শৈশব স্মৃতি || কবরস্থানে ভূতের ভয় দেখানো

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম


আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।


বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সামনে আমার শৈশবের কিছু স্মৃতি নিয়ে হাজির হয়েছি । আসলে প্রতিটা মানুষের জীবনেই শৈশব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।প্রতিটা মানুষই আমার মনে হয় শৈশবে বেশ আনন্দঘন সময় কাটায় । পরবর্তীতে যখন সে তার শৈশব কে হারিয়ে ফেলে তখন শত চেষ্টা করেও আর শৈশব ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু শৈশবের সেই আনন্দঘন মুহূর্ত প্রতিটা মানুষের জীবনেই স্মরণীয় হয়ে থাকে, যা পুনরায় মনে করতেও ভীষণ ভালো লাগে । আজ আমি আমার শৈশবের মধুর স্মৃতির কিছু অংশ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব । আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।



future-4580945_1280.jpg

source

কবরস্থানে ভূতের ভয় দেখানো


আসলে আমার আব্বুর চাকরির সুবাদে আমরা শহরে থাকতাম। তবে গ্রামকে ভীষণ ভালবাসতাম এবং গ্রামে বেড়াতে যেতে বেশ ভালো লাগতো । তাই তো যখনই সময় সুযোগ হতো আমরা গ্রামের বাড়িতে যেয়ে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে আসতাম। তখন শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে ভীষণ ভালো লাগতো । যখনই শুনতাম আর কয়েকদিন পর গ্রামে বেড়াতে যাব তখন যেন আনন্দ আর ধরত না । শুধু দিন গুনতে থাকতাম কবে আসবে সেই দিন যেদিন আমরা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিব। সত্যিই চমৎকার মুহূর্ত ছিল তখন।


এমনি একবার আমরা কয়েকদিনের জন্য গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম । গ্রামের বাড়িতে আমার এক চাচা থাকত এবং চাচাতো বেশ কয়েকজন ভাই বোন ছিল । আমরা সবাই মিলে বেশ আনন্দ করতাম ।লুকোচুরি ,গোল্লাছুট বিভিন্ন ধরনের খেলায় মেতে উঠতাম । সন্ধ্যে হলে লুকোচুরি খেলার ধুম পড়ে যেত ।রাতের বেলায় জোনাকি পোকার পিছনে ছুটাছুটি করতেও ভীষণ ভালো লাগতো।



আসলে আমাদের গ্রামটা ছিল বেশ ঘন জঙ্গলে ভরপুর । গাছ গাছালিতে একদম পরিপূর্ণ ছিল। তবে আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে নদী পার হয়ে গ্রামের স্কুল । তবে আমরা বাড়িতে গেলে সবাই মিলে গ্রামের স্কুলে ঘুরতে যেতাম । সেখানে বেশ কিছু দোকানপাট ছিল । সেখানে সিঙ্গারা , চা ইত্যাদি পাওয়া যেত যার কারণে আমরা বিকেল বেলায় সব ভাইবোন মিলে নদীর সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতাম । এমনি একবার আমরা সবাই মিলে যাচ্ছিলাম । তবে নদীতে পৌঁছানোর আগে আমাদেরকে একটি ঘন জঙ্গল পাড়ি দিতে হতো । সেটি এমন একটি রাস্তা ছিল যার দুপাশে কবরস্থান আর দু পাশে বাঁশঝাড়ে পরিপূর্ণ। দুই পাশের বাঁশঝাড় উপরের দিকটায় এমনভাবে লেগেছিল যে সূর্যের আলো নিচের রাস্তায় পড়ত না ।দিনের বেলায় ওই পথটি ছিল সন্ধ্যের মতো অন্ধকার ।ওই রাস্তা দিয়ে যাবার সময় ভীষণ ভয় লাগত । কেননা দুই পাশে কবরস্থান ।যেহেতু আমার চাচাতো ভাই বোনেরা গ্রামে থাকত তাদের কাছে জায়গাটায় তেমন একটা ভয় লাগতো না। কিন্তু আমাদের কাছে খুবই ভয়ঙ্কর লাগতো ।আমরা তো ওই রাস্তাটা ওদের হাত ধরে চোখ বন্ধ করে যেতাম । রাস্তাটার শুধু এ প্রান্ত থেকে দূরের প্রান্ত দেখা যেত । আর দুই পাশে ঘন জঙ্গল ।



