★একটি মেয়ের জীবনের কাহিনী★ পর্ব:১

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)

image.png

Link

আসসালামু আলাইকুম



আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ভাল আছেন নিশ্চয়ই। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালই আছি আলহামদুলিল্লাহ।




আজ আমি আপনাদের সামনে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি । এই কমিউনিটিতে এমন অনেকেই আছে যারা সুন্দর সুন্দর গল্প লিখে সেগুলো পড়তে ভালই লাগে । মাঝে মাঝে আমি অনেকের গল্প পড়ি । যেটা আসলেই অনেক ভালো লাগে । আবার এমনও অনেকেই লিখে যেগুলো একেবারে সত্য ঘটনা অবলম্বনে । আমাদের আশেপাশে অনেক ঘটনা রয়েছে যেগুলো আমরা দেখে থাকি সেগুলো যদি গল্প আকারে লিখতে যাই তাহলে সে লেখার কোন শেষ নেই । আমাদের এই কমিউনিটিতে আসার পরে আমরা অনেকে আছি অনেক কিছু শিখেছি । অনেকে সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখে কিন্তু কবিতা লেখা আমার দ্বারা কখনো সম্ভব নয় । আমরা এই কমিউনিটিতে আসার পরে যেটা শিখেছি বা শিখছি সেটা আমাদের জন্য অনেক ভালো একটি বিষয় । আমরা যে এত কিছু পারি সেটা এখানে না আসলে জানতেই পারতাম না । আর এখানে আমাদের ছোট ছোট কাজের অনেক মূল্যায়ন করা হয় যার কারণে আমরা আমাদের কাজের প্রতি উৎসাহ পাই । আজকে আমি সত্য ঘটনা অবলম্বনে একটি গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরছি ।


শহরে বসবাসরত একটা পরিবার । তারা অনেকদিন হলো একসাথে বসবাস করছে স্বামী-স্ত্রী । লোকটা সরকারি ব্যাংকে বড় একটা পদে জব করে আর মহিলাটি একজন হাউজ ওয়াইফ। মহিলাটি ঢাকায় বসবাসরত বড় পরিবারের একটি মেয়ে ছিল আর লোকটা গ্রামের মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির শিক্ষিত একটি ছেলে । বিয়ের অনেক দিন পর্যন্ত তাদের কোন সন্তান আসেনি । বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করার পরে তাদের ঘর আলো করে একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে । তাদের অনেক সাধনার সন্তান । তারা অনেক ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে তার নামকরণ করেন। মেয়েটার নাম আমি এখানে তরী রেখে নিলাম ।


মা-বাবার অনেক আদর তরী বড় হচ্ছিল । মায়ের যেন চোখের মনি ছিল তরী । দেখতে দেখতে সে অনেকটাই বড় হয়ে গেল । এদিকে ওর মায়ের আর দ্বিতীয় কোন সন্তান হলো না অনেক চেষ্টার পরেও তারা আর দ্বিতীয় সন্তান নিতে পারেনি । তাদের এখন এই একটাই সন্তান ওই ছিল তাদের একমাত্র বেঁচে থাকার অবলম্বন । তরী ওর মায়ের চোখের মনি, ও যেন কিছুতেই বড় হচ্ছিল না ওই মায়ের কাছে । সেই ছোটটি রয়ে গিয়েছিল সারাটি জীবন । দেখতে দেখতে তরী বড় হয়ে গেল ।তরী বড় হতে হতে তার মা বাবা মেয়েটির নামে অনেক ব্যাংক ব্যালেন্স করল । কারণ তাদের একটি মেয়ে আর তাদের টাকা পয়সার কোন অভাব ছিল না । বিয়ের আগেই তার মা বাবা মেয়েটির জন্য অনেক স্বর্ণালংকার বানিয়ে ছিল এবং সেগুলো ব্যাংকের লকারে রেখে দিয়েছিল এবং অনেক ব্যাংক ডিপোজিট ছিল ।


এদিকে তরীর মা তার বাবার বাড়ি থেকে বিশাল বড় একটা সম্পত্তি পায় ঢাকা শহরে । সেটির উপরেই তারা ৬ তলা বাড়ি করে সেখানে বসবাস করছিল। বাড়িটা তরীর বাবাই তৈরি করে । তাছাড়া ঢাকায় তাদের আরো প্রপার্টি রয়েছে । একটা মেয়ে হিসেবে তার যতটুকু থাকা দরকার তার থেকে অনেক বেশি পরিমাণে তাদের ছিল । দেখতে দেখতে তরীর বিয়ের বয়স হয়ে গেল । তারা গ্রামের মধ্যবিত্ত একটা শিক্ষিত ছেলের সাথে তরীর বিয়ে দিয়ে দিল। ছেলেটাও একতা বেসরকারি ব্যাংকে খুব ভালো জব করে । ছেলেটা বাড়ি ছিল গ্রামে সে কারণে তারা ছেলেটাকে ঢাকা শহরে নিজেদের কাছে রাখতে পেরেছিল । নিজেদের একেবারে ঘরে রাখলে লোকজন খারাপ বলবে বিধায় তারা চারতলায় মেয়ের জন্য একটা বড় ফ্লাট দিয়েছিল যেখানে ওরা বসবাস করত ।


