করেন।
তাহলে চলুন আর দেরি না করে আপনাদের সামনে আমি পুঁথি পাঠটি উপস্থাপন করি। আমি আজকে আপনাদের সামনে যে পুঁথি পাঠটি উপস্থাপন করতে যাচ্ছি তার নাম হচ্ছে "গাজী কালু চম্পাবতীর পুথি।" আজকে আমি এই পুঁথির প্রথম খন্ডের কিছু অংশ আপনাদেরকে পড়ে শোনাবো, আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
বৈরাট নগরে ঘর সাহা সেকান্দর।। অজুফা তাহার পত্নী অতি মনোহর ।। হইল সন্তান এক অজুপার ঘরে।। চন্দ্রের সমান রুপ ঝলমল করে।। রূপেতে হইল আলো সমস্ত ভুবন।। রাখিলো তাহার নাম জুলহাস সুজন।। দিনে২ পুত্র এক বাড়িতে লাগিল।। দ্বাদশ অব্দের যবে বয়স হইল।। একদিন চলিলেন করিতে শিকার।। লইয়া অনেক লোক সাথে আপনার।। হইলেন উপনীত এক কাননেতে।। কাননের মধ্যে মৃগ খোঁজে সকলেতে।। হঠাৎ হরিণ এক উঠে দৌড় দিল।। ভুপের নন্দন তার পশ্চাতে চলিল।। মায়ার হরিণ সে কি করে তখন।। একটি সুরঙ্গ দিয়ে করিল গমন।। দেখিয়া নৃপের সুতা না পারে থামিতে।। সুড়ঙ্গের পথে চলে হরিণমারীতে।। এখানেতে লোক সবে না দেখে তাহায়।। কাননে২ তারে খুঁজিয়া বেড়ায়।। অনেক খুঁজিল নাহি পাইল দর্শন।। আক্ষেপ করিয়া সবে চলিল তখন।। সুড়ঙ্গেতে গিয়া সেথা সেকান্দর সুতে।। দেখে হেন অন্ধকার রজনী হইতে।। এদিক ওদিক কিছু দেখিতে না পায়।। বিপাকে পড়িয়া যুবা করে হায় হায়।। পায়ের ঠাওরে তবে চলিতে লাগিল।। এগার কোশের পথ যদি চলে গেলে।। চক্ষু মেলে দেখি এক সুন্দর নগর।। সুবর্ণের অট্টালিকা সুবর্নের ঘর।। সুবর্ণের বৃক্ষ আর সুবর্ণের ফুল।। সোনার কোকিল কাক ভৃঙ্গ বুল২।। কীটপতঙ্গ যত কিছু সকলি সোনার।। স্বর্ণের সমান পুরী দেখিতে বাহার।। দেখিয়া সে জুলহাস আশ্চর্য হইয়া।। ধীরে২ পুরী মধ্যে প্রবেশিল গিয়া।। জঙ্গ বাহাদুর নাম সেই দেশী রাজার।। পুত্রের সমান করে পালন প্রজার।। সেকান্দার সুতে সেই অতীতের মতে।। উপনীত হৈল গিয়া রাজার বাটিতে।। দেখিয়া তার রূপ সেই রাজ্যেশ্বর।। অজ্ঞান হইয়া পড়ে পালঙ্ক উপর।। কতক্ষণ পরে রাজা চেতন পাইয়া।। জিজ্ঞাসিল জুলহাসে কোলে বসাইয়া।। কি নাম তোমার বাছা ঘর কোথা হয়।। কেবা তোর মাতা পিতা দেহ পরিচয়।। জুলহাস বলেন শুন পরিচয় মোর।। বৈরাট নগরে ঘর পিতা সেকান্দর।। অজুপা সুশীলা হয় আমার জননী।। বাপের দুলাল আমি মায়ের পরানী।। আমি বিনা পুত্রকন্যা কেহ নাহি আর।। মরিবেন মাতা পিতা শোকেতে আমার।। জঙ্গ রাজা বলে বাছা শান্ত কর মন।। আমার রাজত্বি এই জানিবে আপন।। এক কন্যা বিনা মোর আর কেহ নাই।। তাহাকে বিবাহ করে থাকো এই ঠাঁই।। এইসব রাজত্ব আমি তোমাকে শুপিব।। তোমাকে রাজত্ব দিয়া তীর্থে চলে যাব।। তব যোগ্য কন্যা সেই পরমা সুন্দরী।। পাঁচ তোলা নাম তার যিনি ছর পরী।। শুনিয়া বৈরাট সুতা স্বীকার করিল।। শুভোদিনে বিয়া তবে জঙ্গ রাজা দিদিল।।পাইয়া সুন্দরী কন্যা জুলহাস সুজন।। রহিলেন মাতা পিতা হৈয়া বিস্মরণ।। এখানেতে লোক সবে অনেক খুঁজিয়া।। সেকান্দর সাহা কাছে কহিল আসিয়া।। অদৃশ্য হৈয়া গেছে তোমার নন্দন।। খুঁজিনি অনেক মোরা না হইলো দর্শন।। শুনা মাত্র সেকান্দর মুন্ডে হাত দিল।। অজ্ঞান হইয়া ভূমে ঢলিয়া পড়িল।। পুত্র২ বলি সাহা কান্দে উচ্চস্বরে।। হাহাকার শব্দ হৈল বৈরাট নগরে।। অজুফা সুন্দরী কান্দে লুটিয়া ধুলায়।। দাস-দাসী করে সবে করি হায়২।। আসিয়া জ্যোতিষগণ গনিয়া তখন।। কহিলেন সবাকারে শান্ত করো মন।। জীবমানে আছে পুত্র পাতাল নগরে।। জঙ্গ রাজা নামে তার কন্যা বিবা করে।। কিছুকাল পরে পুনঃ পাইবা তাহায়।। তবে সবে কহিলেন ভাবিয়া খোদায়।। মনে মনে কান্দে রানী হইয়া আকুল।। আহা পুত্র সদা খালি মুখে এই বোল।। একদিন কেন্দে২ নাথ কাছে কয়।। সাগর দেখিতে মোর মনের ইচ্ছা হয়।। না পারি থাকিতে আর গৃহেতে বসিয়া।। শুনিয়া দিলেন সাহা ছও।রি করিয়া মহাপায় আরোহীয়া গিয়া সে সাগরে।। জলের তরঙ্গ দেখে হরিষ অন্তরে।। ইতিমধ্যে দেখে এক সিন্দু কাঠের।। আশিয়া লাগিল সেই কুলেতে ঘাটের।। দাসিগণে আজ্ঞা দিলো অজুফা সুন্দরী।। সিন্দুক উঠায় মোরে দেহ শীঘ্র করি।। যেই দাসি যায় সেই সিন্দুক ধরিতে।। সিন্দুক ভাসিয়া যায় মধ্যসাগরেতে।। একে একে সব দাসি ফিরিয়া আসিল ।। অজুফা সুন্দরী তবে পশ্চাতে চলিল।। জলেতে নামিয়া সতী হাত বাড়াতে।। আসিল সিন্দুক সেই অজুফার হাতে।। তখনই খুলিয়া দেখে সিন্দুক ভিতর।। ছয় মাসের শিশু এক পরমা সুন্দর।। কোলেতে লইয়া শিশু অজুফা সুন্দরী।। ঘরেতে আসিয়া দ্রুত পালে যত্ন করি।। দিনে২ শিশু সেই বাড়িতে লাগিল।। কালু বলে নাম তার অজুপা রাখিলো।
উৎসঃ
রায়মঙ্গলের কাহিনী নিয়ে গাজী কালু ও চম্পাবতী কাব্য রচনা করেন শেখ খোদা বখশ ১৭৯৮-৯৯ সালে।
আমি আজকে প্রথম এরকম একটি ব্যতিক্রমধর্মী পোস্ট আপনাদের কাছে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে। যেহেতু আমি প্রথমবার করছি ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর যেসব ভুল ত্রুটিগুলো হয়েছে সেগুলো আপনারা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাকে জানাবেন। আমার আজকের পোস্টি পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছান্তে,@alauddinpabel
আমি আলাউদ্দিন পাবেল।
গাজীপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে।
পুথিপাঠ আমি নাম শুনেছিলাম কোনদিন শুনি নাই। আপনি দারুন ভাবে উপস্থাপনা করেছেন। আসলে আপনার বলার ধরন আমার খুবই ভালো লেগেছে। আসলে আপনার দক্ষতা আছে বলতে হয়। ভাইয়া আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আপনার জন্য শুভকামনা। যাক আমার মাধ্যমে আপনি পুথি পাঠ সম্পর্কে জানতে পারলেন এই জন্য আমি খুবই আনন্দিত।
বাহ ভাইইয়া আপনি তো অসাধারণ পুথি পাঠ করতে পারেন। পুথি পাঠ অনেক ভালো লাগলো। গাজী কালুর পুরো কাহিনী আমার জানা ছিল না কিন্তু আপনার পুথি পাঠ শুনে সম্পূর্ণটা জেনে নিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে এটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ।এবং আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
জি আপু শুনে ভালো লাগছে আমার পুথি পাঠটি আপনার ভালো লেগেছে। আসলে আমি তো গাজী-কালু-চম্পাবতীর পুঁথির প্রথম খন্ডের কিছু অংশ মাত্র পড়ছ শুনালাম, পুঁথিটা অনেক বড়, সম্পূর্ণটা পড়তে গেলে অনেক সময় লাগবে অনেকগুলো পোস্ট করতে হবে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাই আপনার মন্তব্যে আমি খুবই মুগ্ধ। আপনি যেভাবে বলছেন অতটা নয়, একটু চেষ্টা করছি এই আর কি। আগে কখনো পুথি পাঠ করিনি প্রথম করলাম। দোয়া করবেন আরো ভালো ভালো কিছু আপনাদের সামনে যাতে উপস্থাপন করতে পারে। আপনার জন্য শুভকামনা।
আপনি অসাধারণ একটা জিনিস আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন কালের বিবর্তনের কারণে পুথিপাঠ হারিয়ে গেছে। তার সাথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য আমরা প্রায় সবকিছুই হারিয়ে বসেছি। আপনার প্রতিভা দেখে এবং শুনে এবং আপনার বিস্তারিত কথোপকথন খুবই ভালো লাগছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কারণ আমিও আপনার মত আমার বাবার মুখে পুথি পাঠ টা অনেক শুনেছি। কারণ আমার বাবা যখন পুথি পাঠ করত আমাদের ২/৪ বাড়ির মানুষ একসঙ্গে বসে শুনতো সারারাত। আমার আব্বা অসাধারণ পুথি পাঠ করত যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। তবে আজকে আপনি আবার মনে করিয়ে দিলেন সেই পুরনো স্মৃতি। আপনার কন্ঠটা অসাধারণ লেগেছে এবং কি আপনি অনেক সুন্দর করে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আপনার জন্য ভালোবাসা অবিরাম।
আপনার পুরনো স্মৃতি মনে করে দিয়ে আপনাকে ব্যতীত করলাম না আনন্দিত করলাম বুঝতে পারছি না। তবে আপনার মন্তব্যে আমি মুগ্ধ অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার অসাধারণ ও গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।