জেনারেল রাইটিং :- ফুটবল প্রেমী এক মানুষের গল্প।

in আমার বাংলা ব্লগlast year
আমি @tuhin002, আমি আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যগনকে আমার পক্ষ থেকে জানায় সালাম," আসসালামু আলাইকুম" সবাই কেমন আছেন ? আশা করি, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহুর অশেষ রহমতে ভাল আছি। আজকে আমি আলোচনা করবো, ফুটবল প্রেমী এক মানুষের গল্প।। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তাই শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ...


football-stadium-62891_1280.jpg

Source


পৃথিবীতে অনেক মানুষের বসবাস। এই মানুষের মধ্যে রয়েছে নানান ধরনের চিন্তা-ভাবনা। এই ভাবনার মধ্যে রয়েছে কিছু চাওয়া পাওয়া ভালোবাসা। এই ভালোবাসা গুলো একেক জনের একাক রকমের। ঠিক এমনই একটা ভালোবাসার মানুষ রয়েছে যে ভালোবাসে ফুটবলকে। ফুটবল বিশ্বের এক আলোচিত খেলা। এইতো গত বছরে আমরা ফুটবল বিশ্বকাপ দেখলাম। সারা বিশ্বের মানুষ আনন্দের সাথে এই খেলা উপভোগ করেছে। যত খেলা আছে সব খেলা কে ছাপিয়ে ফুটবল হলো মানুষের সব থেকে জনপ্রিয় খেলা। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা মনের মধ্যে ফুটবল খেলাকে লালন পালন করে। আর এমনই একটা লোকের গল্প আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি।


আমাদের গ্রামের নাম জুগির গোফা। আমাদের জন্মের আগ থেকে এই গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলা হলো ফুটবল। আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি আমাদের গ্রামে ফুটবল খেলা যারা খেলতেন তারা নাকি খুবই ভালো খেলেন। আপনারা হয়তো জানলে অবাক হবেন, গ্রাম পর্যায়ে প্লেয়াররা কুষ্টিয়া মতো জেলা টিমের সাথে তারা জিতে এসেছিল সেই সময়। তাহলে ওই সময়ের টিম কত ভালো ছিল। সেই সময় এর মধ্যে ভালো ভালো প্লেয়ার ছিল। এর মধ্যে একজন ছিল, তার নাম হচ্ছে মনিরুজ্জামান মনি। তিনি আমার সম্পর্কে চাচা হন। তিনি প্রায় এখন আমাদের সাথে গল্প করেন যে, সে সময় আমরা এত ভালো খেলেছি যে সারা কুষ্টিয়া জেলার লোক আমাদের গ্রামের এই খেলা সম্পর্কে পরিচিত। ফুটবল যেমন ১১ জন প্লেয়ার লাগে ঠিক তেমনি পাশাপাশি দর্শকও লাগে। চাচা বলতেন আমরা যখনই খেলা খেলতে যেতাম তখনই আমাদের সাথে যেত আমাদেরই একজন বয়স্ক ভাই । তিনার নাম হলো করিম হোসেন। জি,হা, আজকে আমি আপনাদের সামনে কথা বলবো করিম দাদা সম্পর্কে। তিনাকে আমি দাদা বলেই থাকি।


