বাবার চলে যাওয়ার দিনটি ছিল আজ

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago
আসসালামুআলাইকুম

বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন ? আশা করি ভালোই আছেন, আমিও আলহামদুল্লিাহ ভাল আছি।

IMG_0442.jpeg


দেখতে দেখতে একটি বছর কেটে গেল। আজ আমার বাবার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।গত বছর এই দিনটিতে আমার বাবা সবাইকে ছেড়ে চির বিদায় নেন এই পৃথিবী থেকে। বাবার মৃত্যুর সংবাদটি পেয়েছিলাম মডারেশন প্যানেলে সিয়ামের একটি ম্যাসেজ থেকে। ওই মেসেজটির কথা এখনো মনে পড়লে বুকের মধ্যে দুমরে মুচড়ে উঠে। আসলে নিজের আপন মানুষের মৃত্যুর খবর যদি প্রবাস থেকে পাওয়া যায় তার চেয়ে বড় কষ্ট আমার মনে হয় দুনিয়ায় আর হয় না। বাংলাদেশে থাকলে হয়তো কাছে গিয়ে একবার শেষ দেখাটি দেখে আসতে পারতাম, হাত দিয়ে একবার মুখটি বুলিয়ে দিতে পারতাম, কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব হল না। তারপরও এই ইন্টারনেটের সুবাদে শেষবারের মতো বাবার মুখটি কয়েকটি বার দেখতে পেরেছি।এটিই হলো বড় সান্তনা। তা না হলে সারা জীবন আফসোসে কেটে যেত।

বাবা যে বছর মারা যায় তার আগের বছর বাংলাদেশে গিয়েছিলাম শুধুমাত্র বাবাকে দেখার জন্য। অনেকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ব্রেন শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ধীরে ধীরে অবস্থার খুবই অবনতি হয়েছিল। চিকিৎসা করেও কোন ফল হয়নি। ডক্টর বলেছিলেন এই রোগ আর ভালো হবে না,এভাবে ধীরে ধীরে আরো অবনতি হতে থাকবে। যতদিন এই রোগ ধরা পড়েছিল ততদিন শুধু ওষুধের উপর দিয়েই চলেছিল। অনেক বেশি ওষুধ খেতে হতো প্রতিদিন। প্রতিদিন প্রায় ৬/৭ রকমের ওষুধ খেতে হতো। আর এই ওষুধের এত পাওয়ার ছিল যে সারাদিন শুধু চোখে ঘুম লেগে থাকতো। আর শেষের দিকে অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গিয়েছিল।ভিডিও কল দিলে ভালোভাবে তাকাতেও পারত না ঘুমের যন্ত্রণায়। অসুস্থ থাকুক আর সুস্থ থাকুক একবার ফোন দিয়ে তো মুখটি দেখতে পেতাম। কিন্তু এখন আর সেই মুখটি দেখা সম্ভব নয়।চিরতরে হারিয়ে গেল সেই মুখটি।

কিন্তু একটি কথা জেনে ভালো লাগে যে বাবার মৃত্যুর সময় অতটা কষ্ট হয়নি। ভালোমতো খেতেও পেরেছিল, খাওয়া বন্ধ হয়নি। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও ভাত খেয়েছিল এবং আম্মার হাঁতে কমলাও খেয়েছিল।আমার আম্মা বলেছিল হঠাৎ করে দেখে বাবার কপাল খুব ঘামছিল।এরপর একটি ঢেঁকুর তুলে।এরপর আর কোন সাড়া শব্দ পায়নি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জানটি কবজ হয়ে যায়। আমার আম্মা বলেছিল ঢেঁকুর তোলার পরপরই আমার বাবার মুখটি একেবারে সাদা হয়ে যায়। নিশ্চয়ই এটি একটি ভালো লক্ষণ। এছাড়া আমার বাবা বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান অর্থাৎ শুক্রবার পরে। সবদিক দিয়ে বিচার করলে মনে হয় আমার বাবার খুব ভালো মৃত্যু হয়েছে।

অবশ্যই আমার চোখে আমার বাবা ছিলেন সেরা। আমার বাবা ছিল খুবই নরম ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ। ঠিক মত নামাজ পড়েছেন, কোনদিনও একটি রোজা বাদ দেন নি। কখনো কারো সাথে গলা উঁচু করে কথা বলেননি। অনেকেরেই দেখেছি সামান্য কোন কারণেই রেগে বেগে অস্থির হয়ে যায়, চিল্লাপাল্লা শুরু করে দেয়। কিন্তু আমার বাবাকে কখনো এমন দেখিনি। অনেক ধৈর্য ছিল তাঁর। জীবনে আমাদের ভাইবোনের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন তিনি।যাঁদের বাবা নেই তারাই বুঝেন বাবা হারানোর কষ্ট। যাইহোক সকলে আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন, আমার বাবা যেন জান্নাতুল ফেরদৌস এ দাখিল হন।

যাইহোক এটিই হচ্ছে দুনিয়ার নিয়ম।এই পৃথিবী ছেড়ে সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। সবাই এভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। অনেক গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় আসলেই এই পৃথিবীটা খুবই অল্প সময়ের জন্য। আমরা সকলেই এই পৃথিবী নিয়ে খুব বেশি ব্যস্ত রয়েছি। ওপারে যে চলে যেতে হবে সেটা ভুলেই যাই।

বন্ধুরা এটিই ছিল আমার আজকের আয়োজন। পরবর্তীতে নতুন কিছু নিয়ে হাজির হব।

ধন্যবাদ,

@tangera

1927F0BC-A81B-459C-A2F6-B603E4B2106C.png


👉 আমাদের discord চ্যানেল এ JOIN করুন :

