🎇শুভ দীপাবলি🪔।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
"আমার বাংলা ব্লগে"র সবাইকে জানাই শুভ দীপাবলীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা। দীপাবলি মানেই আলোর উৎসব। ছোটোবেলা থেকে কালীপুজো অর্থাৎ দীপাবলীর সময়টা আমার খুবই পছন্দের একটি সময়। কারণ এই কালী পুজোতে পুরো পৃথিবীটা যেন আলোয় সেজে ওঠে। কোন আনাচে-কানাচে কোন কোণাতেও অন্ধকার লুকিয়ে থাকতে পারে না। চারিদিকে রংবেরঙের অনেক আলো জ্বলতে দেখা যায়। অন্য কোন উৎসবে সবার বাড়িতে আলো জ্বলুক বা না জ্বলুক এই দীপাবলীর সময়ে প্রত্যেকটা বাড়ি সুন্দর আলোয় আলোকিত হয়ে থাকে। আর তার সাথে প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় থাকে প্রদীপ আর মোমবাতির আলোয় সাজানো প্রত্যেকটা ঘর এবং বাড়ি। দীপাবলি মানেই আলোর উৎসব আর তার সাথে রয়েছে অনেক বাজি ফানুস আরো অনেক রকমারি আনন্দের জিনিস। ছোটবেলা থেকেই কালী মায়ের প্রতি একটা আলাদাই ভালোবাসা রয়েছে। কালী পূজার সময় প্রত্যেকটা মানুষের ঘরে এবং মনে আলাদা একটা শান্তি বিরাজ করতে দেখা যায়। ভীষণ পছন্দের এই কালীপুজোর সময়টা আমি ভীষণ সুন্দর করে নিজের মতো কাটাই। কালী পূজা মূলত শুরু হয়ে যায় ধনতেরাস একদিন থেকে। যেদিন সবাই সোনা গয়না ঝাঁটা সহ বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা করে ঘরে তোলে। অর্থাৎ মা লক্ষ্মীর বিভিন্ন জিনিস কিনে ঘরে আনে।
পরের দিন কালী পূজার শুরু, একদম ঘর অমাবস্যায় কালী মায়ের পুজো শুরু হয়ে যায়। কালী মায়ের পূজোয় এতটাই লাইন পড়ে এছাড়াও আমাবস্যা যেহেতু অনেক শুভ এবং ভালো একটি সময় তাই সারারাত সারাদিন মায়ের পূজো হতেই থাকে। মানুষের যেন মায়ের পূজায় কোন ক্লান্তি থাকে না সারা রাত জেগে ধৈর্য ধরে দীর্ঘ লাইন দিয়ে এছাড়াও পূজো মণ্ডপ তি করে সবাই বসে বা দাঁড়িয়ে কাটিয়ে দেয়। আমাবস্যার পরের দিন থেকে শুরু হয়ে যায় কালী মায়ের সুন্দর মুখমণ্ডল এবং প্যান্ডেল দেখার জন্য ঘোরাঘুরি। কালী মায়ের এই পুজোর দিনগুলি যেন খুবই কম সময়ের মধ্যেই কেটে যায় বোঝাই যায়না পুজো কখন শুরু হলো আর কখন শেষ হয়ে গেল। সারাটা দিন বিভিন্ন শব্দবাজি শুনতে শুনতে কেটে যায় আর তার সাথে সুন্দর মা কালীর গান তো চলতেই থাকে মাইকে। বিকাল নেমে একটু অন্ধকার হয়ে সন্ধ্যা হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন শব্দবাজির সাথে সাথে বিভিন্ন আলোর বাজি ফাটানো। ছোটবেলায় অবশ্য আমি প্রচুর পরিমাণে বাজি ফাটাতাম আর তার মধ্যে ছিল প্রচুর পরিমাণে শব্দবাজি সহ আলোর বাজি যা দেখতে খুবই সুন্দর লাগতো। আমি আর আমার দিদি সন্ধ্যা থেকে এই বাজি ফাটাতে পাঠাতে কখন যে অনেক রাত হয়ে যেত সেটা যেন বুঝতেই পারতাম না, তবু আমাদের বাজি ফাটানো যেন শেষ হতে চাইত না।