যখন তিনি চাচাদের সাথে একত্রে খেলা দেখতে যেতেন তখন আমরা হয়তোবা হয়নি। আমরা এই পৃথিবীর আলোয় তখন দেখিনি। আর যদিও দেখছি হয়তো তখন আমরা খুবই ছোট ছিলাম। একদিন বসে চা খাচ্ছিলাম, হঠাৎ সেই সময় মনিরুজ্জামান মনি চাচা আমাদেরকে এই দাদা সম্পর্কে অনেক কথা বলছিল। তিনি বলছিলেন উনি এমন একজন লোক আমরা যেখানে খেলা খেলতে যেতাম সেখানে সে আমাদের সাথে যেত। আমাদের ব্যাগ পত্র সবকিছু সে তার নিজের কাছে হেফাজতে রাখতেন। সে এতটাই ফুটবলপ্রেমী ছিল যে ফুটবল খেলার জন্য সে সবকিছু করতো। তিনি বললেন আমরা যখন খেলা করে বাড়িতে ফিরতাম, তখন সে জার্সি আন্ডার গুলো নিয়ে সব গুলো ধৌত করে পরিষ্কার করে আবার সুন্দরভাবে রেখে দিতো। যখন আমরা বিকেলে ফুটবল প্র্যাকটিস করতে আসতাম তখন আবার সে সেগুলো আমাদেরকে এনে দিতো। সব সময় আমাদের উৎসাহ দিতো আমাদের প্রত্যেকটা কাজের সাথে সে সম্পৃক্ত ছিল। কোনদিন তার খেলা দেখার পথে উদাসীন মনোভাব আমরা পাইনি। মানুষ কতটা ফুটবল প্রেমিক হলে বা ফুটবলকে ভালবাসলে এত কিছু করতে পারে এই করিম ভাইকে না দেখলে বুঝতে পারবা না। এই কথা গুলো বেশ কয় বছর আগের কথা । চাচা এই কথা গুলো যে চরম সত্যি তার বাস্তব প্রমাণ আমরা অনেক দেখেছি। কারন আমরা বড় হয়ে খেলা খেলেছে এবং আমাদের সাথে তিনি ঠিক ওই একই আচরণ করেছেন। যার সব বর্ণনায় মিলে যাচ্ছে। সেই সময় চাচাদের সাথে যেভাবে মিশেছে আমাদের সাথেও ঠিক একই ভাবে মিশেছেন।


এরপরে আমরা বড় হয়ে দেখেছি তিনি ফুটবলের জন্য কত কিছু না করেছেন। আমরা যত দূরে খেলা খেলতে যেতাম আমাদের সাথে চলে যেত। বয়স তার সত্তর প্লাস। তারপরও তাকে দেখলেই মনে হতো না তার এতটা বয়স হয়ে গেছে। তার মনের জোরটা ছিল বেশি। তিনি আমাদের সাথে ঠিক ঐ একই ভাবে ব্যাগ ঘাড়ে করে আমাদের সাথে খেলা দেখতে যেতেন এবং আমাদেরকে উৎসাহ দিতেন। আমরা খেলায় জিতে গেলে তার খুশির দেখে কে। এইতো গত বছরের আগের বছরের আমরা একটা ছাগল পেয়েছিলাম ফুটবল খেলা ফাইনালে। সেই ছাগলটি তিনি বাড়িতে নিয়ে আসে তার নিজের ছাগলকে যেভাবে বাড়িতে লালন পালন করতেন ঠিক সেই ভাবে কিছু দিন লালন পালন করেছিলাম। এক কথায় ফুটবল সম্পর্কিত যে কোন জিনিসের তার দরদ ছিল অন্যরকম। মনিরুজ্জামান মনি চাচা বললো যে, এই করিম ভাইয়ের ফুটবলের জন্য অবিশ্বাস্য তার প্রতিদান রয়েছে। এই প্রতিদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে মানুষকে একদিন মরতে হবে। তিনি আজ একটি বছর আমাদের মাঝে নেই। হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়ে যান এবং তিনি কিছুদিন পরেই পরকালের গমন করেন। তিনি মারা গেছেন কিন্তু তার স্মৃতি গুলো এখনো আমাদের ফুটবল খেলার মধ্যেই যেন রয়ে গেছে। আজ একটি বছর পার হয়ে গেছে তবুও মানুষ ফুটবল খেলা খেলার সময় তার কথা ভুলেনি। মানুষটাকে স্মরণ করে। আমাদের গ্রামে যতকাল ফুটবল বেঁচে থাকবে তত কাল সেই ফুটবলের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবে সবার হৃদয়ে। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তাকে যেন জান্নাতবাসী করেন আমিন।

ভূল ত্রুটি হলে অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশায় নিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।

আজ এই পর্যন্ত। সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ডিভাইস poco M2
লোকেশন মেহেরপুর

ভূল ত্রুটি হলে অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশায় নিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।

👨‍🦰আমার নিজের পরিচয়👨‍🦰


1666192548913_1666192548801_1666192548599_1666192548416_1666192548270_1666192548091_1666192547839_1666192547665_1666192022150.jpg

