কষ্টকর তবে মুহুর্তগুলো ভোলার নয়!

in Incredible India4 months ago

Hello Everyone,,,

IMG_20240619_161427.jpg

আশা করি সবাই সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও বেশ ভালো আছি। ছোটবেলা থেকে বাবা মাকে ছাড়া থাকার অভ্যাস ছিলো না। অনেক বড় হয়ে যাওয়ার পরও মায়ের সাথেই ঘুমাতাম রাতে।

তখন বাবা মা বলতো, এখন না হয় আমাদের ছাড়া থাকতে পারিস না, তাহলে কয়েকবছর পর বাড়ি ছেড়ে বাইরে গিয়ে পড়াশুনা করতে হবে, তখন কি করে থাকবি? তখন আমি বলতাম, সময়েরটা সময়ে দেখা যাবে।

বাবা মা কে ছেড়ে বাড়ি থেকে দুরে থাকবো এটা ভাবলে তখন ভীষণ খারাপ লাগতো। কিন্তু কয়েকবছর পর ঠিকই সেই পরিস্থিতি সামনে এলো যখন বাড়ি থেকে দুরে যাওয়ার সময় উপস্থিত হলো।

দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাড়িতে থেকে স্কুলে পড়াশুনা করতাম কিন্তু SSC পরিক্ষার পর এবার কলেজে ভর্তি হওয়ার পালা। যদিও বাড়ির পাশে কলেজ আছে তবে সেখানকার থেকে বটিয়াঘাটা কলেজে লেখাপড়ার মান তুলনামূলক অনেক ভালো। তাই বটিয়াঘাটা কলেজে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

যথারীতি সময় মতো ভর্তির আবেদন করলাম এবং ভর্তি হলাম।

এখনকার মানুষ নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না। এটা নিজের এই কম সময়ের জীবনকালে খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছি।

আমার গ্রামে একজন শিক্ষক আছে যে বাড়ির পাশের কলেজে চাকরি করে। সে আমাকে বাড়ির পাশের কলেজে ভর্তি হতে বলে, প্রতিদিনই আমাদের বাড়িতে আসতো এবং আমার বাবাকে নানা ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করতো যে এই কলেজে ভর্তি হলে আমার ভালো হবে।

IMG_20220815_174120.jpg

আমি যেহেতু তার কথা অমান্য করে বটিয়াঘাটা কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম তারপর থেকে সে আমার সাথে আর কথা বলতো না। এমনকি রাস্তায় দেখা হলে ভালো- মন্দ জিজ্ঞেস করলেও ভালো ভাবে উত্তর দেয় না।

কেন এমন করছে আমার সাথে এটা হয়ত বুঝতে পরেছেন। তবে অবাক করা বিষয় হলো, সেই স্যার তার নিজের ছোট্ট ছেলেকে ১ম শ্রেণি থেকেই খুলনাতে পড়াশুনা করাচ্ছে। সত্যি বলতে সবাই সবার নিজের ভালোটা বোঝে, অন্যের টা বোঝে। নিজের ছেলেকে ভালো জায়গায় পড়াবে আবার অন্যকে নিজপর স্বার্থমতো পরামর্শ দিবে আর নিজের স্বার্থ নষ্ট হয়ে গেলে তাদের কাছে সবাই খারাপ হয়ে যায়।

যাই হোক, বটিয়াঘাটা কলেজে ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে গেলে তো আর বাড়িতে থাকলে চলবে না। তাই বটিয়াঘাটায় একটা মেচে উঠলাম। সেখানে সবাই অচেনা। সবার সাথে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিলাম।

প্রথম প্রথম বাড়ি ছেড়ে মেচে থাকতে খুব খারাপ লাগতো, বাবা মায়ের কথা মনে পড়তো খুব। সত্যি বলতে মেচে থাকাটা অনেক আনন্দের কিন্তু খাওয়া দাওয়া নিয়ে অনেক বেশি সমস্যা হতো। তবে আস্তে আস্তে সব মানিয়ে নিয়েছিলাম।

IMG_20220905_174634.jpg

মেচের খাবারের স্বাদ যে পায়নি কখনও তাকে বলে বুঝানো যাবে না যে খেতে কেমন লাগে! আপনারা জানেন যে মেচে একসাথে অনেক মানুষ থাকে। আমরা একসাথে ১৫ জন থাকতাম, একেক রুমে দুজন করে তবে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা একসাথে করা হতো।

প্রতিদিন সকালে ডালের ব্যবস্থা থাকতো। মেচের ডাল সম্পর্কে আপনাদের অনেকের জানা আছে হয়ত। মেচের ডাল দিয়ে হাত ধোয়ারও কাজ করা যায়। ভাত খাওয়ার সময় ডাল খাচ্ছি নাকি জল দিয়ে খাচ্ছি বুঝতে পেতাম না।

যাই হোক, আমি যেহেতু সকালে কোচিং এ যেতাম তাই বাসায় আসতে দেরি হতো। আমি আসতে আসতে অনেক দিন খাওয়ার জন্য ডাল ফুরিয়ে যেতো। কষ্ট করে বাসায় এসে যখন দেখতাম যে খাওয়ার মতো কিছু নাই তখন এত বেশি খারাপ লাগতো সেটা বলে বুঝানো যাবে না।

মেচের মালিকের স্ত্রীকে আমি বড়মা বলে ডাকতাম এবং সে আমাকে খুব ভালোবাসতো তাই মাঝে মাঝে আমাকে ডেকে নানা কিছু খেতে দিতো। ভালো ভালো রান্না করলে সুযোগ বুঝে আমাকে ডেকে খেতে দিত। তাদের কেও অনেক মনে পড়ে এখন।

মেচে থাকার যে শুধু খারাপ দিক রয়েছে এমনটা নয়, সত্যি বলতে আমার জীবনের সব থেকে সুন্দর মুহুর্তগুলো ঐ মেচেই কাটিয়ে এসেছি।

IMG_20240408_230118.jpg

সবার সাথে হাসি আনন্দ, ঝগড়াঝাঁটি এসব অনেক বেশি মিস করি। এখনও মনে পড়ে, একমাত্র শুক্রবারে আমি ছুটি পেতাম আর এদিন মেচের সকলে মিলে সারাদিন ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতাম। খাওয়া দাওয়া সব ভুলে সারাদিন খেলাধুলা করতাম তারপর সকলে মিলে পুকুরে স্নান করতাম, এগুলো শুধুই স্মৃতি।

একটা কথা তো সত্যি যে মানুষ তার জীবনে চলার পথ থেকেই অনেক শেখে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে। বটিয়াঘাটা মেচে থাকার পর নিজে নিজে বাইরে চলতে শিখেছি, সব পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে শিখেছি। লেখাপড়া শেখার জন্য মেচে থেকে মেচের খাবারের স্বাদ নিয়েছি ২ বছর যাবত।

তবে এত সমস্যার পরও জীবনের ঐ দিনগুলোকেই সব থেকে বেশি মিস করি। কষ্টের ভিতরেও অনেক অনেক সুখের মুহুর্ত থাকে সেটা ঐ মেচ লাইফে শিখেছি।

(পোস্টে ব্যবহৃত কয়েকটা ছবি পূর্বেও ব্যবহার করা হয়েছে)

END
Sort:  
Loading...
 4 months ago 

আসলে হঠাৎ করে বাসা ছেড়ে কথা বলে কিছুদিন খারাপ লাগবে আস্তে আস্তে মেনে নিতে পারলে তখন আবার তেমন খারাপ লাগে না।।। মেসে থাকলেও ওদের সাথে বেশ আনন্দে তিন পার করা যায় মাঝে মাঝে খারাপ লাগলেও অনেক আনন্দের মুহূর্ত থাকে।। এটা একদম সঠিক বলেছেন বর্তমান সময়ের মানুষ নিজের ভালোটা বুঝে থাকে আর অন্যজনের ভালো দেখতে পারে না যেমনটা আপনার শিক্ষক করেছে।।

 4 months ago 

প্রথম যখন বাড়ি ছেড়ে মেচে গিয়ে থাকা শুরু করেছিলাম তখন বাড়ির জন্য খুন মন খারাপ করতো। যদিও কয়েকদিন পর পর বাড়ি যেতাম, বাড়ি ছেড়ে আসলে আবার খারাপ লাগতো। তবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়, পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়েছিলাম। এটা ঠিক যে মেচে থাকলে সবার সাথে খুব মজা করেই দিন কাটতো। অধিকাংশ মানুষ শুধুই নিজের স্বার্থ বোঝে।

 4 months ago 

একটা জায়গায় থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে যায় তখন আর খুব বেশি খারাপ লাগে না।। আর হ্যাঁ বাসায় থাকলে একভাবে চলতে হয় আর বাইরে থাকলে অন্যভাবে।। আর হ্যাঁ মানুষ বর্তমান সময়ে একটু বেশি স্বার্থপর।

 4 months ago 

আসলে কেউ খুব সহজে বাড়ি থেকে এক জায়গাটাই থাকতে চায় না বাড়ি যেমনটি স্বাধীনভাবে চলতে পারে এমন স্বাধীনতা ভাবে অন্য আরেক জায়গাতেই চলতে পারবে না, যাইহোক আপনি পড়ার ক্ষেত্রে ম্যাচে উঠেছেন সেটা ভালো কথা এবং আমি দোয়া করি আপনি যাতে খুব সুন্দর করে লেখাপড়া করতে পারে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