রাত জেগে বাজে ফাটানোর পর পরদিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে যেত গলা ব্যথা আর খুসখুসানি কাশি। যদিও সেগুলোর পরোয়া না করে আবার সন্ধ্যা হতে না হতেই বাজি ফাটানো শুরু হয়ে যেত। এমন আনন্দের দিন কি আর পরে পাওয়া যাবে কালীপূজা কেটে গেলে বাজি ফাটানোর মজাটাও থাকে না তাই কোনরকম আনন্দকে কম্প্রোমাইজ না করে বাজি ফাটানো কন্টিনিউ চলতেই থাকতো। আর তার সাথে চলতে অনেক বেশি ঘোরাঘুরি। কোন কোন জায়গায় প্যান্ডেলে দেখা যেত বাইরে থেকে যেমন সুন্দর প্যান্ডেল করা হয়েছে তেমনি ভেতরে বিশাল বড় কালী মায়ের প্রতিমা করা হয়েছে। অনেক জায়গা জোড়া কালী মায়ের পূজো হতো আবার অনেক জায়গা একটাই কালী মায়ের প্রতিমার পুজো করা হতো। দূর্গা পূজার মতো কালী মায়ের পূজোর প্যান্ডেল ঘোরাতেও ছিল অসম্ভব সুন্দর একটা আনন্দ। পরপর এত পুজো এত উৎসব আনন্দ করতে করতে দিনটা কিভাবে যে কেটে যায় বোঝাই যায় না। চারিদিকে এত মাইকে কালি মায়ের গান চলতে থাকে যে সারাদিন নরমাল ভয়েসে কথা বলা খুবই মুশকিল জনক ব্যাপার। অনেক জোরে জোরে কথা বলতে হয় কাউকে নিজের কথা শোনাতে গেলে। আমাদের একদম বাড়ির সামনেই একটা মস্ত বড় প্যান্ডেল হয় যেখানে কালী মায়ের পূজো করা হয়।
আমরা বাড়ি থেকেই সেই প্যান্ডেলটা দুর্গাপুজোর সময় থেকেই একটু একটু করে তৈরি হতে দেখতে থাকি। আর সে প্যান্ডেলের আলো আমাদের বাড়িতে সম্পূর্ণ আলোকিত করে দেয় যা দেখতে আরো অসম্ভব সুন্দর লাগে। প্রত্যেকটা উৎসবের আলাদাই একটা অনুভূতি রয়েছে যা কোনোভাবেই বলে বোঝানো সম্ভব নয়। কালী মায়ের এই আলোকিত উৎসব যেন প্রত্যেক বাঙালি মনে এক অন্যরকম আবেগ-অনুভূতি এবং আনন্দ জাগিয়ে তোলার কাজ করে। কালী মায়ের এই আলোর উৎসব প্রত্যেকটা ঘরের অন্ধকার কে মুছে ফেলে আর প্রত্যেক মানুষের মনে সুন্দর মনোভাব আর ভালোবাসা ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। দীপাবলির এই শুভ সময়ে মা কালীর সবার জীবনে যেন অনেক সুখ এনে দেয়। প্রত্যেকটা বাড়িতে যেমন আলো জ্বলতে থাকে তেমনি প্রত্যেকটা বাড়ির সকলে মিলেমিশে সুন্দর সময় কাটাতে থাকে আর তার সাথে মিলেমিশে বিভিন্ন ভাবে পুজো করতে থাকে যাদের যেমন নিয়ম থাকে। তবে এই আলোর উৎসব অর্থাৎ মা কালীর পুজোর এই সময় প্রধান আনন্দ যেটা থাকে সেটা হলো ঘর সুন্দর করে সাজানো, আলোকিত করা এবং আমাদের চারপাশটাও সুন্দরভাবে সাজিয়ে আলোকিত করে তোলা।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