এভাবে একবার আমরা রাস্তাটি দিয়ে যাচ্ছি এমন সময় আমার চাচাতো এক বোন চিৎকার করে উঠলো ওই যে পাশের কবর থেকে দশ বারো হাত লম্বা ভুতের মত কি যেন বের হচ্ছে ।এই বলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেদিকে তাকিয়ে দেখি একটা ভাঙ্গা কবর । বেশ গর্ত ।সেটা দেখে তো আমরা সত্যি বিশ্বাস করেছি মনে করেছি মনে হচ্ছে কিছু একটা বের হয়েছে। চিৎকার চেঁচামেচি করে দৌড়ে ওই রাস্তা পার হয়েছি । রাস্তা যখন পার হয়েছি তখন তারা হাসছিল আর বলছিল তারা মজা করেছে । এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি। কিন্তু আমরা তো প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম । সত্যি সেদিন ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । আসার সময় শুধু ভাবছিলাম কিভাবে আবার ওখান দিয়ে যাব । ওরা এভাবেই মাঝেমধ্যে আমাদেরকে এরকম ভয় দেখিয়ে মজা করত আর বলতো কিছুদিন আগে কবরস্থান থেকে এরকম কিছু একটা বের হয়েছে সত্যি সত্যি। আমরা সত্যিই তাই বিশ্বাস করতাম ।আরো বেশি ভয় পেতাম । আসলে সেটা ছিল একান্তই তাদের মজা করা যা তখন বুঝতে পারতাম না । তবে আমাদের বাড়ির ঘন জঙ্গলের সেই পথটি কিন্তু এখনো আছে । তবে জঙ্গল এখন কিছুটা ফাঁকা ফাঁকা হয়েছে । এখন অতটা ভয় করে না । তারপরেও আমার ওই রাস্তা দিয়ে এখনো যেতে ভয় লাগে। একা যাওয়া তো সম্ভবই না।



যাই হোক আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফটোগ্রাফার:@wahidasuma
ডিভাইস:স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৪০

🔚ধন্যবাদ🔚

@wahidasuma

আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে এবং ঘুমাতে আমি ভীষন পছন্দ করি।আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।

VOTE@bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

logo.gif

Sort:  
 last year 

আপু আপনার মতো আমার চাচাতো ভাই একবার আমাকে এক কবরের পাশে নিয়ে এভাবে ভয় দেখিয়েছিল। সেদিন রাতের বেলা অবশ্য আমার অনেক জ্বর এসেছিল। আমাদের গ্ৰামেও এমন কিছু ভয়ঙ্কর রাস্তা রয়েছে। তবে এখন সব জায়গা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। যাই হোক আপনার শৈশবের স্মৃতি পড়ে ভালো লাগলো। আমার মনে হয় এমন মজা করা উচিত নয় যেটাতে কেউ ভয় পায়।

 last year 

আসলে আপু কবরস্থান এমনি অনেক ভয়ের হয়। আর সেখান দিয়ে যাবার সময় সামান্য কিছু কথা শুনলে গা ছমছম করে উঠে । আমার তো এখনো কবরস্থানের পাশ দিয়ে যেতে ভয় লাগে । আপনার চাচাতো ভাই ও আপনার সঙ্গে এরকম করেছিল জেনে বেশ খারাপ লাগলো । আসলে এই ঘটনাগুলো সত্যি বেশ ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে। ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

যদিও চাকরির কারণে কিংবা পড়ালেখার সুযোগ সুবিধার কারণে শহরে থাকা হয়। কিন্তু শহরের জীবন যাপন এবং গ্রামীন জীবন যাপনের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। গ্রামের মধ্যে অনেক বেশি আনন্দ করা যায়। আপু আপনি সত্যি বলছেন আসলে গ্রামের কবর স্থান গুলো অনেক ভয় লাগে। ছোট বেলায় আমরাও যখন সন্ধ্যা নামতো তখন কবরস্থানের রাস্তা দিয়ে আর যেতাম না। আপনারা তো সত্যিই অনেক ভয় পেয়ে গেছিলেন। অনেক ভালো লাগলো আপু পড়ে।

