প্রিয় বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। আমি @jannat0499
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জে অবস্থান করছি ।

মা-বাবা একজন সন্তানের কাছে শ্রেষ্ঠ উপহার। মা-বাবা নিজের সবটুকু দিয়ে তাদের সন্তানের ছোট থেকে শুরু করে বড় এমন কি যেকোনো সময়ে সন্তানকে সব টুকু দিয়ে আগলে রাখে। আর যদি হয় মেয়ে তাহলে তো কোন কথাই নেই। মেয়েরা হয় বাবার রাজকন্যা। আমার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য। আমাদের ভালো ভাবে থাকা, খাওয়ার জন্য এইবয়সে আর একটি চাকরি করছেন। আমরা কিছু না বলার আগেই বুঝে যান আমাদের কি দরকার। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারাদিন কাজ করেন। বর্তমানে তিনি একটা বেসরকারি সমস্ত হিসাব-নিকাশ একাউন্টিং এর দায়িত্ব পালন করছেন। একটা হসপিটালে সমস্ত দায়িত্ব পালন করা অনেক চাপের কাজ। তারপরও দিনশেষে যখন তিনি বাসায় আসেন আমাদের জন্য কিছু না কিছু আনবেন।আমার ছোট বোনের আত্মার সব সময় আব্বু পূরণ করেন। আম্মু কোন সময় বকাঝকা করলে আব্বু আমাদের পাশে দাঁড়ান। আম্মু কেউ বলে দেন যে আমার তিনটা মা। কখনো বের বকাঝকা করবে না। কিন্তু হঠাৎ করে কিছুদিন ধরে আব্বুর এক চোখে প্রতিনিয়ত পানি ঝরে। মাঝে মাঝে লাল হয়ে যায়।কিন্তু সে কিছুতেই চোখের চিন্তা করেনা। বারবার বলার পরও চোখ দেখাতে যায় না। অনেক বকাঝকা বুঝিয়ে রাজি করলাম চোখটা দেখিয়ে আসেন। কিন্তু সে একা কিছুতেই যাবে না। পরে আমরা সবাই মিলে তাকে জোর করে আমাদের এখানে একটা ভালো চক্ষু হাস্পাতাল এ নিয়ে গেলাম।

হাসপাতালে গিয়ে আমাদের শহরের সবথেকে ভালো চক্ষু স্পেশালিস্ট ডাক্তারকে দেখালাম। কিন্তু ডাক্তারের কথা শুনে আমাদের সবার ভয় ধরে গেল। কারণ ডাক্তার বললেন আমার আব্বুর চোখের নেত্র নালী বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমার্জেন্সি ভাবে অপারেশন না করলে চোখ নষ্ট হয়ে যাবে। কি করবো বুঝে উঠতে পারলাম না। আম্মু তো অনেক ভেঙে পড়লো। কিছু ঔষধ আমাদের লিখে দিলেন। এই ওষুধগুলো খেয়ে চোখ কিছুটা জন্য এভাবে অপারেশন করাও সম্ভব না। কারণ আব্বুর চোখে পানি আসার কারণে এবং আব্বু গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে এলোমেলো কাপড় দিয়ে চোখ মুছে,যার ফলে চোখে ইনফেকশন হয়ে যায়। আমরা ওষুধ পত্র নিয়ে বাসায় চলে যায়। সাতদিন ওষুধ খাওয়ার পরে চোখের ফোলাটা কিছুটা কমে। আব্বুর আবার প্রেসারের সমস্যা আছে,সাথে ঠান্ডার সমস্যা আছে। এত সমস্যা নিয়ে অপারেশন করাটা অনেক কঠিন। কিন্তু তাও আব্বুর নিজেকে নিয়ে একদম অবহেলা। সব সময় আমাদের নিয়ে ভাবেন। অপারেশনটাও করতে চাচ্ছিল না। এরপর প্রায় অনেকদিন আমরা অপারেশনের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়, কিন্তু যতবারই নিয়ে যায় আব্বুর প্রেসার অনেক হাই থাকে।প্রেসার বেশি থাকলে অপারেশনের সময় রক্ত বন্ধ হবে না। জীবনের ঝুঁকি হয়ে যেতে পারে। এভাবে অনেকদিন অপারেশনের জন্য তৈরি হয়ে গেলেও বারবার প্রেসার এর জন্য ফিরে আসি। এভাবে অনেকদিন গেলে আমরা অনেক চিন্তায় পড়ে যাই। এভাবে চলতে থাকলে আব্বুর চোখের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। অনেক চিন্তা ভাবনা করে আমি আম্মুকে পরামর্শ দেই প্রেসারের ভালো ডাক্তার দেখাতে। ডাক্তারের থেকে অনেক হাই পাওয়ারের প্রেসারের ওষুধ নেওয়া হয়। সাত দিন ওই ওষুধ খাওয়ানোর পর প্রেসারে একটুখানি কমে। কিন্তু তাও হুটহাট প্রেসার বেড়ে যায়। মা তাই মাঝে মাঝে আমরা এমনি চোখে হসপিটালে ডাক্তারকে দেখে আসি যদি কোনদিন প্রেসার ঠিক থাকে তাহলে ওই দিনই অপারেশন করবে।

