গল্প "অপূর্ণ ভালোবাসা" শেষ পর্ব
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে।
আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আজকে আবার হাজির হয়ে গেলাম "অপূর্ণ ভালোবাসা" গল্পটির শেষ পর্ব নিয়ে। ইরা এবং বিপুর কি শেষ পর্যন্ত মিল হয়েছিলো কিনা তা দেখা যাক। আজকের পর্বটি একজনের জীবনের সত্যিকারের কাহিনী। এইটুকু শুনেই গল্পটি লিখেছিলাম আশা করি আজকের পর্বটি আপনাদের ভালো লাগবে।
অপূর্ণ ভালোবাসা
ইরার বিয়ের কথা শুনে বিপুর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সে এখন পুরোপুরি কনফার্ম হয়ে যায় ইরা তাকে আসলেই ভালোবাসে না। কিন্তু সে তো ইরাকে ভালোবেসে ফেলেছে। এখন সে কি করবে। সে বিভিন্নভাবে বোঝার চেষ্টা করে ইরা কি তাকে বিন্দুমাত্র ভালোবাসে। কিন্তু সে কোন কিছু বুঝতে পারে না। এভাবে বিয়ের দিনও এগিয়ে আসে। বিপু সিদ্ধান্ত নেয় সে ইরাকের সবটা জানিয়ে দেবে। এভাবে ইরাকে দূরে চলে যেতে দিবে না। একবার চেষ্টা তো করে দেখা যায়।
বিয়ের তিন দিন আগে ইরা আর বিপু দেখা করে। দুজন সামনাসামনি এসে কেউ কোন কথা বলতে পারে না। দুজনেরই চোখ ভেজা। তখন দুজনেরই বুঝতে বাকি থাকে না তাদের মনের মধ্যে কি চলছে।
ইরা- তাহলে তুইও? কিন্তু শ্রাবণী?
বিপু- শ্রাবনীর সঙ্গে অনেকদিন আগেই আমার ব্রেকআপ হয়ে গিয়েছে। ভয়ে তোকে জানায়নি। শ্রাবণী সবটা জেনে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।
ইরা- তাহলে আমাকে কেন জানাস নি। এখন যে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে।
বিপু- অনেকবার চেষ্টা করেছি বলার কিন্তু তুই তো আমাকে ভালোবাসিস না এজন্য আর বলা হয়নি।
ইরা- তাহলে আজ কেন?
বিপু- আজ তোকে হারিয়ে ফেলছি জন্য শেষ চেষ্টা করতে এসেছি।
ইরা- কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
বিপু- কোন দেরি হয়নি। আমি শুধুমাত্র একবার তোর মুখ থেকে শোনার অপেক্ষায় ছিলাম।
ইরা- কিন্তু আমি আমার পরিবারকে কষ্ট দিতে পারবো না। তিনদিন পর আমার বিয়ে। বিয়ের সব আয়োজন শেষ হয়ে গিয়েছে। এ অবস্থায় আমি বিয়ে ভেঙে দিতে পারবো না। বিয়ে ভেঙে দিলে আমার পরিবারের মান সম্মান চলে যাবে।
বিপু- কিন্তু আমাদের সুখ? তুই কি অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হতে পারবি?
ইরা-আমার সুখ তো ওইদিনই বিসর্জন দিয়েছি যেদিন বিয়েতে রাজি হয়েছি।
বিপু- আমরা সবাইকে বুঝিয়ে বলি। সবাই আমাদের বিষয় টা নিশ্চয়ই বুঝবে।
ইরা- না তা হয় না। তোর আর আমার মিলন হয়তো লেখা ছিল না। সেজন্য বুঝতে আমাদের এত দেরি হয়ে গেল।
এভাবেই তাদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথা চলে। বিপু অনেক চেষ্টা করে ইরাকে বোঝানোর। কিন্তু ইরা তার বাবা মায়ের কথা চিন্তা করে কিছুতেই রাজি হয় না। সে বাবা মায়ের অনেক আদরের সন্তান। তার বাবা মা ছোটবেলা থেকে তার সব আবদার পূরণ করেছে। শুধুমাত্র নিজেদের সুখের জন্য সে বাবা-মাকে এত বড় কষ্ট দিতে পারবে না।
শেষে বিপু বিষয়টি মেনে নেয়। যেই বাবা-মা সারা জীবন এত আদর যত্ন করে মানুষ করেছে তাদের মান সম্মান এভাবে মিশিয়ে দেয়া যায় না। তারপর বেশ কিছুক্ষণ দুজন দুজনের পাশে বসে থাকে শেষবারের মতো। কেউ আর কোনো কথা বলতে পারে না। নীরবে তাদের ভালোবাসার মৃত্যু হতে থাকে।
আজ ইরার বিয়ে। খুব সুন্দর করে বউ সেজেছে ইরা। বরপক্ষ চলে আসবে যেকোনো সময়। বিপু বিয়েতে যায়নি। সেজন্য ইরার বাড়ি থেকে বারবার বিপুকে ফোন দিচ্ছে। কারণ ছোটবেলা থেকেই তাদের বাসায় যাওয়া আসা। তাছাড়া বিপু ইরার এত ভালো বন্ধু সে বিয়েতে না থাকলে কেমন হয়। বিপু শেষবারের মতো একবার ইরাকে দেখতে আসে। বউ সেজে ইরাকে কেমন লাগছে। বউ সাজা অবস্থায় ইরাকে দেখে আর বিপু সহ্য করতে পারে না। সে তার জরুরী কাজের একটি বাহানা দিয়ে বিপু সেখান থেকে চলে যায়। তারপর ইরারও ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে যায়।
