একজন মায়ের গল্প শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম



আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ভাল আছেন নিশ্চয়ই। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালই আছি আলহামদুলিল্লাহ।



image.png
Link


আজকে আমি আবার আপনাদের সামনে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম । আজকে আপনাদের সাথে একটি গল্প শেয়ার করবো । আসলে বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখতে গেলে একই রকম গল্প হয়ে যায় কারণ চোখের সামনে যেসব গল্প আমরা দেখি সেগুলোই বারবার ভেসে উঠে । এই জন্য কোন মানুষের জীবন কাহিনী নিয়ে লিখতে গেলে সেটা সুন্দরভাবে গুছিয়ে লেখা সম্ভব এবং সুন্দর একটি গল্প তৈরি হয় । মানুষের জীবনে প্রতি নিয়ত বিভিন্ন গল্প ঘটে থাকে আর প্রত্যেকটা ঘটনায় তো আর গল্প আকারে লেখা সম্ভব না । গল্প আকারে লিখতে গেলে গুছিয়ে সুন্দর একটি কাহিনী যদি হয় তখনই সেটা লেখা সম্ভব হয় । সুখ দুঃখ মিলিয়ে মানুষের জীবন । সেই জীবন থেকে সবকিছু মিলিয়ে কিছু একটা তুলে ধরেই আজকে আমি আমার গল্পটি সাজিয়েছি । খুবই সাধারন কিছু কথা নিয়ে নিয়েই একটি মায়ের গল্প আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো । গত পর্বে শেষ করেছিলাম জোসনার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করার পরও সে ওখানে মেয়েদের কথা চিন্তা করে টিকে ছিল । তার পর থেকে লিখছি ।


দেখতে দেখতে সেই ঘরেরও সন্তান হয় এবং আস্তে আস্তে জোসনা অবহেলিত হতে থাকে । সে একটু অশান্তির মধ্যে দিয়ে দিন পার করছিল । এরকম চলতে চলতে জোসনা একটা সময় সিদ্ধান্ত নেয় সে তার মেয়েদেরকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যাবে । পরে সে মেয়ে তার মেয়ে দুটোকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় । তার বাবার বাড়ির অবস্থাও ভাল নয় যার কারণে তাকে ঢাকার চলে আসতে হয় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য । ঢাকায় এসে জোসনা মেয়ে দুটোকে একটা স্কুলে ভর্তি করে এবং সে সেলাইয়ের কাজ শুরু করে । জোসনা আগে থেকে সেলাইয়ের কাজ জানতো যার কারণে সে এই কাজটা ভালো ভাবে করতে পারছিল ।জোসনার কাজকাম ভালোভাবে চলছিল কিন্তু সেটা দিয়ে জোছনার সংসার তেমন একটা ভালো চলছিল না । এরপর আবার মেয়ে দুটিকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছে এজন্য সংসার চালাতে জোসনা মোটামুটি হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল ।


এদিকে জোসনা বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পর তার স্বামী তার ও মেয়েদের কোন খোজ খবর নেয়নি ।যার কারণে পুরো দায়িত্বটা জোসনার নিজেরই পালন করতে হচ্ছিল । জোসনা সেলাইয়ের পাশাপাশি বাসা বাড়িতে কাজ কাম নিলো । বড়লোক বড়লোক বাড়ি দেখে কাজে ঢুকেছিল । সেখান থেকে কাজ কাম করে যা আয় করত তা দিয়ে জ্যোৎস্নার সংসার খুব সুন্দর ভাবে চলছিল ।শত কষ্ট হলেও মেয়েদের দিয়ে সে কোন কাজ করাতো না ।এদিকে দেখতে দেখতে মেয়ে দুটো বড় হয়ে ওঠে । মেয়েরা আস্তে আস্তে তার বাবার সাথে যোগাযোগ করতে থাকে এবং সেখানে গিয়ে তারা ২-১ দিন বেড়াতেও যেত এতে জোসনার কোনো আপত্তি ছিল না কারণ তার স্বামী ছাড়া অন্য সবার সাথে জোসনার যোগাযোগ ভালো ছিলো ।


