ছেলেবেলার ঈদ, হারানো দিনের রঙিন স্মৃতি।
আজ- ১৬ ই চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বসন্তকাল
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।

ঈদ মানেই ছিল ছেলেবেলার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত দিন। রমজানের শুরু থেকেই ঈদের আনন্দের প্রস্তুতি চলতে থাকত। নতুন পোশাক কেনা, সেলামির আশায় বড়দের সামনে ভদ্র হয়ে থাকা, মা-বাবার সঙ্গে বাজারে যাওয়া – এসব মিলিয়ে ঈদের অপেক্ষার দিনগুলো ছিল আনন্দময়। তখন ঈদ মানেই ছিল নতুন জামার গন্ধ, আতরের সৌরভ, সুস্বাদু খাবারের স্বাদ আর সারাদিন হাসি-আনন্দে মেতে থাকার এক বিশেষ উপলক্ষ।
ঈদের আগের দিন, অর্থাৎ চাঁদ রাত, ছিল আরেক রকমের উচ্ছ্বাসের দিন। সন্ধ্যা নামার পর থেকেই সবাই ছাদে উঠে চাঁদ দেখার অপেক্ষায় থাকত। প্রথম কেউ চাঁদ দেখতে পেলেই আনন্দে চিৎকার করে উঠত, "ঈদের চাঁদ উঠেছে!" তখনই শুরু হয়ে যেত ঈদের আমেজ। মা-বোনেরা হাত ভরে মেহেদি লাগাত, আর আমরা ছেলেরা দৌড়াদৌড়ি করতাম মসজিদের আশপাশে বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠতে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে সাজানো হতো, নতুন জামা-জুতো বারবার বের করে দেখা হতো, কখন সকাল হবে আর কখন ঈদের পোশাক পরা যাবে – সে অপেক্ষার যেন শেষ ছিল না।
ঈদের সকালে ঘুম থেকে ওঠার তাড়াহুড়ো ছিল সবচেয়ে মজার ব্যাপার। মায়ের আদর মাখানো ডাকে ঘুম ভাঙত, তারপর সবার আগে উঠে স্নান করা যেন একটা বিজয়ের ব্যাপার ছিল। নতুন জামা-জুতো পরে আয়নার সামনে নিজেকে দেখা, আতর মাখা, চুল ঠিক করা – এসব ছোট ছোট বিষয়েই তখন যেন অনেক বড় সুখ লুকিয়ে ছিল। এরপর আব্বুর সঙ্গে ঈদের নামাজের জন্য মসজিদের দিকে রওনা হতাম। মসজিদের পথ ছিল ঈদের আনন্দের প্রথম ভাগ। পরিচিত-অপরিচিত সবার মুখে ছিল হাসি, নতুন পোশাকে সেজে সবাই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করত। নামাজের সময় ইমামের সঙ্গে তাকবির বলা, নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করা, বন্ধুদের খুঁজে বের করে দৌড়ে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো – এসব মিলিয়ে ঈদের সকাল ছিল অনন্য।
নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে এলেই অপেক্ষা করত আরেক বড় আনন্দ – সেলামি! ঈদের দিনে সবার মনেই থাকত একটাই প্রশ্ন, "আজ কয় টাকা সেলামি পাব?" দাদা-দাদী, চাচা-মামা, বড় ভাই-বোনদের কাছ থেকে টাকা পাওয়া ছিল ঈদের অন্যতম আকর্ষণ। তখনকার দশ, বিশ, পঞ্চাশ টাকার নোটগুলো হাতের মধ্যে নিয়ে গুনতে গুনতে মনে হতো, যেন পুরো পৃথিবীর সব সম্পদ আমার হাতের মুঠোয়। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলেই শুরু হতো প্রতিযোগিতা – কে কত টাকা সেলামি পেয়েছে! কেউ বেশি পেলে একটু মন খারাপ হলেও পরক্ষণেই আবার খাবারের লোভে সব ভুলে যেতাম।
ঈদের দিনে খাবারের আয়োজন ছিল সত্যিই অসাধারণ। মায়ের হাতের সেমাই, ফিরনি, রোস্ট, পোলাও, কোরমার স্বাদ তখন অন্যরকম লাগত। খাওয়ার পরও যেন আর খেতে ইচ্ছে করত। প্রতিবেশীদের বাড়িতে যাওয়া, সেখানেও বিভিন্ন রকমের মিষ্টি আর খাবার খাওয়া ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। খাবার খাওয়ার সেই আনন্দের অনুভূতি আজও মনে পড়ে।
দুপুরের পরপরই শুরু হতো ঈদের আরেক দারুণ পর্ব – বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি। নতুন জামা পরে দল বেঁধে সবার বাড়ি বাড়ি যাওয়া, একে অপরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো আর মজা করা ছিল ঈদের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। বিকেলের দিকে মাঠে খেলাধুলা, নদীর ধারে ঘুরতে যাওয়া, কখনো কখনো সাইকেল রেস কিংবা ঘুড়ি ওড়ানো – এসব মজার মুহূর্তগুলো ঈদকে আরও রঙিন করে তুলত।
দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ঈদের আমেজ ধীরে ধীরে কমে আসত। নতুন জামা তখন একটু মলিন হয়ে যেত, ক্লান্তি এসে ভর করত শরীরে, কিন্তু মন ভরে থাকত সারাদিনের আনন্দে। মনে হতো, এই দিনটা যদি আরেকটু দীর্ঘ হতো! এখন বড় হয়ে বুঝি, ছেলেবেলার ঈদের আনন্দের মতো নির্মল আনন্দ আর কিছুতেই নেই। আজকাল ঈদ এলেও সেই আগের মতো উচ্ছ্বাস আর অনুভব করি না। ব্যস্ততা, দায়িত্ব আর আধুনিক জীবনের পরিবর্তনের কারণে ঈদের সেই নিষ্পাপ আনন্দ এখন শুধু স্মৃতির পাতায় বন্দী। তবু, ছেলেবেলার সেই রঙিন ঈদ চিরকাল মনের মধ্যে অমলিন হয়ে থাকবে।
সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।


250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

VOTE @bangla.witness as witness

OR
ছোটবেলায় ঈদের সময় সত্যিই অনেক আনন্দ লাগতো। চাঁদ রাত থেকে শুরু করে একেবারে ঈদের সাত দিন পর্যন্ত আনন্দ লাগতো। কিন্তু এখন তো ঈদের সময় একেবারেই আনন্দ লাগে না। ঈদের নামাজ পড়ার পরেই মনে হয় যে ঈদ শেষ হয়ে গেলো। যাইহোক পোস্টটি পড়ে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গিয়েছে। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।