যথারীতি একদিন আম্মু আব্বুকে নিয়ে হাসপাতালে গেল সেদিন কোনরকম প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি। কারন আমরা জানি বারবার গিয়েও প্রেসারের ফিরে আসতে হয়। কিন্তু হাসপাতালে যাওয়ার ১-২ ঘন্টা পর আম্মু হঠাৎ ফোন দিয়ে বলল আব্বুর অপারেশন করা হবে। জামা কাপড় সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আয়। এই কথা শুনে বুকের ভেতর হঠাৎ করে কেঁপে উঠলো। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে গিয়ে দেখি কেবিন ভাড়া করা হয়েছে। সেখানে আব্বু শুয়ে আছে। তাকে কিছু ওষুধ খেতে দেওয়া হয়েছে । ওষুধগুলো খাওয়া শেষ হলে অপারেশন করা হবে । তারপরে চলে আসলো সেই মুহূর্ত। বুকের মধ্যে অনেক ভয় নিয়ে আব্বু কে বিদায় জানালাম। অপারেশনের পুরো মুহূর্ত আমরা কেউ বসে থাকতে পারিনি। বারবার অপারেশন থিয়েটারের আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করেছি। কারণ মনের ভিতর একটা ভয় ছিল আব্বুর প্রেসার যেহেতু বার বার আপডাউন করে,অপারেশনের সময় হলে জীবনের ঝুঁকি থেকে যাবে। পুরো মুহূর্তটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না কিভাবে গেছে। কিছুক্ষণ পরআব্বুকে বের করে দেওয়া হলো। এই অপারেশনটা ছিল সবথেকে বড় অপারেশন চোখের। অপারেশনটা ঠিকঠাক ভাবে হয়েছে দেখতে পেরে আমাদের ভিতরে একটা অন্যরকম শান্তি চলে আসে।