👉 আমাদের discord চ্যানেল এ JOIN করুন :

VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


[witness_vote.png](https://steemitwallet.com/~witnesses

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 5 months ago 

হ্যাঁ ইন্টারনেট থাকায় আপনার বাবার মুখটা শেষবারের মতো দেখতে পেরেছিলেন এক সময় তো ইন্টারনেট ছিল না মানুষ চিঠির মাধ্যমে সব তথ্য আদান প্রদান করত। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন আর পরিশেষে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন আল্লাহতালা যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন আমিন।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

গত বছর এই দিনে আপনার বাবা দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন, জেনে আমার অনেক খারাপ লাগলো। আপনি আপনার বাবাকে অনেক বেশি ভালোবাসেন, আসল প্রত্যেক ছেলে মেয়েরা তার বাবা মা কে অনেক বেশি ভালোবাসে। আসলে আমাদের সবাইকে একদিন এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। আপনার বাবার জন্য দোয়া রইলো।

 5 months ago 

সত্যিই আপু আমাদেরকে এই পৃথিবী থেকে সবাইকে বিদায় নিতে হবে।একথাটি আমরা সবাই ভুলে যাই। দুনিয়ার মোহে ব্যস্ত হয়ে পরি।গত বছর আপনার বাবার খবর যখন শুনি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম আমি।তখন কেবল ই মনে হয়েছিল আমার বাবা যখন চলে যাবে আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে তখন কেমন অনুভূতি হবে? আপু এটা ভেবে সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল।দোয়া করি আপু আপনার আব্বু জান্নাতবাসী হবেন।শুক্রবার মৃত্যু খুব ভালো। আব্বুর জন্য দোয়া করবেন।ছেলেমেয়ের দোয়া মা-বাবার জন্য ভালো।

 5 months ago 

আমাদের সবাইকে একদিন এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। পৃথিবীটা অনেক অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু আমরা সেটা দুনিয়ার মোহে পড়ে ভুলেই যাই। আপনার বাবার জন্য অনেক অনেক দোয়া। আল্লাহ তায়ালা যেন আপনার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আমিন।

 5 months ago 

আপু প্রতিটি মেয়ের জীবনে বাবা নামক বট গাছ টা সেরা হয় সুপার হিরো হয়।যার বাবা নেই সেই বুঝে বাবা না থাকার কষ্ট কতোটা😭😭।আপু আপনার পোস্ট টা পড়ে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। এমন করে আমার বাবাও হারিয়ে গেছে। তবে আমার কষ্ট থেকে আপনার কষ্ট টা দ্বিগুণ। কারণ আপনি ছুঁয়ে দেখতেও পারেননি বাবার সেই শীতল দোহ টা।দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা জান্নাতুল ফেরদৌসে দান করুক আপনার বাবাকে।
একটা কথা দুনিয়ার সব মেয়েরা বাবা ছাড়া অসহায় খুব। তাদের কাছে দুনিয়ার সব কিছু থাকলেও কিছুই নেই😭😭😭😭🤲🤲🤲।।আল্লাহ আপনাকে ধৈর্য্য দান করুক।

 5 months ago 

গতকাল দিনটা খুব খারাপ গিয়েছে। বারবার আব্বুর মৃত্যুর খবর পাওয়ার মুহূর্তটা মনে পড়ছিলো। একটাই সান্তনা যে আব্বু খুব ভালোভাবে এবং ভালো দিনে গিয়েছেন। আল্লাহ আব্বুকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মোকাম দান করুক। আমিন।

 5 months ago 

আসলেই দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে যে একটি বছর পার করে ফেললাম বুঝতেই পারলাম না । আব্বু ছাড়াও যে একটা সময় আমাদেরকে থাকতে হবে এবং এত তাড়াতাড়ি এটা কখনোই চিন্তা করিনি । আল্লাহ যেন আব্বুকে জান্নাতুলফেরদাউস নসিব করেন সেই কামনাই করি সব সময় ।

 5 months ago 

এই দুনিয়াতে যারা আপনজন হারিয়েছেন তারাই বুঝতে পারেন আপনজন হারানোর ব্যথা কেমন। গত নভেম্বরের ২৭ তারিখ মাকে হারিয়েছি। সেই ব্যাথাটা এখনো বিরাট আকার ধারণ করে আছে। এখনো মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে যায়। আজকে আপনার বাবার প্রথমে মৃত্যু বার্ষিকী শুনে খুব খারাপ লাগলো। এই দুনিয়াতে সন্তানদের জন্য মা-বাবার কোন তুলনা হয় না। অবশেষে আপনি একটিবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখতে পারছেন সেই দিন। আপনি ঠিক বলছেন দেশে থাকলে হয়তো মুখে একটু হাত বুলিয়ে দিতে পারতেন। আপনার আব্বুর জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল। যেন জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে সৃষ্টিকর্তা রাখেন আঙ্কেল কে।

 5 months ago 

প্রতিটি বাবা সন্তানদের মাথার উপর ছায়ার মতো থাকেন। প্রবাস জীবনে প্রিয়জন হারানোর কষ্ট অনেক বেশি। আঙ্কেল আসলেই খুব ভালো দিনে মারা গিয়েছিলেন এবং উনার জান কবজ করার সময় ততোটা কষ্ট হয়নি। দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন। আসলে এভাবে আমাদের সবাইকে একদিন পরপারে চলে যেতে হবে। তাই সময় থাকতে আমাদের উচিত বেশি বেশি আমল করা। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57979.07
ETH 3124.67
USDT 1.00
SBD 2.36