জীবন কাহিনী: আমার মায়ের জীবনের গল্প।।
হ্যালো বন্ধুরা,
সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও মোটামুটি ভালো আছি। তবে ছেলের এত ঠান্ডা লেগেছে তারজন্য কিছুই ভালো লাগে না। যাই হোক কাজের কথায় আসি আজ আবারও নতুন একটি পোস্ট নিয়ে চলে এসেছি। আজকে কোনো গল্প নয় তবে গল্পের মতোই জীবন কাহিনী শেয়ার করতে চলে এসেছি। এই কাহিনী অন্য কারোর নয় আমার নিজের মায়ের। কথায় আছে, "মানুষের জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়"। আমরা যে নাটক সিনেমা দেখি এগুলোর গল্প বাস্তব থেকেই খুঁজে নিয়ে করা হয়। সাধারণত দেখেন আপনি যদি ছোটবেলা থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত আপনার জীবনে যা ঘটেছে তা সম্পূর্ণ লিখেন তাহলে দেখবেন সেই গল্প দিয়েই একটা সিনেমা হয়ে যাবে।
নাটক সিনেমার গল্পের শেষ রয়েছে কিন্তু মানুষের জীবনের গল্পের কোনো শেষ নেই। খাতায় লিখতে গেলে খাতার পাতা শেষ হয়ে যাবে, কলমের কালি শুকিয়ে যাবে কিন্তু জীবন কাহিনী কখনো লেখা শেষ হবে না। আমার মায়ের জীবনে কতটা কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে আমার সম্পূর্ণ পোস্ট পড়লে বুঝতে পারবেন। কথায় আছে,"অতিরিক্ত শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়। আমার মায়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে।</>
আমার মায়েরা দুই বোন এক ভাই ছিল। মা র বিয়ের পর কয়েক বছর ভালোই চলছিল। যখন আমার বড় ভাইয়া হয় তার কয়েক মাস পর আমার মামী মারা যায়। আমার মামীর ভিতরে ভিতরে জন্ডিস ছিল কেউ জানতো না। এরপর একসময় সেই জন্ডিস অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় মারা যায়। তার একমাসের মাথায় আমার মামাও মারা যায়। তাদের ঘরে একটি মেয়ে ছিল। তখন আমার নানা নানী খুব অসহায় হয়ে পড়ে।
এরপর থেকে আমার মা নানা বাড়িতেই থাকে। তারপর আমার বয়স যখন দুই বছর তখন আমার নানা মারা যায়। এতে করে আমার নানী আরও বেশি ভেঙ্গে পড়ে। এভাবে সময় চলতে থাকে আর একসময় আমরা আমাদের নিজ বাড়িতে চলে আসি। আমাদের বাড়িতে চলে আসার কারণ আমরা নানু বাড়ি থাকি বলে আব্বুকে আশেপাশের মানুষ অনেক কথা বলে। এরপর এভাবেই কেটে যায় ছয় বছর। একদিন সন্ধ্যায় আব্বু বাজার থেকে এসে মা কে বলে তাড়াতাড়ি রেডিও হও তোমার মা অনেক অসুস্থ। তখন মা বারবার জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। কিন্তু আব্বু কোনো উত্তর দিতে পারেনি।
তখনই মা বুঝতে পেরেছিল নানুর কিছু একটা হয়েছিল। এরপর আমরা তাড়াতাড়ি নানু বাড়ি চলে যাই। গিয়ে দেখি বাড়ি ভরা মানুষ জনে। সেই দিন মা অনেক কান্না করেছিল। আমি তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি আর ছোট ছিলাম বলে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো জ্ঞান বুদ্ধি ছিল না। ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গিয়েছি এর মধ্যে আমার খালাম্মা তিনিও মারা গিয়েছেন। যখন মা তার মা, বাবা, ভাই,বোন সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। তখন একমাত্র আমার আব্বুকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু কে জানে নিয়তির পরিহাস তাকেও চলে যেতে হবে। অবশেষে সবাইকে হারিয়ে মা এখন একা রয়েছে।
যখন মায়ের সবার কথা মনে পড়ে তখন তার কান্না থামানো যায় না। এক এক করে সবাইকে হারিয়ে ফেলেছে। এত পরিমাণ কষ্ট পেয়েছে যার জন্য এখন তিনি পাথর হয়ে গিয়েছে। আমরা ভাই-বোনেরা মিলে সবসময় চাই মা কে আনন্দে রাখতে। তবে আমি কতটুকু পারি জানি না কিন্তু আমার ছোট ভাই আমার মা কে খুব যত্নে রাখে। মা যা বলে যেখানে যেতে বলে সেখানে নিয়ে যায়। আমরা কখনো তার কষ্টের কথা মনে করতে দেই না। কিন্তু মন কি মানে, যখন একা থাকে তখনই কান্না শুরু করে। আমার নিজেরই তো মায়ের এত কষ্টের কথা মনে পড়লে খুব খারাপ লাগে।
মা র যেমন কেউ নেই তেমনি আমাদেরও কেউ নেই। নানা-নানী,দাদা-দাদী,মামা-মামী কেউ নেই। প্রতিটা মানুষের জীবনে ঘটনা রয়েছে হয়তো কারো জীবনে সুন্দর স্মৃতির ঘটনা আবার কারো জীবন দুঃখ কষ্টে ভরা। আপনারা আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন বেশ কয়েক মাস ধরে মা খুব অসুস্থ। তার হাঁটু,কোমড় আর ঘাড়ের হাড় ক্ষয় হয়ে গিয়েছে। এছাড়া বুকের বাম পাশে একটা ব্যথা রয়েছে। এই সমস্যার জন্য এই পর্যন্ত অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। মা ঠিক মতো হাঁটতে পারে না।
যাই হোক আজ অনেক গল্প করেছি আর নয়। আবার দেখা হবে নতুন পোস্টের মাধ্যমে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