অনেকদিন পর বাবা তার মেয়েদের দেখলে খুশিই হত ।এদিকে জোসনার নামে যে সম্পত্তিটুকু ছিল সেই সম্পত্তিটুকু পরে তারা দিতে অস্বীকার করে । জোসনা লোকজন ধরে অনেক ঝামেলার পরে তার সম্পত্তিটুকু সে আবার ফিরে পায় । মেয়ে দুটো মোটামুটি দেখতে ভালই সুন্দর ছিল তারা পড়ালেখাটা চালিয়ে যাচ্ছিল এবং দেখতে দেখতে দুইটি মেয়ে ইন্টারমিডিয়ে পাশ করে ফেলে । এরপর বড় মেয়েটা যখন ইন্টার পাশ করে তখনই ভালো একটা বিয়ের সম্বন্ধ আসে ছেলেটা বিদেশে থাকে । মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দেয় এরপর স্বামীর সংসার করতে থাকে বড় মেয়েটা । করোনা কালীন সময়ে অনেক বাসা বাড়ির কাজ ছুটে যায় সেখানে জোসনাকেউ বাসা বাড়ির কাজ ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে হয় ।


এর ভিতরে দেখতে দেখতে জোসনার ছোট মেয়েটিও ইন্টার পাশ করার পরে তারও ভালো একটা চাকরিজীবী ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায় । এরপর জোসনা দুটি মেয়েরই বিয়ে দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে ঝাড়া হাত-পা হয়ে ওঠে । জোসনার অসুস্থ মা বাড়িতে একা থাকত তাদের যেহেতু ভাই ছিল না তাই মেয়েদেরকেই মাকে দেখাশোনা করতে হতো । এখন জোসনা আর জ্যোৎস্নার মা খুব সুন্দর ভাবে বাড়িতে রয়েছে এবং মেয়ে দুটো ভালো ফ্যামিলিতে বিয়ে হওয়ার কারণে তাদের ভালোভাবে চলছে এবং তার জোস্নাকেও দেখছে । জোসনার মেয়ের ফ্যামিলি এবং জোসনার ফ্যামিলি খুব সুন্দর ভাবে চলে যাচ্ছে । দেখতে দেখতে জোসনার নাতি নাতনি হয়েছে ।জোসনার এখন সুখের সময় । একটা সময় মেয়ে দুটোকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছে আল্লাহ এখন তার দিকে চোখ তুলে চেয়েছে । তার এখন দুঃখ নেই বললেই চলে । আল্লাহর রহমতে সে এখন বেশ ভালই দিন পার করছে । মানুষের জীবনের দুঃখের পরে সুখ আসে । আল্লাহ সুখ দুঃখ মিলিয়ে মানুষের জীবনটাকে সৃষ্টি করেছেন । সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে চলা উচিত ।

animasi-bergerak-terima-kasih-0078.gif

আশা করছি আমার আজকের এই ব্লগটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

ডিভাইস| samsung Galaxy s8 plus

ধন্যবাদ

@tauhida

আমি তৌহিদা, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।বাংলাদেশে আমার জন্ম।আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। আমি বিবাহিতা, এক সন্তানের মা। আমি রান্না করতে ও খেতে ভালোবাসি,আমি ঘুরতেও অনেক ভালোবাসি।

logo.gif

@tauhida

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

Sort:  
 6 months ago 

এই গল্পের প্রথমটা সত্যিই অনেক বেশি কষ্টের ছিল। জোসনা তার দুই মেয়েকে নিয়ে তার স্বামীর বাড়ি থেকে ঢাকায় যেয়ে ভালোই করেছে। সে তার মেয়ে দুটোকে মানুষের মতো মানুষ করতে পেরেছে এটা দেখে খুব ভালো লাগলো। দুই মেয়েকে ভালোভাবে পড়াশুনা করিয়ে ভালো জায়গায় বিয়ে করিয়েছে এটা দেখে অনেক ভালো লাগলো। আর এখন জোসনা তার মায়ের সাথে আছে এবং মেয়ে দুটো ও দেখাশুনা করছে তার মাকে। এগুলো দেখে বুঝতেই পারছি জোছনা এখনো অনেক সুখী। গল্পের শেষটা সত্যি অনেক সুন্দর ছিল আপু।

