শৈশবের স্মৃতি: পুকুরের মাছ আর কাঁটার দাগ
আসসালামুআলাইকুম/আদাব🤝 
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থান করছি ।
একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি পুকুর সেচা হচ্ছে। দূর থেকেই হৈচৈ শুনতে পেলাম, লাফাতে লাফাতে দৌড়ে গেলাম পুকুরপাড়ে। ছোট্ট মনে এমন আনন্দ এলো যে মনে হলো আজকের দিনটা আমার জন্য সবচেয়ে সুন্দর। হাতে থাকা স্কুল ব্যাগ এক কোণে ছুড়ে ফেললাম, জামা খুলে রেখে কাদার ভেতর মাছ ধরতে নেমে পড়লাম। পুকুরের কাদামাটি, লাফানো মাছ আর চারপাশের মানুষের উল্লাস সবকিছু মিলে আমি যেন অন্য এক জগতে চলে গেলাম।
আমার মা বারবার ডাকছিলেন, বারবার নিষেধ করছিলেন পুকুরে নামতে। তিনি বলছিলেন পানি নোংরা, কাঁটা থাকতে পারে, বিপদ হতে পারে। কিন্তু তখন তো আমি ছিলাম একদম বেখেয়ালি ছোট্ট মেয়ে। আমার মাথায় ছিল শুধু মাছ ধরার আনন্দ। আমি ভাবলাম মাছ ধরা শিখব, মজা করব, সবার মতো আমিও মাছ নিয়ে গর্ব করে বাড়ি ফিরব।
কিছুক্ষণ পর কাদার ভেতর নড়াচড়া করে একটা বড় সিং মাছ চোখে পড়ল। আমি লাফিয়ে পড়লাম ওটাকে ধরতে। তখনও জানতাম না সিং মাছের ধারালো কাঁটা কতটা ভয়ংকর হতে পারে। হঠাৎ সেই মাছটার কাঁটা আমার হাতে গেঁথে গেল। আমি প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলাম, তারপর তীব্র ব্যথায় হাত তুলে দেখি রক্ত ঝরছে। ব্যথাটা ছিল অসহ্য, মনে হচ্ছিল হাতটাই যেন পুড়ে যাচ্ছে। আমি ভয়ে আর যন্ত্রণায় কেঁদে ফেললাম।
আমার চিৎকার শুনে আব্বু দৌড়ে এলেন। তিনি আমাকে কাদার ভেতর থেকে তুলে নিয়ে গেলেন ঘরে। আমি কাঁদছি আর রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আম্মু এসে আমাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, কিন্তু সাথেসাথেই রাগও করলেন। তিনি বারবার বলছিলেন আমি কেন তাঁর কথা শুনলাম না। তাঁর চোখে দুশ্চিন্তা আর রাগ মিশে গিয়েছিল।
পরে ডাক্তারকে ডাকা হলো। তিনি এসে আমার হাত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। ব্যথা তখনও কমেনি, কিন্তু ধীরে ধীরে শান্ত হলো। ডাক্তার বললেন, সাবধান না হলে বড় ক্ষতি হতে পারত। সেই কথা শুনে তখনই বুঝতে পারলাম আমার অবাধ্যতা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
সেদিন রাতে ঘুমাতে গিয়ে হাতের ব্যথার সাথে সাথে মনে হচ্ছিল আম্মুর কথাগুলো কানে বাজছে। মা-বাবা কখনো বিনা কারণে বারণ করেন না। তাঁদের অভিজ্ঞতা আমাদের অজ্ঞতা থেকে অনেক বড়। ছোটবেলায় আমরা শুধু আনন্দ দেখি, কিন্তু তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা বিপদটা দেখতে পাই না।
আজও যখন সেই দিনের কথা মনে পড়ে, আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই পুকুর, কাদার মধ্যে লাফিয়ে বেড়ানো মাছ আর আমার রক্তমাখা হাত। শৈশবের সেই আনন্দময় মুহূর্তের সাথে মিশে আছে কষ্ট আর শিক্ষা। এখন বুঝতে পারি, মা-বাবার নিষেধ মানে আমাদের স্বাধীনতায় বাধা নয়, বরং আমাদের নিরাপত্তা।
সেই দিনের ক্ষতচিহ্ন এখনও আমার হাতে আছে। এটা যেন আমার জীবনের এক স্থায়ী স্মৃতি। প্রতিবার তাকালে মনে পড়ে, ছোট্ট একটি ভুল কত বড় কষ্ট ডেকে আনতে পারে। তবে সেই কষ্ট আমাকে শিখিয়েছে সতর্কতার মূল্য।
শৈশবের স্মৃতিগুলো সবসময় আনন্দ আর দুঃখের মিশেলে গড়া হয়। আমার এই অভিজ্ঞতাও তেমনই। মাছ ধরার আনন্দ পেয়েছিলাম, আবার ব্যথার যন্ত্রণা পেয়েছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল শিক্ষা। আজও যখন নদী বা পুকুরের ধারে দাঁড়াই, সেই দিনের কথা মনে পড়ে যায়। মনে হয় জীবনের প্রতিটি আনন্দকে গ্রহণ করতে হবে সতর্কতার সাথে।
এতক্ষণ আমার পোষ্ট মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আজ এখানেই শেষ করছি, অন্য কোনদিন নতুন কিছু নিয়ে আপনাদের সামনে উন্মোচিত হব। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
ধন্যবাদ সকলকে✨💖 
ফোনের বিবরণ 
| ক্যামেরা | Redmi note 9 | 
|---|---|
| ক্যামেরা.মডেল | note9 | 
| কভার ফটো | পিক্সাবে। | 
| অবস্থান | সিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ। | 
আমার পরিচয় 
 আমি শেলি। আমি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুরে খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে সি এস ই তে অধ্যায়নরত আছি। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে ভালোবাসি। নতুন কিছু শিখতে এবং জানতে ভালোলাগে।ঘুরতে আর খেতে খুব ভালোবাসি।অবসর সময় পেলেই ছবি আঁকি। এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে। 🌼💖🌼 | 
|---|







🎉 Congratulations!
Your post has been upvoted by the SteemX Team! 🚀
SteemX is a modern, user-friendly and powerful platform built for the Steem community.
🔗 Visit us: www.steemx.org
✅ Support our work — Vote for our witness: bountyking5
https://x.com/JannatulF57996/status/1974914905993286034
https://x.com/JannatulF57996/status/1974915371468742946