বয়স হলে বাবা-মা সবার কাছে বোঝা হয়ে যায়।
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সবাইকে জানাই আমার সালাম। আসসালামু-আলাইকুম। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় সুস্থ আছি এবং ভালো আছি। মনের ভিতরে আকাশ সমান কষ্ট নিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলতে হবে আমি ভালো আছি। এই তো দুনিয়ার নিয়ম। এই পৃথিবীর মানুষ গুলো বড়ই স্বার্থপর। যদি কিছু না বলেন তাহলে আপনি সবার পক্ষে ভালো থাকবেন। কিন্তু যখনই কারো সম্পর্কে একটু কিছু বলবেন তখনই আপনি খারাপ হয়ে যাবেন। চুপ করে থাকলেও দোষ আর কথা বললেও দোষ। এই পৃথিবীতে ভালো মানুষের কোনো মূল্য নেই। যে যেমন তার সাথে তেমনি ব্যবহার করতে হয়। তাহলেই আপনি ভালো থাকবেন।
যাই হোক যা নিয়ে কথা বলতে এসেছি তা বলি। আজ অন্যরকম একটি পোস্ট শেয়ার করতে চলে এসেছি। আপনারা টাইটেল দেখে হয়তো ভাবছেন বাবা-মা আবার বোঝা হয় কীভাবে? হ্যাঁ এটা একদম সত্য কথা আর সবার কাছে কিন্তু এমন নয় তবে কিছু কিছু মানুষের কাছে বোঝাই মনে হয়। এই পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ দেখতে পাবেন। কিছু মানুষ আছে যারা মা বাবাকে বয়স হলেও মাথায় নিয়ে ঘুরে আর কিছু মানুষ আছে যারা মা বাবাকে বয়স হলে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেয়। যারা মা বাবার সাথে এমন অন্যায় আচরণ করে তাদের কি কখনো ক্ষমা পাবে?
আমার নিজের চোখে দেখা এমন ঘটনা বলছি। আমার আব্বুর চাচাতো ভাই অর্থাৎ আমার চাচা হয়। আমরা ছোট বেলায় দেখতাম আমার চাচা তার মা কে অনেক অত্যাচার করতো। ঠিক মতো দাদি কে আমার চাচি ভাত দেয়নি। সে এই বাড়ি ঐ বাড়িতে গিয়ে ভাত চেয়ে খেতো। আমরা যখন ভাত খেতাম তখন বাটি নিয়ে চলে আসতো। আমার মা কে বলতো বউ কয়টা ভাত দাও না। মা তখন জিজ্ঞেস করতো আপনার বউ খাওয়াইনি তখন দাদি বলতো আমার সেই কপাল নেই। তোমার শ্বাশুড়ির মতো যদি ভালো কপাল হতো তাহলে শান্তিতে থাকতে পারতাম।
একদিন তো আমার সেই চাচা দাদি কে অনেক মেরেছিল। তখন দাদি কষ্টে বলেছিল আমার একটি সন্তান এতেই তোদের অত্যাচারে শান্তি পাইনা। তোর তো চার ছেলে হয়েছে আর তোর কষ্ট বেশি হবে। আমরা সবাই জানি মায়ের এক ফোঁটা চোখের পানিতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে।সে দিনও হয়তো তাই হয়েছে। দাদি মারা যাওয়ার সময় অনেক কষ্ট পেয়ে মারা গিয়েছে। এখন আমার চাচা চাচির বয়স হয়েছে আর তারাও একই অশান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
তাদের চারটি ছেলে কিন্তু তাদের খাওয়ানোর মতো দায়িত্ব কেউ নিতে চায় না। এখন তারা সবার কাছে বোঝা হয়ে গিয়েছে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে তারা স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যদি ভালো স্বামী পায় তাহলে হয়তো বাবা মা কে দেখাশোনা করতে পারে আর যদি তা না হয় তাহলে নিজেরইতো অশান্তির শেষ থাকে না, বাবা মা কে দেখবে কিভাবে? আজ আমার চাচার অবস্থা খুব খারাপ কিন্তু তাকে কেউ চিকিৎসা করাতে চায়না। বুড়াবুড়ি কোনো রকম রান্না করে আর খায়।
আমার কথা হলো বাবা মা যতই খারাপ হোক তারা তো আমাদের দশ মাস দশ দিন পেটে ধরেছে আর পৃথিবীতে আসার পর লালন পালন করে এত বড় করেছে। তাহলে কেন তাদের কে এভাবে অবহেলা করা হয়। তারা তাদের বাবা মায়ের সাথে অন্যায় করেছে তার জবাব তারা দিবে। তাহলে আমরা কেন তাদের প্রতি অন্যায় করি। তাদের বয়স হলে বোঝা মনে করি। এটা কেন ভাবিনা একদিন আমাদের সন্তানরাও আমাদের সাথে এমন করতে পারে। তখন আমাদের মনের অবস্থা কেমন হবে।
এসব চিন্তা করলে হয়তো কেউ এই কাজগুলো করতে পারতো না। যাই হোক আজ অনেক কথা বলেছি।কথা বলা শুরু করলে যেন শেষই হয়না। তবুও শেষ করতে হয় আজ এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
ঠিক বলেছেন একদম আপু। কিছু সন্তানের কাছে পিতা-মাতা যেনো বোঝা। মানে কি ভাবে পারে মানুষ বাবা-মায়ের সাথে এমন ব্যবহার করতে? এটা যে কত বড় অপরাধ তারা বুঝেও না। যাই হোক খুব ভালো লিখেছেন আপু। আপনার চাচার মায়ের জন্য খুব খারাপ লাগলো। তিনি সত্যি খুব অভাগী।
জীবনের বাস্তবতা সত্যি অনেক কঠিন। মাঝে মাঝে এই বিষয়গুলো ভাবতে গেলে সত্যি অনেক কষ্ট লাগে। আসলে একটা সময় বাবা-মায়ের অনেক বয়স হয়ে যায়। তারা সংসারের বোঝা হয়ে যায়। তবে ছেলেদের কাছে মা-বাবা বোঝা হলোও মেয়েদের কাছে কখনোই হয় না। কিন্তু অনেক সময় মেয়েরা বাধ্য হয় নিজের দায়িত্ব থেকে সরে আসতে। হয়তো নিজের আপন মানুষগুলোই তাকে বাধ্য করে সেই দায়িত্ব থেকে সরে আসতে।
এই ঘটনাগুলো শুনলে আসলেই খুব খারাপ লাগে। বাবা মা এতো কষ্ট করে আমাদেরকে লালন পালন করেছে, আর আমরা যদি বড় হয়ে তাদের দায়িত্ব না নেই, তাহলে তারা সত্যিই অসহায় হয়ে যায়। তবে যারা বাবা মা কে বোঝা মনে করে,একসময় তাদের সন্তানদের কাছে তারাও বোঝা হয়ে যাবে এটাই বাস্তব। যাইহোক সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক সেই কামনা করছি।