উপলব্ধি

in Incredible India2 years ago

আজ রাত ১২ টা পেরিয়ে গেছে।অর্থাৎ আজ ১৩ই মার্চ।সকাল ১১ টা থেকে পরীক্ষা।আজ হয়ত ছাত্র জীবনের শেষ পরীক্ষা।অনেক আগেই খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়েছি।দীর্ঘ দিনের অভ্যেস নাকি পরীক্ষার টেনশন জানি না,প্রায় এক ঘন্টা ফোনটা পাশে রেখে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।ঘুম আসছে না।অনেক ক্ষন বিছানায় এদিক ওদিক করছি কিন্তু ঘুমোতে পারছি না।মাথার মধ্যে পড়াশোনা ঘুরছে না,ঘুরছে নানান কথা।জীবনের কথা।কিভাবে এখানে পৌঁছালাম।পাঁচ বছর আগে নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চেয়েছিলাম আর আজ পাঁচ বছর পর কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি।সব কিছুই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আমি আগে প্রচুর ডাইরি লিখতাম।প্রতিদিন আমার ভীষন প্রিয় একটা কাজের তালিকায় ডাইরি লেখাটা ছিল একদম প্রথমে সারিতে।তার পর আস্তে আস্তে ডাইরি লেখা কমে গেল,সময়ের অভাব,ইচ্ছের অভাব অথবা আরো অনেক মিলিত কারণ হতে পারে।তার পর জীবনের গুরুত্ব পূর্ন মুহূর্তের আগের সময় গুলোতেই শুধু লিখতাম।এমন ভাবেই লিখেছিলাম মাধ্যমিক,উচ্চমাধ্যমিক ও ডাক্তারি পরীক্ষায় বসার আগের পরীক্ষা গুলোতে।ঠিক তেমনি দীর্ঘ একঘন্টা চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকা অবস্থা থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে লিখতে বসলাম।

আমি একদম প্রথম সারির ছাত্র কোনদিনই ছিলাম না।প্রতিটা পদক্ষেপ এই অনেক অনেক ধাক্কা খেয়ে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি।একটা বিষয় আমার ভীষন অবাক লাগে।আমি কোনদিনই ডাক্তার হতে চাইনি বা হওয়ার ইচ্ছেও জাগেনি।ছোট থেকেই আমি animator হতে চেয়েছিলাম।এমনকি উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার আগে অব্দি আমি animator ই হতে চেয়েছিলাম।আমার আব্বা আমার জন্য animation কলেজও খুঁজে রেখেছিলেন ভর্তি করবেন বলে কিন্তু কি জানি কি হল নিজের ডিসিশান হটাৎ করেই চেঞ্জ করে কোচিং নিতে চলে আসলাম।তো ছোট থেকেই ডাক্তার হওয়ার কোনো রকম ইচ্ছে বা ডাক্তারি প্রফেশনের প্রতি ভালবাসা না থাকা সত্ত্বেও ক্লাস ৫ এ একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম।অত ছোটবেলায় দেখা স্বপ্ন আমাদের মনে না থাকারই কথা।কিন্তু ছোটবেলায় দেখা স্বপ্ন গুলোর মধ্যে আমাদের সবারই তিনটে বা চারটে স্বপ্ন মনে থাকে।এটাও তেমনি।স্বপ্নে দেখেছিলাম কোনো এক বন্যায় একটা গ্রাম সম্পূর্ন ভাবে ডুবে গিয়েছে।সেখানেই একটু উচু জায়গায় একটা ক্যাম্প করে তাবু খাটিয়ে আমরা কয়েকজন বসে আছি।হ্যারিকেনের আলো জ্বলছে।আর সেই ক্যাম্পে আমরা সকলেই ডাক্তার।আমরা চারিদিকে যা দেখি বা ভাবি টা নিয়েই স্বপ্ন দেখি।কিন্তু এটা এমন একটা স্বপ্ন ছিল যেটা আমার চিন্তা ভাবনার বাইরের কিছু একটা ছিল।সে জন্যই হয়ত এটা এমন গভীর ভাবে গেঁথে গিয়েছিল মনে।

এর পর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কিছুদিন আগে আমি যে হোস্টেলে থাকতাম সেখানে আমার লুকিয়ে রাখা ফোন হোস্টেল সুপারের কাছে ধরা পড়ে। আমার গার্জেন কল হয় এবং আব্বাকে অনেক অপমান করা হয়।আমাকে শাস্তি স্বরূপ অন্য ব্রাঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।এ সব কারণে যখন উচ্চমাধ্যমিক শেষ হল তখন বাকি সব বন্ধুদের দেখে আমিও কোচিং নিতে চলে এলাম।ভাবলাম ডাক্তারি যদি পেয়ে যায় তাহলে আমার জন্য আব্বা কে যে অপমান সহ্য করতে হয়েছিল সেটার কিছুটা হয়ত লাঘব করতে পারব।কিন্তু এরকম একটা কম্পিটিটিভ পরীক্ষায় পাশ করা এত সহজ তো না।কোনোদিন ভাবিনি কোচিং নেব,এমনকি রানিং বছরে আমি ডাক্তারির পরীক্ষাও দিই নি।এরকম একটা অবস্থা থেকে চান্স পেতে হলে কি অমানুষ পরিশ্রম করতে হয় সেটা জানা ছিল না।

