ছেলের জন্মদিনের অগ্রিম আনন্দ

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago

আসসালামু আলাইকুম



আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ভাল আছেন নিশ্চয়ই। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালই আছি আলহামদুলিল্লাহ।



PhotoEditorPro_1710066373198.jpg


আজকে আমি আবার আপনাদের সামনে নতুন নতুন একটি ব্লগ হাজির হয়ে গেলাম । আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করব ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে অগ্রিম কেনাকাটা । দেখতে দেখতে আমার ছেলেটার ১টি বছর পার হয়ে গেল । ছেলেটার জন্মদিন আবার চলে আসলো । মনে হলো এইতো সেদিন ছেলেটার জন্ম হলো । দেখতে দেখতে সে এখন ছয় বছরে পা দিতে যাচ্ছে । সময় কত দ্রুতই চলে যায় । চোখের সামনে দিয়ে সে এতটা বড় হয়ে গিয়েছে অথচ এখনো মনে হয় যে সেদিন হসপিটাল থেকে ছেলেটাকে বাসায় নিয়ে আসলাম । সেই ছোট ছোট হাত পা ঠিকমতো খেতে পারত না কোন রকমে ড্রপার দিয়ে খাওয়াতে হতো । সারা শরীরে হাড্ডি ছাড়া কিছুই ছিল না ধরতে কষ্ট হতো গোসল করাতে কষ্ট হতো মনে হতো যেন কষ্ট পাবে সেদিন । তারপরও সবকিছু করতে করতে সময়টা চলে যায় । এখন সে সবই শিখেছে নিজে হাতে সবই করার চেষ্টা করে যদিও এখনো আমাকেই তাকে খাইয়ে দিতে হয় । খাওয়াটা তার একেবারে ইচ্ছাই করে না জোর করে তাকে খাওয়াতে হয় । সে বাইরের খাবার অনেক বেশি পরিমাণে খেয়ে থেকে ঘরের খাবার থেকে ।


জন্মদিন উপলক্ষে তার সেই এক বছর আগে থেকে কত পরিকল্পনা । আর প্রত্যেকটা দিন আমার মাথাটা খারাপ করে দেয় যে মা আমার জন্মদিনের আর কয়দিন আছে । প্রতিটা আঙুল গুনে গুনে তাদের জন্মদিনের ডেট গুনতে হয় । ১ বছর ৮ মাস ৯ মাস কি আর আঙ্গুল দিয়ে গুনে শেষ করা যায় । তারপরও তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাখা হতো । দেখতে দেখতে সে অপেক্ষার প্রহর এখন শেষ হয়েছে । আর মাত্র ১ দিন পরে ওর জন্মদিন । জন্মদিন উপলক্ষে সে কি করবে এবং তাকে কি দিতে হবে তার সে কত কি বায়না । আমাকে বলে রেখেছে জন্মদিনে কিন্তু তাকে বড় একটা গাড়ি কিনে দিতে হবে । তখন আমি বলেছি তুমি তোমার জন্মদিনে যেটা পছন্দ করবে সেটাই তোমাকে কিনে দেওয়া হবে । কবে গিফট কিনে দেবো, সেই কথা বলতে বলতে একেবারে আমার মাথাটা শেষ করে ফেলছিল । আমি ভেবেছিলাম জন্মদিনের দিন সকালবেলা গিয়ে ওর জন্য গিফট কিনে আনব কিন্তু ও সে সময়টা আমাকে দিল না । কালকে যেতে হল ওর জন্য গিফট কিনতে । যাকেই দেখছে সেখানেই বলছে যে আমার জন্মদিন এজন্য আমার মা আমাকে বড় একটা গিফট কিনে দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছে ।


দোকানে ঢুকে দোকানদারকে বলছে যে আজকে আমার তো জন্মদিন তাই আমি গিফট কিনতে এসেছি । সেখানে গিয়ে প্রত্যেকটা খেলনা সে চালিয়ে দেখছে এবং দোকানদার ভাইও খুব আগ্রহ নিয়ে তাকে সবগুলো খেলনা কিভাবে চালাতে হয় সেটা শিখাচ্ছে । সে প্রথমে নীল কালারের একটা ডাবল ডেকার বাস পছন্দ হয়েছে সেটা প্রথমে বার করে আমাদেরকে দেখানো হলো । সে বাসটা দেখতে অনেক সুন্দর তবে বাসের ডোর খুলে না দেখে সে সেটা নিতে তেমন একটা আগ্রহী না । এই বাসটার প্রাইজ চাইলো বাইশ টাকা । প্রথমে ভেবেছিলাম এটা ওকে কিনে দেবো পরে যখন সেটা পছন্দ করলো না তারপর আরেকটি গাড়ি বের করা হলো । সেটার ডোর সুন্দরভাবে খুলে সেটার প্রাইস চাইল ১৯০০ টাকা তখন সে ওটা নিতে চাইল । পরে দেখল যে রিমোট দিয়ে সেটাকে সে খুব একটা ভালো কন্ট্রোল করতে পারছে না । যার কারণে সেটাও বাদ দিল । পরে আরো একটি গাড়ি দেখল সেটা চাইলে ১৬০০ টাকা ওটা নিতে চাইল কিন্তু সেই গাড়িটা ছোট দেখে আর নিল না । পরে অনেক খুঁজে খুঁজে একটা ট্রেন বের করলো । অনেক ভালো লেগেছিল সেটার দাম 2500 টাকা । সেটা ওকে কিনে দিতে চাইলাম এবং সে সেটা কেউ অপারেট করতে খুব একটা পারবে না । দেখেই সে গাড়িটার একটা প্রবলেম মনে হয়েছিল । পরে সেটা বাদ দিয়ে প্রথম যে নীল বাস টা দেখেছিল সেটাই বাইশ টাকা দিয়ে ওকে কিনে দিলাম ।


