আমরা মানুষকে সম্মান করতে এত কষ্ট পাই কেন?
আজ- ২৪ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শরৎকাল
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
আমরা মানুষ কেন মানুষকে সম্মান করতে শিখি না তা ভেবে দেখা দরকার, সম্মান আসলে মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা, যেমন খাবার বস্ত্র আশ্রয় প্রয়োজন তেমনি সম্মানও প্রয়োজন, কিন্তু আমরা প্রায়শই এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিই না।
ছোটবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয় বড়দের সম্মান করতে, কিন্তু ছোট কিংবা সমবয়সীদের সম্মান করতে শেখানো হয় না, ফলে বড় হয়ে আমরা বেছে বেছে সম্মান করি। সমাজে দেখা যায় যাদের টাকা আছে তাদের সম্মান দেওয়া হয়, যাদের টাকা নেই তারা অবহেলিত হয়, এটাই হলো ভুল মানসিকতার প্রতিফলন।
আবার অনেকে মনে করে আমি বেশি জানি তাই আমিই শ্রেষ্ঠ, এই অহংকার আমাদের চোখে পর্দা ফেলে দেয় যার ফলে অন্যকে ছোট করে দেখা শুরু করি। অন্যদিকে হিংসা আমাদের আরেকটি বড় সমস্যা, কেউ সফল হলে আমরা খুশি হতে পারি না বরং তার সাফল্যে হিংসা জন্মে এবং তাকে সম্মান না দিয়ে হেয় করার চেষ্টা করি।
অথচ অন্যের অর্জনকে স্বীকার করা মানেই নিজের মহত্বকে প্রমাণ করা, আমরা যদি অন্যের সাফল্যে আন্তরিকভাবে খুশি হতে শিখি তাহলে আমাদের হৃদয় আরও বড় হবে। সম্মান দেওয়া মানে কাউকে ছোট না করা বরং তার ভিন্নতাকে মূল্য দেওয়া, প্রতিটি মানুষ আলাদা, প্রতিটি মানুষের চিন্তা আলাদা, জীবনধারা আলাদা, এই ভিন্নতাকেই সম্মান করতে হবে।
কিন্তু আমরা যদি সবসময় ভাবি আমার কথাই ঠিক তবে অন্যের মতামতকে কখনও সম্মান দেওয়া সম্ভব নয়। আসলে সম্মান দিতে হলে আগে মনকে খোলা রাখতে হবে, অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আবার আমরা অনেক সময় স্বার্থের জন্য সম্মান দেখাই, স্বার্থ শেষ হলে সেই সম্মানও শেষ হয়ে যায়, কিন্তু প্রকৃত সম্মান কখনো স্বার্থের ওপর নির্ভর করে না।
প্রকৃত সম্মান নিঃস্বার্থ, অন্যকে সম্মান দেওয়া মানে তার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া। প্রতিদিন যদি আমরা ছোট ছোট কাজে সম্মান দেখাই তবে সমাজে বড় পরিবর্তন আসবে। যেমন কারও সঙ্গে কথা বলার সময় ভদ্রভাবে কথা বলা, কারও মতামত মনোযোগ দিয়ে শোনা, কারও সাফল্যে আন্তরিক অভিনন্দন জানানো, কারও ভুল হলে তাকে অপমান না করে সুন্দরভাবে বোঝানো—এসব ছোট ছোট বিষয় সম্মানের বড় উদাহরণ।
সম্মান ভালোবাসারই আরেক রূপ, যেখানে বিচার নেই অবজ্ঞা নেই বরং আছে মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্য দেওয়া। সম্মান দিলে সম্পর্ক মজবুত হয়, ভালোবাসা বাড়ে, সমাজে শান্তি আসে। কিন্তু সম্মান হারালে আসে অশান্তি, অবিশ্বাস, হিংসা, সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরিবারে ঝগড়ার মূল কারণও সম্মানের অভাব, কর্মক্ষেত্রে অসন্তোষের কারণও সম্মানের অভাব, এমনকি বন্ধুত্ব ভাঙার কারণও সম্মানের অভাব।
যদি সবাই সবাইকে সম্মান দিত তাহলে হয়তো এত দ্বন্দ্ব থাকত না। সম্মান দিলে আমরা কিছু হারাই না বরং আমরা নিজের মর্যাদা আরও বাড়াই। মানুষকে সম্মান করা মানে তার প্রতি দায়িত্ব পালন করা, কারণ মানুষ মানুষকে সম্মান না দিলে মানুষ আর মানুষ থাকে না, তখন কেবল স্বার্থপর জীব হয়ে যায়।
তাই প্রয়োজন সচেতনতা। পরিবার থেকে শিক্ষা দেওয়া দরকার, শিশুকে শেখানো দরকার ছোট হোক বড় হোক সবাই সম্মানের যোগ্য। শিক্ষাঙ্গনে শেখানো দরকার সহপাঠীকে সম্মান করো, শিক্ষককে সম্মান করো, কর্মচারীকেও সম্মান করো। অফিসে শেখানো দরকার অধীনস্থ কর্মীকে সম্মান করো, কারণ সম্মান দিলে কাজ আরও সুন্দর হয়।
একটি সমাজ তখনই উন্নত হয় যখন সেখানে সম্মান থাকে, যেখানে সম্মান নেই সেখানে উন্নতি হয় না। তাই যদি আমরা চাই অন্যরা আমাদের সম্মান করুক তবে আগে আমাদেরই শিখতে হবে মানুষকে সম্মান করতে, সম্মান দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং প্রতিদিন ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে সম্মানের বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে, এটাই হলো সত্যিকার মানবতার শিক্ষা।
সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।


| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness

OR



This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
আমাদের মন-মানসিকতাই হলো আমাদের কাজের বহিঃপ্রকাশ। ছোটবেলাতে বড়দের শ্রদ্ধা করতে হবে শেখানো হয় বড়দের সম্মান করতে হবে কিন্তু ছোট কিংবা সমবয়সীদের সম্মান করতে হবে বা ভালোবাসা দিতে হবে এটা তেমন একটা গুরুত্ব বয়ে আনে না যার ফলে আগামী বয়সে আমাদের জীবনে এটার ব্যাপক প্রভাব পড়ে। তবে খুবই সুন্দর কিছু কথা লিখেছেন আপনার পোস্টে ভালো লাগলো পড়ে।