সমস্ত কিছু বুঝতে জানতে কখন যেন চোখের পলকে ৪টা বছর চলে গেল।এত আশা নিয়ে কোচিং নিতে এলাম,তার পর কি ভাবে কি ভাবে অন্ধকারে ডুবতে থাকলাম। যত দিন যেতে থাকল আরো গভীরে তলিয়ে যেতে থাকলাম।এই সময়গুলো অনেক বেশি যন্ত্রণার ছিল।অনেক কিছু সহ্য করে,নিজের সঙ্গে অনেক লড়ায়ে কখনো সফল হলাম,কখনো হারলাম কিন্তু শেষ অব্দি পৌছালাম মেডিকেল কলেজের দোরগোড়ায়।

আর আজ এই কলেজে পা দিয়ে পড়াশোনা শুরু করার পর সাড়ে চারটা বছর পার হল। কাল পরীক্ষা।ফলাফল কি হবে জানি না।সে তো ভবিষ্যতই তার উত্তর দেবে।

আজ মনে হচ্ছে সত্যিই আমার উপর অনেকের আশীর্বাদ অনেকের দোয়া রয়েছে।নাহলে আমি যা সমস্ত কাজ করেছি,কখনো ভালো কখনো খারাপ।অনেকের সঙ্গে অন্যায়ও করেছি,অনেকের প্রতি ন্যায় ও করেছি।এত কিছুর পরও আজ ডাক্তার হওয়ার আগের মুহূর্তে দাড়িয়ে আছি।সকলের আশীর্বাদ ও দোয়া ছাড়া সম্ভব না। আল্লার উপর অশেষ ধন্যবাদ এই অধমকে এত দূর টেনে নিয়ে আসার জন্য।

আমার শুধু মনে হয় আমরা সকলেই কোনো একটা জায়গায় পৌঁছানোর জন্য তৈরি হয়েছি।এবং আমাদের জানা অজানা সত্বেও আমরা সেই দিকেই অগ্রসর হয়ে চলছি।আমরা আমাদের ভবিষ্যত না জেনেও কোনো পূর্বনির্ধারিত পথেই হেঁটে চলছি।জানিনা কি হবে,তবে আজ থেকে পাঁচ বছর পরের ওয়াহিদ একদিন নিশ্চয় এই লেখাটা পড়বে।

Sort:  
 2 years ago 

আসলে পোস্ট পড়তে পড়তে নিজেকেই যেন এক অজানা স্বপ্নের মধ্যে হারিয়ে ফেলেছি। নিজের ছোটবেলার করা সেই কাজগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো।

আসলে আপনি একদম ঠিকই বলেছেন, আমরা সবাই একটা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যই, হয়তোবা এ পৃথিবীতে এসেছি, সেটা আমরা জেনে হোক বা না জেনে হোক, সেই লক্ষ্যে আমরা ঠিকই পৌঁছে যাই।

আর আমি মনে করি, আপনি অল্প বয়সে না জেনে যে, ভুল করেছেন সেই ভুলের জন্য, আপনার বাবাকে অসম্মানিত হতে হয়েছিল। কিন্তু আপনি যখন ডাক্তার হয়ে বের হবেন। তখন আপনার বাবা সেই দিনের কথা ভুলে যাবে। আর আপনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অনেক গর্ব করে বলবে, আমার ছেলে এখন একজন ডাক্তার।

আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল, ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়ে একজন ডাক্তার হয়ে, দেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, এটাই কামনা করছি আপনার কাছে।

অনেকদিন পর আপনি আমাদের সাথে এসে যুক্ত হয়েছেন, এটা দেখে খুবই ভালো লাগলো, আশা করছি পরীক্ষার পরবর্তী দিনগুলোতে, আপনি আবারো আমাদের সাথে এসে যুক্ত হবেন, অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Loading...
 2 years ago 

আমাদের এই সময়ে অনেক কিছুই জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝেই একটা কাজ করে বসি, এতে অনেকে বাবা মা অপমানিত ও অসম্মানিত হোন।

তবে সেই অসম্মান আর লাঞ্চনা, একেবারে ধুয়ে মিশে যাবে যখন আপনি একজন দায়িত্বশীল মানুষ হয়ে তাদের পাশে দাড়াবেন। দোয়া করি আপনি যেন ভালো একজন ডক্টর হতে পারেন। ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 76024.68
ETH 2926.23
USDT 1.00
SBD 2.60