বিয়ের সময় তরীকে সব ধরনের ফার্নিচার দিয়ে ওর ঘরটা তারা সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিল এবং তারা খুব সুন্দরভাবেই বসবাস করছিল । উপরে নিচে করে সারাটাক্ষন মেয়ের ও মায়ের সময়টা কাটতো । কারণ তরীর উপরে বাসা ছিল ঠিকই কিন্তু সারাটা সময় সে তার মায়ের সাথেই থাকতো । মায়ের কাছে তার মেয়ে সবসময় ছোটই ছিল । কোন কিছুই যেন সে পারতো না ।সবকিছু তার মা করে দিত এতে করে আত্মীয়-স্বজনরাও নানা ধরনের কথা বলতো । ওর মাই নাকি মেয়েটাকে নষ্ট করছে । আর এদিকে ছেলেটাও গরিব ঘরের হওয়াতে তারা ছেলেটাকে একেবারে ঘর জামাই করে রেখেছে বাড়িতে তো ছেলেটা যাই না এ ধরনের কথা বলতো । আসলে আশেপাশের লোকজন যারা যেটা যা বলার বলেছে কিন্তু ছেলেটা তো চাকরি করছে । তার তো একটা বাসার দরকার ছিল । এদিকে তাদের কোন ছেলের সন্তান ছিল না তার কারণে তারা কাছেই রেখে দিয়েছিল ।


দেখতে দেখতে তরীও একদিন প্রেগন্যান্ট হলো । তরীর যেদিন বাচ্চা হবে তার দুই দিন আগে হঠাৎ করে তরী টের পেলে যে আজ দুদিন হয়ে গিয়েছে তার বাচ্চাটা পেটের ভেতরের নড়াচাড়া করছে না । তরী একটু কম বুঝত যার কারণে সে বুঝেই নাই তার বাচ্চাটা দুতিনদিন হয়ে গিয়েছে পেটের ভিতর নড়াচড়া করে না। তখন ওরা দ্রুত হাসপাতালে গেল এবং চেকআপ করে দেখল যে বাচ্চাটা তার পেটের ভেতরেই মারা গিয়েছে । তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। হাসপাতালে একেবারে নরমাল ডেলিভারি করে বাচ্চাটাকে বের করতে হবে । পেইন না ওঠা পর্যন্ত কিছু করা যাবে না । তাকে ফুল পেইন ওঠার ওষুধ দেওয়া হলো। সারাটা রাত নরমাল ডেলিভারি পেইন নিয়ে মেয়েটা অনেক কষ্ট করলো এবং ভোরের বেলা সে একটি মৃত সন্তান প্রসব করে । কিন্তু মেয়েটা কেমন যেন একটু বোধ বুদ্ধিহীন ছিল । এত বড় একটা আঘাত পাওয়ার পরেও সে তেমন একটা অনুভূতি প্রকাশ করেনি । এদিকে ওর বাবা-মা একেবারে ভেঙে পড়েছিল মেয়ের এতবড় একটা দুর্ঘটনা দেখে।

চলবে............

animasi-bergerak-terima-kasih-0078.gif

আশা করছি আমার আজকের এই ব্লগটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে। জানিনা কতটুকু গুছিয়ে লিখতে পেরেছি। কষ্ট করে বুঝে নেওয়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

ডিভাইস samsung Galaxy s8 plus

ধন্যবাদ

@tauhida

আমি তৌহিদা, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।বাংলাদেশে আমার জন্ম।আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। আমি বিবাহিতা, এক সন্তানের মা। আমি রান্না করতে ও খেতে ভালোবাসি,আমি ঘুরতেও অনেক ভালোবাসি।

logo.gif

@tauhida

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

Sort:  
 last year 

আপু খুব সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ইচ্ছে করছে একদিনে সম্পূর্ণ গল্প পড়ে শেষ করে দেই। কিন্তু কিভাবে পড়বো আপনি তো প্রথম পর্ব দিয়ে চলবে লিখে দিলেন। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় বসে রইলাম। তরীর বাচ্চা মারা যাওয়ার পর তার জীবনে কি কোনো পরিবর্তন হবে? অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ধন্যবাদ।

 last year 

গল্পটি অনেক বড় এজন্য এক পর্বে লিখে শেষ করা যায় না । দেখা যাক পরবর্তীতে কি হয় অপেক্ষায় থাকুন ।

 last year 

আমার বাংলা ব্লগের প্রতিটি সদস্য সবদিক থেকেই সেরা। তারা নিজেদের সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখা আপনার কাহিনী পড়ে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম। তরীর জীবনে কি ঘটলো সেটা জানার জন্য বেশ ইচ্ছে জেগেছে। তবে বেশ বেদনাদায়ক আরো কিছু বিষয় হয়তো সামনে আসবে বোঝাই যাচ্ছে।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