তারপর আব্বুকে অনেকক্ষণ রেস্টে রেখে দেই আমরা। অনেকক্ষন পরে আব্বু কথা বলতে পারে আমাদের সাথে কথা বলে। আব্বুর কষ্ট দেখে আমাদের কারোরই ভালো লাগছিল না। পরে আব্বু বলল পুরো অপারেশনটাই সে বুঝতে পেরেছে। তার নাকি চোখের সাইট থেকে নাকের হাড্ডি কেটে নেত্রনালী করা হয়েছে। তারপর এ খাবার খাওয়ালো এবং ঔষধ খাইয়ে ঘুমাতে বলল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর থেকেই শুরু হলো আব্বুর অসম্ভব যন্ত্রণা, ব্যথা। যেহেতু নাকের হাড্ডি কেটেছে তাই একটু ব্যথা থাকবেই এরকমই ডাক্তার বলে দিল। কিন্তু আব্বু সারারাত অসম্ভব ব্যাথা নিয়ে ছটফট করেছে। এসব দেখে আমরা কেউ আর নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। আমার ছোট বোন কান্না করে দিল।আম্মু দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার কে বলল ব্যাথার কথা।পরে ডাক্তার এসে একটা ব্যথার ইনজেকশন দিয়ে গেল। আর কিছুক্ষণ পরেই ব্যাথা কমে গেল। আমরা কেউই সারারাত ঘুমাতে পারিনি। বারবার মনে হতে থাকলো আমাদের জন্য কত কষ্ট সহ্য করেন। আর আমি তার মেয়ে আজ তার কষ্টের কিছু করতে পারছি না। পরদিন সকালে আব্বুকে দেখে বাড়ি নিয়ে যেতে বললেন।অনেক যত্নে রাখতে বললেন। আমি অনেক যত্নে রাখার চেষ্টা করব আমার আব্বুকে যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। এরপর আমরা প্রয়োজনীয় সব ঔষধ পত্র নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম। আসলে বাবা, মা যেমন জীবনের সবটুকু দিয়ে দেন, সন্তানদেরও উচিত মা-বাবার জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে পাশে থাকা । মা বাবা আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

ধন্যবাদ সকলকে✨💖

ফোনের বিবরণ
ক্যামেরা | রেডমি নোট ৯ |
ক্যাপচার | @jannat0499 |
অবস্থান | সিরাজগঞ্জ -রাজশাহী- বাংলাদেশ। |


আমার পরিচয়
আমি মোছা: জান্নাতুল ফেরদৌস। বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার সদরে বসবাস করি। আমি একজন সৃজনশীল মানুষ ।ছবি আঁকতে, নতুন কিছু বানাতে আর সময় পেলে ঘোরাফেরা করতে আমি খুবই ভালোবাসি।সুযোগ পেলেই পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হই।ভ্রমণ করার পাশাপাশি আমি বাগান করতে খুব ভালোবাসি।অবসর সময়ে আমি রঙ তুলি নিয়ে বসে যাই নতুন উদ্ভাবনায়।বই পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে বিশেষ করে উপন্যাস।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাইআমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে।🌼💖🌼
👉সবার প্রতি শুভেচ্ছা এবং পোস্টটি সমর্থনকারী সকল বন্ধুদের বিশেষ ধন্যবাদ।
প্রিয় মানুষ অসুস্থ হলে নিজের খুবই কষ্ট হয়। যেন তার কষ্টেও নিজের হৃদয়ে যায় আঘাত লাগে। দোয়া করি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে যান এবং স্বাভাবিক অবস্থায় আগের মত হাসিখুশি ভাবে চলতে পারেন। আপনার এবং পরিবারের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ আপু।
আপনার আব্বুর চোখের নেত্র নালী বন্ধ হয়ে গিয়েছে শুনে সত্যিই অনেক খারাপ লাগছে। বাবা কিংবা মা অসুস্থ হলে সত্যি অনেক খারাপ লাগে। আঙ্কেলের সুস্থতা কামনা করছি। আমার বাবাও একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য।
ধন্যবাদ আপু।
প্রিয় মানুষগুলো অসুস্থ হলে খুবই কষ্ট হয়। আপু আপনার বাবা তো দেখি খুবই খারাপ অবস্থা। চোখ থেকে পানি পড়েছিল এবং সেই অবহেলা থেকেই এতটা গড়িয়েছে। দ্রুত আপনার বাবার সুস্থতা কামনা করছি আপু ।ধন্যবাদ আপু পোস্টটি আমাদের মাঝে ভাগ করে নেওয়ার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু।