অন্যের ভালো আমরা দেখতে পারি না কেন?
আজ- ২১ ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শরৎকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
মানুষ একটি সামাজিক প্রাণী। আমরা একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশেই জীবন কাটাই। সমাজে আমাদের সবার ভূমিকা আলাদা, কারও কাজ বড়, কারও কাজ ছোট। কেউ শিক্ষক, কেউ শ্রমিক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ শিল্পী। প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে সমাজে অবদান রাখছে। তবুও দেখা যায়, আমরা অনেক সময় অন্যের ভালোকে স্বীকার করতে চাই না। অন্যের সাফল্য বা ভালো গুণ চোখে পড়লেও প্রশংসা করতে কষ্ট হয়। বরং আমরা খুঁজি তার ত্রুটি, তার ব্যর্থতা। প্রশ্ন হলো—আমরা কেন এমনটা করি? কেন অন্যের ভালো দেখতে এত কষ্ট হয় আমাদের?
প্রথম কারণ হলো ঈর্ষা। মানুষ স্বভাবতই প্রতিযোগিতাপ্রবণ। যখন দেখি অন্য কেউ ভালো করছে, সাফল্য পাচ্ছে, তখন মনে হয় আমি পিছিয়ে পড়লাম। তার সাফল্যকে মেনে নেওয়ার পরিবর্তে আমরা অজান্তেই বিরক্তি অনুভব করি। যেমন, একজন বন্ধু যদি ভালো চাকরি পায়, আমরা অনেক সময় তাকে অভিনন্দন না জানিয়ে ভাবি—সে পেলে আমি কেন পারলাম না? এই ঈর্ষা আমাদের চোখে তার ভালো দিকগুলোকে আড়াল করে দেয়। ফলে তার অর্জনকে স্বীকার করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
দ্বিতীয় কারণ হলো অহংকার। আমরা চাই সবসময় নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে। অন্য কেউ ভালো কিছু করলে সেটা স্বীকার করলে মনে হয় আমি ছোট হয়ে যাচ্ছি। তাই আমরা প্রশংসা করতে সংকোচ বোধ করি, কিংবা তার অর্জনকে হালকাভাবে দেখি। যেমন, কেউ যদি সুন্দর গান গাইতে পারে, আমরা বলি—“হ্যাঁ, গায় ভালো, কিন্তু ওর কণ্ঠে সেই শক্তি নেই।” এভাবে আমরা তার ভালো দিককে কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করি। অথচ এতে আমাদের মর্যাদা বাড়ে না, বরং আমরা নিজেরাই ছোট হয়ে যাই।
তৃতীয় কারণ হলো অভ্যাস। ছোটবেলা থেকেই আমরা অনেক সময় শিখি না কিভাবে প্রশংসা করতে হয়। বরং সমালোচনা করা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। যদি কোনো বন্ধু নতুন কিছু করে, তার প্রশংসা করার বদলে আমরা হাসি বা ঠাট্টা করি। ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত হয়। ফলে বড় হয়েও আমরা অন্যের ভালোকে সহজে স্বীকার করতে পারি না।
চতুর্থ কারণ হলো অজ্ঞতা। প্রকৃত জ্ঞানী মানুষ জানে অন্যের ভালো স্বীকার করা মানে নিজেকে ছোট করা নয়। বরং প্রশংসা করলে সম্পর্ক সুন্দর হয়, মানুষ অনুপ্রাণিত হয়। কিন্তু অজ্ঞ মানুষ ভাবে প্রশংসা করলে নিজের মূল্য কমে যাবে। তাই তারা প্রশংসা না করে চুপ থেকে যায়, কিংবা উল্টো সমালোচনা করে। এর ফলে তারা শুধু অন্যকে কষ্ট দেয় না, নিজের ভেতরেও নেতিবাচকতা জমায়।
অন্যের ভালো না দেখতে পারার কারণে অনেক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। পরিবারে যদি একজনের ভালো কাজকে প্রশংসা করা না হয়, বরং তার ভুলগুলোকে বড় করে দেখা হয়, তবে সেখানে দূরত্ব তৈরি হয়। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর সাফল্য স্বীকার না করলে দলগত কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্ধুত্বের জায়গায়ও একই কথা প্রযোজ্য। সবসময় যদি কেবল সমালোচনা করা হয়, তবে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
অন্যদিকে যদি আমরা প্রশংসা করতে শিখি, তবে এর প্রভাব হয় ইতিবাচক। একজন ছাত্র যদি খারাপ রেজাল্ট করেও চেষ্টা করে, তাকে যদি বলা হয়—“তুমি চেষ্টা করেছো, পরের বার আরও ভালো হবে”—তাহলে সে উৎসাহ পাবে। কর্মক্ষেত্রে একজন সহকর্মী যদি নতুন কোনো কাজ করে, তাকে যদি প্রশংসা করা হয়, তবে সে আরও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে। এভাবে প্রশংসা মানুষকে উন্নতির পথে এগিয়ে দেয়।
তাহলে সমাধান কী? আমাদের সবার উচিত নিজেদের ভেতরে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা। প্রতিদিন অন্তত একজনের ভালো কাজ খুঁজে বের করে প্রশংসা করার চেষ্টা করা যেতে পারে। এতে ধীরে ধীরে ঈর্ষা, অহংকার, অভ্যাস আর অজ্ঞতা কমে যাবে। আমরা বুঝতে পারব, অন্যের ভালো দেখে খুশি হতে পারা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি শক্তি।
সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।


250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

VOTE @bangla.witness as witness

OR