গাড়িটা নেওয়ার পরে তাকে র‍্যাপিং পেপার দিয়ে যেভাবে গিফট দেওয়া হয় ঠিক সেভাবে করে মুড়িয়ে দিতে হয়েছিল । পরে বাসায় এনে সবাইকে দেখিয়ে আবার নিজের হাত খুলে নিয়েছে । গাড়িটা পেয়ে সে অনেক বেশি খুশি সারাদিন সে সেটা নিয়ে খেলছে আর দিন গুনছে কবে তার জন্মদিন আসবে । জন্মদিন উপলক্ষে আরো আয়োজন রয়েছে । আবার স্কুলে বন্ধুদের দেওয়ার জন্য দু প্যাকেট চকলেট কিনে রেখেছে । সে চকলেট গুলো জন্মদিনের দিন স্কুলে সে বন্ধুদের মাঝে বন্টন করবে ।এবং আবার গিয়েছিলাম ছেলের জন্য নতুন ড্রেস কিনতে । জন্মদিনে ছেলেকে নতুন ড্রেস পড়ে থাকবে এজন্য চলে গেলাম নতুন ড্রেস এবং সেখান থেকে ছেলের শার্ট প্যান্ট কেনা হলো সেটাও তার খুবই পছন্দ হলো । আসার সময় দেখলাম যে তার পাশেই নতুন একটা দোকান হয়েছে সেখানে বড়দের ড্রেসগুলো রয়েছে এবং সেখানে অনেক ছাড় দিয়েছে নতুন শোরুম ওপেন হওয়ার কারণে । তারা এই সেল টা দিয়েছে দু-তিন দিনের জন্য সেখানে ঢুকে কিছু কেনার চেষ্টা করল কিন্তু খুব একটা পছন্দ হলো না যদিও দুই একটা পছন্দ হয়েছিল তবে আজকে ছেলের জন্য কিনতে গিয়েছি তাই আমরা সেখান থেকে কিছু কিনলাম না । অবশেষে কেনাকাটা শেষ করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খেলাম বেইলিরোডে যাব আবার ফুচকা খাব না এটা কি হয় নাকি ।কিন্তু বেইলিরোড এখন আর আগের মত নেই এখন রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে সেই ফেবারেট ফুচকা গুলো আর পাওয়া যায়না চিকেন চাপ ও লুচি ও আর পাওয়া যায় না ।রাস্তায় কোন খাবারের দোকান পাওয়া যাচ্ছিল না । অনেক ঘোরাঘুরি করে এই ফুচকাওয়ালাকে পেলাম সেখান থেকে ফুচকা খেয়ে এবং ছেলের জন্য কিছু খাবার কিনে তারপর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । হাঁটতে হাঁটতে আমরা বাসায় চলে এসেছি ।কারণ অল্প একটু রাস্তা রিকশায় বসে জ্যামে পড়ে থাকার থেকে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম সেটাই ভালো হলো ।

animasi-bergerak-terima-kasih-0078.gif

আশা করছি আমার আজকের এই ব্লগটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

ফটোগ্রাফার@tauhida
ডিভাইসsamsung Galaxy s8 plus

ধন্যবাদ

@tauhida

আমি তৌহিদা, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।বাংলাদেশে আমার জন্ম।আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। আমি বিবাহিতা, এক সন্তানের মা। আমি রান্না করতে ও খেতে ভালোবাসি,আমি ঘুরতেও অনেক ভালোবাসি।

logo.gif

@tauhida

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

7258xSVeJbKkzXhyseBP4PYz11eBDT8sW2oR1a4vfVFS6JTrGU8e1FPUaNdHG5vjXyg2xthV78bDEmEVvKCQpyzX1kq8gAVzGsPp9GqJVRWxb6T9y35PZmQehnLjELdKKmnhdxQjDuny4.png *** VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR SET @rme as your proxy

witness_vote.png

Sort:  
 3 months ago 

ছেলের জন্মদিনের অগ্রিম আনন্দ নিয়ে চমৎকার একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপু। যেকোনো একটি অনুষ্ঠান হলে আগে থেকে ই সেই বিষয়ে অনেক আনন্দ হয়। আপনি আপনার ছেলের জন্য একটি গাড়ি কিনে তারপর সেটা আবার গিফট পেপার দিয়ে মুড়িয়ে তাকে দিয়েছিলেন জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপু।