আসলেই ভাইয়া অনেক বেদনাদায়ক কিছু সামনে আছে ।

 last year 

একটা মেয়ের জীবনের কাহিনী প্রথম পর্ব পড়ে প্রথমদিকে ভালোই লাগছিল, তবে শেষে অনেক বেশি খারাপ লাগলো। তরী বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে তারা তাকে অনেক বেশি আদর যত্ন করতো। কিন্তু তরীর মৃত সন্তান জন্ম নেওয়ার পরেও সে তেমন একটা অনুভূতি প্রকাশ করেনি এটা জেনে বেশ অবাক লেগেছে। মেয়ের এরকম দুর্ঘটনা দেখে বাবা-মা তো অনেক বেশি ভেঙে পড়েছিল। পরবর্তীতে কি হলো তা জানার জন্য পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

 last year 

অনুভূতি প্রকাশ করেছে তবে একজন মা হিসেবে যতটা আপসেট হওয়ার দরকার ছিল ততটা আপসেট হয়নি । ও নিজেও তখন ছোট মানুষ ছিল ।

 last year 

আপনি তো দেখছি একটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে অনেক সুন্দর একটা গল্প লিখেছেন। যদিও এই গল্পটার প্রথম পর্ব আজকে শেয়ার করেছেন কিন্তু পড়ে খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু তরীর পেটে মৃত সন্তানের কথা শুনে খুব খারাপ লেগেছে। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় তরী মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছিল কিন্তু তার মধ্যে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। যদিও আমার মাথায় একটাই বিষয় ঘুরছে, একটা মা কিভাবে এরকম হতে পারে। মৃত সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেও সে তেমন কোন কিছুই অনুভব করে নি। আমার তো অনেক বেশি আগ্রহ জাগছে , পরবর্তীতে কি হয় তা জানার জন্য। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি শেয়ার করবেন।

 last year 

প্রভাব পড়নি সেটা তো বলিনি বলেছি যে যতটা বেশি ভেঙে পড়ার কথা ছিল ততটা ভেঙে পড়েনি । মেয়েটা অনেক শক্ত ছিল এটাই বোঝাতে চেয়েছি ।

 last year 

ঘটনার প্রথম পর্যায়টি ছিল মনোমুগ্ধকর কিন্তু লাস্টের দিকে এতটাই খারাপ লাগলো যা কখনোই কল্পনা করেনি। জানি না এর পরবর্তী পর্যায়ে এটা কোন দিকে গড়িয়েছে। অবশ্য পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

 last year 

পরবর্তী পর্বগুলো আরো বেদনাদায়ক এজন্য একটু ধীরে ধীরে লিখছি ।

 last year 

প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি সুন্দর একটি গল্প লেখার জন্য । আসলে আমার বাংলা ব্লগের আমরা সবাই সবকিছু করতে পারি । যার অনুপ্রেরণা পেয়েছি আমাদের এই কমিউনিটি থেকে । প্রতিটি কাজ কে সত্যিই বেশ মূল্যায়ন করা হয় যার জন্য আমরা কাজে এত বেশি উৎসাহ পাই ।আপনার গল্পটি বেশ ভালো ছিল ।পরবর্তীতে মেয়েটির জীবনে কি হয় জানার অপেক্ষায় রইলাম।

 last year 

আপনাদের লিখা দেখে আমিও সাহস করে লিখে ফেললাম আপু । আপনাদের ভালো লাগলেই আমার সার্থকতা ।

 last year 

তরীকে তার মা-বাবা অনেক আদর করে। তাদের আর অন্য কোন সন্তান ছিল না বিদায় তীর তার মা-বাবার কাছে চোখের মনি হয়ে উঠলো। আসলে প্রত্যেক মায়ের কাছে তার সন্তান এখনো ছোট লাগে। একমাত্র মেয়ের জন্য তারা সবকিছুই করেছে। আসলে তীরের জন্য একটু খারাপ লাগলো। কারণ ডেলিভারির সময় তার বাচ্চাটি মারা গেল। দেখতেছি এখনো পর্যন্ত তীরের সংসার জীবনে কোন অশান্তি দেখতেছি না। দেখি পরের পড়বে তীরের কপালে কি কটেছে তা জানতে পারবো। আশা করি তাড়াতাড়ি পরপর আমাদের মাঝে শেয়ার করবেন।

 last year 

একটি মাত্র বাচ্চার তো এজন্য বাবা-মা তাদের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছে । ধন্যবাদ আপু আমার গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য ।

 last year 

আপু আপনার আজকের গল্পটি পড়ে আমার ও এমন একটি গল্প মনে পড়ে গেল। ভাবছি আমিও শেয়ার করবো। আসলে আমার কিন্তু মনে তরীর সহ্য ক্ষমতা অনেক বেশী তাই সে সন্তানের শোকে অনুভূতিহীন থাকতে পেরেছে। জানিনা আগামীতে কি রয়েছে। অপেক্ষায় রইলাম।

 last year 

আসলেই ওর সহ্য ক্ষমতাটা একটু বেশি । অনেক ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য ।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.17
JST 0.031
BTC 86983.34
ETH 3345.59
USDT 1.00
SBD 2.84