দাদিকে উৎসর্গ -করে স্বরচিত কবিতা "দাদি"|||~~~

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago


আসসালামু আলাইকুম/আদাব

received_722688189353863.jpeg


আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল বন্ধুকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও বেশ ভাল আছি। আর আপনারা সবাই সবসময় ভালো থাকবেন, এটাই প্রত্যাশা করি।

received_1430186700849919.jpeg


বন্ধুরা আমার আজকের আয়োজনে থাকছে আর একটি স্বরচিত নতুন কবিতা।আমি আজ গোসল করতে গিয়ে হঠাৎ করে, আমার দাদির কথা খুব বেশি মনে পড়ে গেল।দাদিকে আমি ভীষণ ভালবাসতাম। দাদিও আমাদের সবাইকে খুব বেশী ভালবাসত। আদর করত। আমার দাদি ছিল তার বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা সন্তান।খুব আদুরে কন্যা।আর সে সময় কন্যা সন্তানদের খুব ছোটবেলায় বিয়ে হত। আমার দাদী আরবি পড়তে যে মাদ্রাসায় যেত,সেই মাদ্রাসার হুজুর একদিন দাদিকে মেরেছিল পড়া পারেনি বলে।আর ঠিক তখন থেকেই আমার দাদির বাবা ওই মাদ্রাসায় আর দাদিকে কোনদিন পাঠাননি।আর ঠিক তখন থেকেই আমার দাদির বাবা ওই মাদ্রাসায় আর দাদিকে কোনদিন পাঠাননি।এবং অনেকগুলো টাকা পণ দিয়ে, এরপর বিয়ে করে নিয়ে যায়।কিন্তু দাদি তখন বিয়ে সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। তাই নিজের বাবার বাড়িতে, আসার জন্য কান্না করত। এর বাড়ি ওর বাড়ি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতো।তবে দাদা নাকি দাদিকে খুব বেশি আদর করত।দাদীর জন্য অনেক বড় বড় মাছ কিনে আনত।নরম কোমল শাড়ি কিনে আনত।অনেক গহনাগাঁটি বানিয়ে দিত।এসবকিছুই দাদির মুখে শোনা গল্প কারন আমি আমার দাদাকে দেখি নাই।আমার জন্মের অনেক আগেই দাদু পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন চিরতরে।তাই দাদুকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি।তবে স্বপ্নে দাদুকে দেখেছি অনেকবার।স্বপ্নে দেখে দেখে দাদিকে বলতাম আমার দাদু কি এমন এমন ছিল। দাদি বলতে হ্যা। অত্র এলাকায় আমার দাদুরা ছিল অনেক বেশি প্রভাবশালী। এবং আমার দাদির বাবাও ছিলেন অনেক বেশি প্রভাবশালী।আমার দাদীর জমিতে এখন বিশাল বড় দুই তলা মসজিদ।এবং এই মসজিদ পরিচালনা করার জন্য আমার দাদী অনেকগুলো জমি দান করে গেছেন মসজিদের জন্য।যা সত্যিই আমাদের জন্য অনেক বেশি গর্বের।আমার দাদি খুব সুন্দর গোল গোল রুটি বানাত। এবং প্রতিটি রুটি প্রায় একি রকম গোল হত। দেখতে অনেক সুন্দর লাগতো। সেই সাথে ছোট ছোট আলু দিয়ে চিকন চিকন ভাজি করত। যার স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে।আমরা প্রায় সব ভাই-বোনে দাদির সাথে ঘুমানোর জন্য অস্থির হয়ে থাকতাম। কারন দাদি খুব সুন্দর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিত। এবং গরমের সময় খুব সুন্দর করে পাখা বাতাস করতো সারারাত ধরে। দাদির সাথে ঘুমানোর মজাই ছিল আলাদা রকম।এবং আমার দাদী আরবি শেখার জন্য অনেক বেশি উদগ্রীব হয়ে পড়ছিলেন।এবং আমাদেরকেও নামাজ-রোজা করার জন্য অনেক বেশি উৎসাহ দিতেন।প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের দোয়া শেখার জন্য দাদির ব্যাকুলতা ছিল প্রচণ্ড রকমের।কারণ ছোট বেলায় তিনি পড়াশোনা করা অবস্থায় যখন বিয়ে হয়েছিল তারপর আহার আরবি শেখা হয়নি।আর তাই মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের দোয়া শেখার জন্য উনি অবিচল চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।আমরা সবাই তার দিকে বিভিন্ন ধরনের দোয়া শেখাতে সহযোগিতা করতাম।আমার বাবা ও মা ছাড়া কিছু বুঝতেন না। মাকে প্রচন্ড রকমের সম্মান করতেন। ভালোবাসতেন এবং মায়ের যত্ন নিতেন।মহান আল্লাহ তাআলার কাছে আকুল আবেদন তিনি যেন আমার বাবা সহ আমার দাদিকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আমিন।

আর তাই দাদিকে উৎসর্গ করে আজকে আমার ছোট্ট এই নিবেদন।

স্বরচিত কবিতা দাদি


সেলিনা সাথী

IMG_20220615_142806.jpg


ছোট বেলায় দাদির সাথে
ছিলাম সারাক্ষণ,,
দুষ্টুমি আর খুনসুটিতে
ভরে যেত মন।

নানা রকম গল্প বলে
ঘুম পাড়াতো দাদি,,
দাদির কথা মনে হলে
একলা বসে কাঁদি।

উকুন দেখার ছলে দাদি
হাত বোলাতো মাথায়,,
শীতল হত দেহ ও মন
দাদির হাতের পাখায়।

দাদির হাতের রুটি ভাজি
খেতে দারুন মজা,
দাদির আমায় আদর করে
শেখায় নামায রোজা।

পড়াশোনা করার প্রতি
আগ্রহ ছিল বেশ,
এমনি করেই দাদি আমার
গেলেন অবশেষ।

পণ দিয়ে বিয়ে করেছে
আমার দাদু ভাই,,
এতো আদর ভালোবাসার
নাই তুলনা নাই।

হে দয়াময়! দাদির যেন
বেহেশত নসিব হয়,
দাদির জন্য জায়নামাজে
এই দোয়াটাই রয়।

♦♦♦♦♦♦♦♦
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সময় ১১:০২ মিনিট
কবিতা কুটির, নীলফামারী♥

received_5693614170748889.jpeg



dropshadow_1629707620635.jpg

আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ"
এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।




New_Benner_ABB.png


🌼ধন্যবাদ🌼

Sort:  
 3 years ago 

দাদিকে উৎসর্গ করে অনেক সুন্দর একটি কবিতা উপস্থাপন করেছেন আপু। আপনার প্রতিটি কবিতা আমার কাছে অসম্ভব ভালো লাগে। আপনার প্রতিটি কবিতা পড়লে মন ভরে যায়। প্রতিটি মানুষের জীবনেই দাদা দাদির অবদান অনেক। তবে আমার দুর্ভাগ্য যে আমি আমার দাদিকে দেখতে পারিনি। আজ আপনার কবিতা পড়ে আমার দাদির কথা মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে

 3 years ago 

আমিও ছোটবেলা থেকেই আমার দাদাকে দেখিনি। তবে নানা-নানি এবং দাদিকে দেখেছি, তারা কতটা প্রিয় হয়।♥♥

 3 years ago 

আপনারা কবিতাটি পড়ে এবং পুরা গল্পটি পড়ে আমার দাদির কথা খুব মনে পড়ে গেল। আমার দাদি আমাকে ভীষণ ভালবাসতেন এবং সবগুলা ভাই বোনের থেকে আমাকে বেশি টেক কেয়ার করতেন। আমার দাদি যেন বেহেস্তবাসি হোন এই দোয়াই করি। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

তবে এটা ঠিক আমরা পাঁচ ভাই-বোন। দাদির সাথে সবচেয়ে বেশি আমি ছিলাম।এবং আমাকে দাদি অনেক বেশি ভালোবাসতেন আর দাদির ছোট ছোট কাজগুলো আমি করে দিতাম।♥♥

 3 years ago 

আসলে দাদা দাদির আদর পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ অনেকের ভাগ্যে তাদের জুড়ে না। দাদিকে উৎসর্গ করে অনেক সুন্দর কবিতা লিখেছেন আপনি। কবিতাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আবেগ আপ্লুত হয়ে গেলাম। এত সুন্দর কবিতা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

 3 years ago 

সত্যি কথা প্রায় প্রায় দাদিকে অনেক বেশি মিস করে ফেলি। দাদির হাজারো স্মৃতি বুকের মাঝে কেমন যেন কম্পনের সৃষ্টি করে। আর তাই তাকে উৎসর্গ করে আজকের এই কবিতা।♥♥

 3 years ago 

আপনার দাদা ও দাদীর কথা জানতে পেরে অনেক ভালো লাগলো।আপু আপনি তাও দাদির আদর পেয়েছেন আর আমি আমার দাদা দাদীকে দেখেইনি।
তাইতো কবিতার নামটি পড়ে অনেক আগ্রহ নিয়ে আপনার কবিতাটি পড়লাম বারবার। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি কবিতা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।

 3 years ago 

এটা আসলেই অনেক কষ্টের, কারণ দাদা-দাদি এরা নাতি-নাতনিদের যে আদর যে ভালোবাসা দেয়, তা আর অন্য কারো ভালোবাসা পাওয়া যায় না।।সে দিক থেকে আমি নানা- নানি দাদির অনেক আদর অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। শুধু দাদাকে চোখে দেখিনি।
♥♥

 3 years ago 

অসাধারণ একটি কবিতা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন আপু। কবিতার প্রত্যেকটি লাইন বাস্তবের সাথে মিলে গেছে। আপনার কবিতা গুলো আমার কাছে সব সময় ভালো লাগে। আর আজকের কবিতাটা যেহেতু দাদিকে নিয়ে লিখা হয়েছে তাই আমার কাছে আরো বেশি ভালো লেগেছে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি কবিতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

দাদিকে নিয়ে লেখা এই কবিতাটি আপনার বেশি ভাল লেগেছে জেনে বেশ খুশি লাগলো আসলে দাদা-দাদি এরা এতটাই প্রিয় যে,তাদের নাম শুনলেই আলাদা রকম একটা ভালো লাগা কাজ করে।♥♥

Coin Marketplace

STEEM 0.12
TRX 0.34
JST 0.033
BTC 113373.13
ETH 4153.40
SBD 0.86