আমি আবুল বাশার খায়রুল আলম তুহিন। আমার বাসা মেহেরপুর জেলা,গাংনী থানা, জুগীর গোফা গ্রাম। আমি বিবাহিত। বর্তমানে আমার একটা পুত্র সন্তান আছে। আমি গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি রাজশাহী নিউ গভমেন্ট ডিগ্রী কলেজ থেকে। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি বাংলা ব্লগে কাজ করতে অনেক ভালোবাসি। এই ব্লগে কাজ করার মাধ্যমে আলাদা প্রশান্তি পায়। আমি ছবি আঁকতে,গান গাইতে,কবিতা লিখতে অনেক পছন্দ করি। এছাড়া আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করি। সংক্ষিপ্ত আকারে আমার নিজের পরিচয় আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য শুভকামনা রইলো।


Logo.png

(১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য )


4gZTTLyoV1msFb1u1BdB14ZHSP5sNg8hbP9cbJyTmUqfzLdXDsNijBKWNGJn5ogmozSiA7cyReMsKwomyC79dv8nHgZj3RKbXhPtULzHviAUBY9Vc8ousmvcnNywqK...hMHPzmtXdqcE25kuBukgtAciNVXSHonSRqmAmfHf9YgyuYwwZo1Nd9dUCogeVvSsKh3MRCxw1Khi2NyeZh4Rt4J9n7wTsZvJ1tiUMafwrMjZ5AQz2ERchsjjJv.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

3YjRMKgsieLsXiWgm2BURfogkWe5CerTXVyUc6H4gicdRPxFqYAEtmnwbJrshP4Tdaov4BmxkXJqLhx2USjht6Vy2soth7e34k1TKBQ2RZ2vXNJBF8X9uKH9aLNKFV...xU6W1ggWaLoBhkXz82k34bfNqfnFypapZe2oHzEHELJzLj6msr2RorLQSivfSXJaPiBZmUdQYzewFKsaGxDCyC6yRhEDYu8mNwzeEnkjmmjmpLrQEyQZKZnCTp.png

Sort:  
 last year 

এখন ক্রিকেট এর দাপট থাকলেও ফুটবল তার স্বমহিমায় বিরাজমান।ক্রিকেট খেলার থেকে বেশি দর্শক হয় ফুটবল খেলার মাঠে।আর ফুটবলেই উত্তেজনা বেশি। এমন একজন ফুটবল প্রেমী মানুষ সম্পর্কে জেনে ভাল লাগল। ধন্যবাদ ভাইয়া উনাকে আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।

 last year 

উনার মত এত ফুটবল ভক্ত লোক খুব কম দেখা যায়। এবং তিনি খুবই ভালো লোক ছিলেন ভাই।

 last year 

মামা আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ফুটবল প্রেমী এক মানুষের গল্প। আসলে আপনার লেখা গল্পটি পড়ে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আসলে এই করিম দাদাকে আমিও অনেক আগে থেকেই চিনি। আমি যেহেতু বিগত কয়েক বছর আপনাদের গ্রামে ছিলাম তাই এই ফুটবল খেলা খেলতাম আমাদের সাথেও এই করিম দাদা অনেক দূরে খেলা দেখতে যেত। এখন আর আমাদের মাঝে নেই তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। ধন্যবাদ মামা এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

 last year 

আসলে ভাগ্নে করিম দাদা আজ আমাদের মাঝে নাই৷কিন্তু এখনো তার কথা আমাদের গ্রামের লোক সবাই মনে করে। বিশেষ করে ফুটবল খেলার সময় বেশি।

 last year 

সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আমাদের মাঝে। আসলে ছেলেবেলা হতে দেখে এসেছি ফুটবল খেলা। এলাকায় অনেক ফুটবল টর্ণামেন্ট হতো তখন। আর ফুটবল খেলার উত্তেজনার কিছু সময় থাকে। আরে বুঝলেন না যখন গোল হতে যেয়েও গোল আর হয় না। তো বেশ ভালো লাগলো ফুটবল প্রেমি করিম জ
চাচার গল্প পড়ে।

 last year (edited)

আপু কমেন্টে নিচের দিকে ভুল হয়েছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65738.35
ETH 2677.27
USDT 1.00
SBD 2.91