Congratulations, your post has been upvoted by @scilwa, which is a curating account for @R2cornell's Discord Community. We can also be found on our hive community & peakd as well as on my Discord Server
Felicitaciones, su publication ha sido votado por @scilwa. También puedo ser encontrado en nuestra comunidad de colmena y Peakd así como en mi servidor de discordia
জি আপু এখন আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে ঠান্ডা লাগতেছে। আপনি ছেলের প্রতি একটু যত্ন নিয়েন। যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে যায় ওষুধ ঠিকমতো খেতে দিয়েন। মানুষের জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়। এই কথাটির সাথে আমি একমত। মানুষ প্রতিনিয়ত নিজের সাথে অভিনয় করে যায় ভালো থাকার। প্রিয়জন হারানোর ব্যথা কাউকে বোঝানো যায় না। আমার এতটা খারাপ লাগতেছে যে আস্তে আস্তে সবাইকে হারিয়ে ফেলেছেন এবং সৃষ্টিকর্তা ধৈর্য দিক।আপনার মা একদম নিঃস্ব হয়ে গেল। এখন আপনাদের মা কে নিয়েই বাঁচতে হবে। আপনারা তার পাশে থাকেন সব সময়।আপনার মার জন্য অনেক দোয়া রইলো সেজন্য দ্রুত সুস্থ হয়ে যায় তার জীবনে অনেক কষ্ট বয়ে গেছে এই সময় টুকুর মধ্যে।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া মানুষ প্রতিনিয়ত ভালো থাকার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যার প্রিয়জন চলে গিয়েছে সে বুঝে প্রিয়জন হারানোর কষ্ট। ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।
এই মুহূর্তে আপনাকে সান্তনা দিয়ে কিছু বলার ভাষা আমার নেই। তারপরেও ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন,এই থেকে করুন ইতিহাস জানতে পারলাম। তবুও দোয়া করি আপনজন যারা আজ আপনাদের ছেড়ে চলে গেছে। তারা জানো কবরের আজাব থেকে মুক্তি পায় এবং বেহেস্ত নসিব হয়। সেই কামনা করি, পাশাপাশি দোয়া করব আপনার আম্মু যেন আপনাদের সহায়তায় ধৈর্য ধারণ করে বাকি জীবন দিনের পথে অতিবাহিত করতে পারে। আর একটা জিনিস মাথায় রাখবেন আপনার ভাই হিসেবে আমরা রয়েছি। ইনশাল্লাহ ভাই বোনের সুসম্পর্কও আমাদের মধ্যে বিরাজমান থাকবে।
ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর মতামত দেওয়ার জন্য। আপনার সুন্দর মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
আপনার মায়ের জীবনে মা, বাবা, ভাই ,বোন সবাই ছিল। আর তারা যখন এক এক করে তাকে বিদায় জানিয়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছেন। তখন তার তো পাথর না হয়ে উপায় নেই। সত্যিই আপু আপনার মায়ের এমন করুন কাহিনী পড়তে গিয়েও বুকের ভেতরটা যেন দুমড়ে মুছরে আসছে। আমারই এত কষ্ট হচ্ছে এইসব কথাগুলো শুনে, তাহলে না জানি আপনার মা এবং আপনাদের কতটা কষ্ট লাগে। তবে আপু, আপনারা ভাই-বোন মিলে সকলেই আপনার মাকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করেছেন এটা কিন্তু খুবই ভালো। যাই হোক আপনার মায়ের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং সব সময় ভালো থাকেন।
ভাইয়া কথাগুলো মনে পড়লে কষ্ট ধরে রাখা যায় না। আপনার সুন্দর মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আসলে একেক জন মানুষের জীবনের আত্মকাহিনী এক এক রকম। তবে আপনার মায়ের জীবন কাহিনীটা খুবই অদ্ভুত ছিল। সৃষ্টিকর্তা চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন। সৃষ্টিকর্তা চাইলে ঘর ভরিয়ে মানুষ দিতে পারেন। আবার চাইলে এক নিমিষেই সবাইকে নিয়ে যেতে পারেন। তবে উনি অনেক সহ্য করেছেন বলা যায়। দোয়া করি সব সময় যেন ভাল থাকেন। আপনারাও চেষ্টা করবেন সব সময় হাসি খুশিতে রাখার জন্য। ধন্যবাদ আপু পড়ে অনেক বেশি খারাপ লাগলো।
হ্যাঁ আপু সবসময় ভালো রাখার চেষ্টা করি। সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আসলে সমাজের বেশিরভাগ মানুষ নোংরা মন-মানসিকতার হয়। নয়তো আপনারা যখন আপনার নানা বাড়িতে ছিলেন,তখন কেনো আপনার বাবাকে লোকজন কথা শোনাবে। মানুষের প্রয়োজনে অনেক সময় থাকতে হয়। আমাদের এদিকেও এমনটা হয়,কেউ যদি শ্বশুর বাড়িতে থাকে তাহলে ঘরজামাই বলে তিরস্কার করে অনেক মানুষ। সমাজের মানুষজন পারে শুধু মানুষকে কষ্ট দিতে। আপনার মায়ের জীবনের গল্প শুনে আসলেই খুব খারাপ লাগলো আপু। কথায় আছে অল্প শোকে কাতর, বেশি শোকে পাথর। আপনার মা বেশি শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে। দোয়া করি আপনার মা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। আপনার পরিবারের জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং শুভকামনা রইল আপু।
আপনার সুন্দর মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।