 4 months ago 

সবাই বাবা মায়ের কাছে তাদের পাশাপাশি থাকতে চায় তবে নানা প্রয়োজনে তাদের থেকে দুরে থাকতে হয়। বাড়িতে নিজের খেয়াল খুশি মতো চলাফেরা করা যায় তবে বাইরে সবার থাকতে গেলে অনেক সময় সেগুলো সম্ভব হয় না। ভাই, আমি মেচে উঠছিলাম অনেক আগে, যখন ইন্টারে পড়তাম। সেই মুহুর্তগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।

 4 months ago 

জন্মের পর থেকে মায়ের কোলটাই হয় সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সেখান থেকে বেরোলে বোঝা যায় বাস্তবতা কত কঠিন। যদিও জীবনে চলার পথে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে। আপনি যত ধাক্কা খাবেন তত শিখবেন। তাই ছোট থেকে এসকল অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
কষ্টের মধ্যে অনেক আনন্দ লুকিয়ে থাকে। এই যে যেমন আপনি দুই বছর ম্যাসে কষ্ট করেছিলেন কিন্তু এর পাশাপাশি আপনার রয়েছে অনেক সুখময় স্মৃতি। কালের বিবর্তনে মানুষ বিভিন্ন জায়গায় যায়। সময় চলে গেলেও শুধু স্মৃতি এবং শিক্ষাটা রেখে যায়। ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে। ধন্যবাদ।

 4 months ago 

জন্মের পর থেকে আমরা বাবা মায়ের ছত্রছায়ায় বড় হয়ে উঠি। তারা আমাদের সব সময় আগলে রাখে। তাদের কাছ থেলে দুরে গেলে বোঝা যায় যে বাইরে থাকা বা চলাচল করাটা কত কঠিন। জীবনে চলার পথে যত বাধা আসবে ততই শিখবো আমরা এটাই স্বাভাবিক। মেচে থাকতে অনেক সুন্দর সুন্দর মুহুর্ত কাটিয়েছি যেগুলো খুব মনে পড়ে।

 4 months ago 

নিজের বাড়ি ও নিজের মা-বাবার কাছে থাকার শান্তি আলাদা। কিন্তু জীবনের তাগিতে অনেক সময়েই চাইলেও সেখানে বেশিদিন থাকা সম্ভব হয় না থাকা যায় না।
আপনি এসএসসি পরে কলেজে ভর্তি হওয়ার কারণে বাবা-মাকে ছেড়ে মেসে থাকতে শুরু করেনএবং মেসের জীবনকে এখনো খুব মিস করেন।
যেখানেই থাকি না কেন যখন সেই জায়গা ছেড়ে আসি তখন সেই জায়গার বেশ কিছু সুন্দর স্মৃতি আমাদের মনে থেকে যায় সব সময়ের জন্য।

 4 months ago 

এটা ঠিক যে মা বাবার সাথে থাকা আর তাদের ছেড়ে থাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য। তবে ইচ্ছে করলেই তাদের সাথে থাকা সম্ভব হয় না কারন লেখাপড়া বা কাজের তাগুদে তাদের ছেড়ে দুরে থাকতে হয়। আমিও কলেজে ভর্তি হয়ে বটিয়াঘাটা চলে গিয়েছিলাম আর সেখানে মেচে থাকতাম। মেচে সব কিছু ঠিকঠাক ছিলো তবে খাওয়া নিয়ে সমস্যা হত। তবে অনেক মিস করি সেই দিনগুলো।

 4 months ago 

যদিও আমি পড়াশুনার কাজে বাইরে ছিলাম না তবে অনেক কাজের জন্য বাইরে বন্ধুদের মেসে গিয়েছিলাম ৷ তাদের মেসের খাবার আমিও বেশ কয়েকদিন খেয়েছি তা থেকেই বুঝতেই পারি মেসের খাবার কতটা কষ্ট হয় খেতে ৷

যাই হোক বাইরে থাকলে একটু কষ্ট করতেই হবে ৷ ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ৷

 4 months ago 

আমি বিগত ২ টা বছর মেচে ছিলাম। সত্য বলতে মেচে থাকাটা অনেক বেশি আনন্দের তবে ওখানকার খাওয়া দাওয়া করাটা কষ্টের। তবে বাধ্য হয়ে থাকতে হত আমাকে। কিন্তু এখন সেই দিনগুলোই বেশি মিস করি।

 4 months ago 

ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি লেখা আমাদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য। সত্যিই মা-বাবাকে ছেড়ে দূরে থাকা অনেক টা কষ্টকর। আপনি লেখাপড়ার জন্য দূরের কলেজে ভর্তি হয়েছেন। মা বাবাকে ছেড়ে ম্যাচে থাকতে হচ্ছে। সব মানুষই পরিস্থিতির সাথে নতুন নতুন অনেক কিছু শিখতে পারে। সময় ও পরিস্থিতি মানুষকে অনেক কিছু শিখায় বুঝিয়ে দেয় জীবন টা সহজ নয়। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি লেখা আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.22
TRX 0.20
JST 0.035
BTC 91157.44
ETH 3167.61
USDT 1.00
SBD 3.12