সাকিরুল

in Incredible Indialast month (edited)

pexels-photo-12433294.jpegsrc

রাত জাগা অনেকটা পেশা হয়ে দাড়িয়েছে আমার। অনেক রাতে যখন ক্ষুধা লাগে তখন আমি বাসা থেকে বেড়িয়ে আমাদের শহরের মোড়ের একটি হোটেলে গিয়ে খাবার খেয়ে আসি। আজও গিয়েছিলাম খেতে৷ খাওয়ার একপর্যায়ে একটা মাঝ বয়সি ছেলে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, "মামা, কাল ক্যান জানি আপনাকে দেখলাম না।" বুঝলাম সে এখানে আমার উপস্থিতি প্রতিদিন খেয়াল করে৷

আমার প্রতি তার এমন গুরুত্ব দেখে তার সাথে কিছু সময় খোস গল্পে মাতিয়ে উঠলাম। প্রথমেই তার নাম জিজ্ঞাসার মাধ্যমে তার সাথে একটু আন্তরিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। গল্পের সুবাদে তার পারিবারিক, আর্থিক মোটকথা সব বিষয়ই উপস্থাপন করলো আমার সামনে। ছেলেটির নাম সাকিরুল, তিন ভাই, তিন বোন। সাকিরুল যখন কেবল কোলের সন্তান তখন থেকেই তার বাবা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সকল ধরনের আর্থিক ইনকাম থেকে বঞ্চিত, তিনি শুধু সাংসারিক বিষয়াদি দেখভাল করেন৷

pexels-photo-13105450.jpegsrc

তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে৷ বাকি দুই ভাই বিয়ে করে সংসার থেকে প্রায় আলাদা, থাকেন আলাদা আলাদা জায়গায়। বাবা-মা'র ভরনপোষণের দায়িত্ব পুরোটাই সাকিরুলের উপর বর্তিয়ে দিয়েছে।

বর্তমানে সাকিরুলের সংসারে সে, তার মা এবং বাবা৷ সাকিরুল হোটেলে হোটেলবয়ের কাজ করে, দৈনিক বেতন পায় ৪০০ টাকা৷ তার পারিবারিক সকল খরচ সে তার স্বল্প আয় দিয়েই বহন করে। একদিকে দ্রব্যমূ্ল্যের উর্ধগতি অন্যদিকে তার স্বল্প ইনকাম, সে এই সময়টাতে কিভাবে তার সাংসারিক সকল খরচ বহন করছে সেটাই আসলে চিন্তার বিষয়।

সাকিরুলের দুইটা গরু আছে, ৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়েছে৷

pexels-photo-11982695.jpegsrc

সে তার বাবার সহযোগিতায় এই জমিগুলোতে সিজনাল বিভিন্ন ফসল ফলায়।

যে সাকিরুলের কথা এতক্ষণ বর্ণনা করলাম সে কেবল উঠতি যুবক, বয়স কতই হবে ১৮ কিংবা ২০৷ বয়স কম হলেও আকাশ সমান দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে সে। সে বিয়েও করছে এই ছোট বয়সেই৷ গল্পের ফাঁক ফোঁকরে যতদূর শুনলাম, অন্য ভাইদের মত সাকিরুলকেও আলাদা সংসার করতে বলে তার স্ত্রী। কিন্তু সাকিরুল তার পিতা-মাতাকে ছাড়তে নারাজ, একসাথেই থাকতে চায় বাকি জীবন।

তার অন্য ভাইয়েরা ঢাকায় কাজ করে, তারা বিভিন্ন ছুটিতে বাড়িতে আসলে কয়েকদিনের জন্য সাকিরুলের সংসারেই ভিড় জমায়, বেড়ে যায় তার সংসারের সদস্য সংখ্যা, তবুও সে কায়ক্লেশে সবকিছু সামলিয়ে নেয়।বয়স খুব কম, দায়িত্বের ভারটা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। পরিশ্রম করতে করতে ছেলেটার চোখে-মুখে প্রাপ্তদের বয়স্কের ছাপ।অসুস্থ বাবা তার লেখাপড়ায় কোনো সাহায্য করতে পারেননি।

pexels-photo-4684653.jpegsrc

তার মুখ থেকে শোনা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ছোয়া সাকিরুলের গায়ে একটুও লাগেনি।

সাকিরুলের মতো বহু যুবক এদেশে বাস করে, যারা প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিনিয়তই লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সাকিরুলরা বেঁচে থাকুক বহুকাল৷ তার ভবিষ্যত জীবনের জন্য মঙ্গল কামনা করে আজকের মতে এখানেই শেষ করছি।

Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 65870.41
ETH 2675.73
USDT 1.00
SBD 2.89