 3 months ago 

আমার পোস্টটি পড়ে সুন্দর একটি মতামত দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ।

 3 months ago 

সত্যিই আপু বাচ্চারা অনেক দ্রুত বড় হয়ে যায়।দেখতে দেখতে চোখের সামনে ওদের বড় হওয়া দেখা তারপরো বিশ্বাস হয়না এত্তো বড় হয়ে গেছে।প্রতিটি সন্তানই যেনো বাবা-মায়ের কাছে সেই ছোট্ট টিই রয়ে যায় আজীবন।বাবুর জন্য জন্মদিনের অগ্রীম শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো।হাসিখুশি ও আনন্দে কাটুক ওর জীবন।🙏❤️❤️

Posted using SteemPro Mobile

 3 months ago 

ঠিকই বলেছেন আপু বাচ্চাটা যে কখন চোখের সামনে বড় হয় আর বড় হলেও মনে হয় যে সেই ছোটটিই রয়ে গেছে । ধন্যবাদ আপু আপনাকে ।

 3 months ago (edited)

আসলে বাচ্চারা যে কতো দূত বড় হয়ে যায় বুঝা মুশকিল ।আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে বর্তমান বাচ্চারা জন্মদিনের কথা অনেক মনে রাখে।আর যদি গিফট দেওয়ার কথা থাকে তাহলে তো কথায় নেই। যাইহোক বেশ ভালো করেছেন বাচ্চার জন্য গিফট কিনে দিয়ে। তবে আমরা দাওয়াত পেলাম না যে।

Posted using SteemPro Mobile

Posted using SteemPro Mobile

 3 months ago 

চলে আসলে দাওয়াত পাবেন । আর জন্মদিনে খুব একটা আয়োজন করা হয়নি নিজেরা নিজেরাই করেছি ।

 3 months ago 

প্রথমেই আপু আপনার ছেলেকে জানাই তার জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। চোখের এমনি মিশেই যেন সন্তানরা বড় হয়ে যাচ্ছে এরকমটাই মনে হয়। কিন্তু প্রত্যেকটা বাবা-মায়ের কাছে তাদের প্রত্যেকটা সন্তান সবসময় ছোট থাকে। আসলে সময় কখনো কারো জন্য অপেক্ষায় থাকে না। আর ঠিক তেমনভাবেই বাচ্চারা বেড়ে উঠতেছে। ছোট বাচ্চারা এরকমই হয়। নিজের জন্মদিন কখন আসতে চলেছে এটাই হিসাব করতে করতে দিন শেষ। আজকে আপনি ছেলের জন্মদিনের অগ্রিম আনন্দটা শেয়ার করেছেন সবার মাঝে। নিশ্চয়ই এগুলো পেয়ে সে অনেক বেশি খুশি হয়েছিল।

 3 months ago 

ঠিকই বলেছেন প্রত্যেকটা বাবা-মার কাছে সন্তান সারাজীবন ছোটই থাকে । আসলেই জন্মদিনের দিনগুলি হিসাব করতে করতে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল দেখতে দেখতে সেই সময়টা চলে এলো ।

 3 months ago 

আপনার ছেলের জন্মদিনের জন্য শুভেচ্ছা জানাই অনেক বেশি। দোয়া করি যেন আপনার ছেলে বড় হয়ে ভালো কিছু করতে পারে। এমনকি মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। ছোটদেরকে তাদের জন্মদিনে যদি গিফট দেওয়া হয়, তাহলে তারা এত খুশি হয় যে তাদের আর কোন কিছুরই প্রয়োজন হয় না। আপনার ছেলেও নিশ্চয়ই গিফট গুলো পেয়ে খুব খুশি হয়েছিল আপু। প্রত্যেকটা সন্তান বাবা-মায়ের জন্য সৃষ্টিকর্তার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার হয়। আর আপনার ছেলে দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছে। দোয়া করি তার জন্য প্রতিনিয়তই।

 3 months ago 

জন্মদিনের গিফট না পেলে তো জন্মদিনই বৃথা। সবকিছু মিলিয়ে সময়টা ভালোই কাটানোর চেষ্টা করছে ।

 3 months ago 

বাচ্চারা কিভাবে বড় হয়ে যায় চোখের সামনে সে টি আসলেই বোঝাই যায় না। দেখতে দেখতে সবগুলো বাচ্চা বড় হয়ে যাচ্ছে। জন্মদিন উপলক্ষে আগেই কেনাকাটা করেছে বেশ ভালোই করেছে। গিফটটা আগে আগেভাগে পেলে বেশ শান্ত থাকবে। ভালো লাগলো মূহুর্ত টা।জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ফানাকে ।অনেক অনেক বড় হও এই দোয়া রইলো।

 3 months ago 

এজন্য আগেভাগে কিনে দিলাম সেটা নিয়েই সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করছে ।

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.11
JST 0.030
BTC 67708.83
ETH 3801.89
USDT 1.00
SBD 3.48