শুধুমাত্র দুজন দুজনকে ঠিক সময়ে ভালোবাসার কথা না বলার কারণে সত্যি কারের একটি ভালোবাসার এভাবেই মৃত্যু ঘটে। বিপু কিছুদিন কষ্ট পাবে ঠিকই কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দুজনই আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সময় সবকিছুই ঠিক করে দেয়। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের জায়গা মনের এক কোণে সারা জীবন রয়ে যায়। সেই জায়গা কেউ কখনো নিতে পারে না।
আজ এ পর্যন্তই সময় নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ
@tania
আমি তানিয়া তমা। আমি বাংলাদেশে থাকি। ঢাকায় বসবাস করি। আমি বিবাহিত। আমার দুটি ছেলে আছে। আমার শখ রান্না করা, শপিং করা, ঘুরে বেড়ানো। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলাদেশকে ভালবাসি। |
---|
VOTE @bangla.witness as witness OR SET @rme as your proxy
এরকম ভাবে একটা ভালোবাসার মৃত্যু হয়েছে এটা দেখে সত্যি অনেক বেশি খারাপ লেগেছে আমার কাছে। ইরা এবং বিপু দুজনে অনেক বেশি ভালোবাসতো,
কিন্তু সঠিক সময় তারা একে অপরকে বলতে পারেনি। যার কারণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল আর এই জন্য একটা সত্যিকারের ভালোবাসার মৃত্যু হয়েছিলো। অনেক সুন্দর করে আপনি এই গল্পটা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার পরবর্তী গল্পটা পড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
আসলেই আপু যখন বিপুর কাছ থেকে এই গল্প শুনছিলাম তখন আসলেই খুব খারাপ লেগেছিল। সে খুব ভেঙ্গে পড়েছিল। যাই হোক পরবর্তীতে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিল। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
ভালোবাসা বলে এমনই হয়ে থাকে। ভালোবাসার মানুষের পাওয়ার জন্য আমরা কত কিছু না করে থাকি শেষ পর্যন্ত যদি ভালোবাসা হারিয়ে যায় তাহলে আমরা অনেক কষ্ট পায় অনেকে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে দেয়। আমার মনে হয় এগুলো সব কিছুই আবেগ। আবেগের বশীভূত হয়ে এগুলো আমরা করে থাকি যার কোন মানেই হয় না। ভালোবাসার মানুষের বিয়ে হয়ে যাবে বা কেউ মরে যাবে যে বেঁচে থাকবে সে কিছুদিন কষ্ট পাবে আমার সে আগের মতই হয়ে যাবে।
আসলে বিপু এবং ইরা নিজেদের ভালবাসা বুঝতে বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। এজন্যই তো আর তাদের এক হওয়া হয়নি। ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার মতে ভালোবাসায় মিলনের চেয়ে বিচ্ছেদই শ্রেষ্ঠ। তাতে করে ভালোবাসার মানুষটি সারা জীবন মনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকে। ইরার জীবনে ও তাই হবে। এক সময়ে তারা নতুন করে সংসার করবে। সব ভুলে যাবে। কিন্তু মনের এক কোনায় রয়ে যাবে তারা একে অপরের প্রতি সম্মানও রয়ে যাবে।
এটা অবশ্য ঠিক বলেছেন তাহলে ভালবাসার মানুষের প্রতি একটা টান থেকেই যায়। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
বিপুর শেষ চেষ্টা তাহলে কোনো কাজে দিলো না। ভেবেছিলাম ইরা এবং বিপুর মিলনের মাধ্যমে এই গল্পের হ্যাপি এন্ডিং হবে। কিন্তু এন্ডিংটা পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিলেন আপু। ইরার সিদ্ধান্তকে স্যালুট জানাচ্ছি, কারণ সে তার পরিবারের মান সম্মান বাঁচিয়েছে, নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে। গল্পটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো আপু। আশা করি নতুন কোনো গল্প নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হবেন খুব শীঘ্রই।
এমন অনেক মেয়ে রয়েছে পরিবারের কথা চিন্তা করে নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দেয়। ধন্যবাদ মন্তব্য করে উৎসাহ দেওয়ার জন্য।
আসলে ভালোবাসা যখন অপূর্ণ থেকে যায় তখন অনেক বেশি কষ্ট লাগে। আসলে একটা মানুষের জায়গা যদি মনের মধ্যে থাকে তাহলে তা সারা জীবনই থেকে যায়। যাতে মনে হয় একবার জায়গা দেয় সে কখনো মন থেকে উঠে না। আর কিছু কিছু মানুষের জায়গা মনে থেকে যায়। আপনি পুরো গল্পটা পর্বের মাধ্যমে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লেগেছে।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া একবার যাকে জায়গা দেয়া হয় তার জায়গা কখনোই মুছে ফেলা যায় না। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।