কিছু কিছু ভুল সিদ্ধান্ত
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।
বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সামনে একটি ভিন্ন ধরনের পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি । আসলে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমার আজকের লেখাটি । আশা করছি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে । আসলে এই পৃথিবী বড়ই অদ্ভুত ।এখানে সবাই স্বার্থ লোভী । নিজের স্বার্থে সামান্যতম আঘাত লাগলে মানুষ তার নিজের লোকজন এর সাথেও খারাপ আচরণ করতে দ্বিধাবোধ করে না । বাবা মা যেমন আমাদের সব থেকে আপনজন তেমনি সন্তান-সন্ততি ও বাবা-মায়ের নিকট অমূল্য সম্পদ। কিন্তু এই স্বার্থের কারণেই বাবা-মার প্রতি সন্তান-সন্ততির ও যেমন খারাপ আচরণ পরিলক্ষিত হয় তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মা ও সন্তান-সন্ততির সঙ্গে পক্ষপাতিত্ব করে থাকে ।তেমনি একটি ঘটনা আজ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
কিছু কিছু ভুল সিদ্ধান্ত
কিছুদিন আগে আমি আমার মায়ের বাসায় গিয়েছিলাম । সেখানে মায়ের বাসার ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা হচ্ছিল । কথার প্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে ওই ভদ্র মহিলাকে দেখলাম বলছে - এতদিন চিন্তা করছিলাম বাপটা মারা গেলে চল্লিশ লাখ টাকা পাবো । সেই টাকা দিয়ে একটা বাড়ি করবো আর আমার কোন সমস্যা থাকবে না । কথাটা শুনে আমার বুকের মধ্যে কেমন যেন লাগল। সে বাবা মারা যাবে আর তার টাকা নিয়ে বাড়ি করবে এ কেমন প্রত্যাশা ।
তখন আমার আম্মা জিজ্ঞাসা করলেন আপনার বাবা বেঁচে আছে ? তখন ওই আন্টি বললেন শয়তানটা কিছুদিন আগে মারা গিয়েছে । আমি তো পুরো হতবাক । এ কি বলছেন উনি। তখন আমি বাধ্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি নিজের বাবাকে এ ধরনের কথা কেন বলছেন ? তখন তিনি বললেন উনার স্বামী মারা গিয়েছে যখন উনার সন্তানের বয়স ৩ বছর ছিল ।তখন থেকেই উনি অনেক দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে আছেন । ছেলেকে একাই বড় করেছেন। বোনেরা ভাইয়েরা তাকে অনেক সাহায্য করেছে যার কারণে তিনি এতদিন ছেলেটাকে নিয়ে বেঁচে আছেন । তিনি বাবার বাড়ির সম্পত্তি ভাগে পেলে ৪০ লাখ টাকা পেতেন । কিন্তু তার বাবা তার সব সম্পত্তি তার ছেলেদের নামে লিখে দিয়েছেন ।মেয়েদের জন্য বিন্দুমাত্র সম্পত্তি ও রাখেন নি । এতে মেয়েরা সবাই বাবার উপর অসন্তুষ্ট ।
অন্যান্য বোনেরা সবাই বলছিল আমাদের অবস্থা তো ভালো আমাদেরকে না দিলেও চলত, তোকে তো বাবা কিছু দিয়ে যেতে পারত । তখন আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেন এটা করেছেন । তখন তিনি বললেন তা আমরা কেউ জানিনা । তখন আমি বললাম তিনি অসুস্থ অবস্থায় করেছেন , নাকি সুস্থ অবস্থায় ? তখন তিনি বললেন একদম সুস্থ ভালো অবস্থায় করেছেন । মারা গিয়েছেন তার অনেক পরে । তিনি আরো বলেন তার মাকে বলেছেন কিন্তু মায়ের কিছু বলার নেই, মা-বাবাকে খুবই ভয় পায় ।বাবার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত । কিন্তু এমনটা কেন করেছেন সেটা তিনি বলতে পারলেন না ।
আসলে যে বাবা-মা আমাদের এত ভালোবাসার একটা জায়গা সেই বাবা-মায়ের সামান্য ভুলের কারণে আজ তার সন্তান তার মৃত্যুর পরও তাকে গালিগালাজ করছে । এটা আসলে যে কারোরই কাম্য হতে পারে না । তার বাবার একটা ভুলের জন্য সারা জীবন তাকে সন্তানের কাছ থেকে দোয়ার পরিবর্তে খারাপ কথা শুনতে হবে । মৃত্যুর পর একজন মানুষের তার সন্তানের দোয়া সব থেকে বেশি কাজে আসে । আর সেই সন্তান যদি তার সম্পর্কে খারাপ কথা বলে তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায় ।যেখানে বাবার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্ক থাকে সব থেকে মধুর ।
মহিলাটি দুঃখ, কষ্ট, অভিমানে কথা গুলো বলছিল।যদিও তার বলাটা একদমই ঠিক হয় নি।বাবা তো বাবাই । আসলে তার বাবার ও কাজটি করা ঠিক হয় নি ।কারো হক থেকে তাকে বঞ্চিত করা ইসলাম বিরোধী কাজ।মেয়েদের বঞ্চিত করে ছেলেদের নামে সব কিছু লিখে দিয়ে মৃত্যুর পর মেয়েদের থেকে খারাপ কথা শুনছে ।আসলে মানুষের কিছু কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সম্পর্ক গুলোও নষ্ট হয়ে যায় ।স্বার্থই তখন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ।এক্ষেত্রে লোকটির একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তার এত খারাপ কথা শুনতে হচ্ছে। বাবা মেয়ের মধুর সম্পর্ক গুলো নষ্ট হয়েছে ।যেখানে স্বার্থপর মেয়ের স্বার্থে লেগেছে । যাই হোক এটাই স্বার্থপর দুনিয়া।
তাই পরিশেষে বলতে চাই সবাই যে যার অবস্থান থেকে স্বার্থ টা কে দূরে ঠেলে কাছের মানুষ গুলোর কাছেই থেকে যাই আজীবন ।ভালোবাসার বন্ধন গুলো অটুট থাকুক সবসময়।বাবা মায়ের প্রতি সম্মান ভালোবাসা থাকুক অবিরাম ।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফার: | @wahidasuma |
---|---|
ডিভাইস: | স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৪০ |
🔚ধন্যবাদ🔚
@wahidasuma
আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
আসলে আমাদের এই দুনিয়াটা স্বার্থে জোড়া লাগানো। প্রত্যেকটা মানুষ নিজেদের স্বার্থ নিয়েই বেঁচে থাকে। মানুষের একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তাকে কত রকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তা বলা অসম্ভব। যেমন এই মহিলাটির বাবাকে এখন কত কথাই না শুনতে হচ্ছে মৃত্যুর পরেও। যদি তোমার সিদ্ধান্তটা সঠিক হতো তাহলে মেয়েটা আজ তার বাবার জন্য দোয়া করত এবং সম্পর্কটাও এরকম হতো না। তাই আমাদের ভাবনা চিন্তা করে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত এবং নিজেদের স্বার্থকে দূরে সরিয়ে দেওয়া উচিত। ভালো লাগলো আপনার লেখা পোস্ট।
আপু আপনার কাছে আমার লেখাটি পড়ে ভালো লেগেছে জেনে বেশ ভালো লাগলো । আসলে আমাদের সমাজটা এখন স্বার্থপর সমাজ হয়ে গিয়েছে । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।