 last year 

হ্যাঁ আপু আপনি একদম ঠিক বলেছেন শহরের জীবন থেকে গ্রামের জীবনে অনেক বেশি আনন্দ উল্লাস করা সম্ভব । আমার শৈশব বলতে যা কিছু মনে আছে তা শুধু গ্রামের গুলোই মনে আছে । শহরের কিছু তেমন একটা মনে পড়ে না । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে ভূতের ভয় নিয়ে দারুণ একটি পোস্ট লিখে শেয়ার করেছেন। আসলে গ্রাম অঞ্চলে বসবাস করলে কবরস্থানের পাশে এসব ভুতের ভয় একটু বেশি পেয়ে থাকে মানুষজন। আপনার চাচাতো বোন কবরের দিকে তাকিয়ে ভূত দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠলো শুনে একটু খারাপ লাগলো আপু। আসলে এইসব ভয় থেকে মানুষের অনেক বড় সমস্যা হতে পারে। আমাদের গ্রামের একজন এমন সমস্যা থেকে মেন্টাল হয়ে গেছে। ধন্যবাদ আপু গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

 last year 

ভাইয়া আপনি মনে হয় আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন নি । আমি লিখেছিলাম সে আমাকে ভয় দেখানোর জন্য মজা করে চিৎকার করেছে ।আসলে পুরোটাই ছিল দুষ্টামি ।যাই হোক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আসলে গ্রামের দিকে এই বিষয়গুলো আগে অনেক বেশি দেখা যেত। আজ সমবয়সী ভাই-বোনরা থাকলে তো ভয় দেখাতো অনেক বেশি। আপনি তো দেখছি অনেক বেশি ভয় পেয়েছিলেন। গ্রাম সবারই অনেক বেশি পছন্দের। গ্রামে যদি জঙ্গল থাকে তাহলে তো ভয় পাওয়ারই কথা। আপনার পোস্টটা পড়ে মজাও পেয়েছি আবার ভালোও লেগেছে। স্মৃতিময়ী এরকম পোস্ট গুলো পড়তে আমার অনেক ভালো লাগে। সম্পূর্ণটা খুব সুন্দর ছিল।

 last year 

ভাই আমার পোস্টটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লেগেছে যেনে সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 last year 

গ্রামে ঘটে যাওয়া এসব ছোটবেলার মজার কাহিনী মনে পড়লে খুব ভালই লাগে। কবরস্থান দেখলে একটা ভয় কাজ করে মনের ভেতর। আর তখন যদি কেউ একজন মজা করে ভয় দেখায় তখন তো ভাই লাগবেই। সেদিন বেশ ভয় পেয়েছিলেন আপনার লেখা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অনেক ধন্যবাদ আপু এত ভয়ংকর একটি ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

হ্যাঁ আপু সেদিন ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম । তখন অনেক ছোট ছিলাম যার কারণে হয়তো ভয়টা অনেক বেশি লাগতো । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 last year 

রাস্তার দুই পাশে যদি কবরস্থান থাকে এবং বাঁশঝাড় থাকে তাহলে তো ভয় পাওয়ারই কথা আপু। যদিও আমার এসব কিছু ভয় লাগে না তবে এরকম হলে তো ভয় পাওয়ার কথা। আমাদের সবার জীবনে কিন্তু ছোটবেলার অনেক স্মৃতি রয়েছে যেগুলো কখনো ভোলার নয়। যদিও আপনার চাচাতো ভাই বোনেরা ভয় দেখাতে চেয়েছিল কিন্তু এর ফলে অনেক সময় অনেক কিছু হতে পারে। এখন ফাঁকা ফাঁকা হয়েছে সেই রাস্তাটা এটা জেনে ভালো লাগলো।

 last year 

আপু তাহলে তো দেখছি আপনি বেশ সাহসী । যেহেতু আপনার এসব জায়গায় ভয় লাগে না। বেশ ভালো লাগলো আপনার মন্তব্যটি পড়ে ধন্যবাদ।

 last year 

আপু ঐ জায়গাটা সম্পর্কে আপনার মনের ভিতর ভয় কাজ করেছে। আর তারা সেটা বুঝতে পেরে আপনাকে ভয়টা দেখিয়েছে। আপনি যেভাবে জায়গাটার বর্ণনা দিয়েছেন দুই পাশে কবর,বাঁশঝাড় জায়গাটা একটু ভয়ংকর ই লাগছে। ধন্যবাদ।

 last year 

হ্যাঁ ভাইয়া ওই জায়গাটা খুবই ভয়ঙ্কর ছিল। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58482.75
ETH 2615.94
USDT 1.00
SBD 2.42