নিরব দুপুর, একান্ত কিছু অনুভব ।
আজ - পহেলা ভাদ্র | ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বর্ষাকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
আজকের সকালটা খুব সাধারণ ছিল। জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো ঘরে পড়ছিল, কিন্তু আমার ভেতরের মনটা যেন কিছু খুঁজছিল। ঠিক যেন একটা নিরব খোঁজ, নিজের জন্য একটু সময়, একটু শ্বাস ফেলার মুহূর্ত। আমরা প্রতিদিনই ব্যস্ত থাকি—চাকরি, পরিবার, দায়িত্ব, সামাজিক চাপ—এই সব কিছুর ভিড়ে আমরা ভুলে যাই, নিজের সঙ্গে একবার বসে কথা বলা।
সকাল থেকে অনেক কাজ ছিল। মেইল, কল, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল রিভিউ করতে হয়েছে। এর মাঝেও কখন যেন দুপুর এসে যায়। দুপুরের খাবার খেতে খেতে হঠাৎ মনে হলো—আমি কি শুধু দায়িত্ব পালন করতেই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি? আমি নিজের জন্য কী করছি?
এই চিন্তা মাথায় আসতেই এক কাপ চা বানিয়ে ছাদে উঠে গেলাম। চারদিকে পাখির ডাক, দূরে কেউ হয়তো বাচ্চাকে পড়াচ্ছে, নিচের রাস্তায় কেউ হেঁটে যাচ্ছে — সবকিছু দেখে মনে হলো, জীবনটা একটানা একটা ছুটে চলা, আর আমরা সবাই ছুটছি। কেউ জানে না আসলে গন্তব্য কোথায়।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসে আছি, মনে হলো বহুদিন হলো নিজের সঙ্গে একা বসা হয়নি। এখনকার সময়টাতে আমরা সামাজিকভাবে খুব সংযুক্ত, কিন্তু মানসিকভাবে যেন একটু একটু করে একা হয়ে যাচ্ছি। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম — সবখানে লোক আছে, কথা আছে, ছবি আছে — কিন্তু নিজের ভেতরের মানুষটার খবর রাখে কে?
আমি জানি, আমার মতো অনেকেই আছেন যারা দিনের শেষে হাঁপিয়ে ওঠেন। হয়তো মুখে কিছু বলেন না, কিন্তু ভেতরে একটা চাপ থাকে, একটা ক্লান্তি জমে ওঠে। সেই ক্লান্তিকে কেউ দেখে না। এই ক্লান্তিকে দূর করার জন্য দরকার হয় না কোনো বড় ভ্রমণ বা বিশাল আয়োজন — দরকার হয় কেবল একটু সময়, একটু নিরবতা।
আজকের দিনটা আমাকে এই সত্যিটাই মনে করিয়ে দিলো — জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটা হলো নিজেই। নিজের অনুভূতিগুলোকে বুঝতে শিখতে হবে, নিজের ভালো-মন্দের খোঁজ নিতে হবে। কারণ পৃথিবীর সবাই ব্যস্ত, কেউই সারাক্ষণ আপনার মনের খবর নিতে পারবে না।
ছাদে বসে থাকতে থাকতে আকাশ একটু মেঘলা হয়ে আসে। হালকা বাতাস বইছে, মনটাও একটু হালকা লাগে। পুরনো কিছু কথা মনে পড়ে, পুরনো বন্ধুদের মুখ ভেসে ওঠে মনে। একটা সময় ছিল যখন সন্ধ্যাগুলো কাটতো আড্ডা দিয়ে, গল্প করে। এখন সন্ধ্যা মানেই দায়িত্ব, কষ্ট চাপা দেওয়া, অথবা নীরবে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা।
হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম — আজকের এই একা সময়টাই আমার কাছে অনেক দামী। এই সময়টাই আমাকে একটু ভেতরে ফিরে যেতে সাহায্য করেছে। আমরা সবসময় ভাবি — সময় নেই, কাজ আছে, দায়িত্ব আছে। কিন্তু সব কাজের মাঝেও যদি আমরা একটুখানি সময় বের না করি নিজের জন্য, তবে এই জীবনটাই একসময় একঘেয়ে হয়ে যাবে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। নিচে শব্দ কমে গেছে। পাখিরা বাসায় ফিরছে। আমি এখনো ছাদে বসে আছি। ভেতরে একটা শান্তি কাজ করছে। কারণ আজ আমি নিজের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। কারো সঙ্গে নয়, কারো জন্য নয় — শুধুই নিজের জন্য।






This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community