 6 months ago 

ঠিক বলেছেন প্রথমদিকে কষ্ট করেছিল মেয়েটি । পরে আসলেই অনেক সুখে আছে । যেটা শুনে ভালই লাগে ।

 6 months ago 

খুবই কষ্টদায়ক একটি গল্প শেয়ার করেছেন। এর প্রথম পর্বের মধ্যে আপনি বলেছিলেন যে জোসনা তার স্বামীর বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে তার মেয়েদেরকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য৷ সে ঢাকায় গিয়ে তার মেয়ে দুটোকে মানুষের মত মানুষ করতে পেরেছে শুনে খুবই ভালো লাগলো৷ সে তার জীবনের একটি সফলতা অর্জন করে ফেলল৷ দুই মেয়েকে ভালোভাবে পড়াশোনা করানোর পর ভালো জায়গায় বিয়ে দিয়েছে শুনে খুবই ভালো লাগলো৷ অনেক ধন্যবাদ এই গল্পের শেষ পর্বটি খুবই সুন্দরভাবে শেয়ার করার জন্য৷

 6 months ago 

স্বামীর বাড়ি থেকে চলে এসে ভালোই করেছিল যার কারণে ও মেয়েদেরকে মানুষ করতে পেরেছে । ওখানে থাকলে হয়তো মেয়ে দুটো আর মানুষ হতো না ।

 6 months ago 

গল্পের প্রথম দিকে একটু দুঃখ থাকলেও শেষের দিকে বেশ ভালো লেগেছে কারণ সবকিছুই ঠিকঠাক ভাবে জোসনা গুছিয়ে নিতে পেরেছে। তার দুইটা মেয়েই ভালো আছে আবার সে তার মাকে নিয়ে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করছে। আসলে ধৈর্য ধারণ করে যদি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় তাহলে সুখের দিন আসবেই ইনশাল্লাহ।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

সবকিছু গুছিয়ে নিতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল । কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়ে দুটোকে সুখী করতে পেরেছে এটাই বড় কথা ।

 6 months ago 

জোসনার জীবনের শেষে এরকম কিছু হয়েছে, এটা ভাবতেই ভালো লাগতেছে। আসলে একটা মানুষের দুঃখের জীবন সারা জীবন থাকে না। দুঃখের পরেই সুখ আসে। জোসনা পেরেছে নিজের সন্তানদেরকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। সে তার স্বামীর এরকম সংসার থেকে চলে এসেছে এটা ভালো করলো। কারণ ওখানে থাকলে সে কোন কিছুই করতে পারত না। বরং অনেক বেশি অবহেলিত হতো। তার মেয়েদের ভালো জায়গায় বিয়ে হয়েছে এটা শুনেও খুশি হলাম। এখন জোসনা অনেক সুখে রয়েছে। এরকম ভাবেই যেন সে অনেক সুখে থাকে এটাই কামনা করি।

 6 months ago 

এ ধরনের স্বামীদের সংসার ছেড়ে চলে আসাই উচিত। যারা এক স্ত্রী থাকতে অন্য স্ত্রী নিয়ে আসে তাদের সাথে কখনো সংসার করা উচিত নয় । কষ্ট করে হলেও নিজে বেঁচে থাকা উচিত ।

 6 months ago 

আপু আপনার গল্পটির প্রথম পর্ব পড়েছিলাম আজ শেষ পর্বটি পড়লাম। সত্যি বেশ ভালো লাগলো ।আসলে অনেক কষ্টের পরে শেষে জোসনা সুখের মুখ দেখেছে। বেশ ভালো লাগলো ।মেয়ে দুটিকেও সে মোটামুটি শিক্ষিত করেছে এবং ভালো ঘরে বিয়ে দিয়েছে যার কারণে জোছনা এখন বেশ ভালো আছে। বেশ ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 6 months ago 

শিক্ষিত করেছিল বিধায় ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পেরেছে । আর জোছনা এখন মেয়ে দুটোর সুখ দেখে নিজেও অনেক সুখে আছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58752.84
ETH 3153.55
USDT 1.00
SBD 2.44